ব্যাপারটা কাকতালীয় - Golpo Bazar

ব্যাপারটা কাকতালীয় || Romantic Valobashar Golpo

ছোট গল্প
ব্যাপারটা কাকতালীয় 
সিরাতুন ফারিহা

” আপনি আমাকে বিয়ে করতে কেন চাচ্ছেন না? ” অবাক হয়েই প্রশ্ন করলো ইরা। এর আগে যতবার পাত্রের সাথে দেখা করতে এসেছে কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি সে। প্রতিবারই কোনো না কোনো বাহানায় সে-ই বরং মানা করতো। কিন্তু এই প্রথম কোনো ছেলে তাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না বিষয়টা অবাক হওয়ার মতোই ইরার কাছে।
অয়ন সামনে বসে থাকা মেয়েটার প্রশ্নে একটু কেশে উঠলো। এতক্ষণ ধরে মনে মনে যা বলবে বলে গুছিয়ে রেখেছে সব আউলে গেছে। মেয়েটা যে অবাক হয়েছে তার চেহারায় সেটা খুব ভালোভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে।

” না, আসলে আমি এভাবে বলিনি। ”
” মানছি আপনি তা বলেননি। কিন্তু আপনি তো এটাই চাচ্ছেন যে বাসায় যেয়ে আমি বলি যে আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি। এর মানে তো এটাই না যে আপনি বিয়ের জন্য রাজি না। কিন্তু আমি কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলব। আমার তো সামনে বসে থাকা ছেলেটাকে একটুও অপছন্দ হয়নি “, বলেই মিটিমিটি হাসলো ইরা।
অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। সে ভেবেছিল মেয়েটাকে বিয়েতে রাজি না হওয়ার জন্য কিছু একটা বুঝ দিলেই হবে। এখন ব্যাপারটা আরও জটিল মনে হচ্ছে তার কাছে।
অয়নকে চুপ থাকতে দেখে ইরা আবার প্রশ্ন করল, ” আপনার কী কোনো প্রেমিকা আছে? ”
অবশ্য ইরা ধরেই নিয়েছে এটাই হয়তো তাকে বিয়ে না করতে চাওয়ার কারণ। কিন্তু অয়ন তার ভাবনায় পানি ফেলে দিয়ে বলল, ” না, প্রেমিকা নেই তবে আছে একজন। ”

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরা কৌতূহলী হলো। অয়ন বলতে শুরু করল, ” তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। একদিন ঝুম বৃষ্টিতে বাড়ি ফেরার সময় দেখেছি তাকে। আমার থেকে কয়েক বছরের ছোটো হবে। কিন্তু চিন্তাভাবনা বেশ প্রখর। নিজের ছাতাটা সে রাস্তায় পাশে বসে ভিজতে থাকা এক বৃদ্ধাকে দিয়ে নিজে ভিজে ভিজে যাচ্ছিল। ”
” আপনার এই ঘটনাটা দেখে মেয়েটাকে ভালো লেগে গেল? ”
অয়নের কথা তখনও শেষ হয়নি, ” না। মেয়েটা গার্লস স্কুলে পড়তো। গার্লস স্কুলে আর আমাদের স্কুলে একই সময়ে ছুটি হতো। আমি রোজ ছুটির পর মেয়েটার পিছু পিছু যেতাম। আর যতই তার কাজকর্ম দেখতে লাগলাম ততই তার প্রতি ভালো লাগা বাড়তে লাগলো। কিন্তু এরপর এক সময় তাকে হারিয়ে ফেললাম। ”
” হারিয়ে ফেললেন মানে? আপনি মেয়েটাকে নিজের মনের কথা জানাতে পারেননি? ”

” না, আমার মনের কথা তাকে বললেও সে বুঝতে কি-না সন্দেহ। একসময় স্কুল থেকে ফেরার পথে আর তাকে দেখতে পেলাম না। ভাবলাম হয়তো অসুস্থ। ততদিনে আমি তার বাড়ি চিনে গিয়েছি। সাহস করে একদিন সেখানে উপস্থিত হলাম। বাড়ির সামনের দোকানদারকে বললাম আমি মেয়েটার দূর সম্পর্কের আত্মীয় হই৷ গ্রাম থেকে ঢাকা আসার সময় আমার মা তাদের জন্য কিছু জিনিস দিয়েছিলেন। মেয়েটার বর্ণনা দিতেই লোকটা চিনে ফেললো কার কথা বলছি। তিনি জানালেন প্রায় দুসপ্তাহ হয়েছে তারা এখান থেকে চলে গেছে। কোথায় গেছে জিজ্ঞেস করতেই বলল সেটা তো তিনি বলতে পারবেন না “, একটানা কথা বলে সামনে রাখা পানির গ্লাসটা হাতে নিল অয়ন।

” সবই বুঝলাম। কিন্তু আপনি মেয়েটাকে চিনবেন কীভাবে? তার সাথে কখনও সরাসরি কথাও বলেননি। মেয়েটির নামটা জানতেন তো? ”
” নাম টাম কিছুই জানি না। দোকানদার তাকে তাসু আপা ডাকত। তিনি আমায় নামটা ঠিকভাবে বলতে পারেননি। মেয়েটার সেই স্নিগ্ধ মুখটা এখনও মাথায় গেঁথে আছে আমার, তবে সে নিশ্চয়ই আর ছোটো নেই। তাকে চিনব কীভাবে তা আমি নিজেই জানি না। তবে মন থেকে কাউকে চাইলে স্রষ্টা নিশ্চয়ই নিরাশ করবেন না। আমি বিশ্বাস করি একদিন না একদিন তাকে খুঁজে পাব আমি। ”
” আপনার বিশ্বাস দেখে মুগ্ধ হলাম। বাড়ি যেয়ে অবশ্যই আমি বলব আপনাকে পছন্দ হয়নি তবে এর আগে কিছু বলার আছে আমার। ”

অয়ন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ইরা বলতে লাগলো, ” আমার পুরো নাম জানেন তো? ”
অয়ন মাথা নাড়লো।
” আমি তাসনিম ইরা। ছোটবেলায় সবাই আমাকে তাসু বলেই ডাকতো। আর রইলো ঐ ছাতার ঘটনাটা সেটার জন্য বাড়িতে আমি ভীষণ মার খেয়েছিলাম। তাই ঐ ঘটনাটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। কিন্তু এত মার খেয়েও তখন মনে হয়েছে ছাতাটা দিয়ে ভালোই করেছিলাম। আর সেই ঘটনার পর থেকে একটা ছেলেও যে আমার পিছু নেওয়া শুরু করে তা টের পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই ছেলেটাকে আমি ছেলেধরা ভাবতাম। তাই যেচে আলাপ করতে মন সায় দেয়নি কখনও। ”

অয়নের অস্ফুট স্বরে বলল, ” ব্যাপারটা কাকতালীয়! ”
” হ্যাঁ, কাকতালীয়ই বটে। আজ এতদিন পরে যে ছোটবেলার সেই ছেলেধরার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি “, ইরা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
” এখন আপনি কী করবেন? ”
” কেন আপনিই তো বললেন বাড়ি যেয়ে কী বলতে হবে তাই বলব। ”
অয়ন বলল, ” আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি। ”
” কিন্তু আমি তো ফিরিয়ে দিচ্ছি না। ”

অয়ন ইরার হাতটা ধরে বলল, ” কাকতালীয়ভাবে আপনাকে যখন পেয়েই গেছি আর হারাতে দিচ্ছি না। আপনি আমায় বিয়ে করতে রাজি হন বা না হন আমি আপনাকেই বিয়ে করব। এই হাত ছাড়ানো ভীষণ কঠিন। ”
ইরা হাসলো প্রাণ খুলে। এতদিন পর মনের মতো মানুষ খুঁজে পেয়েছে সে তাকে কি আর হারাতে দেওয়া যায়!

বোন || শিক্ষণীয় গল্প || সামাজিক গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.