বকুলের বাস্তবতা - Romantic Golpo

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৮

বকুলের বাস্তবতা

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৮
লেখক দিগন্ত

পুকুরে প্রায় ডুবেই যাচ্ছিলাম আমি।বাঁচার আশা বলতে গেলে ছিলোই না।হঠাৎ করে আবীর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে।আমার চিৎকার,আত্মনাদের শব্দ হয়তো ওর কানে গিয়েছিল।আবীর এসেই পুকুরে ঝাপ দেয়।তারপর আমাকে টেনে উপরে তোলে।
আমার পেটে পানি চলে যাওয়ায় আমি প্রায় জ্ঞান হারাতে বসেছিলাম।আবীর সিপিআর দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে নেয়।জ্ঞান ফিরতেই আমি আবীরকে দেখি।ওর চোখ মুখের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আরেকটু হলে কেঁদেই দিত।আমাকে উঠতে দেখে বলল,

-“ঠিক আছো তো তুমি বকুল ফুল? এত খামখেয়ালি কেন তোমার? আসার আগে বারবার তোমায় সাবধানে চলতে বলেছিলাম।তুমি আমার কথা শুনলে না।আজ যদি তোমার ভালোমন্দ কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার কি হতো একবার ভেবে দেখেছ?”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আবীর উঠে চলে যায়।আমি বুঝতে পারলাম খুব অভিমান হয়েছে আমার উপর।যাওয়ার আগে আদৃতাকে বলে যায়,

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“তোর ভাবিকে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দে।আমি ওষুধ নিয়ে আসছি দেখি কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?”
আবীরের কথায় বিষম খেলাম আমি।এই সামান্য কারণে উনি ওষুধ আনতে যাচ্ছেন?
আদৃতা আমাকে তুলে নিয়ে যায়।বলে,
-“হাটতে পারবে তো ভাবি।চলো সাবধানে।তুমি কিভাবে পড়ে গেলে বলো তো?”
আমি মুচকি হেসে বললাম,

-“আমি পড়ে যাইনি আমায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।”
-“কি বলছ? কে ফেলে দিয়েছে তোমায়?”
আমি আর কিছু বললাম না।সবকিছু বলার আগে আমাকে আরো অনেক কিছু জানতে হবে।দুয়ে দুয়ে চার মেলাতেই হবে।
আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর, আবীর হাতে করে ওষুধ এনে আমায় বলল,

-“এই নাও এই ওষুধটা খেয়ে নাও তাহলে পেটে কোন জীবাণু গেলে তা ধ্ব*ংস হয়ে যাবে।”
-“তোমার তো ওষুধ সম্পর্কে অনেক জ্ঞান।”
-“আমি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট।আমি জানবো না তো কে জানবে।এখন খেয়ে নাও।আজকেই আমরা চলে যাব।আর একমুহূর্ত এখানে থাকা যাবে না।তোমাকে নিয়ে কোন ভরসা নেই।”

-“কি বলছ? আজই এলাম আর আজই চলে যাব।অবশ্য গেলে ভালোই হয়।অনেক গোপন রহস্যের সমাধান করতে হবে।”
-“গোপন রহস্য মানে? কিছুই বুঝলাম না।তুমি এখন রেস্ট নাও।এসব রহস্য নিয়ে ভেবো না।আর হ্যাঁ পড়াশোনায় ফোকাস করো।মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেই ডাক্তার হওয়া যায়না অনেক পড়াশোনা করতে হয় তার জন্য।”
আমি আর কিছু বললাম না।আমার মাথায় শুধু রহস্যগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।

অবশেষে গ্রামের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম।যাওয়ার সময় দাদি কত করে বলল,
-“এত তাড়াহুড়া কইরা না গেইলে ভালো হতো।ভাবছিলাম আইসা কয়েকটা দিন থাকবা।”
চাদনী ফুফুও বলল,
-“কিছুদিন থেকে যেতে পারতে।”
আমি হেসে বললাম,

-“চিন্তা করবেন না।হয়তো খুব শীঘ্রই আমাদের আবার দেখা হবে।”
আমরা গাড়িতে করে চলে এলাম।গাড়িতে যাওয়ার সময় আদৃতা আবীরকে বলে দিল,
-“জানো ভাইয়া ভাবি না পুকুরে পড়ে যায়নি কেউ ইচ্ছে করে ফেলে দিয়েছিল।”
আদৃতার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় আবীর।রাগী রাগী চোখ করে বলে,
-“কে করেছে এই কাজ? আমি তাকে ছা*ড়বো না।”
আমি শান্ত স্বরে বললাম,

-“সব জানতে পারবে।আগে আমার কথা শোন।আমি একটা ঠিকানা বলছি সেই ঠিকানায় চলো।”
-“কোন ঠিকানা বল?”
আমি ঠিকানাটা বললাম।আবীর সেই অনুযায়ী চলল।আদৃতা আমাদের সাথে আসতে চাইল না।ওর নাকি কোন জরুরি কাজ আছে তাই গাড়ি থেকে নেমে গেল।
আমি উপযুক্ত ঠিকানায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামলাম।আবীরকে বললাম,

-“একটু অপেক্ষা করুন।আমি আসছি।”
-“কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
-“এই বাড়িটায়।”
বলেই আমি বাড়িতে চলে এলাম।এটা ময়না ম্যাডামের বাড়ি।ময়না ম্যাডাম সবেমাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন।এই অসময়ে আমাকে দেখে বিচলিত হয়ে বললেন,

-“বকুল তুমি! এই সময়।”
-“আপনাকে তো আমি ফোন করেছিলাম।আপনার কাছ থেকে সবই জানলাম আপনার আর চাচার ব্যাপারে।সব শুনে আমার মনে হলো কোথাও একটা ঘাপলা আছে।এবার সবটা পরিস্কার করতে হবে।তাই চলুন আমার সাথে।”
ময়না ম্যাডাম স্পষ্ট বলে দিলেন,
-“আমি চাইনা অতীত নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করতে।যা হওয়ার হয়ে গেছে।এখন আমি জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছি।আমি আর অতীতে ফিরে যেতে চাইনা।”

-“অতীতে করা ভুল শুধরে নেওয়া জরুরি ম্যাডাম।আপনি হয়তো জানেন না আব্দুল চাচা আপনাকে কত ভালোবাসে।উনি আজও আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছেন।শুধুমাত্র আপনার অপেক্ষায় এতদিন অবিবাহিত রয়েছেন।হ্যাঁ এটা ঠিক কিছুদিন আগে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন তাও নিজের ভাইয়ের ছেলে-মেয়েদের অনেক জোরাজুরিতে।”

-“তুমি আমাকে কি করতে বলছ?”
-“শুধু চলুন আমার সাথে।”
ময়না ম্যাডামকে সাথে নিয়ে আসি আমি।আবীর ময়না ম্যাডামকে দেখে অবাক হলো।ময়না ম্যাডাম এগিয়ে এসে বলে,
-“আমায় তোমার মনে আছে আবীর?আমি তোমার ময়না আন্টি।অনেকদিন পর তোমায় দেখলাম।কেমন আছ ডেলিভারি বয়?”

-“ভালো।”
ব্যাস একটুখানি কথা বলে চুপ হয়ে গেলেন।আমি ময়না ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করলাম,
-“আপনি ওকে ডেলিভারি বয় বলছেন কেন?”
-“তুমি হয়তো জানো না আবীর আমার আর ওর চাচার মধ্যে চিঠি দেওয়া নেওয়ায় সাহায্য করত।আজ থেকে ১০ বছর আগের সে কত সুন্দর স্মৃতি।১২ বছরের ছোট ছেলেটা আজ কত বড় হয়ে গেছে।”
আমি ময়না ম্যাডামকে নিয়ে বসে পড়ি গাড়িতে।তারপর আবীরকে বলি,

-“আবার গ্রামে ফিরে চলো।”
আবীর বিরক্ত হয়ে বলল,
-“গ্রাম থেকেই তো আসলাম আবার ফিরে যাবো কেন?”
-“চলো গেলেই জানতে পারবে।”
আবীর গাড়ি স্টার্ট করল।আমি আব্দুল চাচাকে ফোন দিয়ে বললাম,
-“চাচা আপনি চলে আসুন গ্রামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।”

চাচা চলে আসার কথা দিল।আমি শুধু এটাই ভাবছি যে আজ যে কি মজা হবে।খুবই ভালো লাগবে এতদিন পর দুজন আলাদা হয়ে যাওয়া মানুষকে মিলিয়ে দিতে পারলে।
গ্রামে ফিরেই নেমে পড়ি আমরা।বাড়িতে ঢুকে দাদি আর চাদনী ফুফুকে ডাকতে লাগলাম।আমাদের ডাক শুনে তারা বেরিয়ে এলো।আমাদের আবার ফিরে আসতে দেখে খুবই অবাক হলো।দাদি জিজ্ঞাসা করল,

-“তোমরা আবার ফিইরা আইসলে যে?”
আমি হেসে বললাম,
-“আসতে হলো।না আসলে যে অনেক বড় একটা কাজ বাকি থেকে যেত।”
ময়না ম্যাডামকে দেখে চাদনী ফুফু বলে,
-“এই মেয়েটা কেন এসেছে এখানে? কি উদ্দ্যেশ্য? আমাকে একবার কলুষিত করে শান্তি পায়নি এখন আবার এসেছে এত বছর পর।”

-“কে কেন এসেছে সবই জানতে পারে।চাচাকে আসতে দাও শুধু একবার।”
-“আমি চলে এসেছি বকুল।”(আব্দুল চাচা)
ময়না ম্যাডামের সাথে আবার দেখা হলো চাচার।দুজনেই একে অপরকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেল।একে অপরের প্রতি অগাধ ভালোবাসা লুকিয়ে কত সহজে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।আমি হাসলাম।মনে মনে ভাবতে লাগলাম এসব তো আর কিছুক্ষণ মাত্র।তারপর আবার দুজন এক হবে।
আবীর প্রশ্ন করে,

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৭

-“সবাই তো চলে এসেছে বকুল ফুল।এবার বলো কি বলতে চাও।”
-“তুমি জানতে চেয়েছিলে না কে আমায় পুকুরে ধা*ক্কা দিয়েছে।সে হলো চাদনী ফুফু।”

বকুলের বাস্তবতা পর্ব ৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.