প্রিয় তুই - Romantic Golpo

প্রিয় তুই পর্ব ১৭

প্রিয় তুই

প্রিয় তুই পর্ব ১৭
নূরজাহান আক্তার আলো

-” এসব ঘটনা আমি কার থেকে জেনেছি জানেন?”
-”নাহিদের থেকে।”
-”না।”
-”শাওন?”
-”উহুম, আপনার বাবার থেকে।”

একথা শুনে ভোর হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল। আর কিছু ভাবার অবকাশ পেলো না। সে যখনই যা ভাবে তখনই তার বিপরীতে কিছু ঘটে। ওর বাবা জানত মানে? জানলে তাকে জানায় কেন?একথা ভেবে সে দু’হাতে মাথা চেপে ধরল। এই মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু শোনার অবস্থায় ওর নেই। এবার একটু দম নেওয়া দরকার। মস্তিষ্ক এত চাপ নিতে পারছে না।
ক্ষণে ক্ষণে প্রচন্ড মাথা ব্যথা অনুভুত উঠছে।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুদ্ধশ্বাস করা
এক একটা সত্য শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে। দম আঁটকে বুকে কষ্টের ভিড় জমে গেছে।নেত্রজোড়াও খুব জ্বলছে। কিছুক্ষণ আগেও, বিলের ঠান্ডা বাতাস তার মনটা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে।ওর অবস্থা আন্দাজ করে তিতাস কিছু বলতে গেলে ওর ফোন বেজে উঠল। স্কিণে বড় বড় অক্ষরে ভেসে উঠল তার মায়ের নাম। তিতাস কলটা রিসিভ করতেই উনি জানালেন, এখন বাসায় ফিরতে হবে নয়তো রাত হয়ে যাবে। তাছাড়া পরশুদিন তার পরীক্ষা। এখন বইতে চোখ না বুলালেই নয়।

এতো আর স্কুলের পরীক্ষা নয় যে, হেলা করে গুরুত্ব না দিলেও চলবে। এছাড়া, হসপিটালেও ওকে ঢু মেরে আসতে হবে। তারা যেখানেই থাকুক এক্ষুণি যেন নাহিদদের বাসায় যায়। সেখান থেকেই উনারা বাসার পথে রওনা দিবে।
তিতাস ‘আসছি’ বলে কল কেটে ভোরকে বলল,

-”যা জেনেছেন গিলে হজম করে ফেলুন। নিজেকে পুনরায় প্রস্তুত করুন আরো অনেক কিছু জানতে। আপনার আরো অনেক কিছু জানার বাকি। যদি দেখি, আজ একটুকু জেনে
মুচড়ে পড়েছেন, তবে পরবর্তীতে মাটিতে শুয়ে নাগিন ড্যান্স দিলেও আর কিচ্ছু জানাব। ফাস্ট এ্যান্ড লাস্ট বার জানিয়ে দিলাম।”

-”তুই কীভাবে মেনে নিয়েছিস, বলবি আমায়?”
-”যেভাবে সবাই মেনে নেয়।”
-”আমি যে পারছি না?”
-”ভোর আপনাকে আমি দুই মিনিট সময় দিলাম, নিজেকে সামলে নিন। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কে গেঁথে নিন, পিয়াস আপনার অতীত আর তিতাস বর্তমান এবং ভবিষ্যত। তাই অতীতের কারণে বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে ভুলেও পায়ে ঠেলবেন না। যদি পারেন শক্ত বাঁধনে আঁকড়ে ধরুন। আর হ্যাঁ এসব যেন ভুলেও আব্বু আম্মুর কানে না যায়। এবার উঠুন, যেতে হবে আমাদের।”

ভোর তবুও অনড় হয়ে বসে রইল। তা দেখে তিতাসই তাকে টেনে দাঁড় করাতে করাতে বলল,
-”ওরে বাবারে ওজন কত রে! বউ কোলে নেওয়ার শখ মিটে গেছে আমার।”
ভোর কোনো জবাব না নিয়ে গাড়ির কাছে হাঁটা ধরল। তখন তিতাস দৌড়ে গিয়ে পাশের সিটে বসে পড়ল। অর্থাৎ ড্রাইভ করতে পারবে না সে। ভোর এবারো কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ঘুরিয়ে নাহিদদের বাসার পথে রওনা হলো।
মাগরিবের আজান দিচ্ছে চারিদিকে।

ধীরে ধীরে ঘন আঁধারে ডুবে যাচ্ছে ত্রিভুবন।গ্রামের রাস্তা বিধায় লাইট নেই। পথঘাট
ঘুটঘুটে অন্ধকার। গাড়ির লাইটে যা দেখা যাচ্ছে। ঝোপঝাড় থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে। ততক্ষণে আজান থেমে গেছে। তিতাস কিছুক্ষণ মোচড়ামুচড়ি করে পেছনের সিটের দিকে হাত বাড়াল। শুকনো খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে গাইগুই করল কোনটা খাবে। সময় নিয়ে বেছে বেছে চিপস্, চানাচুর, আর ড্রিংকসের বোতল নিলো। বাকিগুলো সামনে দিকে ছুঁড়ে মারল।

যেন ওগুলোকে পোকা বসেছে। তারপর কুরমুড় শব্দ করে মনের সুখে চিপস্ খেতে থাকল। দু’একটা নয় মুঠো ভর্তি করে চিপস্ মুখে দিয়ে চিবাচ্ছে সে। খুব ক্ষুধা লেগেছে তার। ওকে এভাবে খেতে দেখে ভোর একটা বক্স এগিয়ে দিলো। ঘ্রাণেই বোঝা যাচ্ছে বিরিয়ানি। চাচী তিতাস আর রোজার জন্য রেস্তোরা থেকে কিনে নিয়েছিলেন।কারণ
উনি অবগত, এরা দু’জন ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। তিতাস চিপসের প্যাকেট রেখে বিরিয়ানির খেতে লাগল। আর খেতে খেতে ভাবল পাশের জনকে বলা ভদ্রতার পরিচয়। তাই সে ভোরকে বলল,

-”ভদ্রতার ক্ষাতিরে দিচ্ছি। আপনিও ভদ্রতা রক্ষার্থে “না, না, খাব না, তুই খা” বলুন।”
ভোর খাবে না ভেবে তিতাস যেই হাত সরাতে যাবে ভোর ওর হাত ধরে ফেলল। গাড়িটা এক সাইডে রেখে তিতাসের থেকে কেড়ে হাফ খাবার খেয়ে প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-”কেউ ভালোবেসে দিলে কীভাবে না করি, তুইই বল?”

-”আমি তো আপনাকে ভালোবেসে আমার আম্মুকে দাদীমা বানাতে চাই। তবে কী এই চাওয়ারও সম্মতি পাবো?”
ভোর মুখটা কুঁচকে পুনরায় গাড়ি স্টার্ট করল। তিতাস খেয়ে
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আড়মোড়া ভাঙল। তার এখন ঘুম প্রচন্ড পাচ্ছে। পেট শান্তি তো পৃথিবী শান্তি। আর পৃথিবীর শান্তি তো
নিজেরও শান্তি। আর নিজের শান্তি ধরে রাখতে ওর ঘুমাতে হবে, শান্তির ঘুম। মনে মনে একথা ভেবে তিতাস বলল,

-”একটা আবদার করি, রাখবেন?”
-”শুনি।”
-”আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে, একটু ঘুমায়?”
-”তো ঘুমা, বলার কী আছে?”
-”তাহলে ধার দেন?”
-”কি?”
-”আপনার কাঁধ। কথা দিচ্ছি, জ্বালাব না শুধু মাথা রেখে ঘুমাব।”

ভোরের জবাবের অপেক্ষায় না থেকে তিতাস ভোরের কাঁধে মাথা রাখল। পরক্ষনেই চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। ভোর কিছু বলল না, সরালোও না। অতঃপর ভোরের কাঁধে মাথা রেখেই তিতাস ঘুমিয়ে গেল। ঘুমের ঘোরে দু’একবার কাঁধে মুখ ঘষে আবার ঘুম। ভোর ওর কান্ড দেখে হাসল। জুনিয়র ছেলে বিয়ে করেছে। এসব জ্বালাতন তো সহ্য করতেই হবে!

বাচ্চা বর বলে কথা। এসব ভেবে মনে মনে হেসে তিতাসের চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। তিতাস ওর হাতটা টেনে বুঁকের বাঁ পাশে চেপে ধরে রাখল। খানিক্ষন পরে, নাহিদের বাসার উঠানে গাড়ি থামাল। ভিড় ভাট্টা নেই এখন। বাসাটা স্তব্ধ হয়ে আছে। কয়েকজন চেয়ার নিয়ে উঠানে বসে আছে। নাহিদের মৃ/ত্যু/র কথা শুনে সকালে যতটা খারাপ লাগছে, এখন ততটা লাগছে না। কেন জানি মন বলছে তিতাস ঠিক করেছে। বরং তিতাস না করলে সে নিজেই করত। নাহিদের মতো জ/ঘ/ন্য কীটের ম/রে যাওয়াই উত্তম। কারণ নাহিদ
শুধু তার শরীরে বিধবা তকমা লাগায় নি ,তার সন্মানেও হাত বাড়াতে চেয়েছিল।

যে প্রিয় বন্ধুর বউয়ের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নি/ক্ষে/প করতে পারে। আর যায় হোক তাকে বিবেকবান মানুষ বলা চলে না। সে পশুর চেয়েও অধম। এসব ভেবে সে তিতাসের মুখপানে তাকাল। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে সে। অথচ রাগ মিটাতে সাং/ঘা/তি/ক কান্ড করে বসে আছে। যেটা বোঝার উপায় কারো নেই। তিতাসের মা এবং চাচী উঠানে দাঁড়িয়েই পিয়াসের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ওদেরকে বাসায় যাওয়ার দাওয়াত দিচ্ছিলেন।

গাড়ি দেখে দ্রুত বিদায় নিয়ে
ভোরের কাছে এসে দাঁড়ালেন। ভোর উনাদেরকে ইশারা করে গাড়িতে উঠতে বলল। তিতাসে ঘুমাতে দেখে উনারা নিঃশব্দে
তাই ই করলেন। ভোর গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তখন শাওনের সঙ্গে ওর চোখাচোখি হয়ে গেল। শাওনের রাগান্বিত চাহনি।
ভোর গাড়ি ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকিয়ে তিতাসের কপাল
বরাবর ঠোঁটজোড়া ছুঁইয়ে হাসল। যেটা শাওন ছাড়া কারোর নজরে পড়ল না। তারপর গাড়ি চলল নির্দিষ্ট পথ ধরে। সময় গড়ালো, ঘন্টা পেরোলো। তিতাস তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন।

রাতপ্রায় এগারোটার দিকে ওরা বাসায় পৌঁছাল। ধীরে সুস্থে নেমে বাকিরা চলেও গেল। তখন ভোর তিতাসকে ডাকল,
-”তিতাস, এই তিতাস, উঠ, চল রুমে গিয়ে ঘুমাবি।”

তিতাস গাইগুই করে হেলেদুলে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সে খাবে না তাও জানিয়ে দিলো। ভোর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুতে এলো। প্রচন্ড ক্লান্ত সে। তাই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমে তলিয়েও গেল। পরক্ষণেই তিতাস উঠে ফোনটা নিয়ে বেলকণিতে চলে গেল। ওর ধারণাই সঠিক। সে ফোনে কিছু দেখে গম্ভীর হয়ে বেলকনিতেই রাত কাটিয়ে দিলো। পরদিন সকাল হলো। সময় মতো সকলেই একসঙ্গে খেতেও বসল। রোজা খাবে না বায়না ধরেছে এজন্য চাচী বকছেন। ভোর
অদূরে দাঁড়িয়ে সিদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়াচ্ছে। তিতাসের মা সবার প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন আর টুকটাক গল্প করছে। পাশে বসে তিতাসের বাবা খবরের কাগজে দৃশ্য বুলাচ্ছেন।

তখন তিতাস খাওয়ার মাঝেই চাচীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-”কেবল এক বাচ্চার মা তুমি। চায়লে বিয়ে করে জীবন শুরু করতে পারো। এমন কিছু হলে আমাকে জানাও, আমি নিজ দায়িত্বে তোমার বিয়ে সম্পূর্ণ করব। তবুও পরকিয়াতে লিপ্ত হইও না চাচী মা। আমি চাচ্ছি না তুমি পুনরায় বিধবা হও।”
একথা শুনে চাচী হতভম্ব। উপস্থিত সকলের দৃষ্টি তখন তার দিকে। সকলে যে যার কাজ থামিয়ে হতবাক দাঁড়িয়ে আছে।
তখন তিতাস পানি খেয়ে পুনরায় বলল,

-”আসলে রুপে ফিরে এসো চাচী। তোমার জারিজুরি শেষ। ”
তিতাসের এমন ব্যবহারে ওর বাবা রেগে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে
তার গালে থাপ্পড়ও বসিয়ে দিলেন। ফাজলামি ভালো তবে লিমিটের মধ্যে। কিন্তু তিতাস লিমিট ক্রস করে ফেলেছে।
উনি আরেক থাপ্পড় মারতে গেলে ভোর থামিয়ে দিয়ে টেনে দূরে নিয়ে গেল।

প্রিয় তুই পর্ব ১৬

থাপ্পড় খেয়েও তিতাসের মাঝে হেলদোল দেখা গেল না। সে চাচীর দিকেই তাকিয়ে আছে। এবার সে উঠে দাঁড়িয়ে চাচীর মুখোমুখি হয়ে অকপটে বলে ফেলল,
-”শাওন ভালো ছেলে নয়। আমাকে হিট করতে তোমাকে সে বেছে নিয়েছে। তার সঙ্গে তোমার যায় না চাচী, একেবারেই যায় না।”

প্রিয় তুই পর্ব ১৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.