বকুলের বাস্তবতা - Romantic Golpo

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৪

বকুলের বাস্তবতা

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৪
লেখক দিগন্ত

আবীর আমাকে সবার সামনে হাত ধরে রুমে নিয়ে আসে।রুমে আসার পর উনি আমায় বললেন,
-“ওখানে যা কিছু হলো তাতে কিছু মনে করবেন না।আদৃতা এরকম মেয়ে নয় ও অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।কিছু কারণে এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছে না।”
আমি বললাম,

-“আমাকে বিয়ে করে আপনি বোধহয় খুব সমস্যায় পড়ে গেলেন তাইনা?”
আমার কথাটা শুনে আবীরের মুখ আরো বেশি গম্ভীর হয়ে গেল। তিনি বললেন,
-“বকুল আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।আমি মন থেকে এই বিয়েটা মেনে নিয়েছি।জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়।আপনি আমার স্ত্রী।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আপনার দায়িত্ব এখন আমার।আমি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করব।”
আবীরের কথা শুনে আরেকদফা মুগ্ধ হলাম আমি।জানিনা ওনার কথায় এমন কি যাদু আছে যা আমায় এত আনন্দ দেয়।
পরক্ষণেই আমার মনে পড়ে যায়।আচ্ছা আবীর কি শিলা নামের মেয়েটাকে ভালোবাসত? আমি কি ওনাদের মাঝে চলে আসলাম।যদি এমনটা হয় তাহলে আমি নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকব সারাজীবন।

আবীর আমায় চুপ থাকতে দেখে বললেন,
-“আমি জানি ব্যাপারটা আপনার কাছে অদ্ভুত লাগছে।আপনি কত আশা নিয়ে বিয়ে করেছেন।আপনার সব আশা হয়তো পূর্ণ হয়নি।তবে আপনি নিঃসংকোচে আপনার সব কথা আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন।যদি আমাকে ভরসার পাত্র মনে হয়।”

ওনার শেষ কথাটা খুব ব্যাথাতুর ছিল।যা ছুঁয়ে যায় আমার হৃদয়।আমি ওনাকে কি বলব? ওনাকে বলার মতো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।বাবার পরে আরেকজন যে কেউ এভাবে আমার জীবনে ভরসা হয়ে আসবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।
আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে আবীরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।উনি যে ভরসার হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন তা গ্রহণ করতে।ওনার সাথে নিশ্চিন্তে আগামী পথ চলতে।আচ্ছা এত সুখ আমার ভাগ্যে সইবে তো? আমার বাস্তবতা যে আমার জীবনে সুখকে চিরস্থায়ী স্থান দেয়নি।

ফুফুর আসার খবর শুনে আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলাম।ফুফু তো বাড়িতে প্রবেশ করে পুরো থম মে*রে গেছে।এত বড় বাড়ি দেখে বোধহয় ঝ*টকা খেয়েছে।
আমি ফুফুর সামনে গিয়ে বললাম,
-“আমি তোমার কথামতো বিয়েটা করে নিয়েছি।এবার তো আমাকে মায়ের ঠিকানাটা দাও।”
ফুফু বাঁকা হাসল।তারপর বলল,

-“দিতে পারি।তার আগে তোকে আমার আরো একটা কথা শুনতে হবে।”
ফুফুর কথায় বিরক্তি আর রাগে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।ফুফুকে বলি,
-“বেশি কথা না ঘুরিয়ে স্পষ্ট কথায় সত্য দাও।”

-“বেশ তাহলে শোন।আমাকে ১০ লাখ টাকা এনে দিতে হবে তবেই আমি তোর মায়ের ঠিকানাটা তোকে দেব।এত বড় বাড়ির বউ তো আমার কল্যানেই হতে পেরেছিস।আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকার উচিৎ তোর।যাইহোক আমি যেটা বলছি সেটা মন দিয়ে শোন টাকা ছাড়া এই মেহেরজান মুখ খুলবে না।”

ফুফুর সবকথা শুনে আমার মন বি*ষিয়ে গেল।একটা মানুষ কিভাবে এত নিচে নামতে পারে সেটা আমি বুঝতে পারলাম না।বাবা বেঁচে থাকতে ফুফুর এই রূপ আমি দেখিনি।তবে মাঝে মাঝেই দেখতাম বাবার কাছে নিজের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে টাকা নিত।তখন এসব বিষয় আমলে নেই নি।তবে এখন আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরে গেছি ফুফু কেমন মানুষ।
মায়ের খোঁজ নেওয়া আমার জন্য জরুরি ছিল।কিন্তু ১০ লাখ টাকা আমি কোথায় পাব? তাই আমি ফুফুকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম,

-“আমি পারবোনা ১০ লাখ টাকা জোগাড় কর‍তে।তুমি যদি না বলতে চাও বলো না।আমি ঠিকই আমার মায়ের ঠিকানা জোগাড় করে নেব।”

এই বাড়িতে আমার আরো একটা দিন চলে গেল।আবীর গতরাতে সোফায় শুয়েছিল।আমি বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম তাই খেয়ালই করিনি উনি কখন এসেছেন।

উনি সকালে আমায় ব্রেকফাস্ট করতে ডাকলেন।নিজের হাতে জ্যাম পাউরুটি তৈরি করলেন আমার জন্য।এই বাড়িতে নাকি কোন রান্নার লোক নেই।আবীর আর ওর চাচাই সব রান্না করে।আবীরের চাচা আব্দুল চৌধুরী শহরের অন্যতম বিখ্যাত শেফ।বয়স ৪০ এর কোঠায় হলেও চেহারায় এখনো তারুণ্যের দেখা মেলে।আবীরও ওনার থেকে অনেক রান্নাবান্না শিখেছেন।
খাওয়া শেষ করে আবীর বলল,

-“আজ আমার এক্সাম আছে।এই এক্সামটা অনেক জরুরি।তাই ফিরতে দেরি হতে পারে।আপনার কোন সমস্যা হলে তাহেরা খালাকে বলতে পারেন।”
উনি তাহেরা খালাকে ডেকে বললেন আমায় সাহায্য করতে।তাহেরা খালা নাকি এই বাড়ির কাজের লোক।রান্নাবান্না ছাড়া সব কাজ তিনিই করেন।
খাওয়া শেষ করে তাহেরা খালাকে হাতে হাতে সাহায্য করতে লাগলাম।মানুষটা অনেক মিশুকে।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের মধ্যে ভাব জমে গেল।

তাহেরা খালা ওনার গ্রামের গল্প করতে লাগলেন আমার সাথে।এসব শুনতে শুনতে আমার সময় ভালোই যাচ্ছিল।
যাক এই বাড়িতে অন্তত কথা বলার মতো একটা মানুষ পেলাম।তাহেরা খালার কাছে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করল এই বাড়ির কথা।যেহেতু ওনার সাথে ভালোভাবে মিশে গিয়েছিলাম তাই নিজের কৌতুহল মেটানোর জন্য ওনাকে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম,

-“আচ্ছা এই বাড়িতে কি আর কেউ নেই?”
-“না নেই।তোমার শ্বশুর শাশুড়ী তো অনেকদিন আগেই একটি এ*ক্সিডেন্টে মারা যায়।তখন আবীর বাবা ক্লাস ৯ এ পড়ত আর আদৃতা মামনি ক্লাস ৫ এ।ওদের চাচা আব্দুল চৌধুরী তখন ওদের দায়িত্ব নেয়।আগে থেকেই আবীরের বাবা মার সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিলনা।

আবীরের বাবা ব্যবসা সামলাতো আর ওর চাচা তো রান্নাবান্না করতো ঐ কি বলেনা শেফ।এই নিয়েই আবীরের বাবার সাথে ওনার সমস্যা ছিল।আবীরের বাবা মায়ের মৃত্যুর পর ওদের চাচাই ওদের আগলে রাখে।বিয়েসাদিও করে নি ওদের কথা ভেবে।আমি অনেক আগে থেকে এই বাড়িতে কাজ করি।দেখেছি এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কত ভালো।সবার মধ্যে কত ভালো সম্পর্ক।”

তাহেরা খালার কথা শুনে আমার মনে হলো এই পরিবার সত্যিই সুখী ছিল।কিন্তু আমি চলে আসায় সেই সুখ হয়তো গায়েব হয়ে গেছে।কাল আমার জন্য আবীর ওনার বোন আদৃতাকে কত কথা শোনালো।এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললা আমি।
হঠাৎ আদৃতার চিৎকারে আমি আর তাহেরা খালা ওর রুমে যাই।আদৃতা তাহেরা খালাকে বলে,

-“আমার ডায়মন্ড রিং তুমি দেখেছ খালা? আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।”
-“না দেখিনি তো ভালো করে খোঁজো মামনী।এখানে কোথাও আছে।”
-“আমি সব যায়গায় খুঁজে দেখেছি কোথাও নেই।আমার মনে হয় এটা চুরি করা হয়েছে।”
-“কি বলছ মামনী? কে চুরি করবে?”
-“এই মেয়েটা।”

আদৃতার ইশারা আমার দিকে।আমি পুরো হতবাক হয়ে যাই।আদৃতা বলল,
-“ভিখারি ঘরের মেয়ে বিয়ে করলে এমনই হবে।এই মেয়ে তুই তো একটা আস্ত চোর।লজ্জা করল না আমার রিং চুরি করতে।”
ওনার কথা শুনে লজ্জায় অপমানে আমার মাথা নিচু হয়ে গেল।আমি বললাম,

-“আমি কোন চুরি করিনি।আমায় এরকম মিথ্যা অপবাদ দেবেন না।”
-“আচ্ছা চল তোর রুমে গিয়ে চেক করে দেখি।”
হঠাৎ কেউ বলে উঠল,

-“কাউকে কিছু চেক করতে হবেনা রিং আমার কাছে আসে।”
আমি দরজার দিকে তাকালাম।আবীর বলছিল কথাটা।আবীর রিংটা আদৃতার হাতে দিয়ে বলল,

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৩

-“ভবিষ্যতে আমার স্ত্রীকে অপমান করার আগে পাঁচবার ভাবিস।আমি থাকতে ওর কোন অপমান সহ্য করবো না।”
আবীরের কথা শুনে খুশিতে আমার চোখে জল চলে আসে।কেউ যে আমায় এতটা ভরসা করবে,এভাবে রক্ষা করবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.