শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২১
ফাবিহা নওশীন
মেহের কম্বলের নিচে হাঁচি দিচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর আর মাথা বের করে ওয়াশরুমের দিকে তাকাচ্ছে। ফায়াজ সেই যে ঢুকেছে আর বের হওয়ার নাম নিচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডায় মেহেরের শরীর ঝাকুনি দিচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে। তাই গোসল সেরেই কম্বলের নিচে ঢুকেছে। মনটা আজ ভিষণ খারাপ। মাহির এতবড় একটা সিক্রেট জানতে পেরেছে। যে বোনকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে সে এতবড় প্রতারণা কেন করল, কিভাবে করল?
ফায়াজ শাওয়ার ছেড়ে বসে আছে। ওর শান্ত মন আবারও অশান্ত হয়ে ওঠেছে। হৃদয় মাঝে ঝড় ওঠছে। সে যেমন তেমন ঝড় নয় তোলপাড় করা ঝড়। যা নিশ্বাসে নিশ্বাসে হৃদয়টাকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। মনের ভিতরে প্রতিশোধের যে আগুন নিভু নিভু ছিল তা যেন প্রজ্বলিত হয়ে উঠল।
ফায়াজ হাত দিয়ে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে বিরবির করে বলছে,
“মাহি তুমি অনেক বড় ভুল করেছ। আমার পুরনো জখমে নতুন করে আঘাত লেগেছে। যেখান থেকে রক্ত ঝড়ছে। এই রক্ত শুধুমাত্র তোমার শেষ দেখেই থামবে। তুমি আগুন নিয়ে খেলেছো আর আগুনে জ্বলবে না তা কি হয়?”
ফায়াজ তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। মেহের কম্বলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে নিল দ্রুত। ফায়াজ দরজা খুলে নিচে চলে গেল।
মেহের কম্বল সরিয়ে উঠে বসে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
পরের দিন ভার্সিটি থেকে বাড়িতে ফিরতেই মেহেরের ফোন বেজে উঠে। মেহের ফোন রিসিভ না করেই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কেননা মাহি ফোন করেছে। মেহেরের মনে একটা চাপা অভিমান মিশ্রিত রাগ বিরাজ করছে। মাহির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। মেহের ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে আবারও ফোন বাজছে। মেহের ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে ফোন রিসিভ করে মাহিকে কিছু বলতে না দিয়ে বলল,
“আপু, তুমি আমাকে আর ফোন করবে না। একদম করবে না। আমার ভালো লাগে না।”
বলেই খট করে ফোন কেটে নাম্বার ব্লক লিষ্টে রেখে দিল।
🍂🍂
এভাবে কেটে গেছে ১মাস। সেদিনের পর থেকে ফায়াজ যেন হুট করেই বদলে গেল। মেহেরের সাথে তেমন কথা বলে না। মেহেরও ভয়ে কথা বলে না। প্রয়োজনে কথা বলতে গেলে ফায়াজ ধমকে কথা বলে। অযথা রাগারাগি করে। মেহের এতকিছুর মধ্যে নিজের দোষটা খোঁজে পাচ্ছে না। মেহের বুঝতে পারছে ফায়াজের মনটা অশান্ত হয়ে আছে। তাই এমন করছে। কিন্তু তবুও নিজের মনকে বুঝাতে পারে না। কেন জানি খুব কষ্ট হয়। খুব। মেহের বুঝতে পারে না। মাহির সাথেও আর সেদিনের পর কথা হয় নি। বাড়ির কারো সাথেও যোগাযোগ করে নি। চোখের পানি ফেলে নীরবে। ফায়াজের কোনো দিকে খেয়াল নেই। ওর মনে শুধু প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
মেহের আর পারছে না। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। আজ বোনের মুখোমুখি হবে। কেন এ-সব করেছে? আজ মাহির সত্যিটা তূর্জকেও জানাবে। আর নিজের পরিবারকেও। তারপর যা হবার হবে। এত বড় অন্যায় আর মেনে নিবে না। নিজের বোন বলে ছাড় দিবে না। ওর অন্যায়ের শাস্তি আর নিজে পাবে না। নিজেরও একটা লাইফ আছে, স্বপ্ন আছে, ভালোলাগা, পছন্দ-অপছন্দ আছে।
আজ ক্লাস শেষে মাহির বাড়িতে যাবে। আগামী পরশু থেকে ওদের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা তাই মাহিকে আর ফ্রি পাওয়া যাবে না। ব্যস্ত থাকবে পড়াশোনা নিয়ে। ফায়াজও বাড়িতে নেই। ওর পড়াশোনা, পরীক্ষা এ-সব নিয়ে কোনো কালেই মাথা ব্যথা ছিল না।
মেহের ক্লাস শেষে মাহির বাড়িতে যায়। ভেতরে ঢুকতেই তূর্জের মায়ের সাথে দেখা। তূর্জের মা মিষ্টি হেসে বলল,
“তোমার এতদিনে আসার সময় হলো? বোনকে একবারের জন্যও দেখতে এলে না এই এক মাসে। তুমি এসেছো ভালোই হয়েছে। তোমার আপুকে একটু বুঝাও আমাদের কারো কথা শুনে না।”
মেহের এক মাস মাহির খোঁজ খবর নেয় নি তাই বুঝতে পারছে না কি হয়েছে আর তূর্জের মা কি বলছে।
“আন্টি ঠিক বুঝলাম না। আপুর কি হয়েছে?”
তূর্জের মা চিন্তিত আর ভয় মেশানো ভঙ্গিতে বলল,
“মাহি আজ সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস আমি দেখেছিলাম। এই সময় যদি পড়ে যেত তাহলে কি হতো ভেবেই আমার কলিজা কেঁপে উঠছে। আল্লাহ সহায় ছিলেন। বেবি ভালো আছে।”
মেহের উনার কথা শুনে চমকে উঠল। কিসের বেবির কথা বলছে।
“আন্টি কোন বেবির কথা বলছেন?”
“কেন তোমার আপুর বেবি।”
মেহের আপুর বেবি কথাটা শুনে শকড। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। ওর আপুর বেবি হলো কবে? কি বলছে মাথায় ঢুকছে না।
মেহের মাথা চুলকে বলল,
“আমি ঠিক বুঝলাম না। আপুর বেবি এলো কোথায় থেকে?”
তূর্জের মা মেহেরের কথা শুনে হেসে ফেলল।
“আরে তুমি দেখছি কিছুই জানো না। মাহি প্রেগন্যান্ট সেটা তোমাকে বলে নি?”
মেহের মাথা নাড়িয়ে চোখ বড়বড় করে বলল,”না।”
তূর্জের মা মেহেরের গাল টিপে বলল,
“তুমি খালা মনি হতে যাচ্ছো। গত মাসেই তো কনফার্ম হলো। তোমাকে বলে নি?”
মেহের খালা মনি হতে যাচ্ছে এই কথাটা শুনে হা করে রইল। খুশিতে চোখে পানি এসে পড়েছে। চোখে মুখে খুশির ঝলকানি। মুহুর্তেই মনের ভেতর পোষণ করা রাগ অভিমান গায়েব হয়ে গেল।
“ওকে স্যালাইন দিয়ে ঘরে শুইয়ে রেখেছি। ওর শরীর অনেক দূর্বল। ডাক্তার স্ট্রেস নিতে নিষেধ করেছে। ঠিক মতো খেতে বলেছে কিন্তু কে শুনে কার কথা। তুমি যাও ওর ঘরে। ”
মেহের মাহির ঘরের দিকে যাচ্ছে। হটাৎ করে থেমে গেল। ওর এখানে আসার কারণ মনে হতেই থমকে গেল। এখন কি করবে? এমন একটা মুহুর্তে কি সিন ক্রিয়েট করা ঠিক হবে? আপুর বেবির হেলথের জন্য ঠিক হবে তো? আর পুরো পরিবারের জন্য? তূর্জ ভাই এমন খুশির সময় এমন একটা নিউজ মেনে নিতে পারবে? কোনো অঘটন ঘটে যাবে না তো? যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়? তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে?
মেহের মাহির ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাহিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। মাহি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মেহের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মাহির চেহারা কেমন লাগছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে। আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে। মেহেরের আর এখানে দাঁড়াতে
ইচ্ছে করছে না।
মাহি চোখ খোলে বলল,
“কে?”
মেহের দাঁড়িয়ে গেল। মাহি ঘাড় কাত করে মেহেরকে দেখে বলল,
“মেহু! তুই এসেছিস? এতদিনে তোর আমার কথা মনে পড়ল?”
মেহের মাহির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মাহি মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু মেহের পারছে না ওই চোখে চোখ রাখতে। মেহের নিষ্প্রাণ নির্জীব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহের বুঝতে পারছে না কি করবে। এই মুহুর্তে এই কথাগুলো জিজ্ঞেস করবে? জিজ্ঞেস করা উচিত হবে?
মাহি হাত বাড়িয়ে বলল,
“এখানে এসে বস।”
মেহের গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল।
“তুই আমার ফোন রিসিভ করিস না কেন? আর সেদিন এমন ভাবে কথা বললি কেন? আমি তোকে আমার বেবির নিউজ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই ফোন কেটে দিলি। তারপর আর তোকে ফোন করে পাই নি।”
মেহের তখনও চুপ করে আছে।
“কিরে মেহু আমার উপর রাগ করেছিস? ফায়াজ কিছু বলেছে আমাকে নিয়ে?”
মেহের হালকা হেসে বলল,
“পুরো গল্প যখন তোমাকে নিয়ে তখন তুমি তো থাকবেই পুরোটা জুড়ে। কথা তো তোমাকে নিয়েই বলবে।”
মাহি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর কথা ঘুরানোর জন্য পেটে হাত দিয়ে স্মিত হেসে বলল,
“বেবির সাড়ে তিন মাস। আর সাড়ে ছ মাস পর আমার বেবি দুনিয়ার আলো দেখবে। ভাবতেই ভালো লাগছে।”
বেবির কথা শুনে মেহেরের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। বেবির উপর তো আর রাগ করে থাকতে পারে না।
মেহের উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“নিজের খেয়াল রেখো। আমি আসছি।”
মেহের দ্রুত মাহির ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
বাড়িতে যেতেই মেহের ফায়াজকে দেখতে পেল। যেন ওর জন্যই অপেক্ষা করছে। ফায়াজ শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় গিয়েছিলে?”
মেহের ভনিতা না করেই বলল,
“আপুর বাড়িতে।”
“বোনের জন্য এখনো এত দরদ? আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি মেহের এইবার আমি মাহিকে ধ্বংস করেই ছাড়ব। তুমি যদি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করো তবে তোমাদের দু-বোনকে আমি এক সাথে খুন করে শান্ত হব।”
মেহের পড়েছে ফ্যাসাদে। কোন দিকে যাবে, কি করবে?
মেহের ফায়াজের আরো কাছে গিয়ে চোখের পানি ফেলে শক্ত গলায় বলল,
“হ্যাঁ মেরেই ফেলুন আমাকে। আমাকে মেরে ফেলুন। অন্তত আমি শান্তি পাই। আপনি, আপু সবাই শান্ত হয়ে যান।”
মেহের মেঝেতে বসে পড়ল। কান্না যেন থামছেই না।
“আপনি আমাকে মেরে ফেলুন। তবুও প্লিজ আপুর কোনো ক্ষতি করবেন না।”
ফায়াজ অবাক হয়ে মেহেরকে দেখছে।
“তুমি এই আপু আপু বন্ধ করবে না। তাই না? এই তুমি এসবের মধ্যে ছিলে না তো? তুমি সব জানতে?”
মেহের ফায়াজের দিকে তাকাল ফায়াজের কথা শুনে।
“আমি জানতাম? আপনার এটা মনে হচ্ছে? আমি কিছুই জানতাম না।”
ফায়াজ মেহেরের পাশে বসে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“মিথ্যা। সব মিথ্যা। আমি কাউকে বিশ্বাস করি না। কাউকে না। তুই নিশ্চয়ই ছিলি এর মধ্যে।”
মেহের উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনি সব সময় সব কিছুর জন্য আমাকে দোষারোপ করেন। যেদিন আমি থাকব না সেদিন আমার মূল্য আপনি বুঝবেন এর আগে না। আপু প্রেগন্যান্ট। আপুর পাপের শাস্তি কেন একটা নিষ্পাপ বাচ্চা পাবে বলুন তো? সে কেন তার বাবা-মাকে হারাবে? একটা ভাঙা সংসারে বড় হবে? সে কেন দুনিয়াতে আসার আগেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে? কি দোষ ওর?”
ফায়াজ মেহেরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে।
“মাহি প্রেগন্যান্ট!”
মেহের মাথা নাড়িয়ে বলল,”হুম।”
ফায়াজ কোনো কিছু না বলে বের হয়ে গেল। মেহের ফায়াজের যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।
“আপু প্রেগন্যান্ট শুনে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন?”
ফায়াজ ছাদে বসে বসে ড্রিংক করছে আর বলছে,
“আমি এতটা নিষ্টুর হতে পারব না। একটা বাচ্চাকে কষ্ট দিতে পারব না। আমি চাই না কেউ তার বাবা-মা ছাড়া বড় হোক। একটা ভাঙা পরিবারে বড় হোক। আমি চাই না কেউ আমার মতো একা বড় হোক। ছেলেবেলা নষ্ট হোক। বাবা-মাকে প্রয়োজনে পাশে না পাক। বাবা-মায়ের আদর, স্নেহ, ভালোবাসা হীন বড় হোক। সব দোষ আমার। আমি কেন কারো ভালোবাসার ফাঁদে পড়লাম? আমি কি জানতাম না ভালোবাসা বলতে কিছু নেই? যদি ভালোবাসা বলতে কিছু থাকত তবে আমার বাবা-মা সেপারেশনে থাকত না। আমাকে আর ফাইজাকে পরিবারহীন বড় হতে হতো না।”
ফায়াজের পরীক্ষার আগের রাতে ফায়াজ কিছু নিয়ে বেশ ভাবছে। মেহের ভাবছে হয়তো পরীক্ষার জন্য টেনশন করছে।
ফায়াজ শান্ত কন্ঠে বলল,
“মেহের একটা সংসারের জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ? ভালোবাসা না মায়া?”
মেহের কিছুক্ষণ ভেবে গম্ভীরমুখে বলল,
“মায়া কেটে যায় কিন্তু ভালোবাসা কখনো মন থেকে মুছা যায় না। তাই আমার মনে হয় ভালোবাসা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
ফায়াজ আর উত্তর দিল না। মেহেরও কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করল না।
ফায়াজের পরীক্ষার এক মাস ফায়াজ মেহেরের সাথে তেমন কথা বলে নি। নিজের মতো থেকেছে। মেহেরকে সব সময় এভয়েড করে চলেছে।
ফায়াজ শেষ পরীক্ষার রাতে মেহেরকে ডেকে বলল,
“আমি মুক্তি চাই এ-সব থেকে। আমি আর নিতে পারছি না। রাগের বশে আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি। জানি এর ক্ষমা নেই। যত ক্ষমা চাই না কেন তোমার ক্ষতি আমি পোষাতে পারব না। আমি আসলে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়েছিলাম। হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলে প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠি। এই প্রতিশোধ আমাকেও পুড়িয়ে ফেলেছে। আমি তোমাকে আজ এই মুহুর্তে মুক্তি দিলাম। তুমি যদি আমার কাছে কিছু চাও তবে বলতে পারো? যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারো। আমাকে শাস্তি দিতে পারো। থানা-পুলিশ করতে পারো।”
মেহের কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আমার কিছু চাই না। শুধু মুক্তি চাই।”
মেহের কথাটা বলে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ছাদে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। তবে মেহের ফায়াজকে একটা শিক্ষা দিতে চায়।
।
পরের দিন ফায়াজ মেহেরকে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। পুরো রাস্তা দুজন চুপ ছিল। কেউ কোনো কথা বলে নি। মেহের ফায়াজের দিকে একবারও তাকায় নি। ফায়াজ আড়চোখে মেহেরকে কয়েকবার দেখেছে। মেহের ফায়াজের দিকে না তাকিয়েই গাড়ি থেকে নেমে গেল।
ফায়াজ মেহেরের যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।
শুধু মনে মনে বলছে,
“মেহের একটা বার বলো তুমি মুক্তি চাও না। থাকতে চাও। প্লিজ মেহের। একবার পেছনে ঘুরে তাকাও।”
মেহেরের বুকে চিনচিনে ব্যথা করছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। কিন্তু সে পানি মোছার চেষ্টা করছে না। ঠোঁট কামড়ে ভাবছে,
“ফায়াজ একটা বার ডাকো আমাকে। প্লিজ আমাকে বাড়ির ভেতরে যেতে দিও না। তাহলে আর ফিরতে পারব না।”
শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২০
কিন্তু না কেউ কাউকে ডাকে নি। না সাড়া দিয়েছে অনুভূতির ডাকে।
প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক মানুষই চায় তাকে অপর পাশের মানুষ ডাকুক, তার অনুভূতি প্রকাশ করুক। সে অপেক্ষায় থাকে। নিজের ইগোকে দূরে ঠেলে নিজের অনুভূতির দাম দেয় না। কিছু অনুভূতি অপ্রকাশিতই রয়ে যায়।
মেহের দূরে মিলিয়ে যেতেই ফায়াজ ডান হাতে মুখ চেপে ধরে আবারও বাইরে তাকাল। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি ছুটছে এয়ারপোর্টের দিকে।
মেহের জানতেও পারল না ফায়াজ ওকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।