বকুলের বাস্তবতা - Romantic Golpo

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৩

বকুলের বাস্তবতা

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৩
লেখক দিগন্ত

আমার বিয়েটা কিভাবে হয়ে গেল বুঝলাম না।ফুফু আবীরকে জিজ্ঞাসা করল,
-“তুমি এই কথা আগে বলো নি কেন?”
-“আমার আসলে অদ্ভুত লাগছিল।আপনারা চিন্তা করবেন না আমি এই বিয়েটাতে রাজি আছি।আপনাদের মেয়েকে ভালো রাখার চেষ্টা করব।”
ফুফু বলে,

-“আমরা তো পাত্রের নাম জানতাম না।আমার বান্ধবী সালমা শুধু জানে।ও একটু বাইরে গিয়েছিল নাহলে বুঝতে পারতাম।যাইহোক বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তখন আর কি বলব।তোমাদের সংসার করে খেতে হবে।তোমরা ভেবে দেখো কি করবে।”
আমি ফুফুকে বললাম,
-“এবার আমার মায়ের ঠিকানা বলো।তোমার কথা তো আমি রেখেছি ফুফু।”
ফুফু আমতাআমতা করে বলল,

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“আমি তোদের বৌভাতের দিন গিয়ে বলব।এখন তোরা যা।আমি এদিকের পরিস্থিতি সামলাচ্ছি।”
আবীর অদ্ভুতভাবে তাকান।সবকিছু ওনার ঠিক বোধগম্য হয় না বোধহয়।আমি ওনার সামনে গিয়ে বললাম,
-“আপনি কি আপনার চাচার কথায় বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছেন?”
উনি হ্যা না কিছুই বললেন না।শুধু বলল, “চলো আমার সাথে।”
আমি ওনার পিছন পিছন যেতে লাগলাম।ফুফু বিড়বিড় করে বলল,

-“মেয়েটাকে যে বিদায় দিতে পারলাম সেটাই অনেক।কার সাথে বিয়ে হলো সেটা ব্যপার না।”
আমার কানে আসে ফুফুর কথাটা।আমি কোন প্রতিক্রিয়া করলাম না।চুপচাপ আবীরের পেছনে চলে যেতে লাগলাম।

আবীরের হাত ধরে ওনার বাড়িতে প্রবেশ করলাম আমি।আমার আসার কথা শুনে আবীরের চাচা আব্দুল চৌধুরী আসলেন।উনি আমাদের দেখে বললেন,
-“বাহ তোমরা এসে গেছো।তোমাদের দুজনকে একসাথে কত সুন্দর লাগছে।আমি যদি আগে জানতাম এত বড় ভুলটা করতাম না।এসো ভেতরে এসো।”
-“হুম যাচ্ছি।”

আবীর আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।একটি রুমে আমায় নিয়ে গিয়ে বলল,
-“আজ থেকে এই রুমে থাকতে হবে আপনাকে।কোন অসুবিধা নেই তো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।আবীর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ব্যাপারটা আমার একটু খারাপ লাগল।আমি নিজের একটা ভালো জামা বের করে পরে নেই।এই বাড়িটা কেমন যেন অদ্ভুত।কেউ আমার সাথে কথা বলতেই আসল না।হয়তো তেমন কেউ নেই এই বাড়িতে।

শুনেছিলাম আবীরের চাচা আর বোন ছাড়া কেউ নেই।আবীরের চাচাকে তো দেখলাম কিন্তু ওর বোনের দেখা পেলাম না।
আমি আর বেশি না ভেবে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।খুব ক্লান্ত লাগছিল আমার।কিছুক্ষণ পর আবীর রুমে এলেন হাতে খাবার নিয়ে।
আমায় বললেন,

-“এই খাবারগুলো খেয়ে নিন।আপনি বোধহয় খুব ক্ষুধার্ত।”
আমি খাবারগুলো নিয়ে খেতে শুরু করলাম।সত্যি খুব খিদে পেয়েছিল।
খাবার শেষ করার পর আবীর বলল,
-“আরো লাগবে?”
আমি না বলে দিলাম।
উনি বললেন,

-“কোন সমস্যা হলে আমায় বলবেন।আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব সাহায্য করার।”
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন।আমি ভাবছিলাম যে এখন কি করা যায়।খুব বিরক্ত লাগছিল ঘরে বসে থাকতে।
একটু বাইরে আসলাম।উদ্দ্যেশ্য বাড়িটা ঘুরে দেখা।একটা রুমের সামনে গেলে শুনতে পেলাম কারো গলা।
-“তুই এটা কিভাবে করতে পারলি ভাইয়া? এখন আমি শিলাকে কি বলব? তুই জানিস না শিলা তোকে কত ভালোবাসে।শিলা যদি কষ্ট পায় তাহলে শায়ন তো আমায় আর বিয়ে করবে না।নিজের বোনকে ও কত ভালোবাসে।”

-“আমি কি করতাম বল? চাচার অনুরোধটা ফেলতে পারলাম না।আমি শায়নের সাথে কথা বলব আদৃতা।তুই কোন চিন্তা করিস না।'”
-“শায়ন তোর কথা শুনবে বলে মনে হয়।শুধুমাত্র শিলার জন্য ও আমায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।শিলা বলেছিল জন্য।”
আবীর কিছু বলে না।নিজের বোনের জন্য তার মুখে চিন্তা স্পষ্ট ছিল।আমার কেন জানি নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।আমার জন্য বোধহয় ওনাদের এমন সমস্যায় পড়তে হলো।

আমি চুপচাপ ওখান থেকে চলে এসে শুয়ে পড়ি।খুব কান্না পাচ্ছে আমার।কেন যে বারবার এমন বাস্তবতার মুখোমুখি আমায় হতে হয়! আমার সাথেই শুধু এরকম হয় বারবার।আমি তো কারো খারাপ চাইনা।তাহলে কেন আমার জন্য মানুষ কষ্ট পায়।এখন এই সংসারে কেউ কি আমায় মেনে নেবে?
আমার ভাবনার মধ্যেই আবীর রুমে আসে।আমার পাশে বসে বলে,

-“আপনি কি কাঁদছেন নাকি? কোন সমস্যা।বাড়ির কথা মনে পড়ছে?”
-“না।”
-“আচ্ছা আমার আসলে আজ একটু বাইরে যেতে হবে।ফিরতে রাত হবে।আমার জন্য অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে নিবেন।”
আমি হ্যাঁ বললাম।

পরের দিন,
আজ বৌভাত উপলক্ষে আয়োজন চলছে।আবীর আমায় এসে বলে গেছে আজ অনেক মানুষ আসবে।আবীরের ব্যাপারে যতদূর জানলাম উনি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট।আমার ওনার জন্য ভালোই লাগছিল।অবশেষে ডাক্তার হতে না পারলেও ডাক্তারের বউ তো হতে পারলাম।
এরমধ্যে আবীরের বোন আদৃতা আমার রুমে আসল।ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আমাকে পছন্দ করছে না।আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,

-“এই মেয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যাও অনেক লোক এসেছে তোমায় দেখার জন্য।”
-“আচ্ছা একটু অপেক্ষা করুন।আমি যাচ্ছি।”
উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে নিচে চলে যান।আমার আবীরের বোনের ব্যবহার ভালো লাগল না।আমি এখন শুধু ফুফুর অপেক্ষায় আছি।তার কাছ থেকে আমার মায়ের ঠিকানা নেব একবার শুধু তাকে দেখতে যাব।দেখব আমাদের ছেড়ে গিয়ে কত সুখী আছেন তিনি।

একে একে অনেক মানুষ আমার সাথে দেখা করল।আবীরের অনেক বন্ধুও এসেছে।সবাই আমায় ভাবী বলছে।আমার কিছুটা লজ্জা লাগছে।
হঠাৎ কাউকে দেখে আবীর অবাক হয়।বলে,
-“শায়ন তুই! শিলা তুমিও এসেছ।”
আমি একবার দেখলাম ঐদিকে।ওনাদের কথাই কি তাহলে বলছিল কাল আদৃতা।আমার একটু ভয় লাগে।মনে হয় খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে।

শিলা মেয়েটা এগিয়ে এসে বলে,
-“তুমি আমায় কেন ঠকালে আবীর? আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসতাম।আর তুমি এভাবে আমায় ঠকালে।”
কথাটা বলে শিলা কাঁদতে লাগল।শায়ন আবীরের কলার চেপে ধরে বলল,
-“আমার বোনকে কষ্ট দিয়ে কাজটা তুই ঠিক করলি না আবীর।আমি এর প্রতিশোধ অবশ্যই নেব।”
আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল।আবীরের চাচা এগিয়ে এসে বলেন,
-“এখানে একটা অনুষ্ঠান চলছে এসব সিনক্রিয়েট বন্ধ করো।শায়ন বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তখন আর এসব বলে লাভ নেই।”

আদৃতাও চলে আসে।শায়ন আদৃতাকে দেখে বলে,
-“তুমি এসেছ শায়ন।”
-“হ্যাঁ একটা কথা জানো আমি আর তোমাকে বিয়ে করতে পারব না।”
শায়নের কথা শুনে আদৃতা কাদতে থাকল।আমায় দেখে বলল,

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ২

-“এই মেয়েটার জন্য সব হয়েছে।আমার ওকে সহ্য হচ্ছেনা।”
আদৃতা আমাকে মা*রার জন্য কাছে আসলে আবীর আগলে ধরে।বলে,
-“খবরদার আমার স্ত্রীর কোন ক্ষতি করার কথা ভাববি না।আমি ওর স্বামী। আমার সামনে এই দুঃসাহস দেখাবি না ”
ওনার কথা শুনে আমার মন খুশিতে ভড়ে উঠল।

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.