বকুলের বাস্তবতা - Romantic Golpo

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ১০

বকুলের বাস্তবতা

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ১০
লেখক দিগন্ত

গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসি আমরা।খুব শীঘ্রই আব্দুল চাচার সাথে ময়না ম্যাডামের বিয়ে হতে চলেছে।এই নিয়ে পুরো বাড়িতে চলছে খুশির আমেজ।

আমার জীবনও এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।আবীরকে নিয়ে অনেক সুখে আছি।এরমধ্যে খবর এলো চাদনী ফুফু নাকি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।যাওয়ার আগে একটা চিঠিতে লিখে গেছেন,
-“তোমরা সবাই ভালো থেকে আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।আমি এই জীবনে শুধু আব্দুল ভাইকে ভালোবেসেছি।তাই তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা আমি ভাবতেও চাইনা।এই কারণে আমি চলে যাচ্ছি।আর কখনো ফিরে আসব না তোমাদের জীবনে।তোমরা কেউ আমার খোঁজ করোনা।আব্দুল ভাইয়ের ভবিষ্যৎ সুখের হোক।”

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এসব কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়।চাদনী ফুফু হয়তো অনেক অন্যায় করেছেন কিন্তু তার ভালোবাসাটা হয়তো ঠিকই ছিল।আব্দুল চাচার প্রতি তার ভালোবাসাটা একতরফা না হলে তিনি জীবনে সুখী হতে পারতেন।সত্যি একতরফা ভালোবাসার চেষ্টে কষ্টকর অনুভূতি এই পৃথিবীতে আর নেই।

পৃথিবী আপন গতিতে কিছু দিন এগিয়ে এসেছে।হালকা হালকা শীতের আমেজ চারিদিকে।এরকম সময়ে এমন একটা সংবাদ আসবে ভাবতে পারিনি!
আজ বাদে কাল ময়না ম্যাডামের সাথে আব্দুল চাচার বিয়ে।এরমধ্যেই আব্দুল চাচা নিখোঁজ।ময়না ম্যাডাম,আবীর সবাই খুব চিন্তিত।আমি তাদের এরকম অবস্থা দেখে চুপ থাকতে পারছিনা আবার চাইলে কিছু বলতেও পারছিনা।
আব্দুল চাচা আমায় কাল রাতে বলে গেছেন,

-“ময়না আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।ওকে এত সহজে ছেড়ে দিলে তো হয়না।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ময়নাকেও একটু শাস্তি দেব।তাই আজ থেকে আমি কিছুদিন স্বেচ্ছায় লুকিয়ে থাকবো।তোমাকে বলে যাচ্ছি যাতে তুমি আবীর আর আদৃতাকে সামলাতে পারো।ওদেরকেও বলতাম কিন্তু যেই আমি সারাজীবন ওদের এত কিছু শিক্ষা দিলাম এখন এসব বলতে গেলে ওরা আমায় ছেলেমানুষ ভাববে।তাই ওদের বলছি না তোমাকে বলছি।তুমি কিন্তু কাউকে কিছু বলবে না।আমি পরশুদিন ঠিক ফিরে আসবো।এসে ময়নাকে সারপ্রাইজ দেব।”

চাচার বলা কথাগুলো ভেবে মিটিমিটি হাসি আমি।কিন্তু ময়না ম্যাডাম আর আবীরের চিন্তিত মুখ দেখে খারাপও লাগছিল।যেহেতু আমি চাচাকে কথা দিয়েছিলাম তাই কিছু করতে পারছি না।
এভাবে একদিন চলে যায়।পুলিশ কেস পর্যন্ত করা হয়েছে কিন্তু চাচার কোন খোঁজ নেই।আমার মনে হয় এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।চাচা যাওয়ার আগে আমাকে একটি গোপন নম্বর দিয়ে যায়।সেই নম্বরেই ফোন করি।চাচা ফোন রিসিভ করতেই আমি বলতে শুরু করি,

-“আপনার ফিরে আসা উচিৎ চাচা।এভাবে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে সবাইকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছেনা।ময়না ম্যাডাম খুব কাঁদছেন।আদৃতাকেও সামলানো যাচ্ছে না এদিকে আবীরেরও একই অবস্থা।সবাই আপনাকে নিয়ে চিন্তিত।আমি আর পারছিনা আপনি প্লিজ চলে আসুন।”

-” আর তো মাত্র একটা দিন বকুল।কালকেই আমি চলে যাব।কাল আমি সবাইকে গিয়ে সারপ্রাইজ দেব।তুমি আমার একটা কাজ করতে পারবে? কাল ময়নাকে সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দেবে? আমি গিয়ে ময়নার সুন্দর মুখটা দেখতে চাই।”
-“আবীর কাল থেকে কিছু খায়নি…”

-“ও এই ব্যাপার! আমি তাহলে আবীর আর আদৃতার সাথে আজ যোগাযোগ করব।ওরা পুলিশ কেইসও তুলে নেবে।কিন্তু খবরদার ময়না যেন কিছু না জানে।”
কথাটা বলে কল কে*টে দেন চাচা।একটু পর আবীর আমার রুমে আসে।আমার দিকে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকায়।তারপর বলে,

-“চাচার সাথে মিলে আমাদের এভাবে ঠকালে বকুল ফুল? অন্তত আমাকে তো সত্যটা জানাতে পারতে।আমাকে কি বিশ্বাস নেই তোমার?”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-“চাচা জানাতে নিষেধ করেছিল তাই…”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগে আবীর শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরে।আমার মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হয়না।আবীর দুষ্টু হেসে বলে,

-“আমি কিন্তু এর রিভেঞ্জ নেবো এখন বকুল।তবে সুইট রিভেঞ্জ।”
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম আবীরের কথা শুনে।আবীর আমাকে কোলে তুলে নিল।তারপর আমাকে কোলে তুলে ঘুরতে লাগল।আমি বলতে লাগলাম,
-“কি করছ কি।আমার মাথা ঘুরছে।”
-“আমার কাছে আর কিছু লুকাবে কোনদিন?”
-“না।”

আমায় নামিয়ে দিল আবীর।তারপর বলল,
-“আজ রাতে আমরা বাইরে ডিনার করতে যাব।কাল বিয়ে আয়োজন তো করতে হবে কিন্তু ময়না আন্টির থেকে লুকিয়ে।আমি আদৃতা আর তাহেরা খালাকে সবকিছু বলেছি তোমরা সবাই মিলে বিয়ের আয়োজন করে নিও।তুমি রেডি হয়ে নাও আলো আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।”

আবীরের কথামতো রেডি হয়ে নিলাম আমি।কিছুক্ষণ পর আবীরের সাথে ডিনার করতে বের হলাম।ক্যান্ডেল লাইট ডিনার খুবই এনজয় করছিলাম দুজনে।আবীর নিজের যত্ন করে আমায় কাবাব খাইয়ে দিচ্ছিল।আবীরের ব্যবহারে আমি বরাবরের মতোই আকর্ষিত হই।এত ভালো একটা ছেলে ছিল আমার কপালেই লেখা ছিল।

আজকের দিনটা একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ আজ ময়না ম্যাডামের সাথে আব্দুল চাচার বিয়ে।আমি আব্দুল চাচার কথামতো ময়না ম্যাডামকে বউয়ের মতো সাজিয়ে দেই।এই দুইদিনেই ময়না ম্যাডামের চেহারা অনেকটা শুকিয়ে গেছে।ম্যাডাম তো আসতেই চাইছিল না তখন আমিই জোর করে নিয়ে আসি।যখন দেখল এভাবে বউয়ের মতো সাজিয়ে দিচ্ছি তখন তো আরো বেশি অবাক হয়ে যান।বলেন,

-“আমাকে এভাবে সাজাচ্ছো কেন?”
আমি কিছু বলিনা।আদৃতাও আমার সাথে ছিল।সাজানো কমপ্লিট হলে আমি বললাম,
-“এখন চলো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
ময়না ম্যাডাম কিছুই বুঝতে পারেন না।তখন আমরা দুজনে মিলে তাকে বাইরে নিয়ে আসি।বিয়ের সাজে সাজানো হয়েছে গোটা বাড়ি।এতক্ষণে বোধহয় ময়না ম্যাডাম বিষয়টা আন্দাজ করতে পারেন।আমি এবার ময়না ম্যাডামকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বললাম।

সব শুনে উনি বললেন,
-“তাহলে এই ব্যাপার।আসতে দাও আজ আব্দুলকে।আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার ফল ওকে পেতেই হবে।”
একটু পর চারিদিকে হইচই পড়ে যায়।হইচইটা শুনে ময়না ম্যাডাম দৌড়ে চলে আসেন ড্রইংরুমে।এসেই বলেন,
-“আব্দুল এসে গেছে তাইনা? কোথাও ও?”

আমি আর আদৃতা গিয়ে ময়না ম্যাডামকে সামনে দাড়াই।আদৃতা পাগলের মতো কেঁদে চলছে।আমিও সমান তালে কাঁদছি।আমাদের এভাবে কাঁদতে দেখে ময়না ম্যাডাম বলেন,
-“তোমরা এভাবে কাঁদছ কেন? কি হয়েছে? আব্দুল এসেছে তাইনা।দাঁড়াও আমি এবার সবকিছু সুদে আসলে আদায় করে নেবো।”

আমরা কি বলে ওনাকে শান্তনা দেব বুঝতে পারছি না।ময়না ম্যাডামের চোখ যায় মেঝেতে রাখা সাদা কাপড়ে ঢাকা মানুষটার দিকে।
আব্দুল চাচা আর নেই।বাড়িতে আসার সময় একটি সড়ক দূর্ঘটনায় উনি প্রাণ হারিয়েছেন।ময়না ম্যাডাম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান।আবীর বিধ্বস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
ময়না ম্যাডাম আবীরকে জিজ্ঞাসা করে,

-“কি হয়েছে আবীর? তোমার চাচা এভাবে শুয়ে আছে কেন? আজ না ওর আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা ছিল।এই দুইদিন আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলে এখন এই সারপ্রাইজ দিল! নিজের লা*শ দিলো সারপ্রাইজ হিসেবে! এটা কেমন সারপ্রাইজ আবীর কেমন সারপ্রাইজ! আমি চাইনা এই সারপ্রাইজ চাইনা।আমার শুধু আব্দুলকেই চাই।একবার ভুল বুঝে চলে গিয়েছিলাম তার বিনিময়ে এত কঠিন শাস্তি দেবে আমায়।

আমি তো ফিরে এসেছি আব্দুল শুধুমাত্র তোমার জন্য বিদেশের এত ভালো জীবন ছেড়ে।এই দিন দেখার জন্য কি এসেছি? ওঠো আব্দুল ওঠো দেখো আজ আমি তোমার কথামতো বউ সেজেছি।বকুল আর আদৃতা আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে।তুমি ওঠোনা প্লিজ।”

আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।আবীর চাচার নিথর দেহর সামনে বসে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে।বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর চাচাই তো তার অভিভাবক ছিল।মাথার উপর ছায়া হিসেবে ছিল।সেই চাচাকেই কিনা এভাবে হারাতে হলো।
আদৃতা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।ময়না ম্যাডামও সমানে বিলাপ করে চলেছেন।আমি কাকে রেখে কাকে সামলাবো সেটাই বুঝতে পারছি না।

কেন বারবার শুধু আমার সাথেই এমন হয়।যখন ভাবি সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে তখন সবকিছু জটিল হয়ে যায়।আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছিল।
ময়না ম্যাডাম একসময় ডুকরে কেঁদে ওঠেন।তার মুখ দিয়ে শুধু একটাই কথা বের হয়ে আসে,

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৯

-“তোমার অপেক্ষায় থাকব আব্দুল।তুমি নিজের কথা রাখলে না আমায় একা রেখে চলে গেলে।একদিন এসে নিয়ে যেও আমায় তোমার কাছে।”

বকুলের বাস্তবতা শেষ পর্ব 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.