প্রিয় তুই - Romantic Golpo

প্রিয় তুই পর্ব ৩০

প্রিয় তুই

প্রিয় তুই পর্ব ৩০
নূরজাহান আক্তার আলো

ভোরের জন্য আনা শুভ্র রজনীগন্ধার উপরে লাল র/ক্তে/র ফোঁটা। তিতাস হাত থেকে তার হতবাক দৃষ্টি সরিয়ে ভোরের দিকে তাকাতেই দেখে ভোর জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে
পড়েছে।

তখনই ভোর হঠাৎ শরীরে স্বজোরে ঝাকুঁনি টের পেলো। সে টেবিল থেকে মাথা তুলে হতবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে রইল।
তার পুরো শরীর ঘামে ভেজা। চোখ দু’টো অশ্রুতে টইটম্বুর।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তখনো ভোরের শরীর থরথর করে কাঁপছে। ভোর এবার চট করে উঠে সামনে দন্ডায়মান তিতাসের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
ঝরঝর করে কেঁদেও ফেললো। তিতাস হতভম্ব হয়ে ভোরকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কী হয়েছে,জানতে চায়লেও ভোর উত্তর দিচ্ছে না,পাগলের ন্যায় তিতাসের শার্ট খামচে ধরে কাঁপছে। তিতাস ভোরকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো তার বক্ষমাঝারে। এতটাই শক্ত করে যেনো বুকের ভেতর ঢুকিয়ে নিবে। এভাবে কয়েক মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর ভোর স্বাভাবিক হতে শুরু করল। তিতাস তখন ভোরকে পানি এগিয়ে দিয়ে হেসে বলল,

-”গত রাতের আদরের রেশ এখনো কাটে নি বুঝি? হুম হুম আরো আদর চায় বললেই হয়, এত কান্নাকাটির কী আছে?”
ভোর জবাব না দিয়ে পানি খেয়ে ওর চেম্বারে চোখ বুলিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। ওহ, তাহলে স্বপ্ন ছিলো। মনে হচ্ছিল বাস্তবেই ঘটেছে। পুনরায় তার চোখের সামনে ভেসে উঠল স্বপ্নের দৃশ্য। মনের ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। সে এটাও আজ বুঝে গেছে তিতাস ওর কতটাজুড়ে আছে। ভোর অশ্রু ভেজা নেত্রে তিতাসের হাসিমাখা মুখখানার দিকেই তাকিয়ে রইল। হারানোর লিস্টে সে তিতাসের নামটা যুক্ত করতে চায় না, কখনোই না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ভয়ংকর স্বপ্ন তাকে তার মনের খোঁজ পাইয়ে দিয়েছে। সে বুঝে গেছে, এই জুনিয়রের মোহে বাজেভাবে আঁটকে গেছে, খুব ভালোবেসে ফেলেছে।

প্রাণবন্ত ও চঞ্চল ছেলেটা ওর মনে ধীরে ধীরে জায়গা দখল করে নিয়েছে। একথা মানতে ওর লজ্জাও নেই, দ্বিধাও নেই।
তখন ভোরকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিতাস নিজের চুলে আঙুল চালিয়ে বলল,
-”আমাকে কী আজ একটু বেশি হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে?”
-”আসতে দেরি হলো কেন?”
-”জ্যামে পড়েছিলাম।”
-”পরীক্ষা কেমন হয়েছে?”
-”ভালোই।”
-”বাসায় চল।”
-“চলুন।”

এমন টুকটাক কথা বলতে বলতে দু’জনে বেরিয়ে আসলো।
তারপর গাড়ি নিয়ে চলল বাসার পথে। ভোর বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। তার মনে চলছে নানান ভাবনা। তখন তিতাস ভোরের আঙুলের ভাঁজে আঙুল গুঁজে নিয়ে হাসল। তখন তিতাস ভোরের চেম্বারে প্রবেশ করে দেখে ভোর ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ঘুরের ঘোরেই ওর চোখ থেকে অঝরে গড়িয়ে যাচ্ছে অশ্রুবিন্দু। মুখে আওড়ে যাচ্ছে তার নাম। সে বুঝেছিল ভোর খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পাচ্ছে।

এজন্য হয়তো
তাকে বার বার তিতাস তিতাস করে ডাকছে। তাৎক্ষণিক সে ভোরের শরীরে হাত রেখে ডাকে তবুও ভোরের সজাগ হয় না। পরে জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে ডাকতেই ওর ঘুম ভেঙে যায়।
আর ওকে স্ব-শরীরে অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে
কেঁদে ফেলে।না জানি কী স্বপ্ন দেখেছে কে জানে। তবে ইচ্ছে করেই জিজ্ঞাসা করল না। খারাপ কিছু যত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে ততই মঙ্গল। তবে এখনো ভোরের মন খারাপ দেখে সে
বলল,

-” ডেস্কে ঘুমাচ্ছিলেন কেন?”
-” তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাই নি।”
-”আইসক্রিম খাবেন, নিয়ে আসি?”
-” তিতাস শোন!”
-”হুম।”

-“চল আমরা অন্য কোথাও চলে যায়। যেখানে হারানোর ভয় থাকবে না, কষ্ট থাকবে না, বিচ্ছেদ নামক শব্দও থাকবে না। আপনজনকে বেইমানি স্বচক্ষে দেখতে পাবো না। দিন শেষে এত অস্থিরতায় ভুগতে হবে না। চল আমরা এমন কোথাও চলে যায়। রোজকার এতসব ঝামেলা আমার আর ভালো লাগছে না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি দিনকে দিন।আচ্ছা, আমার চাওয়াটা কি খুব বেশি, তুইই বল?”

-”সময় সব ঠিক করে দিবে।”
-”কবে দিবে বল আমায়?”
-”এত উতলা হলে চলবে? আমি আছি তো।”
-”আমিও সবার মতো স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকতে চাই।
স্বাভাবিক একটা জীবন চাই। অথচ দেখ, আমার জীবনেই অশান্তির শেষ নেই। আচ্ছা, তুই একদিন বলেছিলি আমার বাবা নাকি পিয়াসের মৃ/ত্যু/র কথা জানতেন, কীভাবে বলিস নি আমায়?”

-”বিয়ের দিন আমাদের বাসায় আসার পর ভাইয়া আপনাকে রেখে উপরে চলে গিয়েছিল। রুমে প্রবেশের আগে আপনার
বাবা ভাইয়াকে কল করেছিলেন। একমাত্র মেয়ে আপনি, এ জন্য উনি আপনার চিন্তাও করতেন বেশি। ভাইয়া কথা বলা অবস্থায় রুমে ঢুকে নাহিদকে ক্যামেরা লাগাতে দেখে। রাগে ভাইয়া কল কাটতে ভুলে যায়, আর আপনার বাবা সব শুনে
ফেলে। পরে আমাদের বাসার সকলকে আপনার বাবা একে একে কল করেছিলেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে কাউকেই না পেয়ে এখানে আসার জন্য বেরিয়ে পড়েন। ততক্ষণে যা হবার হয়ে গিয়েছিল।”

-”সুখ আর আমার জীবনে আসবে না হয়তো।”
-”আসবে, সুখকে নিয়ে আসুন তারপর রাজ্যকে এনে আমরা
সুখরাজ্যে অনেক সুখে থাকব, অনেক।”
-”আমার জন্য কখনো ভুলেও রজনীগন্ধা ফুল আনবি না।
এটা তোর কাছে আমার অনুরোধ।”
-”কেন?”
-”কারণ লাল শাড়ি আর রজনীগন্ধা ফুল আমার অপছন্দ তাই।”

একথা বলে ভোর সিটে হেলান দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। অতঃপর ওরা বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসল। রোজা আর তিতাসের বাবা খেয়ে নিশিন্তে ভাতঘুম দিচ্ছেন। ভোর আর তিতাসকে খেয়ে নিতে বলে তিতাসের মাও রুমে চলে গেলেন। তখন তিতাস উঠে ড্রয়িংরুমে বসে টিভি অন করে একের পর পর চ্যানেল পাল্টাতে থাকল। তখন ভোর বিরক্ত হয়ে বলল,

-” খাবি না?”
-”সিনিয়র মেয়েকে বিয়ে করেছি নিজে হাতে খাওয়ার জন্য নাকি? ”
-”জুনিয়র ছেলেকে বিয়ে করেছি সাজিয়ে রাখার জন্য নাকি? তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে রুমে আয়, খাইয়ে দিবি আমায়।”
একথা বলে ভোর মিটিমিটি হেসে প্রস্থান করল। এই জুনিয়র বরকে দিয়েই তার সকল শখ আহ্লাদ পূরণ করবে সে। বয়স আর দ্বিধাদ্বন্দ উচ্ছনে যাক। সংকোচসহ পাহাড়সম অস্বস্তি মিইয়ে যাক, চিরতরে দূর হয়ে যাক। তিতাসকে নিয়েই সুখ খুঁজবে সে, অনাবিল সুখ। তাছাড়া ছোট ভেবে অনেক ছাড় দিয়েছে এবার নাহয় ছেলেটা বুঝুক বউয়ের জ্বালাতন কি।

এসব ভেবে ভোর একবার পিছু করে রুমে চলে গেল। আর
তিতাস হতবাক হয়ে ভোরকে চলে যেতে দেখে বলল, ‘একেই বুঝি বলে চোরের উপর বাটপারি।’

আয়মান হসপিটাল থেকে বাসায় না ফিরে সোজা মিশানের অফিসে এসেছে। মিশান হাতের কাজ শেষ করে মুখোমুখি বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। দু’জনের মধ্যে চলছে গোপন
আলোচনা। আর তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ভোর এবং তিতাস। তাদের নিয়ে এদের মাঝে চলছে নানান পরিকল্পনা।
আয়মান তখন এক নার্সকে পাঠিয়ে ভোরকে জানিয়েছিল, সে এসেছে ভোর যেন বাইরে আসে।” কিন্তু ভোর ওর উত্তরে জানিয়েছিল, ‘দেখা করবে না সে যেন চলে যায়।”

এরপরেও
সে অনেকক্ষণ ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল। রোগী দেখা শেষ করেও ভোর ওর সঙ্গে দেখাও করে নি বাইরেও বের হয় নি। নার্স তাকে এটাও জানিয়েছে ভোর নাকি তিতাসের জন্য অপেক্ষা করছে। তিতাস আসলে একসাথে বাসায় ফিরবে।
একথা শুনে রাগে ওর শরীর এখনো কাঁপছে। এ মেয়ে আজ কাল বড্ড বেশিই তেজ দেখাচ্ছে। লাজ-হীন বে/য়া/রা মেয়ে বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করে ভালোবাসা দেখাচ্ছে। দরদ উতলে পড়ছে ক্ষণে ক্ষণে।এখন কী না ওকে তেজ দেখাচ্ছে! যদিও ওর অজানা নয়, ভোরের তেজের উৎস স্বয়ং তিতাস।

তিতাসই তাকে দিনকে-দিন চতুর করে তুলছে। নয়তো তাকে থ্রেট দেওয়ার মেয়ে ভোর কখনোই ছিল না। যেই মেয়ে মিষ্টি না হেসে কথায় বলত না, সেই মেয়েটা চোখ রাঙিয়ে আঙুল তুলে ওকে শাসিয়ে যাচ্ছে। তিতাসকে সে ফলো করে একথা কোনোভাবে ভোর জেনেছে। এমনকি সে তিতাসের বাইকের ব্রেক ফেল করিয়েছিল ভোরের কানে একথাও পৌঁছে গেছে।
মেয়েটাকে যতটা বোকা ভেবেছিল সে আসলেই বোকা নয়।

বরং প্রচন্ড ধূর্ত সে।এমন আরো কিছু তথ্য জেনে ভোর ওকে
কল করে সরাসরি বলেছে,
-”তিতাসের ক্ষতি করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। এই আমিটাকে আর খারাপ হতে বাধ্য করো না, পরে সামলাতে পারবে না।”
-”বাপ্রে এত প্রেম, হা হা হা?”
-”আর একটাবার তিতাসের ক্ষতি করার চেষ্টা করেই দেখো। তারপর কী হয় কাজেই করে দেখাব।”
-”আসল রুপে আসলে তবে? ”

-”জুনিয়র বরের সেফটির জন্য মাঠে নামতেই হলো। তোমার বোঝাপড়া আমার সঙ্গে। তাই ভুলেও আমার শশুড়বাড়ির
কারো ক্ষতি করার চেষ্টা দ্বিতীয়বার করো না।”
-”আমি নাহয় করলাম না, তবে তোমার ভাইয়েরা?”
-”তাদেরও নাহয় আমিই দেখে নিবো।”

ভোরের মুখে এহেন কথা শুনে সে অবাক হলেও তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। মেয়ে মানুষ কী আর করবে? কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণিত করে ভোর তিতাসের চোখ এড়িয়ে ওর বাসায় এসেছিল। আর এসে এমনকিছু ঘটনা ঘটিয়ে যেটার জন্য সে মোটেও প্রস্তুুত ছিল না।

এর পরিশোধ সে নিবে, অবশ্যই নিবে।আরএদের কে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর সময় ঘনিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে অপেক্ষা করছে চরম এক দূগর্তি। নয়তো ডানা ঝাপটানো থামাবে না এরা। পরিকল্পনামাফিক ওর এই
কাজে ওকে সাহায্য করবে মিশান। এতক্ষণ যাবৎ ভুলভাল অনেক কিছুই বুঝিয়েছে সে মিশানকে। মিশানও রাজি।

প্রিয় তুই পর্ব ২৯

(বিঃদ্রঃ- ওই কাহিনিটুকু ভোরের স্বপ্ন ছিল। তোমরা অযথা আমাকে বকাবকি করলে।🙂🙂)

প্রিয় তুই পর্ব ৩১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.