মন গহীনে - Romantic Golpo

মন গহীনে পর্ব ১৯

মন গহীনে

মন গহীনে পর্ব ১৯
দোলন আফরোজ

তমা আবিরের সংসার সুন্দর চলছে। কাব্যদের অনুষ্ঠানের পর ওরা তারেক রহমান এর বাসায় দ্বিরাগমন এ বেরিয়ে যায়। কাব্য কেউ বলে তিথীকে নিয়ে আসতে, তিথী ই যায়নি।
ফোনে কথা ও বলতে চেয়েছে তারেক রহমান তানিয়া বেগম, কথাও বলেনি সে।

কয়েকদিন কেটে গেছে, তিথী কাব্যর রুমেই থাকে কিন্তু তাদের মাঝে বিরাজ করে ভারত পাকিস্তান এর বর্ডার।
কাব্য ছাড়া বাকি সবার সাথে তিথীর সম্পর্ক খুবই ভালো। সেলিম সাহেব শাহানারা বেগম কায়েস সবাই খুব আদর করে তাকে। শুধু পছন্দ করে না অর্না, তা তিথী ভালোই বুঝতে পারে। কিন্তু তবু সে তার তরফ থেকে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে অর্নার সাথে মিশার। অর্নার ই তিথীর আদিক্ষ্যেতা পছন্দ হয় না।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এর মাঝে বাড়ির কথা খুব করে মনে হয়েছে, কেঁদেছেও অনেক। এসব দেখে পরেও কতোবার কাব্য বলেছে ওবাড়ি যেতে, যাবেই না ও। মেয়েটা আসলেই অনেক জেদি। যা বলে তাই।যেখানে সে বিয়েটাই মেনে নিতে পারেনি সেখানে বাবা মা তার সাথে যে এমন টা করলো তা কি করে মেনে নিবে।

সবাই একসাথে ডিনার করে তিথী কাব্য রুমে যায়। কাব্য তার কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকে। কিন্তু কি ব্যাপার, তিথী কই?
বেলকনিতে খুঁজে, ওখানেও নাই। ওয়াশরুমেও কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কাছে গিয়ে দেখে ভিতর থেকে দরজা লক। রাত সাড়ে ১০ টা বাজে। কাব্য বিছানায় বসে ফেসবুক স্ক্রল করছে। অনেকটা সময় হয়ে গেছে তিথী এখনো বেরুচ্ছে না।

হঠাৎ যখন ওর মনে পড়ে তখন ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ১১.২৪ বাজে। কাব্যর টেনশন শুরু হয়ে গেছে। কি হলো মেয়েটার,এখনো ওয়াশরুমে কি করে ও? আর কোনো সাড়াশব্দ ও তো পাওয়া যাচ্ছে না।
ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে ডাকে, তিথী কি করো তুমি? ভিতরে আছো তুমি?
কোনো শব্দ নাই।
এই তিথী, কথা বলছো না কেনো?প্লিজ সাড়া দাও।

আর নিতে পারছি না আমি।কিছু তো বলো প্লিজ।

দরজা ভেঙে ফেলবো কিন্তু। টেনশন হচ্ছে খুব। প্লিজ খোলো তিথী।
দরজা ভাংতে যাবে তখনই খট করে শব্দ হয় ভিতর থেকে। কাব্য যেনো প্রান ফিরে পায়।
তিথী ভিতর থেকেই বলে, ঠিক আছি আমি।
আমি ভিতরে আসবো, বলেই সে ভিতরে যেতে নেয়।
তখনই তিথী বলে এই না।🥺

সামনে আসো আমার।
তিথী এখনো ভিতরেই আছে।
না পেরে কাব্য ই দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে নেয়।
দরজাটা হাত দিয়ে চেপে ধরে তিথী।আমি আসতে না করলাম না? বলেই কান্না করে দেয়।
এবার কাব্যর বুকের ভিতর টা মুচড় দিয়ে উঠে। এই কি হয়েছে প্লিজ বলোনা। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। বলেই রাগের চোটে দরজায় হালকা চাপর মারে। একবার সামনে আসো প্লিজ। কেনো বুঝতে পারছো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ( কাতর কন্ঠে)
তিথী দরজা একটুখানি ফাঁক করে মাথা নিচু করে দাঁড়ায় কাব্যর সামনে।

কাব্য ওর চোখে চোখ রাখে। এ চোখে আজ ভয় লজ্জা দুটোই দেখতে পাচ্ছে কাব্য। দরজা টা আরেকটু ফাঁক করে তিথীর দুহাত তার হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে বলবে না আমায়?
তিথী লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলে। কি বলবে সে কাব্য কে, কিভাবেই বা বলবে।
কোনো সমস্যা হয়েছে?

টুপ করেই দু ফোটা অশ্রু কাব্য হাতে পড়ে।
কাব্য তিথীর হাত টা ছাড়িয়ে, ৫ মিনিট ওয়েট করো, আমি এক্ষুনি আসছি, বলেই বেড়িয়ে যায় সে।
ঠিক ৮ মিনিট পর ফিরে আসে। তিথী এখনো ওয়াশরুমেই। দরজায় নক করে কাব্য ওর হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। শপিং ব্যাগ টা নিয়ে তিথী তো অবাক। সেনেটারি ন্যাপকিন ও আরো প্রয়োজনীয় জিনিস আছে ব্যাগে।
সে তো কিছু বলিনি,কি করে বুঝলো তবে।

ভাবনা চিন্তা করে ফ্রেশ হয়ে বেরুতে নিবে কিন্তু বেরুতে পারছে না সে। কি করে যাবো এখন উনার সামনে, সবটাই তো বুঝে ফেলেছেন উনি। ছিহঃ কি জানি ভাবছেন এখন। 🫣
আসলে এ বাড়ি আসার পর এটাই তিথীর ফার্স্ট পিরিয়ড। আর নিজের বাড়ির মানুষের থেকে কিভাবে এসেছে এটা তো জানা ই। তাই তার এ ব্যাপারে কোনো প্রিপারেশন ছিলো না। আর কাব্য যে কি করে বুঝে গেলো সে তাও বুঝতে পারছে না। এখন কিভাবে সে ঘরে যাবে তাই ভাবছে। এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই কাব্যর গলা শুনতে পায়।

কি ব্যাপার বের টের হবে নাকি ওখানেই ঘুমানোর প্ল্যান। বালিশ পাঠাবো?
তিথী খট করে দরজা খুলে সোজা এসে নাকে মুখে কম্পল দিয়ে শুয়ে পরে।
কাব্য বেশ বুঝতে পারে মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে। তাই সেও আর কথা না বাড়িয়ে বেড সুইস টা অফ করে তার জায়গায় শুয়ে পরে।

মাঝরাতে হঠাৎ ই কাব্যর ঘুম ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে না কিসের শব্দ হচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুনে শব্দ টা তার পাশ থেকেই হচ্ছে। হাত দিয়ে টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দেখে তিথী পেটে হাত রেখে কাতরাচ্ছে।
এই তিথী কি হয়েছে তোমার? বলেই ওকে ধরে দেখে এই এসির মাঝেও সে ঘেমে নেয়ে একাকার।
এক ঝটকায় তিথীকে বুকে চেপে ধরে। কি হয়েছে জান বলো না? কষ্ট হচ্ছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?

পিটপিট করে তাকায় তিথী। ওকে খুব ক্লান্ত আর বিদ্ধস্ত লাগছে। তিথীর মুখটা দেখে কাব্যর ভিতর টা কেঁপে উঠে। একটা হাত তিথীর পেটে রেখে বলে এখানে কষ্ট হচ্ছে?
হালকা মাথা নাড়ে তিথী।
কেনো আমায় বললে না এ সময় পেইন হয় তোমার?
প্রথম দুদিন হয়।

অস্ফুট স্বরে বলে তিথী।
এখন তো ঘরে পেইন কিলার ও নেই মনে হচ্ছে। বলে ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। রাত ২.৩৭ বাজে।
কখন থেকে হচ্ছে ব্যাথা?
অনেকক্ষণ!

কপট রাগ দেখিয়ে, আমায় বললে না কেনো তবে? এই কষ্ট টা কি পেতে হতো? একটু ওয়েট করো। দেখছি কি করা যায়। বলে উঠে যায় কাব্য। ওর সারা রুম খুঁজে, কোনো হট ব্যাগ পায়না। সে অবশ্য জানতোই পাওয়া যাবে না এই রুমে। তবু বৃথা চেষ্টা করলো।
হট ব্যাগ আছে মা বাবার রুমে। কিন্তু এতো রাতে কি তাদের ডাকা ঠিক হবে? দুজনের ই হাই ব্লাড প্রেশার। তাই আর তাদের ডাকে না।

নিচে রান্না ঘরে চলে যায়। একটা পাতিলে গরম পানি করে নেয়৷ পানির বোতলে নিয়ে উপরে চলে আসে। তিথী এখনো ওভাবেই পেটে হাত দিয়ে পরে আছে। তিথীকে সোজা করে শুইয়ে পেটের উপর আরেকটা কাপড় দিয়ে তার উপর গরম পানির বোতল টা চেপে ধরে।
কিছুক্ষণ কাতরানোর পর তিথী শান্ত হয় কিছুটা।
ভালো লাগছে এখন?
উপর নিচ মাথা নাড়ে তিথী।

ঘুমানোর চেষ্টা করো এখন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি, বলে তিথীর চুলে বিলি কাটতে থাকে।
আজ মায়ের কথা খুব মনে পরছে তিথীর। পিরিয়ড এর সময় টাতে মা ও এভাবে পেটের উপর হট ব্যাগ চেপে ধরে চুলে বিলি কেটে দিতো।

কাব্য কে কেনো যেনো আজ আপন মনে হচ্ছে খুব। মা বাবার কথা মনে পরছে। খুব ইচ্ছে করছে কাব্যর কোলে মুখ গুজে ইচ্ছে মতো কাঁদতে। কিন্তু সব ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিতে নেই। অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
এই কি হয়েছে? খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে? ( ব্যাস্ত হয়ে)
মাথা নাড়ায় তিথী। উহুম, ভালো লাগছে এখন।

আচ্ছা ঘুমাও এখন। বলে আবারো চুলে বিলি কাটে। তিথী ও চোখ বুজে নেয়।
সকালে তিথীর ঘুম ভাংগে আগে। ঘুম ভেঙে দেখে কাব্য ওভাবেই আধশোয়া হয়ে বসে আছে ওর মাথায় হাত রেখে। কি নিষ্পাপ লাগছে ওকে। আর এই প্রথম তিথীর কাব্যর জন্য বিরক্তি কাজ করছে না। কেমন যেনো ভালোলাগা কাজ করছে। মানুষ টা বাকি রাত ওর জন্য এভাবে বসে কাটিয়ে দিলো?সত্যিই কি ভালোবাসে? হয়তো। ভাবিতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওর।

তিথীর নড়াচড়াতে ঘুম ভেঙে যায় কাব্যর।
চোখ ডলতে ডলতে ঠিক হয়ে বসে, কখন যেনো চোখ লেগে গেছিলো বুঝতে পারিনি। ব্যাথা আছে এখনো?
উহুম। এখন আর ব্যাথা নেই।
কাব্য ঘড়ি দেখে সাড়ে ৮ টা বাজে। আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি শেফালী কে বলি এখানেই নাস্তা দিতে।
কেনো ঠিক আছি তো আমি? ডাইনিং এই খাবো। একবারে কলেজের জন্য রেডি হয়ে।
উহুম আজ কলেজে যেতে হবে না তোমার।

অবাক হয়ে তাকায় তিথী। কেনো?🙄
তুমি সুস্থ না।
এবার লজ্জা পায় তিথী। চোখ নামিয়ে বলে এটাকে অসুস্থ বলে না।
যাই হোক আজ যেতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে আসো। নাস্তা করবো এক সাথে।
তিথীও বাধ্য মেয়ের মতো ওয়াশরুমে চলে যায়।কাব্যর সব কথা শুনতে আজ ভালো লাগছে।
সত্যিই সেই দুদিন আর তিথী কলেজে যায়নি।

সব আবার আগের মতো চলছে, শুধু তিথী কাব্যর সম্পর্কটা আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।কাব্য কে এখন আপন আপন লাগে।ওর সবকিছুই যেনো ভালো লাগে তার। এখন আর কাবির সিং ভাব টা নেই। অন্য সবার সাথে গম্ভীর, কথা কম বলে, তবে ওর কাছে একে পুরাই অন্যরকম। বেশ ভালো লাগে এটা তিথীর।
সেদিন কলেজে ক্লাস শেষে ফেরার সময় তিথী কলেজ গেট থেকে বেরুচ্ছে, কাব্য অনেকটা দূরে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দুটো মেয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে দেখনা ছেলেটাকে, কি জোসসস। আরেকটা বলছে পুড়াই আগুন। ইচ্ছে করছে ওর আগুনেই পুড়ে মরি।
ফার্স্ট মেয়েটা বলে চলে এটেনশন নেয়ার ট্রাই করি।( মেয়ে দুটো হয়তো সেকেন্ড ইয়ারের)
ওর কাব্যর দিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় তিথী গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ায়।
ছেলে দেখলেই ওর আগুনে পুড়ে মরতে মন চায়? আচ্ছা কাল কলেজে আসার সময় কেরুসিন আর দিয়াশলাই নিয়ে আসবো নে।

এই মেয়ে কে তুমি? কোন ইয়ারে পড়ো?
সিরাত মুনজারিন তিথী, ফার্স্ট ইয়ার,সাইন্স গ্রুপ, সেকশন এ।
এক মেয়ে থাপ্পড় দিতে নেয় আর সাথে বলে, চিনিস আমাদের? আমরা সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আর
তোর কি জ্বলে এত্তো ডেসিং একটা ছেলে তোর মতো সুন্দরী কে পাত্তা দিচ্ছে না আর তাকে আমরা পটিয়ে নিতে যাচ্ছি?
তিথী হাত টা ধরে মুচড় দিয়ে বলে, আমাকেও তোরা চিনিস না। হি ইজ মাই হাসবেন্ড এন্ড ডোন্ট ডেয়ার টু লুক এট হিম। ফারদার আই উইল পিক আপ ইউর আইস।

মন গহীনে পর্ব ১৮

বলেই রাগে ফুসফুস করতে করতে মেয়ে দুটোর সামনে দিয়েই চলে যায় ও কাব্যর কাছে।
কি ব্যাপার? মহারাণী এতো রেগে আছে কেনো হুম?এক ভ্রু উঁচিয়ে।
কিছুনা চলুন, বলেই কাব্যর সাথে বাইকে উঠে যায়।মেয়ে দুটোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুই আংগুলে ওর চোখ বরাবর মেয়েদের চোখ তাক করে যায়।
হা হয়ে আছে ওই মেয়ে দুটো।

মন গহীনে পর্ব ২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.