মন গহীনে - Romantic Golpo

মন গহীনে পর্ব ২২

মন গহীনে

মন গহীনে পর্ব ২২
দোলন আফরোজ

পরদিন কলেজ থেকে ফিরে তিথী না খেয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। কাব্য ওকে বাসার সামনে নামিয়ে বাইরে গেছে কি একটা কাজে। শাহানারা বেগম এসে তিথীর খোঁজ নিয়ে গেছে। এসে দেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ৩ টা বাজতে চল্লো, এখনো দুপুরে খাওয়া হয়নি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ছোট করে ডাকে তিথীকে। না খেয়েই শুয়ে পরলি কেনো রে। ৩ টা বেজে গেছে, একটু খেয়ে ঘুমা।

চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে তিথী। মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, একটু ঘুমাই মামনী। এমন আদুরে আবদার শুনে আর না করতে পারেন নি শাহানারা বেগম। কপালে একটা চুমু দিয়ে দরজা টা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান উনি।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেধার আগমন উনার মোটেও পছন্দ হয়নি এই সময়। এর কারণ ও আছে বেশ।
কাব্য যখন ওর পুতুল বউ এর জন্য একরকম পাগল ই হয়ে গেছিলো, কোনো ভাবেই ওরে সামলানো যাচ্ছিলো না। এক কথা ওর আমার পুতুল বউ ই চাই। তখন অনেক খুঁজেও কোনো হদিস পায়নি তারেক রহমান এর।

তখন আসতে আসতে একদম নীরব চুপচাপ হয়ে যেতে থাকে কাব্য। তার বয়সের ছেলেদের সাথে খেলতো না, টিভি দেখতো না, এমনকি পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে গেছিলো। স্কুলে যেতে চাইতো না। সারাক্ষণ নিজের রুমে চুপটি মেরে বসে থাকতো।এভাবেই কেটে গেছে এক বছরের বেশি সময়। দিন দিন কেমন যেনো অস্বাভাবিক হতে থাকে সে। এভাবে আরো ৬ মাস যাওয়ার পর সেলিম সাহেব ভাবেন এভাবে চলতে থাকলে ছেলে অটিস্টিক হয়ে যাবে। তাই উনি ছেলেকে সাইকোলোজিস্ট দেখান।

ডাক্তার ওকে পর্যবেক্ষণ করে বলে, ওর পুতুল বউ নিয়ে খেলতে খেলতে ও তাকে ওর খেলনা ই ভেবে নিয়েছে। আর নিজের সব চেয়ে প্রিয় খেলনা হারিয়ে সে ওর স্বাভাবিক সব কাজ থেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ওর শিশু মনে খুব বড় প্রভাব পরেছে এতে। এরকম ডিপ্রেশনে থাকতে থাকতে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।

তাই ওর এ ঐ খেলনার বিকল্প হিসেবে আরেকটা খেলনার ব্যাবস্থা করে দেখতে পারেন। এতে কাজ হলেও হতে পারে। যে সব সময় ওর কাছে কাছেই থাকবে ওর খেলার সাথী হয়ে।

তখন সেলিম সাহেব ভাবতে থাকেন কি করা যায়। তখন উনার ছোট বোন হেনার কাছে যান ওর মেয়ে হিয়া কে উনার বাসায় রাখতে। কারণ হিয়া কাব্যর ৪ বছরের ছোট। সারাক্ষণ এক সাথে থাকলে যদি ও তার পুতুল বউ এর অভাব টা ভুলতে পারে। কিন্তু হিয়া বাবা মার এক মাত্র সন্তান হওয়াই ওর বাবা ওকে দিতে রাজি হয় না।

এতে হতাস হন সেলিম সাহেব। শাহানারা বেগম ও ভেঙে পরেন মন থেকে।
তখন একদিন সেলিম সাহেব এর বর বোন হালিমা উনাদের বাসায় বেরাতে আসেন। উনার স্বামীর বাড়ি চিটাগং। আর উনার তিন মেয়ে, ছেলে নেই কোনো। মেধা উনার মেজো মেয়ে। মেধা কাব্যর ২ বছরের ছোট।

বাড়িতে মেহমান এসেছে, সাথে এতো বাচ্চারাও এসেছে তবু কাব্য কারো সাথে মিশে না। নিজ ঘরেই থাকে। তখন কাব্যর বয়স ১১ আর মেধার ৯।
সবাই যখন সবাইকে নিয়ে ব্যাস্ত তখন মেধা লুকোচুরি খেলতে খেলতে কাব্যর রুমে ঢুকে পরে।

রুমে ঢুকে তো সে অবাক, তাদের বয়সের ই একটা ছেলে ওরা এসেছে শুনেও বাইরে যায়নি, বেলকনিতে চুপটি মেরে বসে আছে। মেধা গিয়ে বেলকনিতে কাব্যর পাশে বসে। এতে কাব্যর কোনো হেলদোল নেই। যেনো সে কাউকে দেখেইনি। মেধা তার মতো কথা বলেই যাচ্ছে, তবে কাব্য তখনো নিশ্চুপ। সেদিন আর মেধা কাব্যর রুম থেকে বেরুয় না। একবারে রাতে ডিনারের সময় বেরুয় কাব্য কে নিয়ে।

কাব্য কে দেখে শাহানারা বেগম এর চোখে পানি চলে আসে। অবাক হন সেলিম সাহেব ও। কারণ ছেলে রুম থেকে বাইরেই বেরুই না। স্কুল তো অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। আজ সেই ছেলেই ডাইনিং এ এসেছে।

সেলিম সাহেব সবটা বলেন হালিমা বেগম কে। আর বলেন তোমার মেয়েটাকে কয়েকটা মাসের জন্য রেখে যাও না আপা। এতে আমার ছেলেটা যদি স্বাভাবিক হয়।
রাজি হয়ে যান হালিমা বেগম। তারপর থেকেই মেধা এখানে থাকে। মেধা যদি হাজার টা কথা বলে তবে কাব্য। তবু কথা তো বলে।

প্রায় ১ বছরের মতো সময়ে কাব্য অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। স্কুলেও যেতে শুরু করে আবার। মেধা আর কাব্য এক ই স্কুলে পরে। মেধা ওর এক বছরের জুনিয়র। কিন্তু সম্পর্ক টা বন্ধুত্বের। কাব্য স্বাভাবিক হলেও কথা কম বলতো। মেধার সাথেই একটু আধটু কথা বলতো অন্যদের তুলনায়।মেধার সাথে সারাক্ষণ তার পুতুল বউ এর গল্প করতো। মেধার ছোট্ট মাথায় কাব্যর এই পাগলামি গুলো ঢুকতো না। হয়তো কাব্যর ও না।

কাব্য স্বাভাবিক হতেই মেধার মা মেধাকে নিতে চেয়েছিলো। সে ই যায়নি আর। তারপর থেকে এখানেই থাকে সে। স্কুল কলেজ সব একটাই ছিলো মেধা কাব্যর। তাই কাব্য অন্যদের চেয়ে মেধার সাথে বেশি ফ্রী।

ধীরে ধীরে কাব্য পুতুল বউ এর প্রতি ফিলিংস ভালোবাসায় রূপ নেয়। আর মেধা ও কাব্যর প্রতি দূর্বল হয়ে পরে। মেধা জানে কাব্যর মনে পুতুল বউ এর জায়গায় টা নেয়া এতো সোজা হবে না। তবে সে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ঠিক ই সেই জায়গা টা নিয়ে নিবে। আর যেখানে তার পুতুল বউ এর কোনো অস্তিত্ব ই নেই সেখানে তার তো কোনো সমস্যা ই হওয়ার কথা না।

তবে সে কাব্য কে সরাসরি কখনো নিজের করে চাইবে না। এতে করে কাব্যর মনে তার যেই জায়গা টা আছে সেটাও হারাবে সে। টেকনিক্যালি কাজ টা করবে যেনো কাব্য তার হয়ে যায়। আর ও জানে তার মামা তাকে খুব পছন্দ করে। কাব্য কে বিয়ে করা তার জন্য কঠিন কোনো কাজ না।

কিন্তু বিপত্তি বাধে তখন যখন কাব্যর জাহাঙ্গীর নগর এ চান্স হয় কিন্তু পরের বছর ঢাকায় কোথাও তার চান্স হয় না। চান্স হয় চিটাগং। তাই বাধ্য হয়েই কাব্য কে ছেড়ে চলে যেতে হয় চিটাগং। প্রথম প্রথম খুব বেশি যোগাযোগ থাকলেও পড়ে আসতে আসতে তা কমতে থাকে।

এর মাঝে একবার হালিমা বেগম সেলিম সাহেব এর কাছে মেধা কাব্যর বিয়ের প্রস্তাব ও রাখেন।সেলিম সাহেব খুশিই হন তাতে। শাহানারা বেগম কে দিয়ে কাব্য কে বলালে কাব্য রেগে যায় এতে। তুমি সবটা জানার পর ও কি করে এমন একটা কথা ভাবতে পারলে মা? আর মেধা সব সময় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর সেও আমার পুতুল বউ সম্পর্কে সবটা জানে। আর আমি আশা করি তোমাদের এমন অবান্তর প্রস্তাবে মেধা ও শকড হয়েছে খুব।

এতে মেধা হতাশ হয় তবে হাল ছাড়েনি। পড়াশোনা টা শেষ হোক আগে, তারপর তো সে কাব্য কেই বিয়ে করবে। তাই এর মাঝে আর বিয়ের কথা ভাবেনি সে। কিন্তু হুট করেই কাব্যর বিয়ের কথা শুনে সে ডিপ্রেশন এ চলে যায়। এ থেকে নিজেকে সামলে উঠতেই সময় লেগে যায় ৩/৪ মাস।

আর কাব্যর আর তার পুতুল বউ এর সম্পর্ক টা ঠিক কি পর্যায়ে আছে সব টা কাব্যর থেকে এই কদিনে জেনেই সে এ বাড়িতে পা রাখে।
আর কাব্যর বেস্ট ফ্রেন্ড যেহেতু মেধা তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই বলে কাব্য তাকে।

কাব্য বাড়ি ফেরে বিকেল ৫ টার দিকে। এসেই মায়ের কাছে জানতে পারে তিথী না খেয়েই ঘুমাচ্ছে। তাই বলে আর ১৫/২০ মিনিট পর রুমে খাবার দিতে, বলে নিজের রুমে যায়। গিয়ে দেখে তিথী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আসতে করে ডাকে। কয়েকবার ডাকার পর ঘুম ভাংগে তিথীর। চোখ কচলে উঠে বসে বলে কখন এলেন?

মাত্রই। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো, সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য একটা।
সারপ্রাইজ এর কথা শুনেই লাফিয়ে উঠে বসে তিথী। খুশী হয়ে জিজ্ঞেস করে কি সারপ্রাইজ।

আগে ফ্রেশ হয়ে তো আসো।
তিথী ও তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে আসে। এসেই তার পড়ার টেবিলে লেটেস্ট মডেলের আই ফোন দেখতে পায়।
অবাক হয়ে তাকায় কাব্যর দিকে। কাব্য চোখ দিয়েই বুঝায় এটা তাই ই। খুশীতে লাফিয়ে উঠে কাব্য কে জড়িয়ে ধরে।

কাব্যর সারা শরীর যেনো হিম হয়ে গেছে। সত্যিই কি তিথী তাকে জরিয়ে ধরলো?সত্যিই কি তার পুতুল বউ আজ স্ব ইচ্ছায় তার বুকে? পুলকিত হয়ে যায় তার মন। সেও ধরার জন্য হাত উঠায় তখনই তিথীর হুস ফিরে সে অতিরিক্ত এক্সাইডমেন্ট এ কি করে ফেলেছে। এক ঝটকায় কাব্যর থেকে কয়েক হাত দূরে সরে যায়। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় কাব্য।

ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, এটা কি হলো? হুট করেই কাছে এলে আবার আমি যাওয়ার আগেই চলে গেলে।
কাব্যর ঠোঁট ফুলানো দেখে বেশ হাসি পায় তিথীর। স্যরি ওভার এক্সাইডমেন্ট এ কি করে ফেলেছিলাম।

এমন এক্সাইডমেন্ট তো মাঝে মাঝে দেখাতে পারো নাকি?🤨
এবার বেশ লজ্জা পায় তিথী। আমি মামনী কে ফোনটা দেখিয়ে আসি। বলেই ফোন হাতে বাইরে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে কাব্য। হেচকা টানে বুকে ফেলে দেয় তার। কই যাও হুম? সারপ্রাইজ পেয়ে এতো খুশী, তবে আমাকে একটু খুশী করা উচিৎ না কি? মুচকি হেসে।

চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলে তিথী। ক ক কি কিভাবে?
তখনই দরজায় নক করে কেউ।
এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? তুমি যা করতে কম্ফোর্ট ফিল করবে না তা কখনোই করতে বলবো না আমি। সেচ্ছায় যেদিন আমার কাছে ধরা দিবে সেদিন ই তোমায় সব টা উজার করে দিবো আমি। তখন দেখবে তোমার কাবির সিং কি পারে।

আচ্ছা যাও, খাবার এসেছে, আপাতত খাইয়ে দিলেই আমি খুশী।
দরজায় আরেকবার নক করে।
কাম ইন।
ভিতরে আসে শেফালী। হাতে তার খাবারের প্লেট।
কাব্য ইশারায় প্লেট টা রাখতে বলে।
শেফালী প্লেট রেখে চলে যায়।

কাব্য গিয়ে বিছানায় বসে আর তিথীকে ইশারা করে খাবার খাইয়ে দিতে। তিথী মুখ টা কালো করে গিয়ে কাব্যর সামনে খাবার প্লেট নিয়ে বসে।
ভাত মেখে কাব্যর মুখের সামনে ধরতেই কাব্য তিথীর হাত নিয়ে আগে ওর মুখে দিয়ে দেয়। খাবার মুখে নিয়ে তিথী অবাক হয়।

এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। দুপুরে না খেয়ে ঘুমিয়েছো কেনো?
তিথী আবার আরেক লোকমা খাবার নিয়ে কাব্যর মুখে দিয়ে বলে আপনি ও তো খাননি। আমায় নামিয়ে দিয়েই কোথায় চলে গেলেন।
আমি খাইনি বলেই খাওনি?
তিথী চুপ।
ভালোবাসো?
আবারো চুপ।

এবার কাব্য অস্থির হয়ে গেছে, বলো না প্লিজ ।
কাব্যর অস্থিরতা দেখে তিথী ঝাঝালো কন্ঠে বলে, বাসি না, খান তো চুপচাপ।
মুখ টা কালো করে খাবার খেতে থাকে কাব্য।
কাব্য কে দেখে তিথীর বেশ মজা লাগছে। ভিলেন টাইপ পার্সোনালিটির মানুষ টা কি করে বাচ্চাদের মতো অভিমান করে বসে আছে।
তখনই দরজায় নক করে মেধা বলে, আসতে পারি?
কাব্য বলে, আয় না।

মেধাকে দেখেই তিথীর মেজাজ কেনো জানি বিগড়ে যায়। যা এখন আবার গেছে।
ওহ হো তোদের রোমান্টিক পিরিয়ড এ এসে ডিস্টার্ব করলাম।
কাব্য মুখ টা কালো করে বলে, আর রোমান্টিক। সে সুযোগ দিলে তো।
তৎক্ষনাৎ মেধা বলে উঠে এতো পিচ্চি মেয়ে বিয়ে করলে তো এমন হবেই। রোমাঞ্চ শিখাতে শিখাতেই তোর যৌবন পার হয়ে যাবে। বলেই হাসতে থাকে।

কথাটা তিথীর গায়ে যেনো কাঁটার মতো বিধে। তবু কিছু বলে না সে, আর কাব্য কে খাওয়াচ্ছে না সে। চুপচাপ নিজেই খাচ্ছে।
এই একাই খাচ্ছো যে? আমাকে দিচ্ছো না কেনো?
তিথী একটা রাগী লুক দিয়ে বলে, নিজে গিয়ে খেয়ে নিন।

হঠাৎ কি হলো কাব্য কিছুই বুঝতে পারে না। অসহায় মুখ করে তাকায় তার দিকে।
মেধা বলে তুই বস, আমি তোর খাবার নিয়ে আসি।
আরেহ নাহ লাগবে না, পেট ভরে গেছে আমার। আসলে বউ এর হাতে আরো খেতে চেয়েছিলাম বলেই বলেছে। বলে চোখ মারে তিথীকে।

এসব মোটেও সহ্য হচ্ছে না মেধার। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে সে।
তুমি কিন্তু অনেক লাকি জানো? কাব্য যা টেককেয়ার তোমাকে করে অন্য কোনো ছেলে হলে তা করতো না।
ভ্রু কুঁচকায় তিথী। কি বলতে চাইছেন আপু? অন্য কোনো ছেলে কেনোই বা করতে যাবে আমার টেককেয়ার? অন্য কেউ কি আমার হাসবেন্ড?

রাগের বশে মেধা কি বোকা বোকা কথা বলে ফেলেছে সে নিজেই বুঝতে পারেনি।
কাব্য বলে, কি আবল তাবল বলছিস এসব? মাথা ঠিক আছে তোর? মাথায় গাট্টা মেরে।
মাথায় হাত বুলিয়ে, উফফ তাই বলে এভাবে মারবি?? আর কি ভুল বলেছি? হুম। এতো রাতে আমাকে রাস্তায় রেখে দিলি দৌঁড় বউ এর কাছে।
এটা কি টেককেয়ার এর জন্য গাঁধি। এটাকে ভালোবাসা বলে।
ওই টাই।

এতোক্ষণে তিথীর খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে বাইরে যেতে নিলে মেধা বলে তোর বউ মনে হয় আমাকে পছন্দ করে না, গল্প করতে এলাম ওর কাছে আর ও আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিথী মুখে মেকি হাসি এনে বলে আমি আরো ভেবেছিলাম তোমার বেস্ট বেস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে গল্প করতে এলে বুঝি, তাই তো তোমাদের স্পেস দিচ্ছিলাম।
তুমি আমাকে স্পেস দিবে? হাসে মেধা, আমি তোমায় স্পেস দিলাম বলেই তুমি আজ এখানে। ( কাব্য ওয়াশরুমে ছিলো তাই ওর কথা শুনেনি)

ভ্রু কুঁচকায় তিথী।
আচ্ছা বাদ দাও।তোমার স্কুল কলেজের গল্প করো।তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো না স্কুলে? এতোক্ষণে কাব্য চলে এসেছে। কাব্যর দিকে আড় চোখে তাকিয়েই এই প্রশ্ন করে।

তিথী আবারো মেকি হাসি দিয়ে বলে, নাহ ছিলো না আপু।
মেধা এতোটাই অবাক হয় যেনো তিথী এই মাত্র জীবনে বলা সবচেয়ে মিথ্যে কথাটা বলে ফেলেছে।

কি বলো? এ যুগে ক্লাস সিক্স এ পড়া মেয়ে ও প্রেম করে, আর তোমার মতো এতো সুন্দরী একটা মেয়ে প্রেম করেনি তা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো?
বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার, আমি আপনাকে সত্যি টাই বললাম। আর আমার আম্মু আমাকে কখনো এই শিক্ষা দেয়নি। তাই আমরা দু বোনের কেউ ই প্রেম করিনি।
প্রেম করা খারাপ কে বল্লো তোমায়।আর কাব্য কে দেখে সত্যি টা বলছো না, নাকি?কাব্যর দিকে তাকিয়ে।

সত্যি বলতে তিথী কখনো ভয় পায় না। আর কাব্য কে তো মোটেও ভয় পায় না তিথী। (তিথী)
পাশ থেকে কাব্য বলে, আরে যেই ধানীলংকা। যেই প্রেম করতে এসেছে পিটিয়ে পগালপাড় পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই তো আমিও চান্স পাইনি, তাই সোজা বিয়ে করে ফেলেছি।

আচ্ছা প্রেম করা তো খারাপ না। আপনি প্রেম করেন না আপু?
হা হা হা। উচ্চ স্বরে হাসে মেধা। প্রেম করা! তোমার বর কখনো দিয়েছে প্রেম করতে আমায়?যেই ছেলে প্রপোজ করতে এসেছে তাকে আর পরের দিন দেখিনি।
আমার জীবনে প্রথম ও শেষ পুরুষ কাব্য।

কথাটা শুনে তিথী তাকায় কাব্যর দিকে। কাব্য ও তিথীর দিকে তাকিয়ে আছে৷
তিথী ঃ প্রথম পুরুষ মানলাম, তবে শেষ পুরুষ এর মানে টা বুঝলাম না। যাই হোক আমি মামনীর কাছে যাচ্ছি। বলেই চলে যায় সে।
তোর বউ মনে হয় রেগে গেছে রে কাব্য।

রাগার কি কথা না? কি সব উল্টো পাল্টা বকছিস? তোর স্বভাব কি চেঞ্জ হবে না? শুধু শুধু পিচ্চি মেয়েটাকে কনফিউজড করে দিচ্ছিস। তোর এসব ফাজলামো ও কি বুঝবে? আল্লাহ জানে এখন মানাতে কতো টাইম লাগে৷ বলে বেড়িয়ে যায়।
আবারো জোরে জোরে হাসতে থাকে মেধা, তবে এটা বিষাদের হাসি।

মন গহীনে পর্ব ২১

( কাল থেকে গল্প পাবেন না কিছুদিন)

মন গহীনে পর্ব ২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.