প্রিয় তুই - Romantic Golpo

প্রিয় তুই পর্ব ২১

প্রিয় তুই

প্রিয় তুই পর্ব ২১
নূরজাহান আক্তার আলো

ভোর তিতাসের কাঁধের শার্ট আঁকড়ে ধরেছে। তিতাসও থেমে গিয়ে পিছু ফিরে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই, ওর কপালে পেলো ভোরের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া। সঙ্গে সঙ্গে সর্বাঙ্গে খেলে গেল, এক অদ্ভুত শিহরণ। বাক্‌শূন্য তিতাস, অপ্রত্যাশিত এ কান্ডে বিষ্মিত চাহনিতে অনড় হয়ে তাকিয়ে আছে৷ যেন ওর মস্তিষ্ক এখনো ধরতে পারে নি, কি ঘটে গেল? এটা তার ভ্রম, নাকি প্রাপ্তি? আর এত সহজে প্রাপ্তি মিলল! যে প্রাপ্তির পূর্ণ
হওয়ার প্রতীক্ষায় সে। শক্তপোক্ত আবরণে আবৃত মেয়েটা

অবশেষে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পরিশেষে ওকে মেনে নিয়েছে স্বামীরুপে। যদিও মনে মনে তার যে পণ ছিল, সেটা আজ স্বার্থক হলো। যেই মেয়েটা ওদের বিয়েতে সর্বদা নাকচ করেছিল। বয়সে ছোট ভেবে বারবার আঙুল তুলেছিল, কত কথা বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আজ সেই মেয়েটাই সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে স্বেচ্ছায় প্রথম ধাপ এগিয়েছে। যদিও তার পণ ছিল, ভোরই তাদের সম্পর্কের বাঁধনটা মজবুত করবে, করতে তাকে হবেই। ততক্ষণে সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে নিজের নাম ভোরের হৃদয়ে খোদাই করার। তার প্রেমসৌহার্দে উন্মাদ করার। তার নিগূঢ় প্রণয়ে পিপাসিত করার। তা হোক; কল্পিত লোক দেখানো ভালোবাসা অথবা মিথ্যাে খুনশুটির মাধ্যমে।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাছাড়া মেয়েরা হয় প্রচন্ড আবেগী। তারা কখনো ছেলেদের মন পড়ে না, খতিয়ে পরখও করে না ভালোবাসার গভীরতা।
ভুলেও বাজিয়ে দেখে না মোহ নাকি মুগ্ধতা? নাকি অকস্মাৎ মন থেকে গড়া এক প্রেমের কাব্যকথা। এর আগেই যে, তারা মজে ছেলেদের দুষ্টু মিষ্টি কথার জালে।সামান্য একটু যত্নকে

রুপ দেয় ভালোবাসার। মরিয়া হয়ে ওঠে প্রেমিক পুরুষটাকে হৃদয় নিংড়ে সমস্ত প্রেমটুকু ঢেলে দেওয়ার। বিশেষ করে ওর দেখা সব কয়টা মেয়েই এমন আবেগী।ভোরও এর ব্যতিক্রম নয়, আজ তা প্রমাণও পেলো। বেলাশেষে প্রাপ্তি তার হাতের মুঠোয়। ধীরে ধীরে ভোরও মেনে নিয়েছে তাকে বিশ্বাসী এক চিরসখা হিসেবে। ঠাঁই দিচ্ছে তার হৃদকুঠুরে। আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে শক্ত বাঁধনে। স্বপ্নও সাজাতে চাচ্ছে নব্যরূপে। যেখানে তার স্থান সবার শীর্ষে। আর ভোরের মনের নাগাল পেয়ে সে স্বযত্নে সাজিয়েও ফেলেছে এরপরের পদক্ষেপ।

তবে আজ সকালে ভোরের এত পরিবর্তন দেখে হতবাকও সে। এতকিছু একসঙ্গে আশা করে নি। এসব ভেবেই এখনো তিতাসের দৃষ্টি নিবন্ধ ভোরের সিগ্ধ মুখশ্রীতে। আর তার মুখপাণে চেয়েই সে
ভেবে যাচ্ছে নানান ভাবনা। ভোর আড়চোখে তা দেখে মুচকি হেসে নিজের কাজে মগ্ন হয়েছে। তিতাসের মুখ দেখে ভীষণ হাসিও পাচ্ছে তার। ছেলেটাকে এভাবে ভড়কে দিয়ে মজাও পেয়েছে। তারপর রুম গুছিয়ে চুল আঁচড়াতে বসেছে। যদিও এটা তিতাসের বেহায়া দৃষ্টি থেকে বাঁচার বাহানা মাত্র।তখনো

তিতাস নিজের ভাবনায় বিভোর। সামনে বসে থাকা মেয়েটা যে তার ভালোবাসা নয়, একথা সে এখনো জোর দিয়ে উঁচু গলায় বলতে পারবে। ভোরকে ভালোবাসার মতো পদক্ষেপ এখনো সে নেয় নি। তবে হ্যাঁ, ভোর বর্তমানে তার মায়া, এক
গভীর আসক্তি, এক বদ অভ্যাসের নাম। যাকে না জ্বালাতে শান্তি মিলে না, ভালো লাগে না। একরাশ অস্বস্থি এসে হানা দেয় তার বক্ষতীরে। খুঁ’চি’য়ে খুঁ’চি’য়ে ভার করে তোলে মনের
অন্দরমহল।তাই সে চায়, ভোর তার ভালোবাসা নয় আসক্তি

হয়ে থাকুক। বদ অভ্যাস হয়ে সঙ্গে থাকুক চিরকাল। অদৃশ্য মায়াতে বেঁধে রাখুক ইহকাল। এসব ভেবে নিজেকে সামলে বেশ বিরক্ত নিয়ে তিতাস বলল,
-“শেষে কী না আমার নিষ্পাপ গালের উপর হামলা? ফিরে এসে, আপনার হচ্ছে, ফাজিল সিনিয়র বউ কোথাকার।”
একথা বলে সে ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দ্রুত প্রস্থান করল। ইস,

হাতে একদমই সময় নেই। নয়তো এখনি সব শোধবোধ করে নিতো। ওকে যেতে দেখে ভোর এবার শব্দ করে হেসে উঠল।
সকালবেলা তিতাসকে নাস্তানাবুদ করতে পেরে তার অধরে ফুটে উঠল, মিষ্টি হাসি।মুখপদ্মে ছড়িয়ে গেল লাজুক আভা।
এবার জুনিয়র বরকে বুঝাতে হবে সিনিয়র বউয়ের দগ্ধীভূত
ভালোবাসার সমঝোতা। সেও বুঝাবে, ওর মনেও প্রণয়পুষ্প

পরিস্ফুটভাবে ফুটে ওঠার উপকথা। রচিত করবে তিতাস ও তার প্রেমকাব্যের সূচনা। এসব ভেবে হেসে ,’পাগল একটা’ বলে ঘুরতেই স্বজোরে টান খেলো বাম হাতে। তাৎক্ষণিক সে অনুভব করল কেউ একজন কামড়ে ধরেছে ওর ওষ্ঠজোড়া। এর পরপরই তার ওষ্ঠ ছেড়ে কেউ ছুঁইয়ে দিচ্ছে, ওর কপাল, গাল, থুতনিসহ, গ্রীবাদেশের কিছু অংশ।সে ছটফটিয়ে ধাক্কা
দিয়ে সরাতে গেলে তিতাসই তাকে ছেড়ে নিজের ঠোঁটজোড়া মুছতে মুছতে বলল,

-”তিতাস কখনো কারো ধার রাখে না। বরং পাওনা থাকলে দ্বিগুনহারে দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। যেমন, এখন দিলাম। কামড় দিয়েছি, আমি না আসা অবধি লোভনীয় ওই ঠোঁটের ব্যথাটা বহাল রাখার জন্য। যেন বারবার আমার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্যথা যখন দিয়েছি ফিরে এসে ব্যথাটা বাড়িয়ে আমিই ব্যথার উপশম করব, এখন বাই।”

একথা বলে সে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। ভোর ঠোঁট চেপে ধরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তিতাসের কামড়ে তার ঠোঁট কিঞ্চিৎ কেটেছে। লবনাক্ত স্বাদ পাচ্ছে জিহ্বার ডগায়।
তবুও সে হাসছে, কারণ এখন থেকে তার জুনিয়র বরের সব অত্যাচার সহ্য করতে প্রস্তুত সে।বিনিময়ে বুঝে নিবেএকবুক
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

আয়মান তিতাসের বাসার মোড়ে গাড়িতে বসে আছে। প্রায় সপ্তাহ খানিক হচ্ছে,সে তীক্ষ্ণভাবে তিতাসের গতি বিধি লক্ষ্য করছে।গোপনীয়তা বজায় রেখে দারোয়ানের মাধ্যমে খোঁজ
খবরও চালিয়ে যাচ্ছে। তিতাসের বাসার ঝুটা কাজের বুয়াও এতক্ষণে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ফেলেছে। এর
বিনিময়ে তাকে কিছু ক্যাশ টাকা দিতে হয়েছে। গরীব বা ধনী টাকার কাছে সবাইই পরাজিত।বুয়াও প্রথমে নীতিবাক্য পাঠ করেছিল, তারপর টাকা দেখে নিশ্চুপ।তিতাসের বাবা ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন। উনি বিজনেসের কাজে বাইরের দেশে যাচ্ছেন। ফিরবেন দিন চারেক পরে। শাহিনা রোজাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। রোজার গতরাত থেকে প্রচন্ড জ্বর। রাগ করেই তিনি ভোর বা তিতাস কাউকেই জানান নি।

টাকা ছিটালে ডাক্তারের অভাব নেই। অযথা তাদের পা কেন ধরতে যাবেন ভেবে। আর এখন তিতাসও বেরিয়ে গেছে তার পরীক্ষা দিতে। এখন বাসায় তিতাসের মা এবং ভোর। ওরাও
এতক্ষণে ওষুধ মেশানো খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে হয়তো।
এসব ভেবে আয়মান বসে কুটিল হাসছে। বাসা এখন ফাঁকা

এবার সে ধীরে সুস্থে তার ফায়দা উঠিয়ে আসবে। আয়মান এসব ভেবে তিতাসের বাসায় প্রবেশ করল, আশেপাশে না তাকিয়েই সোজা হাঁটা ধরল ভোরের রুমে। ভোর তখন ঘুমে ঢুলঢুল হয়ে বই পড়ছিল। নাস্তা করার পরেই ঘুমের কারণে
সে চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। পরিশেষে আর না পেরে
ঘুমিয়ে গেল। তখনই আয়মান পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে
ভোরের দিকে এগিয়ে গেল।তখনই বিকট শব্দে রুমের মধ্যে সাইরেন বেজে উঠল। অচেনা পুরুষ রুমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সাইরেন বেজে উঠবে। এবং তিতাসের কাছে পরক্ষণেই

মেসেজ চলে যাবে। হঠাৎ এমন শব্দে আয়মান হতবাক হয়ে
দিক বেদিক না তাকিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। নয়তো তার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। ভোর আর তিতাসের মা তখন ঘুমে বিভোর। তাদের কারোর কানেই পৌঁছাল না সাইরেনের শব্দ। তিতাস ততক্ষণে পরীক্ষা প্রশ্ন পত্র হাতে পেয়ে লিখতে শুরু করে দিয়েছে। সে বুদ্ধি করে তার ফোন জমা রেখেছে, রবিনের কাছে। কেন জানি কয়েকদিন ধরেই তার মনটা কু ডাকছে। বারবার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু ঘটবে। এজন্য সে
রবিনকে দায়িত্বও দিয়েছে সর্বক্ষণ ওর বাসার আশেপাশেই থাকার।

যদিও রবিন তাকে জানিয়েওছিল আয়মানের গাড়ি ঘুরঘুর করছে মোড়ের দিকে। তিতাস নিজেও দেখেছে এবং ব্যবস্থা নিয়েও রেখেছে। রবিন তখন তিতাসের বাসার দিকে চায়ের দোকানে ছিল। হঠাৎ একের পর এক মেসেজ দেখে তাৎক্ষণিক সে তিতাসের বাসায় যায়। কিন্তু ভোর, তিতাসের মা ছাড়া কাউকেই পায় না। গেটের দারোয়ান এমনকি বুয়াও লাপাত্তা তাই সে নিজেই গেটে কাছে বসে রইল। এখন শুধু তিতাসের ফেরার অপেক্ষা।

কিছুদিন আগে তিতাসের সঙ্গে রবিন গিয়েছিল আয়মানের সঙ্গে শেষবার কথা বলতে। তিতাস তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেছে, ভোরের পিছু ছাড়তে ভোর বর্তমানে বিবাহিত নারী।
আয়মান জবাবে হেসে বলেছিল,

-”ভোরকে এক রাতের জন্য দে। ”
-” লাগাম টেনে কথা বল। সে কিন্তু তোর বোনও হয়।”
-”বোন ভাবলে তার শরীরের লোভে পড়তাম নাকি? তাছাড়া
ওকে আমি কখনো বোন টোন মানি না, আর মানবও না।”
-” আমার হাত নিশপিশ করছে। এখনো বলছি, লাগাম টেনে কথা বল। নয়তো গ্লাস দিয়ে তোর থোবড়া ঢিলে করে দিবো।
তখন আবার বলিস না, শশুড়বাড়ির লোকদের আপ্যায়ন করতে জানি না।”

-”তুইও এত সাধু সাজিস না তিতাস। তোর বড় ভাই ভোরকে ছুঁতে পারে নি বলেই তুই যেঁচেই ভোরকে বিয়ে করেছিস। তা নয়তো তুমিও শা* লেজ গুটিয়ে পালাতে। যখনই দেখলে সে এখনো ভা ‘র্জি’ ন তখনই দরদে উতল উঠল তোমার। মরিয়া হয়ে উঠলে ভোরকে বিয়ে করার। কী ভেবেছ বুঝি না আমি?
এসব তোমার চাল।”
আয়মান কথা শেষ করতেই তিতাস কাঁটা চামচ গেঁথে দিলো আয়মানের হাতে। তারপরেই বিনাবাক্য সে উঠে এসে রবিন
বলল,

-”পরীক্ষা শেষ করেই ব্যবস্থা নিবো। ততক্ষণ খেয়াল রেখো।”
এসব ভেবে সেখানে বসে রবিনের অনেক সময় কেটে গেল।
তবুও ভোর অথবা তিতাসের মাকে না দেখে তার সন্দেহ গাঢ় হলো। সে এবার উঠে বেশ শব্দ করেই ভোরকে ডাকল। কিন্তু সাড়াশব্দ না পেয়ে বাধ্য হয়েই রুমে উঁকি দিলো। এরপর যা দেখে তাতেই তার শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল। ভোরের নাক মুখ দিয়ে গলগল করে র/ক্ত বের হচ্ছে। পুরো বিছানা র/ক্তে

প্রিয় তুই পর্ব ২০

ভিজে লালবর্ণ হয়ে গেছে। অবচেতন ভোর অনড় হয়ে পড়ে আছে বিছানার মাঝখানে। পাশের রাখা বই লাল রুপ ধারণ করেছে। রবিন এবার দৌড়ে গেল তিতাসের মায়ের রুমে।সে গিয়ে দেখে উনারও একই অবস্থা। উনিও পড়ে আছেন সাদা
টাইলস করা মেঝেতে। পরণের শাড়িটা র/ক্তে ভিজে বেহাল দশা। রবিন আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত হসপিটালে ফোন করে এ্যাম্বুলেন্স আনতে বলল। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়াল তিতাসদের বাসার গেটে।

প্রিয় তুই পর্ব ২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.