মন গহীনে - Romantic Golpo

মন গহীনে পর্ব ২৮

মন গহীনে

মন গহীনে পর্ব ২৮
দোলন আফরোজ

মুখোমুখি বসে আছে পিয়াসের বাবা আর কাব্যর বাবা। হঠাৎ ই পিয়াস স্ব পরিবারে কাব্যদের বাসায় হাজির হয়েছে। এর কারণ কি বুঝতে পারছে না কেউ। কাব্য বার বার জিজ্ঞেস করেছে পিয়াসকে, তার এক কথা, বাবা বলবে। ভ্রু কুঁচকায় কাব্য, ও যা ভাবছে তাই নয়তো।

হালকা নাস্তা করে গলাটা ঝেড়ে পিয়াসের বাবা বলতে শুরু করেন।আসলে সেলিম ভাই, কথাটা পিয়াসকে নিয়ে। পিয়াস আপনার ভাগ্নী হিয়াকে পছন্দ করে। কথাটা শুনার পর সবাই বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় হিয়ার দিকে। হিয়া আর তিথী রান্না ঘর থেকে আসছিলো, হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে। হঠাৎ এমন কথায় যেনো সে আকাশ থেকে পড়ে। সবাই ওর দিকে তাকাতে মাথা খুব জোরে না করে জানান দেয় ও কিছু জানে না।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পিয়াসের বাবা মা কে নিয়ে আসায় কাব্য এমনই কিছু ধারণা করেছিলো। তবে অবাক হয় আগে পরে ওকে কিছু জানায়নি কেনো পিয়াস।
পিয়াসের বাবা আবারো বলতে শুরু করে, আমরা অনেকদিন থেকেই আসতে চেয়েছিলাম বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে, পিয়াস ই দেয়নি। কাব্য কিভাবে নেয় ব্যাপার টা, পাছে তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। কিন্তু এখন যখন বিয়ের জন্য চাপ দেই তখন তার এক কথা, বিয়ে করলে হিয়াকে করবে নয়তো করবে না। তাই অনেক জোরাজোরি করে নিয়ে এলাম।

আসলে এই ব্যাপারে আমার বোন হেনার সাথে আগে কথা বলতে হবে আমার। আর সবচেয়ে বড় কথা হিয়ার মতামত জানা জরুরী। নিস্বন্দেহে পিয়াস খুব ভালো ছেলে, তার উপর কাব্যর বন্ধু। তাই বলে আমার কাছে থাকে বলে যে আমার সিদ্ধান্ত তার উপর চাপিয়ে দিবো তা না।

তা তো অবশ্যই। সবার আগে হিয়া মার মতামত জরুরী। আমাদের তরফ থেকেও কোনো চাপ নেই।
হেনা বেগম জানান ছেলেকে উনার পছন্দ, উনার কোনো অসুবিধা নেই। হিয়ার মতামত জানতে চায়লে হিয়া জানায় বড় রা যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে।
আলহামদুলিল্লাহ বলে পিয়াসের মা হিয়াকে আংটি পরিয়ে দেয়।ওদেরকে একান্তে কথা বলার জন্য কাব্য আর তিথীই ছাদে নিয়ে যায়।

লজ্জায় হিয়া পিয়াসের দিকে তাকাতে পারছে না। পিয়াস এক দৃষ্টিতে দ তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে হিয়া। এর আগে কখনো সে পিয়াসের সামনে তেমন একটা যায়নি। কিন্তু আজ এমন একটা পরিস্থিতিতে সে কি করবে বুঝতে পারছে না। বুঝতে পারে পিয়াস। নিরবতা ভেঙে সেই বলে, এই বিয়েতে তোমার আপত্তি আছে?
বলেছিতো আমি বড়োদের।

হুম শুনেছি। আমি আবারো শুনতে চাচ্ছি।
উহুম, মামা, মা ভাইয়ারা যা সিদ্ধান্ত নেয় তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
আমি তোমার সিদ্ধান্ত জানতে চাচ্ছি।
চুপ করে আছে হিয়া।
তারমানে তোমাকে জোর করা হচ্ছে এই বিয়েতে? তুমি রাজি না?
রাজি আমি।

লম্বা একটা শ্বাস ছাড়ে পিয়াস। এতোক্ষণ যেনো তার গলাটা কেউ চেপে ধরে রেখেছিলো তাই দম নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
নিচে চলে যায় হিয়া। তখনই কাব্য এসে পিয়াসের মুখোমুখি দাঁড়ায়। ভয়ে ছোট করে একটা ঢোক গিলে পিয়াস। দুইহাত বুকে গুজে, কাব্য পিয়াসের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, এটুকু বিশ্বাস করতে পারলি না আমাকে।
আমতা আমতা করে বলে, আসলে আমি ভেবেছি…

হুম তুই ভেবেছিস, কাব্য তো একটা হার্টলেস মানুষ। সে কি করে বুঝবে আমার ভালোবাসা, তাই না।
এবার পিয়াস কাব্য কে জড়িয়ে ধরে। প্লিজ রাগ করিস না, হাসতে হাসতে বলে, তুই হার্টলেস? তুই ভালোবাসা বুঝিস না? ভালোবাসা শিখালি ই তুই।
মেকি রাগ দেখিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে, আচ্ছা আচ্ছা আর পাম্প দিতে হবে না। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে নিচে নেমে আসে ওরা।
বিয়ে ঠিক হয় ২ সপ্তাহ পর।

পুরো বাড়িতে সাজ সাজ রব। বিয়ের আর ৪ দিন বাকি। কিছু কিছু আত্নিয় রা চলে এসেছে। কাব্যর চাচা ফুফুরা। হিয়ার বাবার বাড়ির লোকজন ও চলে আসবে বিয়ের দুদিন আগে।
সেদিন বিয়ের শপিং এ গিয়ে তিথী এক কান্ড করে বসে। শপিং এ গেছিলো কাব্য তিথী, হিয়া পিয়াস আর অর্না। সবাই তখন শপিং এ ব্যাস্ত, কাব্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তিথী কি কিনবে তা দূর থেকেই কাব্য কে ইশারায় দেখায়। কাব্য বলে তোমার যা পছন্দ হয় নাও, যাই পড়ো তুমি তাতেই ভালো লাগে।

তারপর শপিং এর এক পর্যায়ে তিথী ওদের রেখে অন্য আরেকটা দোকানে ঢুকে, তার বাইরেই দাঁড়ানো ছিলো কাব্য। তখন দুটো মেয়ে এসে তিথী কে বলে, হাই আপ্পি, কেমন আছো।
ছোট করে উত্তর দেয় তিথী, ভালো। তবে তার চোখে মুখে হাজারো বিস্ময়।
একটা মেয়ে হাত বাড়িয়ে এক বক্স চকলেট দেয় তিথীকে।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি কি আপনাকে চিনি?

হাসি মুখেই মেয়েটা জবাব দেয়, উহুম, তাইতো পরিচিত হতে এসেছি।
ওকে থ্যাংক ইউ আপু, ভালো লাগলো আপনার কথা শুনে, তবে চকলেট গুলো নিতে পারবো না আমি। আর আমি যতোদূর বুঝতে পারছি এমনি এমনি আসেননি পরিচিত হতে, কোনো কারণ আছে নিশ্চয়। দয়া করে বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য।

মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে তিথীর গালে আলতো চেপে বলে, দ্যাটস লাইক এ স্মার্ট গার্ল। তোমাকে দেখেই আমার খুব স্মার্ট মনে হয়েছে।
আসলে তোমার ভাই কে আমার পছন্দ হয়েছে। এর আগেও ৩ বার দেখেছি ওকে, ২ বার শপিং মলে আর একবার রাস্তায়। তেমন কথা বলার সুযোগ হয়নি। আজ তোমরা যখন শপিং এ এসেছো শুরু থেকেই আমি তোমাদের ফলো করছিলাম। তোমার ভাই এর সাথে কথা বলার ও চেষ্টা করেছি, কিন্তু কথা বলেনি ও। তাই তুমি যদি ওর ফোন নাম্বার অথবা ফেসবুক আইডি টা দাও।

কে ভাই আমার? ভ্রু কুঁচকে।
গ্লাসের ভিতর থেকেই মেয়েটা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কাব্য কে দেখায়। মুহূর্তেই তিথী অগ্নি মুর্তি ধারণ করে। মাথা এতো পরিমাণ গরম হয়েছে, যদি রুটি দেয়া হয় ২ মিনিটেই রুটি সেকা হয়ে যাবে।ইচ্ছে করছে কাব্য কে গিয়ে এক্ষুনি খুন করে ফেলতে।

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে, ওর নাম্বার চাই? নাম্বার কেনো, কথা বলিয়ে দিচ্ছি দাঁড়ান। বলে মেয়েটার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। ঐ মেয়েটার সাথে থাকা মেয়েটাও পিছু পিছু আসে। মেয়েটাকে এনে সোজা কাব্যর সামনে দাঁড় করায়। মেয়েটার চোখে মুখে লজ্জা।
তিথীর কান্ডে অবাক হয়ে তাকায় কাব্য।

কি বলেছেন? আমার ভাই? বলেই কাব্য মুখের কাছে নিজের মুখ টা নিয়ে বলে, চেহারার মিল আছে আমাদের? নাকি আমি ওকে একবারো ভাই বলে ডেকেছি হুম।
এক হাতে কাব্যর কলার টেনে ধরে আরেক হাতের আংগুল কাব্যর দিকে তাক করে বলে, বর হয় ও আমার, বর।রাগে ফুসছে তিথী।

আবারো মেয়েটাকে বলে,ছেলে দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়, না? হেংলা মেয়েছেলে জানি কোথাকার।আমার বরের দিকে যদি কেউ বদ নজরে তাকায় তার চোখ গেলে দেই আমি। ইচ্ছে করছে এখন তোর চোখ দুটো ও গেলে দিতে, যাতে আর কোনো ছেলের দিকে বদ নজর দিতে না পারিস।মেয়ে জাতির কলংক।
আর হ্যাঁ আপনি, কাব্য মশাই, সব সময় এতো এট্রেকটিভ মুড নিয়ে ব্যাচেলর হয়ে ঘুরে বেড়ান কেনো? প্রেম করার ধান্দা আছে নাকি, হ্যাঁ? ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো বলে দিলাম। পিছনে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ঘুরবা, ওটাতে লেখা থাকবে আমি বিবাহিত।

তিথীকে ঠান্ডা করার জন্য কাব্য ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলে রেগে ওখান থেকে চলে যায় সে। এদিকে এসব কান্ড দেখার জন্য চারপাশে মানুষ জন জড়ো হয়ে গেছে। পিয়াস হিয়া আর অর্না ও চলে এসেছে।
কাব্য মেয়েটাকে গিয়ে বলে, আপনি আমায় ফলো করছিলেন বলে দূরে দূরে থাকছিলাম আর সেই সোজা আমার বউ এর কাছে চলে গেলেন। ফুটন্ত লাভাকে আপনি আরো উস্কে দিলেন। আমার কপালে কি আছে আল্লাহ জানে। এটা বলে পিয়াসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিথীর পিছু চলে আসে সে।

এসব দেখে অর্না বলে, মেয়েটার মেনার্স এর অভাব। কোথায় কি বিহেইভ করতে হয় জানে না।।
বাসায় এসে তিথী ঘরের দরজা আটকে দেয়। অনেক ডাকাডাকির পর ও দরজা খুলে না। হতাশ হয়ে যায় কাব্য। দরজা না খুল্লে তো পাগলিটার রাগ ভাংগানো যাবে না।কিছুক্ষনের মাঝেই হিয়া আসে। সেও দরজায় নক করে। তবু খুলে না তিথী।
দেখো না ভাবি, বিয়ের বেনারসি কেনা হয়েছে। কেমন হয়েছে দেখে এটা বলবে তো নাকি।

৫ মিনিট এর মাথায় দরজা খুলে তিথী। দরজা খুলতেই কাব্য ঘরে ঢুকে আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। কাব্য কে দেখে তিথী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। বুকের মাঝে কিল ঘুষি মারতে মারতে বলে কেনো এসছিস। ব্যাচেলর হয়ে ঘুরে বেরাস না মেয়ে পাগল করার জন্য। এখন আবার আমায় পটাতে এসছিস?
উল্টো দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কাব্য। এখানে আমার দোষ কোথায় সোনা?

ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে, না সব দোষ আমার, আমার কপালের দোষ। কাঁদতে কাঁদতে। আমার কলেজেও মেয়েরা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আর বলে আমি অনেক লাকি, আমার বর এতো হ্যান্ডসাম।
নিজের দিকে ঘুড়িয়ে, আমি অনেক লাকি যে আমার বউ টা একটা ছোট্ট পরী। অবশ্য রাগলে পেতনী হয়ে যায়।
আবারো মারতে থাকে তিথী।হুম আমি তো পেতনী ই। চারপাশের এতো এতো রূপসী ঘুরঘুর করলে তো আমাকে পেতনী লাগবেই।

গালে গভীর একটা চুমু দিয়ে বলে, রাগলে তোমায় বোম্বাই মরিচের মতো লাগে, এন্ড আই লাইক স্পাইসি। তাইতো তোমায় আরো রাগিয়ে দেই।
ভালোবাসি সোনা, খুব বেশি ভালোবাসি। এই যে দেখো, বুকের বা পাশে হাত দিয়ে, কাল থেকে এখানে তোমার ছবি লাগিয়ে ঘুরবো। ভিতর টাতে তো তুমি আছোই, তবে বাইরে লাগালে দোষ কি বলো।

এবার কান্নার মাঝেও হালকা হাসে তিথী। থাক লাগবে না। বলে কাব্যর বুকে মাথা এলিয়ে দেয়।
হঠাৎ আবার মাথা তুলে বলে, কিন্তু কোনো মেয়ে যদি তাকায় তোমার দিকে আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই চোখ তুলে নিবো তার।

মন গহীনে পর্ব ২৭

আচ্ছা বাবা আচ্ছা।হাসে কাব্য, আই লাইক ইউর চাইল্ডিস বিহেভিয়ার। এন্ড আই লাভ ইউ মোর দ্যান মাই লাইফ। বলে ঠোঁটে গভীর চুমু খায়।

মন গহীনে পর্ব ২৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.