মন গহীনে - Romantic Golpo

মন গহীনে গল্পের লিংক || দোলন আফরোজ

মন গহীনে

মন গহীনে পর্ব ১
দোলন আফরোজ

সিরিয়াসলি, এই পিচ্চি মেয়েটা!
জ্বি বস, এটাই সেই মেয়ে।মাথা নিচু করে.
মেয়েটার হাত বাধা। মুখ টাও মোটা কাপড় দিয়ে বাধা।
মেয়েটাকে আগা গোড়া এক পলক দেখে।পড়নে সাদা স্কুল ড্রেস। মাথায় চুল গুলো ঘাড়ের একটু নিচ পর্যন্ত, দুপাশে দুই ঝুটি করা। আর কিছু দেখলো না, দেখার ইচ্ছেও নেই।

বিশ্বাস ই হচ্ছে না এই পিচ্চির এতো সাহস।অন্যায় করাটা কোনো দিনো মানতে পারি না আমি। আর এ যা করেছে তা গুরুতর অন্যায়। একজন মানুষের জীবনে হাত দিয়েছে। ইচ্ছে করছে নিকৃষ্ট শাস্তি দিতে। কিন্তু সেটাও তো আমার বিবেকে বাধবে। এতোটা নিকৃষ্ট ও তো এখনো হয়ে যেতে পারিনি।
বস কি করবো একে এখন?
আগে মুখ টা তো খুল।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মুখ খুলে দিতেই মেয়েটি গিয়ে উনার পায়ে পরে,, আংকেল প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আমি তো কিছু করিনি। আমার আব্বু আম্মু খুব চিন্তা করবে।কাদতে কাদতে।
ভ্রু কুচকে “”” আংকেল “”? বলেই হু হু শব্দে হেসে উঠে।

এক ঝটকায় পা ছাড়িয়ে,,,, কিচ্ছু করিসনি তুই? হাহাহা। আর কি বললি? আম্মু আব্বু চিন্তা করবে??
আমি তো এটাই চাই।ধরবো না ছুবনা তবুও সবাই ছিঃ ছিঃ করবে তোকে।বলেই একটা ভিলেনি হাসি দেয়।
প্লিজ আংকেল, যেতে দিন না আমায়।প্লিজজজজ।

আরেহ এই নিব্বি কাকে আংকেল আংকেল করছে বে??এক্ষুনি চোখের সামনে থেকে সরা একে।
আর শোন, একটা ঘরে টানা দুই সপ্তাহ আটকে রাখবি,কোনো দানা পানি দিবি না। দুই সপ্তাহ পর যেখান থেকে এনেছিলি সেখানেই ফেলে আসবি।ওর গায়ে হাত দিবি না একদম ই।এমনিতেই চারদিকে বদনাম রটে যাবে।কেউ কিডন্যাপ করে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে দেয় নি। বলে আবার ই ভিলেনি হাসিতে ফেটে পরে।

উনার কথা মতোই মেয়েটিকে একটা ঘরে আটকে রাখে সাথে থাকা চেলাপেলারা।
আমার প্রতিশোধ কমপ্লিট। তুই জানিস না মেয়ে, আমার কলিজায় হাত দিয়েছিল তুই। বলেই সামনে থাকা টেবিলে খুব জোরে ঘুষি মেরে টেবিল টা চূর্নবিচূর্ন করে দেয়।

বাইকে হেলান দিয়ে পকেটে এক হাত গুজে আরেক হাত দিয়ে ঠোঁটের কাছে সিগারেট নিয়ে সিগারেট টানছে কাব্য।
পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তার বেস্টি, জানে জিগার দোস্ত আবির। সাথে আছে আরো বন্ধুরা।
আবিরের সাথে কাব্যর বন্ধুত্ব অনেক দিনের। ক্লাস ৬ থেকে তারা একে অপরের জান প্রাণ। কলেজ ও তাদের একসাথেই ছিলো আর এখন ভার্সিটি ও একসাথে। দুজনেই জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স এর স্টুডেন্ট।
কাব্য রাজনীতি করে। ভার্সিটির ক্যাডার টাইপের যাকে বলে।সে দিক থেকে আবির অনেক জেন্টেল এবং অনেক ধৈর্যশীল। তবু একে অপরের জান।

আবির মিশুক টাইপের ছেলে। ছেলে মেয়ে সবাই মুটামুটি ওর বন্ধু। এদিকে কাব্য খুবই রাগী আর এরোগ্যান্ড এ ভরপুর ছেলে। কোনো মেয়েদের দিকে সে একনজরের বেশি দুবার তাকায় না।আর মেয়েরা বন্ধু হওয়া তো ইম্পসিবল। মেয়েদের একদম ই পাত্তা দেয় না সে।আর এই জন্যই হয়তো মেয়েরা ওকে বেশি পছন্দ করে।
আসলে মেয়েরা হ্যাংলা টাইপের ছেলেদের চেয়ে এটিটিউড ওয়ালা ছেলেদের বেশি পছন্দ করে। আর কাব্য তো এটিটিউড এর ভান্ডার।

৫’১১ হাইট, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ।মোটামুটি লম্বা চুল,হাল্কা লম্বাটে মুখে খোচাখোচা দাড়ি, আর সিক্স পেগ বডি যে কোনো মেয়েই ফিদা হতে বাধ্য। তাই তো ভার্সিটির জুনিয়র থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত সব মেয়েদের একবার হলেও ক্রাশ এর তালিকায় আছে কাব্য।
কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে কোনো মেয়ের দিকে একবারও সে নজরে ফিরেও তাকায় নি। তার মনে যে একজন ই বিরাজ করছে সেই শিশু বয়স থেকে।

সবাই যখন আড্ডা দিচ্ছিলো তখন সেখানে আসে মোহনা। মোহনা কাব্যদের ডিপার্টমেন্টের ই ফার্স্ট গার্ল।
কতোগুলো ছেলের প্রপোজাল যে সে রিজেক্ট করেছে এই কাব্য কাব্য করে। এখন তো বিয়ের পীড়িতেও বসছে না। এখনো আশায় আছে যদি কাব্যটা তার দিকে ফিরে তাকায়।

মোহনার সাথে কখনো কাব্যর বন্ধুত্ব তো দূরের কথা তেমন ভাবে কথাও হয়নি। আবিরের ফ্রেন্ড বলেই ভদ্রতার খাতিরে সে হাই হ্যলোর সম্পর্ক টা রেখেছে শুধু। আর বাকি মেয়েদের তো কোনো চান্স ই নেই।
মোহনা এসে দাঁড়াতেই আবির বলে কি রে মুখ টা অমন পেচার মতো করে রেখেছিস কেনো??
মোহনা মুখটা গম্ভীর করে বলে, বাসা থেকে বিয়ের জন্য অনেক প্রেশার দিচ্ছে। এদিকে মাস্টার্স ও চলে। এখন বিয়ে না করলেই নয়।

আবিরঃ ওয়াও গ্রেট। করে ফেল বিয়েটা। আমরাও একটা বিয়ে খাই, নাকি। বলেই হাত তালি মারে।
সবাই সাথে সাথে একমত পোষণ করে তাতে।
মোহনাঃ মজা নিচ্ছিস তোরা?? মন খারাপ করে
আবিরঃ আরেহ মজা নিবো কেনো? বিয়ে তো একদিন করতেই হবে। আর এখন করবি নাতো কি একেবারে বুড়ি হওয়ার পর করবি??

মোহনাঃ তোর বন্ধুকে বল এবার তো তার মৌনতা ভাংতে।
কাব্য সিগারেট টানতে টানতেই মোহনার দিকে একবার বিরক্তিকর দৃষ্টি তে তাকায়।
এবার বেশ রাগ হয় মোহনার।কাব্যর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কলার চেপে ধরে, কি ভেবেছো কি নিজেকে,হ্যাঁ?? মানুষ কে মানুষ বলে মনে করো না?( করুন চোখে চেয়ে) আজ কতোগুলো বছর তোমার অপেক্ষায় বসে আছি। কেনো একবার ফিরেও তাকাচ্ছো না??সেই বাচ্চা কালে খেলার ছলে কি না কি বলেছিলে তা নিয়ে এখনো বসে আছো?? এতোদিনে সে কোথায় আছে কেমন আছে কিছুই জানো না। বেচে আছে নাকি মরে গেছে তাও তো জানো না।

এবার প্রচন্ড রাগ হয়ে কাব্যের। এক ঝটকায় কলার থেকে হাত ছাড়িয়ে, এক আংগুল মোহনার সামনে ধরে, শাষিয়ে বলে, আজ বলেছো বলেছো। নেক্স আর জানি না শুনি এমন।আজ মেয়ে বলেই গায়ে হাত তুল্লাম না। তোমার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে থাকলে এতোক্ষণে ক*ব*র দিয়ে দিতাম।

আবিরকে উদ্দেশ্য করে, তোর বান্ধবি কে বলে দিস, আমার পিছনে ঘুরে সুন্দর মতো বিয়ে করে সংসার করতে।
হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে পা দিয়ে পিষে কলার ঠিক করে বাইক নিয়ে চলে যায়। পিছনে আবির অনেক ডাকার পর ও আর ফিরেও তাকায় নি সে।

মোহনা লজ্জায়, অপমানে কুকিয়ে যায়….

মন গহীনে পর্ব ২

1 thought on “মন গহীনে গল্পের লিংক || দোলন আফরোজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.