বকুলের বাস্তবতা - Romantic Golpo

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৭

বকুলের বাস্তবতা

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৭
লেখক দিগন্ত

আমি শুধু বোকার মতো তাকিয়ে থাকি।আব্দুল চাচা ময়না ম্যাডামকে কিভাবে চেনেন? আব্দুল চাচা আর দাঁড়ালো না।ময়না ম্যাডামের দিকে একবার অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।ময়না ম্যাডামের দীর্ঘশ্বাস আমার আড়াল হলো না।তবুও আমি কিছু না বলে চুপ থাকলাম।
এরপর ক্লাসের দিকে চলে গেলাম।

ক্লাস শেষে বাড়িতে ফিরে এলাম।বাড়িতে এসেও ময়না ম্যাডাম আর চাচার কথাই ভাবছিলাম।ততক্ষণে আবীরও বাড়িতে ফিরে আসে।রুমে এসেই আমাকে বলে,
-“সবকিছু ঠিক আছে তো বকুল।আজ ক্লাস কেমন হলো?”
-“ক্লাস ভালোই হয়েছে কিন্তু…”
আমি থেমে যাই।এই ব্যাপারটা ওনাকে জানাবো কিনা সেটাই ভাবছিলাম।আবীর জিজ্ঞাসা করে,
-“কিন্তু কি?”

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি ভাবলাম ওকে বলে দেওয়াই ঠিক হবে।তাই ওকে সবকিছু বললাম।সব শুনে আবীর বলে ওঠে,
-“ময়না আন্টি…তারমানে উনি তোমাদের মেডিকেলের ডক্টর?”
-“জ্বি।আপনি চেনেন ওনাকে।”
-“খুব ভালো করেই চিনি।শোন বকুল ওনার সাথে বেশি কথা বলার দরকার নেই।যতটুকু দরকার ততটুকুই।”
আমি আবীরের কথা শুনে অবাক হলাম।ময়না ম্যাডাম তো ভালো মানুষ তার সাথে এমনভাবে দূরত্ব বজায় রাখার কারণ খুঁজে পেলাম না।কিন্তু আবীর যখন বলেছে তখন আমি তার কথা নিশ্চয়ই শুনব।

আমি নিজের রুমে বসে ছিলাম তখনই হঠাৎ আদৃতা আমার রুমে এসে বলে,
-“ভেতরে আসব ভাবি?”
আদৃতার হঠাৎ আগমনে আমি থতমত খেয়ে গেলাম।তারপর বললাম,
-“হ্যাঁ এসো।”
আদৃতা এসেই বলতে লাগল,

-“আমায় ক্ষমা করে দাও ভাবি।তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি।আসলে শায়নকে আমি খুব ভালোবাসতাম।তাই আমি তখন তোমাকে মেনে নিতে পারিনি কারণ তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের জন্য শিলা কষ্ট পেয়েছিল।শিলা শায়নের সৎবোন হলেও শায়ন ওকে খুব ভালোবাসে।তাই শায়ন যখন বলল আমাকে বিয়ে করতে পারবে না তখন আর আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি।”

-“কোন ব্যাপার না আদৃতা।তুমি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে সেটাই অনেক।”
আদৃতা হাসে।জানিনা ও মন থেকে এসব কথা বলেছে কিনা।কিনা আমি মন থেকে চাই আদৃতার সাথে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর চাচা আবীরকে বলল,

-“অনেকদিন তো হলো তোমাদের বিয়ে হওয়ার।বিয়ের পর তো কোথাও ঘুরতেও গেলেনা।কাল নাহয় তোমরা আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসো।চাচী তোমাদের সাথে দেখা করতে চাইছিলেন।এখন তো গ্রামে উনিই আমাদের একমাত্র আত্নীয়।চাচীর ইচ্ছা তার নাত বৌ কে দেখা।নিজের ছেলে মেয়ে,নাতি নাতনি তো সবাই বিদেশে থাকে।তাই আবীরকেই নিজের নাতির মতো দেখেন উনি।”

আবীর বলল,
-“এখন কিভাবে যাবো? আমার আর বকুল দুজনেরই ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে।এখন গেলে তো হবে না।”
চাচা বলল,
-“একটা দিনেরই তো ব্যাপার।দেখো কোনভাবে যদি ম্যানেজ করতে পারো।”
-“ঠিক আছে চেষ্টা করে দেখছি।”
খাওয়া দাওয়া শেষে আবীর আমায় বলল,

-“আগামীকাল সকাল সকাল তৈরি হয়ে থেকো কাল আমরা গ্রামে যাবো।”
-“ঠিক আছে।”
আবীর আর কোন কথা বলল না।আবীর আমার আর নিজের জামাকাপড় গুলো গোছাতে লাগল।মানুষটা এত পরিপাটি যে কি বলব।আমাকে কোন কাজই করতে হয়না।সব তো আবীরই করেন।
গোছানো শেষ করে আমার দিকে তাকাল আবীর তারপর কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

-“আর জেগে থেকো না ঘুমিয়ে পড়ো।কাল কিন্তু সকাল সকাল উঠতে হবে।”
আমি চোখ দুটো বন্ধ করলাম তারপর কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরও পেলাম না।
সকালে আদৃতার ডাকে ঘুম থেকে উঠি।আদৃতা বলে,
-“চলো ভাবি আমাদের গ্রামে যেতে হবে।ভাইয়া একটু বাইরে গেছে একটু পরই চলে আসবে।আমায় বলল তোমাকে ডেকে দিতে।”

আমি তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।ফ্রেশ হয়ে তারপর সুন্দর একটা লাল শাড়ি দেখে পড়ে নিলাম।লাল রং আবীরের খুব প্রিয়।
আবীর রুমে আসলো।আমাকে লাল শাড়িতে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
-“কেমন লাগছে আমায়?”
-“ভালোই।”

আবীরের কথায় খারাপ লাগল।এত কষ্ট করে আমি সাজলাম আর ও এত ছোট করে ভালো বলে দিলেন।আমাকে অবাক করে পরক্ষণেই উনি বলে উঠলেন,
-“তোমাকে একদম লাল পড়ির মতো লাগছে বকুল।”
আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ছুটে বাইরে চলে এলাম।আবীর আমার অবস্থা দেখে হেসে ফেলল।এদিকে আমার বুকে ধকধক শব্দ হয়ে চলছে।

আমি,আবীর এবং আদৃতা তিনজনে গ্রামের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেই।আমি আদৃতার সাথে পিছনের সিটে বসি আর আবীর সামনে।লুকিং গ্লাসে আবীর বারবার আমার দিকেই দেখছিল।আমার খুব ভালোই লাগছিল ওনার চাহনিতে।আদৃতা ব্যাপারটা খেয়াল করে মিটিমিটি হাসে।

এভাবে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আমরা গ্রামে চলে যাই।গ্রামে এসে সর্বপ্রথম আমরা যাই আবীরের দাদার ভাইয়ের বাড়িতে।আবীরের দাদী(দাদার ভাইয়ের বউ) আমাদের দেখে খুব খুশি হন।তিনি বলেন,
-“ও তোমরা আইয়া গেছ।আইস ভেতরে বসো।আমাদের ছোট বাড়িত তোমাদের কোথায় আর বসতে দেব।এইহানে চেয়ারে বসো।”
আবীর বলল,

-“আমরা বসতে আসিনি দাদি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।চাদনী ফুফু কোথায়?”
দাদি চাদনী বলে ডাকলেন।ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন একজন মধ্যবয়সী মহিলা।৩৫-৩৬ বয়স হবে কিন্তু চেহারায় এখনো লাবণ্য ধরে রেখেছে।ইনিই বোধহয় চাদনী ফুফু।
তিনি এসেই বলেন,

-“তোমরা এসে গেছ।বসো আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।”
রান্নাঘরের ভেতরে গিয়ে সবার জন্য গরম ভাত আর আলুভর্তা নিয়ে এলেন।আমরা সবাই খুব তৃপ্তি করেই খেলাম।গ্রামের খাবারের অতুলনীয় স্বাদ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবীর আমাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বের হলো।আমরা বেড়াতে বেড়াতে একটা বকুল ফুলের গাছের সামনে এসে থামি।আবীর বকুল গাছের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কি সুন্দর ফুল।এটাই বকুল ফুল তাইনা?”
-“হ্যাঁ।”
আবীর কয়েকটা বকুল ফুল এনে আমাকে দিলো আর বলল,
-“এই নাও বকুল ফুল।এগুলো তোমার জন্য।”

আবীরের মুখে বকুল ফুল নামটা শুনে ভালো লাগল।তাই আমিও একটা আবদার করে ফেললাম।
-“আমার একটা কথা রাখবে? এখন থেকে আমায় বকুল ফুল বলে ডেকো।”
-“তোমার তো আজকাল অনেক শখ হয়েছে।আচ্ছা তুমি যখন বলেছ আমি না শুনে পারি।”
আমি হেসে দিলাম।তারপর চলে এলাম।আমাদের হাসিখুশি বাড়ি ফিরতে দেখে দাদি বললেন,
-“কি সুন্দর লাগে একসাথে। আল্লাহ চাইলে কিছুদিনের মধ্যেই পুতির মুখ দেখমু।”

দাদির কথায় লজ্জা পেলাম।কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? আবীর তো এখনো আমায় বাচ্চা মনে করে।
দাদির সাথে আর এই নিয়ে কথা হলো না।চাদনী ফুফুর কাছে রান্নাঘরে চলে গেলাম।চাদনী ফুফুর সাথে অনেক কথা হলো।একপর্যায়ে জিজ্ঞাসা করলাম,

-“ফুফু আপনার শ্বশুর বাড়ি কোথায়?”
আমার প্রশ্নে থমকে গেলেন উনি।মলীন হেসে বললেন,
-“আমার বিয়ে হয়নি।”
আমার খারাপ লাগল শুনে।উনি আরো বললেন,

-“জানো আবীরের চাচাকে আমি খুব ভালোবাসতাম।আমি আশায় ছিলাম ওনার বউ হবো।পরিবারের সবাইও রাজি ছিল।কিন্তু শহরে পড়াশোনার জন্য গিয়ে উনি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে যান।পরে সেই মেয়েটাই তাকে ধোকা দেয়।সে অনেক কাহিনি তুমি হয়তো জানো না।আমার সাথেও অনেক অন্যায় হয়েছে।”
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করল সেসব কথা।ফুফুকে জিজ্ঞাসা করতে যাব কিন্তু তার আগেই দাদি চলে এলো।তাই আর কিছু জানা হলো না।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে পুকুরের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম।খুব ইচ্ছা করছিল পুকুরে নামতে কিন্তু আমি সাঁতারই জানিনা।জানবোই বা কি করে শহরে বাবার কত আদরে বড় হয়েছি।
হঠাৎ কেউ এসে পিছন থেকে আমায় ধাক্কা দিল।আমি পুকুরে পড়ে গেলাম।পুকুরে পড়ে বাঁচার জন্য হাসফাস করতে লাগলাম।

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৬

পুকুরভর্তি পানি।আমি পানিতে ডুবে যাচ্ছিলাম।একসময় মরতে চাইলেও এখন আমি বাঁচতে চাই আবীরের জন্য।কিন্তু এই মুহুর্তেই কি আমি মরে যাবো।আমি ক্রমশ পুকুরে তলিয়ে যেতে লাগলাম।চিৎকার করে ডাকলাম কিন্তু কেউ এলোনা সাহায্য করতে।

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.