শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ১৫ || valobashar golpo

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ১৫
ফাবিহা নওশীন

ফায়াজ মেহেরকে রুমে এনে এক প্রকার ছুড়ে মারলো। মেহের ছিটকে পড়ে যেতে নিলেও সোজা হয়ে দাঁড়াল। ফায়াজ পা দিয়ে পেছনের দরজায় সজোরে লাথি মারল। দরজা বিকট শব্দে বন্ধ হয়ে গেল। এতো জোরে শব্দ হলো যে মেহের কেঁপে উঠল। কানে যেন তালা লেগে গেল। মেহের ভয়ে ভয়ে ফায়াজের দিকে তাকাচ্ছে। ফায়াজ শার্টের হাতা গোছাতে গোছাতে
মেহেরের দিকে এগুচ্ছে। মেহের ঢোক গিলে পেছনে যাচ্ছে। ফায়াজ আচমকা মেহেরের এক হাত ধরে টান মারল। তারপর হাতটা মেহেরের পিঠের সাথে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
“ভয় লাগছে? এখন ভয় পাচ্ছ? কিছুক্ষণ আগে তো বন্ধুদের সামনে গর্জে উঠেছিলে। একদম বাঘিনী।”

মেহের চোখ বন্ধ করে চোখের পানি ফেলছে। ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে উঠছে। আর ডান হাতে চোখের পানি মুছছে।
ফায়াজ মেহেরের ডানহাত চেপে ধরল বাম হাতে।
তারপর ধমক দিয়ে বলল,
“স্টপ ক্রায়িং। তোমার অনেক বড় স্পর্ধা হয়েছে তাই না? তুমি এতগুলো মানুষের সামনে আমার অবাধ্য হলে।”
মেহের তবুও কাঁদছে। চোখ মেলছে না। মেহেরের উত্তর না পেয়ে ফায়াজের আরো রাগ হচ্ছে। ফায়াজ মেহেরের হাত ছেড়ে দিয়ে ওর থুতনি ধরে উঁচু করে চেপে ধরল।
মেহের ব্যথা পেয়ে শব্দ করে কাঁদছে।
“আমার কষ্ট হচ্ছে খুব। খুব লাগছে।”
ফায়াজ বাকা হেসে বলল,
“আচ্ছা তাই নাকি? তখন মনে ছিল না?
আমার অবাধ্য হওয়ার সময় মনে ছিল না?”
মেহের কান্নারত অবস্থায় বলল,
“ও আমার ছোট বেলার বন্ধু। আমি ওর গায়ে কি করে হাত তুলবো?”
বন্ধু শব্দটা শুনে ফায়াজের রাগ আরো বেড়ে গেল। মেহেরের দুবাহু চেপে ধরে চিতকার করে বলল,
“এই মেয়ে তোর কিসের বন্ধু হ্যা? তোকে আমি বলি নি ক্লাস বাদে সব ভুলে যা। মাহির মতো হতে চাস? তোর আর পড়াশোনা করার দরকার নেই। আগামীকাল থেকে ভার্সিটি অফ।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

মেহের কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে অনুনয় করে বলল,
“এটা করবেন না প্লিজ। আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমি আর কারো সাথে মিশব না। কোনো ছেলের সাথে কথা বলব না। তবুও এমন করবেন না।”
কিন্তু ফায়াজের মায়া হলো না।
“ডানা আমি ছেটে দেব। তুই এই ঘরবন্দী হয়েই থাকবি। তোর বাইরে যাওয়া নিষেধ।”
ফায়াজ মেহেরকে ছেড়ে দিল।
মেহের দুহাত জোর করে বলল,
“এমন করছেন কেন আমার সাথে? আমি পড়াশোনা করতে চাই। বললাম তো আর এমন করব না। আমি আপনার সব কথা শুনব।”
ফায়াজ মেহেরকে পাত্তা না দিয়ে দরজার সামনে যেতেই মেহের কেঁদে কেঁদে চিতকার করে বলল,
“আপনি এটা করতে পারেন না।”
ফায়াজ আবারও মেহেরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্তভাবে বলল,
“পারি। আমি সব করতে পারি। আমার যা ইচ্ছে হবে আমি তাই করব৷ বিকজ আ’ম ইউর হাসব্যান্ড।”

মেহের ফায়াজের কথা শুনে কান্না থামিয়ে দিয়ে বলল,
“ইউ আর নট মাই হাসব্যান্ড। ভুলে গেলেন কি বলেছিলেন? আমরা ঘর ঘর খেলছি। ঠিক তাই। আমরা ঘর ঘর খেলছি। আপনি শখ করে আর আমি বাধ্য হয়ে। তার মানে এই না আপনি আমার উপর অধিকার দেখাবেন, আমার জীবন নিয়ে খেলবেন। আপনার যা ইচ্ছে হয় আপনি তাই করেন কিন্তু আমার বেলায় কেন অন্য নিয়ম? আপনি আপনার মতো আর আমি আমার মতো লাইফ লিড করব। যা খুশি করব। আমার হাজার বন্ধু থাকুক তাতে আপনার কি? এ নিয়ে তো আপনার মাথা ব্যথা হওয়ার কথা না। আপনার আমাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্য তো অন্য কিছু। তাই আমি ওদের সাথে যা খুশি করবো,ঘুরবো,কথা বলবো,হাত ধরে ঘুরবো তাতে আপনার কি? আপনার এতো লাগে কেন?”
ফায়াজ এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে মেহেরকে সহ্য করলেও আর পারছে না। হাত ধরে ঘুরবো এই কথাটা কানে বাজছে। ফায়াজ রাগের মাথায় মেহেরকে সর্বশক্তি দিয়ে আচমকা থাপ্পড় মারল। মেহের এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। বিছানায় ধপ করে পড়ে গেল। ওর মাথা যেন ভনভন করে ঘুরছে। কান ঝিম ধরে গেছে৷ গালটা যেন পুড়ে যাচ্ছে। মেহের গাল ধরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল। ফায়াজ মেহেরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,
“বেশি বাড়লে ঝড়ে পড়ে যাবে। নেক্সট টাইম এত স্পর্ধা দেখিও না। তাহলে এই সুন্দর গালটা আর সুন্দর থাকবে না।”

মেহের তখনও ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে যাচ্ছে। ফায়াজ ধমকে বলল,
“চুপ!! একদম চুপ।”
ফায়াজের ফোন বেজে উঠল। ফায়াজ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে মেহেরের মায়ের নাম্বার। ফায়াজ ফোন রিসিভ করে সালাম দিল।
“বাবা, আগামীকাল মাহি আর তূর্জ আসবে। তুমি মেহেরকে নিয়ে চলে এসো। এসো কিন্তু বাবা।”
ফায়াজ হাসিমুখে বলল,
“জি আন্টি আমরা আগামীকাল চলে আসব চিন্তা করবেন না।”
তারপর ফায়াজ মেহেরের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলল,
“শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। তোমার আপু আসছে। রেডি থেকো।”
ফায়াজ রুমের বাইরে চলে গেল। মেহের চাপা কান্না কাদঁছে। আজকে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে৷ ফায়াজের মুখে মুখে কথা বলে ভুল করে ফেলেছে। ওর কথার অবাধ্য কেন হতে গেল? ওর উপর রাগ করে বাড়িতে গিয়ে আবার কোন তামাশা শুরু করে। নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে।

মেহের চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। গালটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। কিছুক্ষণ পর পর ফুপিয়ে উঠছে। ফায়াজের অনেক খারাপ লাগছে মেহেরকে মেরে। এত রাগ কেন উঠল? কেন মেহেরের মুখে অন্য কারো নাম সহ্য করতে পারে না? কেন মেহেরের দিকে কারো দৃষ্টি, কারো স্পর্শ মেনে নিতে পারে না? ফায়াজের অস্থির লাগছে।
“মানব মন খুবই অদ্ভুত। সে যে কি চায়, কিসে তার সুখ কিছুই বুঝতে পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন আর পাওয়ার উপায়টা হয়তো থাকে না।”
ফায়াজ মেহেরের পাশে এসে বসে। মেহেরের লাল হয়ে ফুলে যাওয়া গালের উপর হাত বুলাল। হটাৎ মেহের চোখ খুলল। ফায়াজ সাথে সাথে হাত সরিয়ে মুখে কাঠিন্য এনে বলল,
“খাবে চলো।”
মেহের নরম গলায় বলল,
“আমি এভাবে নিচে গেলে সবাই প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে আমাকে দেখবে। আমি খাব না।”

ফায়াজ কিছু না বলে নিচে চলে গেল। মেহের উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়াল৷ গালে হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলছে,
“আসছে দয়া দেখাতে। আমার এত সুন্দর গালের কি অবস্থা করেছে। তুই একটা শয়তান,ইতর,বান্দর, উল্লুক, উগান্ডার সাদা হাতি, শেওরা গাছের পেত্নীর জামাই।(মেহের জিহবায় কামড় দিল)এইটা বাদ। শেওয়া গাছের পেত্নীর জায়গায় অন্য কিছু হবে। কিন্তু কি দেওয়া যায়?”
এ-সব ভাবতেই দরজা খোলে ফায়াজ রুমে ঢুকল। মেহের পেছনে ঘুরে ওকে দেখল। সাথে এক সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে এসেছে। টেবিলের উপরে খাবার রেখেই চলে গেল।
ফায়াজ মেহেরের সামনে গিয়ে ওর হাত
ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। তারপর কল ছেড়ে পানিতে হাত দিতেই দাঁতে দাঁত চেপে অদ্ভুত শব্দ করল। ফায়াজ রাগের মাথায় দেয়ালে ঘুষি মারে। তাতে হাত কিছুটা ছিলে গেছে। রক্ত জমে আছে। মেহের সেটা দেখে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। ফায়াজ পানি নিয়ে মেহেরের মুখে দিয়ে বলল,
“আমি তোমার সাথে রুড বিহেভিয়ার করতে চাই না কিন্তু তুমি বাধ্য করেছো। তাই পরবর্তীতে এমন কিছু করো না। এখন খেয়ে নেও।”
ফায়াজ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মেহের চোখ মুখ ধুয়ে বের হয়ে চুপচাপ খেয়ে নিল।

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ১৪

ফায়াজ,মেহের,মাহি আর তূর্জ মেহেরদের বাড়িতে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। মেহের ফায়াজের দিকে একটু পর পর আড়চোখে তাকাচ্ছে। ফায়াজ হেলান দিয়ে বসে চুইংগাম চিবাতে চিবাতে কিছুক্ষণ পর পর মুচকি হাসছে। মেহেরের কেমন জানি লাগছে। তূর্জ এটা সেটা বলছে আর মাহি হু হা করছে। মাহি ফ্রি হয়ে কথা বলতে পারছে না। মাহি মেহেরের দিকে তাকাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।
মাহি খাবার আনার বাহানায় উঠে গেল। তারপর তূর্জ মেহেরের দিকে মনোযোগ দিল।
“শালিকা খবর কি? হানিমুন টানিমুনে যাবে না?”
মেহের ভ্রু কুচকে বলল,
“ভাইয়া হানিমুন শব্দটা শুনেছি কিন্তু টানিমুন আবার কি?”
তূর্জ ওর কথা শুনে হা করে আছে। তারপর ফায়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাই, এই বাচ্চা মেয়ে নিয়ে সংসার করছো কিভাবে?”
ফায়াজ আফসোসের ভঙ্গিতে বলল,
“অনেক কষ্টে ভাই।”

মেহের মনে মনে আবার ফায়াজকে গালাগাল করছে।
মাহি চানাচুর দিয়ে ঝাল করে মুড়ি মাখিয়ে নিয়ে এসেছে। ফায়াজ মুড়ি মুখে দিয়ে দেখল অনেক ঝাল। তারপর মাহির দিকে তাকিয়ে দেখল নির্দ্বিধায় খাচ্ছে। ফায়াজের মাথায় চট করে কিছু একটা এল। তারপর বাকা হেসে বলল,
“আরে মাহি তুমি এত ঝাল খাওয়া শিখলে কবে? তুমি আগে ঝালই খেতে পারতে না। আমি সব সময় তোমার জন্য কম ঝাল দিয়ে ঝালমুড়ির অর্ডার দিতাম।”
মাহি ফায়াজের কথা শুনে তূর্জের দিকে তাকাল। তূর্জ মাহির দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে চেপে আছে। মেহের ফায়াজের দিকে তাকাল। ফায়াজ মেহেরকে চোখ মারল।

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ১৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.