বকুলের বাস্তবতা - Romantic Golpo

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ২

বকুলের বাস্তবতা

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ২
লেখক দিগন্ত

ফুফু আমার বিয়ের ব্যাপারে বলছিলেন,
-“মেয়েটাকে আমি বসে বসে খাওয়তে পারবো না।বিয়ে দিলেই ঘাড় থেকে বোঝা নামবে।তুই যে করেই হোক বিয়েটা পাকা কর।বরের বয়স বেশি তো কি হয়েছে? কত বড়লোক, টাকার অভাব নেই। বিয়েটা হলে আমাদেরই লাভ।”
ফুফুর কথা শুনে আমি চমকে যাই।ফুফু কোন বয়স্ক মানুষের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছে! আমি এটা কিছুতেই মানতে পারব না।এখন আমি পড়াশোনা করতে চাই বিয়ে নয়।

সাহস করে ফুফুর সামনে গেলাম।আমাকে দেখে ফুফু যেন একটু ভয় পেয়ে গেলেন।আমি ফুফুকে স্পষ্ট বলে দিলাম,
-“আমি বিয়ে করতে পারবো না ফুফু।তুমি এই বিষয় নিয়ে কোন কথা বলোনা।”
-“বকুল তুই বোঝার চেষ্টা কর পাত্রটা অনেক ভালো।এমন সম্মন্ধ হাতছাড়া করা যায়না।”
-“আমি না বলেছি তারমানে আমি বিয়ে করবোনা।আমাকে অন্তত এই বিষয়ে জোর করোনা।”
ফুফু আর কিছু বললেন না।কিন্তু তার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছেন।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতে ফুফু আমার ঘরে এসে বললেন,
-“সকালের ঘটনাটা ভুলে যা বকুল।আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল।তুই বিয়ে করতে না চাইলে আমি জোর করবোনা।”
আমি এটা ভেবে স্বস্তি পাই যে ফুফু এখন আর আমার বিয়ের ব্যাপারে ভাবছে না।সেইসময় যদি ফুফুর মনের কথা জানতে পারতাম তাহলে হয়তো অনেক কিছুই বদলে যেত।
এক সপ্তাহ পর,

ফুফা কিছু প্রয়োজনে শহরের বাইরে গেছেন।রবীন ভাইয়াও এখন মেসে গিয়ে উঠেছে।
আমি নিজের ঘরে শুয়ে ছিলাম।ফুফু হঠাৎ করে এসে আমার বিছানায় একটি শাড়ি আর কিছু গহনা রেখে বলল,
-“এই বকুল ওঠ।শাড়ি আর গহনা গুলো পড়ে সুন্দর করে তৈরি হয়ে নে।”
আমি ভীষণ অবাক হলাম এসব দেখে।বললাম,

-“এসব তো দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের সাজ।আমি এগুলো কেন পড়ব?”
-“আজ তোর বিয়ে তাই সাজবি।”
-“বিয়ে মানে?”
-“বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।একটু পরেই পাত্রপক্ষের লোকেরা চলে আসবে।”
ফুফুর কথায় আমার পুরো মাথা ঘুরে গেল।এই ছিল ফুফুর মনে।সুযোগ পেয়ে এখন আমার বিয়ে দিতে চাইছে।আমি কিছুতেই এই বিয়ে করব না।ফুফুর মুখের উপরই সাহস করে বললাম,

-“আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।আমি এখনই ফুফাকে সব জানাচ্ছি যে তুমি কি করতে চাইছ।”
আমার কথাটা শুনে ফুফু খুব রেগে যায়।আমাকে খুব জোরে একটা থা*প্পড় মে*রে বলে,
-“বেশি কথা বলবি না।আমি যা বলছি চুপচাপ তাই কর।নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”
আমি বুঝে যাই এখানে থাকলে বিয়ে না করে উপায় নেই।তাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম তবে ব্যর্থ হলাম।ফুফু জোরে আমায় ধরল।তার সাথে ফুফুর আরো কয়েকজন বান্ধবীও আসল।

ফুফুর এক বান্ধবীই নাকি বিয়ের কথা পাকা করেছে।ফুফু বললেন,
-“আমি আগেই জানতাম তুই ভালোয় ভালোয় কথা শোনার মেয়ে না।এখন দেখি তুই কি করতে পারিস।”
আমি সবাইকে অনুরোধ করে বলি,

-“প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আমি চলে যাব এখান থেকে।তবুও আমায় বিয়ে দেবেন না।”
কেউ আমার কথা শুনল না জোর করে আমায় সাজিয়ে দিতে লাগল।আমি এখন কি করব সেটাই বুঝতে পারছিলাম না।
মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকি তিনি যেন আমায় সাহায্য করেন।ফুফু বলে উঠলেন,

-“শোন বকুল ভদ্র মেয়ের মতো বিয়েটা করে নিবি৷যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে তোকে মে*রে ফেলব।”
-“তুমি যা খুশি করো তবুও আমি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এই বিয়ে করব না।”
-“বিয়েটা না করলে তোর মায়ের সন্ধান দেবো না।”

মায়ের কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।মা শব্দটা কত সুন্দর, তার থেকেও সুন্দর হয় মা নামক মানুষটি।
আমার মাও তো কত ভালো ছিল।আমায় কত ভালোবাসত।মায়ের ভালোবাসা আমার জন্য বেশিদিনের ছিলনা।আমি যখন ক্লাস 4 এ পড়ি তখন আমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়।মা-বাবাকে আলাদা হতে দেখা আমার জীবনের সবথেকে কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল।

প্রতিরাতে মায়ের জন্য কাঁদতাম।কিন্তু মা আমার খোঁজ নিতে আসেনি।মা হঠাৎ কেন যে বদলে গিয়েছিল সেটা তখন না বুঝলেও এখন আমি বুঝি।
আমার মা বরাবরই উচ্চাকাঙ্খী ছিল।বাবা একজন ব্যাংকার ছিল।আমার মায়ের অনেক চাহিদা ছিল।দামী গাড়ি,বাড়ি আরো অনেক কিছু।এসব নিয়ে অনেক ঝামেলা হতো বাবার সাথে।
একপর্যায়ে বাবা মা ঠিক করে এভাবে একসাথে থাকা সম্ভব নয় তাই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়।
এসব কথাই আমি ভাবছিলাম।ফুফু বলে ওঠে,

-“কিরে বল নিজের মায়ের সাথে দেখা করতে চাস না? আমি ছাড়া তোর মায়ের খবর কেউ দিতে পারবে না।তাই আমার কথা শোন তোর সাথে তোর মায়ের দেখা করিয়ে দেব।আর তোর যে স্বামী হতে চলেছে সেও অনেক ধনী।তোকে রাজরানী করে রাখবে।বয়স একটু বেশি এই ৪০ এর মতো হবে।সেটা কোন ব্যাপার না।সে অবিবাহিত।নিজের ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছে এতদিন।এখন তারাই চাইছে তাদের চাচার বিয়ে দিতে।”

ফুফুর সব কথাবার্তা শুনে আমি ভেবে নেই বিয়েটা করি।তাহলে আর যাই হোক না কেন মায়ের সন্ধান তো পাবো।জীবনে এমনিতেও বা কি করার আছে আমার।এই দুনিয়ায় এখন আপন বলতে তো শুধু মাই আছে।
তাছাড়া এখান থেকে চলে গেলেও কোথায় যাবো? তার থেকে বিয়ে করে নিলে যদি মাথার উপর একটু ছায়া পাই।
-“আমি বিয়েটা করতে রাজি আছি ফুফু।তুমি শুধু আমার মায়ের ঠিকানাটা দিও।”

-“এইতো জানতাম তুই রাজি হবি।এখন তৈরি হয়ে নে।একটু পরেই বিয়ে হবে।”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে কয়েকজনের সাহায্যে শাড়িটা পড়ে নেই।আগে কখনো শাড়ি পড়িনি।এই প্রথম শাড়ি পরার অভিজ্ঞতা হলো আমার।

পার্লারের কিছু মেয়ে এসে আমায় মেকআপ করিয়ে দেয়।আমি নিজের মনকে প্রস্তুত করে নেই বিয়ের স্বাদ গ্রহণ করার জন্য।কয়েক মাস আগে বাবার এক কলিগের মেয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম। মেয়েটা খুব খুশি ছিল বিয়ে নিয়ে সাথে তার মনে নতুন সংসার নিয়ে অনেক দ্বিধাও ছিল।
আমার মনে এসব খুশি,দ্বিধা কিছু নেই।জীবন যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই আমায় যেতে হবে এটাই যে আমার মানে বকুলের বাস্তবতা।

বিয়ের সাজ সম্পূর্ণ হলে আয়নায় গিয়ে নিজেকে দেখি।বাহ বেশ সুন্দরই লাগছে আমায়।নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।ফুফুর এক বান্ধবী বলল,
-“তোমায় খুব ভালো লাগছে।তোমার বর তো নতুন বউ দেখে একদম টাস্কি খাবে।”
ওনার কথায় কিছুটা লজ্জা পাই আমি।এরমধ্যে ফুফু চলে আসে।আমায় তাড়া দিয়ে বলে,

-“বর চলে এসেছে।তোমরা ওকে নিয়ে চলো।”
ফুফুর কথা শুনে আমায় নিচে নিয়ে যাওয়া হলো।নিচে গিয়ে দেখি গুটিকয়েক মানুষ।বিয়েটা অনাড়ম্বর ভাবে হচ্ছে জন্যই বোধহয়।আমি বেশি না ভেবে সোফায় বসে পড়লাম।

কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করল।আমি একবার আমার সামনে বসে থাকা লোকটাকে দেখে নিলাম।বড় একটা পাগড়ি পড়েছেন।মুখটা রুমাল দিয়ে ঢাকা।দেখে মনে হচ্ছেনা ওনার বয়স ৪০ বছর।বেশ ছিমছাম চেহারা।
আমায় কবুল বলতে বলা হলে আমি অনেকক্ষণ নিজের সাথেই যুদ্ধ করলাম বিয়েটা করব কি করব না এই নিয়ে।অবশেষে কবুল বলেই দিতাম।আমি কবুল বলার পর কাজী সাহেব বললেন বিয়ে হয়ে গেছে।

সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললো।বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর আমার ‘বর’ নামক ব্যক্তিটি মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে দিলেন।তার মুখ দেখে আমি খুব অবাক হয়ে যাই।এতো কোন ৪০ বছরের ব্যক্তি নয়।দেখে তো বোঝা যাচ্ছে ইনি তরতাজা যুবক।
উনি উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,

-“আমি আবীর চৌধুরী।আমার চাচা আব্দুল চৌধুরীর এই বিয়েটা করার কথা ছিল।শেষে যখন তিনি জানতে পারলেন পাত্রীর বয়স কম তখন তিনি সাফ জানিয়ে দেন এই বিয়ে করতে পারবেন না।আমি আর আমার বোন মিলেই চাচার বিয়েটা ঠিক করি।

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ১

চাচা ছোটবেলা থেকে আমাদের জন্য অনেক স্যাক্রিফাইস করেছেন তাই আমরা চেয়েছি তিনি খুশি হোন।চাচা চায়নি বিয়েটা ভেঙে গিয়ে আপনাদের অপমানিত হতে হোক।তাই চাচার অনুরোধে আমি বিয়েটা করে নিলাম।”
ওনার কথাটা শুনে সবাই কানাকানি করছিল।আমি শুধু ওনার মধ্যেই হারিয়ে গেলাম।এই আবীর নামক ছেলেটি আজ থেকে আমার বর!

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.