মন গহীনে - Romantic Golpo

মন গহীনে পর্ব ২৫

মন গহীনে

মন গহীনে পর্ব ২৫
দোলন আফরোজ

আজ কদিন থেকেই কাব্য আর আগের মতো কথা বলে না তিথীর সাথে। এসলে দুজনের দেখায় হয় খুব কম। কাব্য সকালে বেড়িয়ে যায় ফিরে রাত ১০ টার পর। বেশির ভাগ সময় বাইরে থেকেই ডিনার করে আসে। মেধা ও মাঝে মাঝেই রাত করে বাড়ি ফিরে। তিথীর আর বুঝতে বাকি নেই কাব্য মেধার সাথেই থাকে।

ও বাসায় থাকে বলেই হয়তো দুজন কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে পারে না, তাই বাইরেই দেখা করে নেয়।তিথীর ও ব্যাস্ততা বেড়েছে,তার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম শুরু হয়ে গেছে। নিজেকে শুধু পড়াতেই ফোকাস করতে চায় সে, আর কিছু ভাববার মতো সময় নেই তার। কিন্তু না চাইতেও ভাবনা চলে আসে। কাব্যর হটাৎ এমন বদলে যাওয়া মোটেও সহ্য হচ্ছে না তিথীর। কলেজেও নিয়ে যায় না এখন তাকে।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাসার গাড়ি করে যায় গাড়ি করেই আসে। তিথীর বুকের ভিতরের কোথায় যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কেনো হচ্ছে এমনটা? আমি তো ঐ কাবির সিং কে ভালোইবাসি না। তবে উনি দূরে থাকাতে কেনো কষ্ট হচ্ছে আমার? আগামীকাল হায়ার ম্যাথ সেকেন্ড পেপার এক্সাম। কিছুতেই অংক করাতে মন বসছে না। রাত সাড়ে ১১ টার বেশি বাজে। এখনো কাব্য ফিরেনি।

ভালোলাগছে না বলে শাহানারা বেগম এর রুমে উঁকি দেয় তিথী। শাহানারা বেগম পান চিবুচ্ছেন আর সেলিম সাহেব শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।তিথী উঁকি দিতেই সেলিম সাহেব হাতের ইশারায় ডাকেন তাকে। তিথী মুখ গোমড়া করে সেলিম সাহেব এর পাশে গিয়ে বসে। সেলিম সাহেব তিথীর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেন। জিজ্ঞেস করেন কাব্য ফিরেনি এখনো?

মুখ গোমড়া করেই মাথা নাড়ে সে।
চিন্তা করো না, কাজের অনেক চাপ হয়তো। নতুন একটা বিজনেস চালু করতে খুব শ্রম দেয়া লাগে, আর আমার ছেলে তো মহা পন্ডিত, আমার সাহায্য নিবে না। চিন্তা করো না, ব্যাস্ততা হয়তো বেড়েছে, তাই দেড়ি হচ্ছে।
কিছুটা শংকামুক্ত হয় তিথী।
শাহানারা বেগম জিজ্ঞেস করেন ফোন করেছিলি?
আবারো মাথা নাড়ে তিথী।

সেলিম সাহেব বলেন একটা ফোন করে খুঁজ নাও।
চুপ করে আছে সে। শাহানারা বেগম ওদের দুজনের চলাফেরায় বেশ বুঝতে পারছেন ওদের মাঝে ঝামেলা হয়েছে, আর খুব বড়সড় ই হয়েছে। তাই উনি নিজেই কাব্যর নাম্বারে কল দেয়। দুবার রিং হওয়ার পর ও ফোন ধরে না কেউ। তার ঠিক ৩ মিনিট পর ই কল ব্যাক করে পিয়াস কথা বলে। আন্টি কাব্য আমার সাথেই আছে। চিন্তা করবেন না, একটু কাজ পড়ে গেছে আপনারা ঘুমিয়ে যান।

স্পিকার লাউড এ ছিলো বলে সবাই শুনতে পায় তা।তখন সেলিম সাহেব বলে, ঠিক আছে কাব্য, যাও নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়ো তুমি।
তিথী ও আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসে।

আবারো ম্যাথ করতে বসে, কিন্তু কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছে না। অস্থির লাগছে কেমন। একটু ঘুমানোর চেষ্টা করে। ঘুম তো দূরে থাক দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না। রাত প্রায় ১ টা বাজে, সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তিথীর শ্বাস যেনো আটকে আসছে, কাব্য এতোটা দেড়ি কক্ষনো করে না, তবে আজ কেনো এতো দেড়ি হচ্ছে।তিথীর এমনিতেই শ্বাস কষ্টের সমস্যা আছে। টেনশনে তার শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেছে।

তারাতাড়ি করে ইনহেলার নিয়ে বড় বড় করে দুবার শ্বাস টানে। ৫ মিনিটের মাঝে কিছুটা ভালো লাগতে শুরু করে। ফোন টা হাতে নিয়ে কল দেয় কাব্য কে। ফোন রিছিভ করে পিয়াস। গোটা গোটা করে পুতুল বউ নামে নাম্বার টা সেভ করা দেখে পিয়াস এর আর বুঝতে বাকি থাকে না তিথী ফোন করেছে। ফোন টা তুলে পিয়াস শুধু বলে, বাসার কাছেই আছি, পাঁচ মিনিটে ফিরছি ভাবি। মেইন ডোর টা খুলা রাখুন।

অস্থির তিথী জিজ্ঞেস করে, কাবির সিং কোথায়? ও ঠিক আছে তো?
প্রথমে ভ্রু কুঁচকায় পিয়াস, পড়ে বুঝতে পারে এই কাবির সিং টাই কাব্য, মৃদু হেসে বলে ঠিক আছে আপনার কাবির সিং। দরজাটা খুলুন, রাখছি বলে কল টা কেটে দেয়।
তিথী অস্থির চিত্তে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। এর ঠিক ১ মিনিট এর মাথায় পিয়াস আর আশিক ধরে নিয়ে আসে কাব্য কে। কেমন এলোমেলো বিদ্ধস্ত লাগিছে ওকে।

অস্থির হয়ে তিথী এক হাত কাব্যর গালে আরেক হাত বুকে রেখে বলে কি হয়েছে উনার? আর এতো বিশ্রী গন্ধ আসছে কেনো উনার গা থেকে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তিথীর।
আফসোস কাব্য যদি আজ আপনার অস্থিরতা টা দেখতে পেতো।বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পিয়াস।

ড্রিংক করেছে কাব্য, আর ফার্স্ট টাইম হয়েও অতিরিক্ত করে ফেলেছে, তাই নিজেকে সামলাতে পারেনি। যাই হোক একটা ঘুম দিলে সকাল হতে হতে অনেকটা স্বাভাবিক হবে ও। রুমে নিয়ে যাচ্ছি, আপনি একটু লেবুর রস নিয়ে আসুন।বলে পিয়াস আর আশিক ওকে ওর রুমে নিয়ে যায়। আর তিথী চলে যায় রান্না ঘরে। তিথী বেরিয়ে দেখে পিয়াস আর আশিক নেমে এসেছে।

শুইয়ে দিয়েছি, আপনি পারলে লেবুর রস টুকু খাইয়ে দিন ওকে।
আচ্ছা বলে ছোট করে মাথা নেড়ে কাব্যর কাছে চলে আসে তিথী।
কাব্যর সামনে সে নেহাৎ ই ছোট্ট মানুষ। এই বিশালাকার শরীর টা অনেক কষ্টে আধ শোয়া করিয়ে লেবুর রস টুকু খাইয়ে দেয় সে। কিছুক্ষণের মাঝেই গড়গড় করে বমি করে দেয় কাব্য। অনেক কষ্টে কাব্য কে ক্লিন করিয়ে ঘর ক্লিন করে বিছানায় শুইয়ে দেয় ওকে। এসব করে তিথীর বিছানায় যেতে যেতে রাত প্রায় পৌনে তিনটা বেজে যায়। শুনতে পায় কি যেনো বিরবির করছে কাব্য। মুখের কাছে কান নিয়ে শুনার চেষ্টা করে কি বলছে সে।

পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার আছে, তুমি আমায় ভালোবাসো না এটা কি করে মেনে নেই বলো? আমি এতোটাও খারাপ না পুতুল বউ, বিশ্বাস করো তুমি। এতোটা ঘৃণা কেনো করো তুমি আমায় বলোনা না। একটু ভালোবাসো না আমায়, আমি যে চিরদিন ই তোমার ভালোবাসার কাঙাল। সেই অবুঝ বয়স থেকেই জানি তুমি আমার, একান্তই আমার। কেনো আজ তবে আমার হয়েও হলেনা তুমি। তোমার ঘৃণা, তোমার অবহেলা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নাই। আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে যে শুধু তোমারি বিচরণ। একটু ভালোবাসা দাও না আমায়।

অচেতন কাব্য ড্রিংক করার পর থেকেই বিরবির করে এই কথা গুলোই বলে যাচ্ছে। এই প্রথম ওর বন্ধুরাও ওকে এতোটা ভেঙে পরতে দেখেছে।
এদিকে তিথী ভাবছে কে এই পুতুল বউ? মেধা আপু কি? কিন্তু মেধা আপু তো উনাকে ভালোবাসে তবে!
আজ সন্ধ্যায় মেধা আপুকেও দেখলাম ঘরে দরজা লাগিয়ে কান্নাকাটি করছে। হিয়াপু ডাকতে যাওয়ায় রাগারাগি করেছে হিয়াপুর সাথে।

এসব ভেবেই তিথীর মনে কষ্টের তীব্রতা বেড়ে গেছে। নিজেকে ওদের মাঝে পরগাছা মনে হচ্ছে।
কাব্যর গায়ে কাঁথা টেনে উঠে যাওয়ার সময় কাব্য ওর হাত ধরে ফেলে। পিটপিট করে তাকিয়ে বলে প্লিজ যেও না, বুকে হাত দিয়ে, এইখানে অনেক যন্ত্রণা করছে, একটু থাকো না এখানে। তিথী এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেনো খুঁজছে। হয়তো কাব্যর পুতুল বউ কেই। সে ভালোই বুঝতে পারছে নেশার ঘোরে তাকেই মেধা ভাবছে হয়তো।

হাত মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দেয় ছুটার জন্য, তখন কাব্য হেচকা টানে তিথীকে তার বুকে ফেলে দেয়। আচমকা এমনটা হওয়াতে তিথীও টাল সামলাতে না পেরে ওর বুকে পড়ে যায়। কাব্য ওর বলিষ্ট হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে নেয় তিথীকে। তিথী অনেক জোরাজোরি করে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। ব্যার্থ হয়ে নিজে নিজেই বলে ব্যাটা জাতে মাতাল তালে ঠিক। কিন্তু আপনি ভুল জায়গায় ডায়াল করেছেন মি. কাবির সিং। এটা আমি আমি, আমি তিথী, পিচ্চি তিথী, আপনার ম্যাচিউর মেধা না। রাগে গজগজ করতে করতেই কথা গুলো বলছে তিথী।

কিন্তু কাব্য এসব শোনার খেয়ালে নেই। সে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে অনেক আগেই। তবে হাতের বাধন ছাড়ার কারো সাদ্ধ্যি নেই।
প্রথম তিথীর বিরক্ত লাগলেও এখন ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এই বুকেই পৃথিবীর সকল সুখ লুকিয়ে আছে। আগে কখনো এভাবে কাব্যর বুকে সে থাকেনি, এরকম অনুভুতিও হয়নি আগে। থেকে থেকেই ওর সারা শরীরে কেমন যেনো শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।

কাব্যর ঘুম ভাংগে প্রায় ১১ টার দিকে। মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। এক হাতে মাথাটা ধরে মনে করার চেষ্টা করছে কাল রাতের কথা। এটুকুই মনে পড়ছে শুধু কাল বারে গিয়ে খুব মদ খেয়েছিলো সে, এর পর আর কিছু মনে নেই। এখানে কখন এলো কি করে এলো আর তিথীর রিএকশন ই বা কেমন ছিলো কিছুই বুঝতে পারছে না। ঘড়িতে সময় দেখে ১১ টা। আজ তিথীর এক্সাম আছে নাকি তাও জানে না সে, আসলে এই কদিন সে তিথীকে এড়িয়েই চলেছে। থাক না ও ওর মতো।
শেফালী কয়েকবার এসে উঁকি দিয়ে গেছে ঘরে, কাব্য উঠেছে কিনা তার খোঁজ খবর নিতে। তিথীই বলে গেছিলো তাকে। কাব্য কে উঠতে দেখে শেফালী এক গ্লাস লেবু জল দিয়ে যায়।

খাটের পাশের টেবিল টাতে ভয়ে ভয়ে গ্লাস টা রাখে শেফালী। ছোট ভাই, ছোট ভাবি এটা খাইতে বলছে আপনারে, আমি চা নিয়ে আসি।
গ্লাসের দিকে তাকিয়েই কাব্য জিজ্ঞেস করে, তোর ছোট ভাবি কই?
ভাবি তো অনেক আগেই বাইর হইয়া গেছে, পরিক্ষা আছে।
কিচ্ছু বলে না কাব্য।লেবু পানিটা হাতে নিয়ে ভাবে তারমানে তিথী বুঝেই গেছে।

ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে হালকা নাস্তা করে সে। শাহানারা বেগম এসে কপালে হাত দিয়ে বলে তোর নাকি শরীর খারাপ, কি হয়েছে খোকা? কাল ফিরলিও অনেক রাত করে।
কিচ্ছু হয়নি মা, ঠিক আছি আমি।
না ঠিক নেই, কাল রাতে নাকি বমি ও করেছিস? পিচ্চি মেয়েটা একা একাই সব পরিষ্কার করলো। কাউকে ডাকেনি পর্যন্ত। কি হয়েছিলো তোর?

অবাক হয়ে তাকায় কাব্য। এতোসব ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সে? আর তিথী ই তার সেবা করেছে?ভাবতে পারছে না কিছু, আল্লাহ জানে কি করেছে সে কাল।
আর কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে যায় কাব্য।
আজ ই শেষ এক্সাম তিথীর। ড্রাইভার কে আগেই বলে দিয়েছিলো যেনো আজ নিতে না আসে, সে একাই রিক্সা করে চলে যাবে।

এক্সাম শেষে তিথী একটা ছেলের সাথে বেরোয়, আর বেরিয়ে সামনের একটা কফি শপ এ যায়।
সবই দূর থেকে দেখছিলো কাব্য। অন্য সময় হলে রাগ করতো, ছেলেটাকে বেধড় পিটাতো, কিন্তু আজ রাগ করছে না সে। তিথীর বলা সেদিনের কথা গুলো মনে পড়ে যায় তার। পুরো পৃথিবীটা যেনো ছোট হয়ে এসেছে তার। এতো কোলাহল এর ভিড়েও এই ছোট্ট পৃথিবীতে সে যেনো নিতান্তই একা।বুকের ভিতরের হৃদপিণ্ড টা যেনো কেউ চেপে ধরে পিষে দিয়েছে। পা দুটো যেনো ভাড়ি হয়ে গেছে, এখান থেকে যে যাবে তাও পারছে না। কিছুক্ষণ ওভাবেই পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

ভাইয়া আসে না যে তোমাকে নিতে কদিন থেকে?
নিউ বিজনেস স্টার্ট করছে তো তাই ওখানে সময় দিতে হচ্ছে, তাই ড্রাইভার ই নামিয়ে দিয়ে যায় আর নিয়ে যায়।
ওহ আচ্ছা। আচ্ছা শুনো, বিল টা আমি দিই প্লিজ?

না না তুমি ই তো একটা কফি ট্রিট পেতে আমার কাছে, তাই বিল টা আমি ই দিবো।আসলে তুমি হ্যাল্প না করলে আজ একটা অংক না দিয়েই চলে আসতে হতো। আর আগের এক্সাম গুলোতেও তো টুকিটাকি হ্যাল্প করেছো তুমি।
তাইতো ট্রিট টা নিতে ভুলিনি। বলেই হাসতে থাকে ছেলেটা।

দুপুরে খাওয়ার পর অনেকদিন পর একটা ফ্রেশ ঘুম দেয় তিথী। কাব্যর ফোনের পুতুল বউ নামে সেভ করা নাম্বার টা তার ই এটা দেখে অন্তত নিশ্চিত হয়েছে যে কাব্য মেধাকে ভালোবাসে না। তবে কাল রাতের বলা সব কথা তার বোধগম্য হয়নি।
আজ পড়া নেই বলে সন্ধার পর তিথী শাহানারা বেগম এর ঘরে যায়। শাহানারা বেগম নামাজ পড়ে জায়নামাযে বসেই তাসবীহ জপছেন। তিথী সোজা গিয়ে উনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। শাহানারা বেগম দোয়া পড়ে ফু দিয়ে মেয়ের মাথায় বিলি কাটতে থাকেন।

শোন মা, কিছু কথা বলি তোকে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক টা হওয়া উচিৎ দুই দেহ এক আত্নার মতো। এতে একজন কষ্ট পেলে যেনো আরেকজন ব্যাধিত হয়। একজন ব্যাথা পেলে যেনো আরেকজনের শরীরে ব্যাথা লাগে।
আমার ছেলেটা তোকে খুব ভালোবাসে। শুধু তুই একটু সুযোগ দে ভালোবাসার, দেখবি ও তোকে কতোটা আগলে রাখে?
মুখ তুলে বলে, কি করবো এখন আমি?বোকা বোকা মুখ করে।

মাথায় ছোট একটা চাটি মেরে, বোকা মেয়ে, এখন কি আমি শ্বাশুড়ি হয়ে তোকে শিখিয়ে দিবো কিভাবে আমার ছেলেকে বুঝাবি তুই ওকে ভালোবাসিস?
যা বলছি এখান থেকে, নিজে নিজে গিয়ে প্ল্যান কর।বলে পিঠে হাত দিয়ে উঠিয়ে দেয়।

তিথী ও নিজের রুমে এসে ভাবতে থাকে সত্যিই তো সেও তো কাব্য কে ভালোবাসে। না বাসলে তবে মেধাকে এতো বিরক্ত লাগতো কেনো ওর? আর কাল কি শান্তি লেগেছিলো কাব্যর বুকে৷ এ কথা মনে হতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে। কাল ই প্রথম এতোটা কাছে ছিলো কাব্যর তাও স্ব জ্ঞানে। ইশশ কাব্য যদি হুসে থাকতো কি লজ্জাটাই না পেতো সে।ভাগ্যিস কাব্য উঠার আগে তার ঘুম ভেঙে যায়।

কিন্তু এখন? এখন কি করে নিজের মুখে সে কাব্য কে ভালোবাসার কথা বলবে? উহুম কিছুতেই পারবে না সে। তাহলে কি করবে এখন? এসব ভাবতে ভাবতেই মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। ছুটে যায় হিয়ার রুমে। হিয়া তার প্ল্যান শুনে খুব খুব খুব খুশী হয়। আজ তবে তার ভাইয়ের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। বুকে হাত দিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নেয় সে। তারপর তিথীর হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে দুহাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে বলে, ভাবি আজ যে আমি কতোটা খুশী তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। আজ আমার ভাইয়ার এতো বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।

এতো বছর মানে?
ভাইয়া নিজেই তোমাকে বলবে। বলেই তিথীকে কাছে টেনে এনে নিজ হাতে সাজিয়ে দেয়।
হিয়া ই তিথীকে দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে এক গালে হাত রেখে। কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি, হাত ভর্তি মেচিং চুড়ি, ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক, কপালে ছোট্ট একটা টিপ পুরাই অপ্সরি লাগছে। একটা নজর টিকা পড়িয়ে দিয়ে বলে, আজ ভাইয়া পাগল হয়ে যাবে দেখো।

লজ্জায় তিথীর মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। লজ্জা লাগছে এটা ভেবে সে কাব্যর জন্য সেজেছে।
আচ্ছা তুমি অপেক্ষা করো তোমার বর এর জন্য, আমি আসছি। বলে বেড়িয়ে যায় হিয়া।
তিথী এখনো আয়নার সামনেই বসে আছে। আজ নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। সত্যিই অসাধারন লাগছে। নিজেকে দেখে আবারো লজ্জা পায় সে। আচ্ছা এ সাজ কি কাব্যর পছন্দ হবে? বুঝতে পারবে কি তার ইশারা? নাকি মুখে কিছু বলতে হবে?

আচ্ছা কাল যে পুতুল বউ পুতুল বউ করছিলো, আমি কি হতে পারবো উনার পুতুল বউ? এভাবেই ভাবতে ভাবতেই অনেকটা সময় কেটে যায়। ডিনার এর পর ই সাজগোছ শুরু করে। ডিনার টেবিলে অবশ্য কাব্য ছিলো না। মাঝে মাঝেই এখন দেড়ি করে বলে কেউ চিন্তা করেনি। তবে শাহানারা বেগম ফোন করেছিলো ২ বার বন্ধ পেয়েছিলো। টেনশন হচ্ছিলো, কারণ শুনেছে ছেলে অসুস্থ হয়েছিলো কাল।

সেলিম সাহেব ই সবাইকে আস্বস্ত করেন যে কাজের চাপ হয়তো তাই দেড়ি হচ্ছে। এখন প্রায় পৌনে ১২ টা বাজে এখনো আসেনি কাব্য। তিথী ফোন করেও বন্ধ পায়। এবার খুব টেনশন হচ্ছে। সবাই শুয়ে পড়েছে, তাই কাউকে ডাকেনি সে। কিন্তু টেনশনে কিছু ভালো ও লাগছে না। তাই নিচে নেমে এসে মেইন গেট এর কাছে যায়। তিথীকে দেখে দারোয়ান জিজ্ঞেস করে কিছু লাগবে ছোট ভাবি?

দারোয়ান এর সামনে এভাবে সেজে দাঁড়াতে অসস্তি লাগছিলো তার, তবু ও আসতে হলো কাব্যর জন্য। মাথা নিচু করে বলে আপনার ভাই এখনো আসেনি, ওর জন্য অপেক্ষা করছি। দারোয়ান অবাক হয়ে বলে ছোট ভাই তো আসছে আরো এক ঘন্টা আগে।

অবাক হয় তিথী। আসছে তাহলে কই সে? আর রুমেও তো যায়নি।আবার বাড়ির ভিতর চলে যায়। সবার রুমে উঁকি দিয়ে দেখে সবাই প্রায় ঘুমিয়ে, শুধু মেধার রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করা। তিথী দ্রুত পায়ে চলে যায় ছাদে। ছাদে গিয়ে তার পা থমকে যায়। নিজের চোখ কেউ যেনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কাব্য মেধার কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আর মেধা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে প্লিজ শান্ত হো, যা যা পাসনি তুই সব টা আমি দিবো তোকে, সুখের চাদরে মুড়িয়ে রাখবো তোকে।

তিথী নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে রাগ টাকে কন্ট্রোল করে ধপ ধপ পায়ে এগিয়ে যায় ওদের দিকে। কাছে গিয়েই ঝাজালো কন্ঠে বলে উঠে এখানে কি করছেন?
মেধা বিজয়িনীর হাসি হেসে তাকায় তিথীর দিকে। আর কাব্য না তাকিয়েই প্লিজ তিথী, লিভ মি এলোন।
এক হাত ধরে টান দিতেই হাত থেকে মদের বোতল টা পড়ে যায় কাব্য। আবারো ঝাঝালো কন্ঠে বলে, একা ছাড়বো আপনাকে? এখানে আপনি একা আছেন?

ডুলুডুলু চোখে তাকায় তিথীর দিকে পূর্নিমার আলোয় কি অমায়িক লাগছে তিথীকে। ওর এই সৌন্দর্যের সামনে যেনো পূর্নিমার চাঁদের সৌন্দর্য ফিকে দেখাচ্ছে।
তিথীর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে প্লিজ তিথী বড্ড অসুখে ভুগছি আমি, সুখের অসুখে। প্লিজ আমায় একটু সুখে থাকতে দাও তুমি।

ছলছল চোখে বলে এখানে সুখী আপনি?
সুখী কিনা জানি না, তবে সুখ খুঁজার চেষ্টা করছি।
হাত টা ছেড়ে দেয় কাব্যর। পাথর হয়ে গেছে যেনো তিথী। কোনো কথা বলছে না, না দেখাচ্ছে কোনো রাগ, না পরছে চোখ থেকে জল।

কাব্যর হাত টা ছেড়ে দেয়াতে কাব্য বলে, তুমি মুক্ত, সারাজীবন এর জন্য মুক্ত তুমি। যাও পাখি, খুঁজে নাও নতুন আকাশ, যে আকাশ টা একান্তই তোমার মন মতো হবে। এ কথা গুলো বলে কাব্য সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে।

মন গহীনে পর্ব ২৪

তিথী এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। ওর মনে হচ্ছে কোনো স্বপ্ন দেখছে ও, খুব বাজে স্বপ্ন।
মেধা এসে তিথীর কানে কানে বলে অনেক বছরের অর্জন এই জায়গাটা, এতো সহজেই তোমার হয়ে যায় কি করে বলো?
আর থাকতে পারেনি তিথী ওখানে।

মন গহীনে পর্ব ২৫ বোনাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.