প্রণয়াসক্ত - golpo bazar

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৮

প্রণয়াসক্ত

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৮
Sumaiya Sumu(লেখিকা)

“সারারাত বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতি এখন স্নিগ্ধ, শীতল, ঠান্ডা। প্রকৃতির সৌন্দর্য যেনো আরও দ্বিগুন বেড়ে গেছে। এখনো আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। তাই কলেজ যাবো কি যাবো না ভাবতেছি”। রিমিকে কল দিলাম…
‘হ্যালো’।
‘হ্যা বল’।
‘কই তুই’?
‘কলেজ যাচ্ছি। তুই যাবি না’?

‘আরে যদি আবার বৃষ্টি হয়? যাবো কি যাবো না ভাবতেছি’।
‘কলেজে আজকে নাকি পরীক্ষার জন্য নোট’স দিবে’।
‘তুই কার থেকে জানলি’?
‘স্যার’কে ফোন দিছিলাম। আজকে ইমপোর্টেন্ট ক্লাস না থাকলে আমিও যেতাম না’।
‘আচ্ছা তাহলে আমিও যামু আসতেছি’।
‘আচ্ছা আয়’।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“রিমির সাথে কথা শেষ করে ফোন কে’টে ফ্রেশ হয়ে একটা হালকা গোলাপি রঙের ড্রেস পড়ে নিলাম। চুলগুলো আজকে বেণী করলাম। হালকা একটু কাজল আর হালকা একটু লিপস্টিক দিয়ে কলেজের ব্যাগটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে গেলাম। নাস্তা করে আম্মুকে বলে কলেজের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলাম”।
“কলেজে পৌঁছে দেখি রিমি ক্যাম্পাসে বসে বসে মোবাইলে কি যেনো করছে আর মিটমিট করে হাসছে। আমি জানি ও দুলাভাইয়ের সাথে চ্যাটিং করছে তাই একটু খোঁ’চা মা’র’তে এগিয়ে গেলাম”।

‘রিমুমুমু ওই দেখ তোর পিছনে তেলাপোকা’।
‘কইই কই কইইই’?(চি’ল্লি’য়ে উঠে)
‘হাহাহাহা’।
‘তুই আমার সাথে ফাজলামো করলি ক্যান’?
‘তুমি পিরিত করছিলা তাই একটু ডিস্টার্ব করলাম হিহিহি’।
‘চুপ কর হ’ত’চ্ছা’ড়ি। আমার দিনও আসতেছে। তুমি খালি প্রেম শুরু করো তারপর দেখবা আমি কি করি’।
‘হুহ্ সররর’।

‘এখন কেন সরমু’?
‘চুপ কর মেরি মা। আচ্ছা শোন আজকে আরাফ আসে নাই নাকি? দেখছি না যে’?
‘বাব্বাহ্ চোখে হারাচ্ছো বুঝি’।
‘তোর মাথা। বললাম না নজর রাখমু। আগে নিশ্চিত হই’।
‘আমিও তো দেখি নাই। মনে হয় আসে নাই’।
‘(আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো)’
‘কইই দেখি দেখি আমার নিরামিষ বন্ধুর মুখের উপর মেঘ ভর করলো কেন’?
‘ধুররর তুই থাক। আমি ক্লাসে গেলাম’।

“এই বলে আমি ক্লাসের দিকে হাঁটা ধরলাম। পিছন থেকে রিমি দৌঁড়ে এসে আমার হাত টেনে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ‘গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখ কে এসেছে’। আমি ওর কথামতো গেইটের দিকে তাকাতেই দিকে আরাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। আজকে বোধহয় কলেজে আসতে ওর লেইট হয়ে গেছে। ওকে দেখেই আমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি উঁকি দিলো। হঠাৎ ক্লাসের ঘন্টা দেওয়ায় আমি একটু চমকে উঠলাম। সবাই যে যার ক্লাসে চলে যাচ্ছে। আমার সামনে দিয়ে আরাফ যাওয়ার সময় একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, হাই ঝ’গ’ড়ু’টে রানী। ক্লাসের লেইট হয়ে যাচ্ছে তো চলুন’। এটুকু বলেই আরাফ ক্লাসে চলে গেলো। আমি আর রিমিও আমাদের ক্লাসে চলে গেলাম”।

“ক্লাস শেষ করে আমি আর রিমি ক্যাম্পাসে বসে বসে গল্প করছিলাম। এমন সময় আমার মাথয় একটা শ’য়’তা’নি বুদ্ধি উঁকি দিলো। ভাবলাম, ‘যাই আরাফকে একটু পরীক্ষা করি’। যেই ভাবা সেই কাজ। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আরাফ একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। আমি রিমিকে বলে আরাফের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম”। আমাকে দেখে আরাফ মুচকি হেসে ফোনটা কে’টে বলে উঠলো….

‘আজকে সূর্য কোন দিকে উঠলো রে? ঝ’গ’ড়ু’টে রানী নিজে থেকে আজ আমার সামনে আসলো’।
‘আমাকে সবসময় ঝ’গ’ড়ু’টে রানী বলবেন না তো। আমি মোটেও সবসময় ঝ’গ’ড়া করি না’।
‘কিন্তু আমার সাথে যতবার কথা হয়েছে ঝ’গ’ড়া’ই তো করেছেন’।
‘আপনি শুরু করেছিলেন’।
‘এ্যাহ্’।
‘এ্যাহ্ কি হ্যা? আমার মতো ইনোসেন্ট বাচ্চার সাথে এমন করতে আপনার বুক কাঁপে না’?
‘ওয়েট ওয়েট আমি এতোটা নিতে পারছি না’।

‘মানে’?
‘মানে আপনি বাচ্চা? আজকে বিয়ে দিলে কয়েকদিন পর নিজেই মা হয়ে যাবেন আর উনি আসছে বাচ্চা সাজতে হুহ্’।
“আমি কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে আরাফের দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলাম। আমার দেখাদেখি আরাফও হেসে দিলো। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো আরাফের হাতের দিকে, তাকিয়ে দেখি হাতে ব্রেসলেট’টা নেই”। আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে উঠলাম…

‘ওমা আপনার হাতের ব্রেসলেট’টা কই? আপনি না ওটা সবসময় পড়ে থাকেন’?
‘আরাফ একটু চমকে উঠে হাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, তাই তো? কোথায় গেলো? আমি তো খেয়াল’ই করি নি। কোথাও পড়ে গেছে হয়তো’।
‘আমি ব্যাগ থেকে ব্রেসলেট’টা বের করে বললাম, এটা কিনা দেখুন তো’?
‘আরাফ অবাক হয়ে বললো, হ্যা এটাই তো। আপনি কোথায় পেলেন’?
‘আমার বাসার দরজার সামনে’।

‘মানে’?
‘মানে কালকে বিকেলে আমার জন্য একটা পার্সেল এসেছিলো সেটা নিতে গিয়েই সেখানে এটা পাই’।
‘আরাফ একটু ভীতু চোখে তাকিয়ে বললো, ওখানে কিভাবে গেলো’?
‘সেটা তো আমার প্রশ্ন’?
‘আরাফ আমতা আমতা করতে থাকে’।

“আমি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো আরাফকে ডাক দেয়। আরাফ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে আরাফ আমার সামনে থেকে পালিয়ে গেলো। আমি ধরতে পেরেছি, যে এই কাজ গুলো আরাফ’ই করে। সেদিনের মতো আমি বাসায় চলে আসলাম”।
“বাসায় এসে আমি ফ্রেশ হলাম। সারাদিনের ব্যস্ততায় কখন যে সময় কে’টে গেছে বুঝতেই পারি নি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো কিন্তু আজ আর কোনো মেসেজ আসছে না। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে রাত সাড়ে ১১ টায় মেসেজ টোন বেজে উঠলো”। ওপেন করলাম…

‘কিছু মানুষ জীবনে এক মূহুর্তে তৈরী করে
অজানা ভালোবাসা, প্রীতি,
তারা একদিন হারিয়েও যায়, রেখে যায়
ভুলতে না পারা কিছু স্মৃতি।
মানুষগুলো ক্ষণিকের জন্য জীবনে এসে
ভরে দেয় মন,
কিন্তু তাদের স্মৃতিগুলো ভুলতে লাগে
সারাটি জীবন।
তাদের কখনো ইচ্ছা হয় না শুনতে
ভালোবাসি তোমায়..,
তারা বোঝেনা বিষন্নতা আর নিরবতা
কিভাবে কাঁদায়’।

“কবিতা’টা পড়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। এমন একটা কবিতা কেন দিলো? সবসময় দেয় ভালোবাসার কবিতা যেটা পড়লেই মন ভালো হয়ে যায়। আর আজকে দিলো এমন বিষাদ ভরা একটা কবিতা। হঠাৎ আমার শূন্যতা কাজ করছে। আমার ভয় হতে লাগলো। আরাফকে হারিয়ে ফেলার ভয়। আমিও যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। যেই ভালোবাসায় দু’জন দু’জনকে হারানোর ভয় থাকে সেই ভালোবাসা’টাই টিকে থাকে বছরের পর বছর। হঠাৎ আরেকটা মেসেজ টোনের আওয়াজে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো”। মেসেজে লেখা…

‘ম্যাডামের দেখি মন খারাপ হয়ে গেলো। এটুকু কবিতা পড়েই মন খারাপ হয়ে গেলো কেন? মান-অভিমান, ঝ’গ’ড়া, খুনসুটি এসব নিয়েই তো ভালোবাসা। ভালবাসায় যেমন আনন্দ থাকে তেমন’ই বিষাদও থাকে। তাই বলে কেউ কাউকে ছেড়ে যাবো না। এইযে আপনি মুখ গোমড়া করে আছেন সেটা কিন্তু আমার একদম’ই ভালো লাগছে না। তাড়াতাড়ি হাসি ফুটিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন কেমন? আর ছোট ছোট বিষয়ে মন খারাপ করবেন না একদম। ভীষন ভালোবাসি’।

“আরাফ সত্যি ম্যাজিক জানে, ওর কথা শুনলে আমার কেন যেনো মন ভালো হয়ে যায়। ওর সাথে থাকলে আমার সব টেনশন চলে যায়। নাকি ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে? এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম”।
পরেরদিন….

“আম্মুর ডাকে ঘুম ভা’ঙ’লো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে কলেজে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ করে একটা গাছের নিচে উদাস মনে বসে ছিলাম কারন আজকে রিমি আসে নাই আর আমাকে একটুও বলেও নাই। তাই একা একা লাগছিলো। হঠাৎ কেউ একজন আমার পাশে এসে বসলো। ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আরাফ। আমি কিছু না বলে আগের মতোই বসে রইলাম”। আমাকে কিছু বলতে না দেখে আরাফ বলে উঠলো…
‘কি হয়েছে? মন খারাপ’?

‘কি হয়েছে কথা বলবেন না? মন খারাপ কেন’?
‘রিমি আসে নি তাই’।
‘এজন্য এতো মন খারাপ করা লাগে। হয়তো কোনো কারণে আসতে পারি নি’।
‘হুম’।
‘আরে বাবা এতো মন খারাপ করা লাগে? ফোন দিয়ে কথা বলে নিন নাহলে ওর বাসায় চলে যান। সারপ্রাইজড হয়ে যাবে রিমি’।

‘কথাটা শুনে খুশি হয়ে গেলাম। অনেকদিন ওর বাসায় যাই না। এই সুবাদে না হয় চলে যাই’। আমি মুচকি হেসে আরাফের দিকে তাকালাম।
‘কি মিস? আইডিয়া কেমন’?
‘দারুন’।
‘হিহিহি। আচ্ছা তাহলে পরে কথা হবে আবার’।
‘আচ্ছা।

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৭

“এটুকু বলেই আরাফ চলে গেলো। আমি সেভাবেই বসে ছিলাম। হঠাৎ একটা মেসেজ টোনের আওয়াজ পেলাম কিন্তু আমার ফোনে তো কোনো মেসেজ আসে নি। তাহলে? আশে-পাশে তাকিয়ে দেখি আরাফ যেখানে বসেছিলো সেখানে আরাফের ফোন। তার মানে আরাফ ফোন রেখে চলে গেছে।

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.