বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ - Romantic Golpo

বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ পর্ব ২

বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ

বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ পর্ব ২
সাবীহা সুলতানা মহিমা

নিদ্র ভাইয়ের বুকের উপড় পড়তেই যখন বুঝলাম আমি তার বুকের উপর আর তিনি বিছানায় চিত হয়ে পড়েছেন, ঝট করে তার হাত থেকে নিজেকে ঝারা মেরে ছারিয়ে নিয়ে রাগি শুরে বললাম,
এসব কি নিদ্র ভাই, আসছেন থেকে আমার পিছু পড়ে আছেন। আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? একবার টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে ধমকাচ্ছেন, তো একবার হাত ধরে টানাটানি করছেন। ফ্রি বিনোদনের জিনিষ নাকি আমি। না আপনার বিয়ে করা বউ লাগি।

এতগুলো কথা একসাথে বলে হাপাচ্ছি আমি। আর ভাবছি না জানি কি বলবে এখন আমাকে। আমি নিজেও অবাক কিভাবে এতগুলো কথা বললাম উনাকে আমি।
নিদ্র ভাই ভ্রু জোরা কুচকে তাকিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথা গুলো শুনলেন। এরপরে একটা শ্বাস ছেরে বিছানা ছেড়ে উঠে আমার বরাবর দাড়িয়ে বললেন,

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কি কি বললি তুই আমাকে, আসছি থেকে তোর পিছনে পড়ে আছি। যদি তোর মনে হয় আমি তোর পিছনে পড়ে আছি তবে তাই। আর যদি বলিস তোকে বিরক্ত করছি তাহলে বলবো তোকে বিরক্ত করার জন্যই আমার জন্ম। আর আজিবন আমার এই বিরক্ত তোকে সহ্য করতে হবে।

আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিদ্র ভাই কলার ঠিক করতে করতে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
উনি এসব কি বললেন,আমার মাথার উপড় দিয়ে গেছে সব। আরে ধুর এখন এখানে বসে উনার কথা ভাবতে থাকলে আমার আর ভাবিকে হলুদ ছোয়াতে যেতেই হবে না। আজ আমার ভাইয়ের বিয়ে। ওনার কথা ভেবে সময় নষ্ট করলে চলবে না।

শাড়ি হাতে নিতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো বিকেলে আমার সাথে কি হয়েছে।
কি পড়বো আমি এসব ভাবছি তখন আম্মু এনে আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললেন নে ধর এটা পড়ে নে। নিদ্র দিয়েছে। তুই ছেলেটাকে একটু শান্তিতে বসতেউ দিবি না। এত চাপের মাঝেও তোর জন্য আবার গিয়ে ড্রেস কিনে এনেছে। তুই শাড়ি সামলাতে পারিস না।

এটা আমি শপিং করার সময় বলেছিলাম।কিন্তু তুই তো শোনার পাত্রি না।
কি আশ্চর্য আমি কখন বলেছি ওনাকে আমার জন্য শপিং করতে। পড়বো না আমি। দেখি কি করে।
আমার আবার কৌতূহলি মন বলছে খুলে দেখ নেহা, না পড়লি খুলে তো দেখতে পারিস।
পড়বো না পড়বো না বলেও চট করে ব্যাগ খুলে দেখি খুবি সুন্দর একটা চকলেট কালারের গ্রাউন। সাথে মেচিং করা কিছু গহনা আর কসমেটিক।

ড্রেসটা দেখে এতো পছন্দ হয়েছে রাগ ভুলে আমি গ্রাউনটা পড়ে একটা হিজাব বেধে নিলাম। সাথে ওনার আনা গহনা গুলো। সাজ কমপ্লিট করে আয়নায় দাড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই ফিদা হয়ে তাকিয়ে আছি। আর মনে মনে ভাবছি আজ যে কত জন ক্রাশ খাবে। আহা শান্তি।

টপাটপ কয়েকটা সেলফি তুলে নিয়ে পেছনে ঘুরে দেখি নিদ্র ভাই আয়েশি ভঙ্গিতে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
উনাকে দেখেই আমি মুখ ভেঙচি কেটে বের হতে নিলে উনি বললেন কিরে তুইনা আমার দেয়া কিছু পড়বি না। এখন আবার এত সাজগোছ করে সেলফি তোলাও শেষ।
দেখুন নিদ্র ভাই এখন আর আমি মেজাজ খারাপ কবে আমার আনন্দ মাটি করতে চাই না। আর দিয়েছেন আবার খোটা দিচ্ছেন কেন। আমি চেয়েছি নাকি।

আমার কথা শেষ হতেই নিদ্র ভাই সোজা হয়ে বললেন সকাল থেকেই বড্ড লাফাচ্ছিস, মুখে বুলিও ফুটেছে দেখি। তোর একটা ব্যবস্থা করতেই হয় দেখছি।
আমি নিদ্রভাইয়ে কথায় পাত্তা না দিয়ে সাইড কাটিয়ে বের হতে নিলে শুনতে পেলাম,
“চাইলেও তুমি পালাতে পারবেনা ষোড়শী
তুমি যে আমার রাজ্য এক মাত্র রানী।”
এহ্ আইছে ডং।

ছাদে সবাই চিৎকার চেচামেচি করছে বুঝতে পারলাম কাজিন রা সবাই হলুদ নিয়ে মাখামাখি করছে।
আমি আর উপড়ে না গিয়ে ডইং রুমে গিয়ে আম্মুর পাশে দাড়ালাম।
কি মায়ের খুদা লেগেছে বুঝি?
হুম।

আম্মু আমাকে মুরগির লেগ পিস দিয়ে সাদা ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতে নিলে সেখানেও নিদ্র ভাই এসে বললেন এখনো ওরে খাওয়ায় দিতে হয় মামনি। বিয়ে দিলে তো এতো দিনে বাচ্চার মা হয়ে যেতো।
আর বলিস না বাবা আমি না খাইয়ে দিলে মহারানি সারাদিন না খেয়ে থাকবে।
আমি কিছু বলছি না চুপ চাপ খাচ্ছি।

নিদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি কেমন করে তাকিয়ে আছে। চোখের ইশারায় বুঝালাম কি খাবেন।
উনি না বোধক মাথা দুলিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।
আমি খেয়ে আমার রুমে এসে বসে আছি এখন বাইরে বের হলেই কাজিন মহলের হাতে ধরা খাবো। তাই দরজা অফ করে বসে আছি।

আমরা সব কাজিন রা প্লান করে হলুদের জন্য শাড়ি আর গ্রাউন নিয়েছিলাম। সবাই গ্রাউন বাড়িতে পড়ার প্লানিং থাকলেও আমি শাড়ি আগেই পড়েছিলাম, ভেবছিলাম গ্রাউন পড়ে পড়া যাবে। কিন্তু নিদ্র ভাইয়ের তো আবার সহ্য হলো না তাই শাড়ি বদলাতে হয়েছে আমার।
এখন সবাই শাড়ি পড়বে আর আমি গ্রাউন।
প্রায় আধা ঘন্টা পড়ে মনে হলো কেউ দরজায় নক করছে, তাই দরজা খুলে দেখি নিরা আর ইশা দাড়িয়ে আছে শাড়ি পড়ে। ওরা আমার রুমে সাজতে এসেছে।

কিরে তুই সেই যে এলি আর গেলি না কেন?(ইশা)
এমনি ভালো লাগছিলো না। (আমি)
নিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলে তুই এই গ্রাউন কই পাইলি এটাতো তরে কিনতে দেখি নাই। কখন কিনলি?
এটা রুমেই ছিলো আগে কেনা। ভাবলাম আজকেই পড়ি।
নিদ্র ভাইয়ের কথা বললাম না। কারন নিরা নিদ্র ভাইকে একটু একটু পছন্দ করে।
ওহ্ আচ্ছা চল তাহলে বের হওয়া যাক।(ইশা)

নিরা আর ইশা দুজনে আমার ফুপির মেয়ে আর ওরা টুইন হলেও দুজনের আচরন পুরাই আলাদা।
বাহির থেকে আম্মুর চিৎকার শোনা যাচ্ছে,এই তোদের হলো না আরো দেরি হবে।
আমরা তিন জন দ্রুত পায়ে বের হয়ে গেইটের সামনে গিয়ে দেখি সবাই প্রায় বের হয়ে গেছে বাকি আছি আমরা কাজিনরা আর নিদ্র ভাই।

আরিয়ান আর মুগ্ধ আমাকে দেখে চেচিয়ে উঠে বললো এই এটা কেরে। তোরে তো চেনাই যাই না।
আমি মুগ্ধর মাথায় চাটি মেরে বলরাম হ্যা ভাই এবার তারাতারি চলো।
মুগ্ধ আর আরিয়ান আমার চাইতে এক বছরের বড় হলেও আমাদের বন্ডিং সেম এইচদের মতো। ওরা দুজন আমার চাচাতো ভাই।

ওরা চার জন রিকশা নেয়ার পরে দেখা গেলো আমার বসার জায়গা নেই।
এখন আমি কোথায় বসবো, এমন সময় নিদ্র ভাই এসে বলে নেহা তুই আমার বাইকে চাইলে উঠতে পারিস। আমি মাইন্ড করবো না। আর নয়তো তোকে রেখেই আমরা চলে যেতে বাধ্য হবো। কিছু করার নাই।
আমি কথা না বলে চুপচাপ বাইকের পেছনে উঠে বসলাম।
আমাকে শক্ত করে ধরে বসিস, এমনিতেই বাচ্চা মানুষ পড়ে গেলে আবার ঝামেলা। অকালে বউ হারা হবে আমার আম্মুর ছেলে।

আপনি কি বাইক স্টার্ট দিবেন না আমি বাড়িতে ডুকে যাবো।
ওরা মনে হয় এত সময় চলে গেছে।
আমি বলতে না বলতেই নিদ্র ভাই ফুল স্পিটে বাইক স্টার্ট দিয়ে দিলেন।
আমি পড়তে নিয়েও পড়লাম না, শক্ত করে ওনার পাঞ্জাবি খামছে ধরে বসলাম।
লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখি ওনি বাকা হাসছেন।

পুরো রাস্তা আমরা নিরবই ছিলাম কেউ কারো সাথে কথা বলি নি।
নোমান ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে ত্রিশ মিনিটের রাস্তা।
নিদ্র ভাইয়ের সাথে এই পথ মনে হয় দশ মিনিটও লাগেনি এসেছি।
আমি বাড়ির সামনে এসে বাইক থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ডুকে ভাবির কাছে চলে গেলাম।ওখানে গিয়ে দেখি ইশা, নিরা আরিয়ান, মুগ্ধ আর বাড়ির সবাই দাড়িয়ে আছে।

আমাদের সবাইকে জুস খেতে দেয়া হয়েছে। আমি কেবলি একটু মুখে দিয়েছি, ওমনি একটা ছেলে এসে ধাক্কা দিয়ে জুসটা ফেলে দিলো।
জুসের গ্লাসটা পড়লো আমার হেজারের উপর। ছেলেটা পিছনে তাকিয়ে ছরি মিছ বলে কোথায় যেনো গেলো।
এদিকে আমার হিজাব ভিজে যাওয়ায় ভাবি বলতে লাগলো একি হলো, উনি কাকে যেনো ডেকে ওয়াশ রুমটা দেখিয়ে দিতে বললো।

বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ পর্ব ১

আমি চুপ চাপ ওয়াশ রুমে গিয়ে হেজাব খুলে ওড়না নিয়ে বের হলাম।
ভাবির কাছে যেতেই ভাবি বললো মিরাজের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি,,,,,,

বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ পর্ব ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.