প্রিয় তুই - Romantic Golpo

প্রিয় তুই পর্ব ১৬

প্রিয় তুই

প্রিয় তুই পর্ব ১৬
নূরজাহান আক্তার আলো

-“সবাই যখন ভাইয়াকে নিয়ে ব্যস্ত তখন আমার সর্বাঙ্গে বইছিল কাম তাড়না। শরীর চাচ্ছিল কোনো এক নারীদেহ। নিজেকে তখন পাগল পাগল লাগছিল আমার। হুশ ছিল না, সেই মুহূর্তে কি করা উচিত, কাকেই বা জানাব এই সমস্যার কথা। যার কাছে বয়ঃসন্ধির সমস্যা শেয়ার করেছিলাম, তার নিথর দেহখানা পড়ে আছে চোখের সামনে। গোপন কথা জানানোর মানুষটাও আর নেই।”

এইটুকু বলে তিতাস থামল। ঠোঁটের কোণে হাসি। অথচ এই মুহূর্তে তার অশ্রুসিদ্ধ চোখ থাকার কথা ছিল। ছেলেটা সত্যি খুব পাষাণ। ভোর নিশ্চুপ হয়ে বিলের টলমলে পানির দিকে তাকিয়ে আছে। সে বাকিটুকু শোনার অপেক্ষায়। আজ সে সবটা জেনেই ক্ষান্ত হবে। তিতাসও আর সময় নিলো না, বলতে লাগল একের পর এক ঘটনা।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-”তারপর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে গেলাম।সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিটের কাঁটা ঘন্টার ঘরে স্থির হলো। তবুও অনড় আমি। ঘন্টা পেরিয়ে যখন দেড় ঘন্টা কাটল তখন পুরো শরীর হাল ছাড়তে লাগল। ততক্ষণে শীতে কাঁপছিল আমার সর্বশরীর। মনোযোগ বিঘ্ন ঘটল আর
শরীর স্বাভাবিক হতে লাগল। কিন্তু জ্বরের হাত থেকে ছাড় পেলাম না। সেই মুহূর্তে জ্বর টরকে পাত্তা না দিয়ে ছুটেছিলাম ভাইয়ার রুমে। আপনি তখন স্থির হয়ে বসে ছিলেন। পরণে ছিল সাদা শাড়ি। আপনাকে ওভাবে খুব বাজে দেখায় ভোর।আমার ভালো লাগছিল না আপনাকে ওই পোশাকে দেখতে।

কষ্ট হচ্ছিল, চিৎকার করে কাঁদতেও ইচ্ছে হচ্ছিল। আপনার ভাগ্য দেখে আফসোসে পুড়ছিলাম আমি। কারণ আপনাকে ওভাবে কখনো দেখতে চাইনি এজন্য বোধহয়। আজকে এই
কথাটাও জেনে নিন, আমি মারা গেলেও আপনি সাদা শাড়ি পরবেন না। কখনো না, কোনোদিনও না। এটা আমার কড়া
আদেশ। অতঃপর আমি দৌড়ে গিয়ে ভাইয়ার ওই মুখপানে তাকিয়ে রইলাম।

তখন ভাইয়ার গলায় কিছু আঁচড় দেখতে পেলাম। যেটা স্বাভাবিক ছিল না।পরক্ষণে ডান হাতের দিকে তাকিয়ে আমার মনে সন্দেহ হলো। কারণ ভাইয়া বাম হাতেই সবকিছু করত। এমনকি সে লিখতেও বাম হাতে। যদিও ডান হাতে সমস্যা ছিল না। তবুও বাম হাতেই প্রায় কাজ করত, শুধু খাওয়া ব্যতীত। তাড়াহুড়ো করেও যদি আপেল কাটতে বলি, ভাইয়া বাম হাতেই কাটত। তাহলে হাত কা/টা/র সময় কেন ডান হাত ব্যবহার করল। বাম হাত দিয়ে তো আর বাম হাতকাটা সম্ভব নয়। তবুও সেই খটকা অপ্রকাশিত রাখলাম। টাকার জোরে ভাইয়ার পোষ্ট ম/র/র্টা/র্ম করাও আঁটকালাম।

না জানি আমার ভাইয়া কত কষ্টে মা/রা গেছে। এজন্য পোষ্ট ম/র/র্টা/ম করে তার কষ্ট বাড়াতে চাইছিলাম না।
এরপর একবুক কষ্ট চেপে ভাইয়াকে রেখে এলাম অন্ধকার কবরে। এরমধ্যেই কেউ ভাইয়ার রুমে তালা ঝুলিয়েছিলেন।
নয়তো ওই রুম যখন তখন কেউ না কেউ দেখতে যাচ্ছিল।
তখন আপনার বাবা আপনাকে নিয়ে যাওয়া প্রস্তাব দিলেন।

আপনিও বিধবা তকমা নিয়ে ভাইয়াকে দোষী বানিয়ে চলে গেলেন। বিয়ে বাড়িটা মৃত্যুপুরীর মতো স্তব্ধ হয়ে গেল। বাবা আম্মুর সামনে কাঁদতে পারে না। এজন্য আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন। ভাইয়ার জন্য বুকফাঁটা কিছু কথা বলে বুকের ফাঁপড় কাটান। আম্মু রাত-দিন ভাইয়া ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদেন, খাওয়া দাওয়া ছেড়ে বিলাপ করেন।
আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি। কী করব, আমি যে কান্না করতে পারি না।

সহজে কান্না আসে না আমার। এরপর দুই সপ্তাহ পর আমি ভাইয়ার রুমে ঢুকেছিলাম। চেনা রুম কেন জানি অচেনা লাগছিল। ভ্যাপসা গরম আর শুকনো ফুলের
গন্ধে দম আঁটকে আসছিল। দ্রুত জানালা খুলে পর্দা সরালে রুমে আলো বাতাস ঢুকল। তাৎক্ষণিক সকল আঁধার কেটে রুম আলোকে পরিপূর্ণ হলো। তখন হঠাৎ কিছুর সঙ্গে বেঁধে পড়ে গিয়ে দেওয়াল ধরে নিজেকে বাঁচায় আমি। দেওয়ালে রজনীগন্ধা আর একটা গোলাপ কস্রটেপ দিয়ে আঁটকানো ছিল।

আমার হাতে লেগে সেটা খুলে যায় আর ছোট্ট একটা
ক্যামেরা মেঝেতে ছিঁটকে পড়ে। সেটা তুলে চেক করে এবার
আমার সন্দেহ প্রবল হয়। একে একে সময় নিয়ে পুরো রুম খুঁজতে থাকি। আর পেয়েও যায় আটটা ক্যামেরা। তারপর
সুযোগ বুঝে সেগুলোর খোঁজ করে দোকানের নাম জানতে পারি। যেখানে এই ধরনের ক্যামেরা বিক্রি হয়। যদিও প্রথমে দোকানদার কিছু জানাতে চাচ্ছিল না। পরে পুলিশের হুমকি দেওয়াতে কাস্টমারদের লিষ্ট দেখায়। সেখানে সুস্পষ্টভাবে ক্রেতা কবে কখন কোন তারিখে কোন ক্যামেরা কিনেছেন, তা লিখা আছে। আমি লিষ্ট চেক করে থমকে যায়, নাহিদের নামটা দেখে। অবুজ মন বিশ্বাস করতে চাচ্ছিল না। এজন্য পাশের নাম্বার তুলে ডায়াল করে দেখি এটা চেনা নাহিদ’ই।

সেই ভাইয়ার গায়ের হলুদের দিন রাতে ক্যামেরা নিয়েছিল। তারপর কৌশলে নাহিদকে ডেকে লোক লাগিয়ে কিডন্যাপ করি। টানা চারদিন অনাহারে রেখে পাঁচদিনের দিন মনের রাগ মেটাতে বেধড়ক মে/রে/ছি/লা/ম। এরপর তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে হয় নি,আপনাআপনি সবটা বলে দিয়েছে।
তবুও কেন জানি শান্তি হচ্ছিল না আমার। আমার ভাইয়ার সঙ্গে বেইমানি করেছে। তার বুকের কলিজা এত বড়! তাই কলিজাখানা বের করে মেপে ইঞ্চি ইঞ্চি করে কেটে দেখেছি।

ঠিক করেছি না, আপনিই বলুন?”
-”কেন এমন করেছে সে? আমি তার কি ক্ষতি করেছি?”
-”আপনি নয়, আপনার নারীদেহ তাকে আকৃষ্ট করেছে। তার বাসনা ছিল আপনার সঙ্গে লিপ্ত হওয়ার, ছুঁয়ে দেখার। সত্যি বলতে ভাইয়া আপনাকে ছুঁয়ে দেখবে এটা সে সহ্য’ই করতে পারছিল না। মনে মনে ঈর্ষায় ভেটে পড়েছিল। মূলত এজন্য ক্যামেরাগুলো লাগিয়েছিল। যেন আপনাদের বিশেষ মুহূর্ত গুলো ভিডিও করে ভাইরাল করে আপনাদের মানসন্মান নষ্ট করতে পারে। সকলের সামনে হাসির খোরাক বানাতে পারে।

সত্যি বলতে বন্ধুর নামে এরা এক একটা কালসাপ। যে মিষ্টি কথায় মধু বিলিয়ে ভেতর ভেতর ক্ষতির ফন্দি আঁটবে।আর
যেদিন আপনাকে বিয়ে করি সেদিন আমাকেও মেসেজ করে জানিয়েছিল, ‘পিয়াসকে স্পর্শ করার সুযোগ দেয় নি, তুইও সাহস করিস না তিতাস। ভোরের দেহ সর্বপ্রথম আমিই ছুঁয়ে
দেখব।”

আমার বিয়ে করা বউ আপনি। যাকে আমি সাহস করে ছুঁয়ে দেখতে পারি নি। ভুল বুঝবেন ভেবে জোর অবধিও করিনি।
যে নারী আমার জন্য বৈধ তবুও এখনো খারাপ নজরে দেখি নি। অথচ নাহিদ তার সম্পর্কে এসব বলছে। এরপরেও চুপ থাকব? চুপ থাকা মানায়? আমি বাবা এত ভালো ছেলে না। এজন্য তাকে কড়া ডোজের শাস্তি দিয়েছি।”
-”তাহলে এসব কথা শাওন জানল কীভাবে? তুই বলেছিস?”

-”খেয়ে আমার কাজ নেই। চোরকে আবার চুরির কথা বলা লাগে নাকি? সেই তো নাহিদকে ক্যামেরাগুলো নিয়ে আসতে পাঠিয়েছিল। এসবের পেছনে সেও যুক্ত।”
-”কিহ!”

-”আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এখনো অনেক কিছুই জানার বাকি। বিয়ের দিন আপনাকে নিচে রেখে ভাইয়া যখন উপরে গিয়েছিল। তখন নাহিদ ভাইয়ার রুমে ক্যামেরা লাগাচ্ছিল।বাকি বন্ধুরা ছাদে আড্ডা দিচ্ছিল। ওই মুহূর্তে কারোই রুমে আসার কথা ছিল না। কিন্তু ভাইয়া এসে দেখে ফেলায় নাহিদ ঘাবড়ে যায়। থতমত খেয়ে ভাইয়া কিছু বলার আগেই রুমের দরজা বাইরে থেকে আঁটকে দৌড়ে শাওনকে ডেকে আনে।

যদি ভাইয়া তখনো বুঝেছিল না নাহিদ কী করছিল। নাহিদই হঠাৎ ভাইয়াকে দেখে ভড়কে গিয়ে ক্যামেরাটা নিচে ফেলে দিয়েছিল। তখনই ভাইয়া ক্যামেরা দেখে রেগে যায়। বুঝতে পারে নাহিদের উদ্দেশ্য। পরে শাওন এসে এটা ওটা বোঝাতে থাকে, বলে এটা মজা ছিল। ওগুলো নাকি সব নষ্ট ক্যামেরা।
এমন নানান কথা বলে নিজেদের দোষ ঢাকতে চেষ্টাও করে।

কথা কাটাকাটিও হয় তাদের মধ্যে। একপর্যায়ে ভাইয়া রেগে দু’জনকেই মারতে থাকে।ওরাও রেগে ভাইয়ারকে বেঁধে বুকে ঘুষি মারতে থাকে। সেই সময় শাওনের ব্যাচলেটে ভাইয়ার গলায় আঁ/চ/ড় লাগে। র/ক্ত জমে কা/ল/শি/টে পড়ে যায়।
এরপর তারা ক্লো/রো/ফোর্ম ব্যবহার করে ভাইয়াকে অজ্ঞান করে শ্বা/স/রোধ করে মারে। কেউ যেন সন্দেহ না করে তাই বাম হাত কেটে দেয়। যেন সবাই ভাবে সে সুইসাইড করেছে।

পরে ভাইয়াকে ঠিকঠাক করে শুইয়ে চেঁচিয়ে সবাইকে ডেকে আনে।”
এসব শুনে ভোর নীরবে কাঁদছে। টপটপ করে ঝরে যাচ্ছে ওর চোখের নোনাজল। ওকে কাঁদতে দেখে তিতাস হাসল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ভোরের দিকে। এই মেয়েটা সত্যি খুব আবেগী। ডাক্তারদের এত আবেগী হলে চলে! তিতাস ভোরের হাতটা টেনে নিজের আঙ্গুল গুঁজে দিলো, ভোরের আঙ্গুলের মাঝে। এতে ভোরের কান্না আরো বেগে গেল। সে ভাবতেও পারে নি এসবের পেছনে কলুষিত সত্য লুকায়িত।

অথচ এতদিন পিয়াসকে নিয়ে ভুল ধারণা পোষণ করেছিল।
এটাও ভেবেছিল, পিয়াস হয়তো কাউকে ভালোবাসে। বাসা থেকে মেনে নেয়নি বিধায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। তখন তিতাস নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,

প্রিয় তুই পর্ব ১৫

-” এসব ঘটনা আমি কার থেকে জেনেছি জানেন?”
-”নাহিদের থেকে।”
-”না।”
-”শাওন?”
-”উহুম, আপনার বাবার থেকে।”

প্রিয় তুই পর্ব ১৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.