শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৫ || বৃষ্টি হয়ে নামবো

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৫
ফাবিহা নওশীন

ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। মেহের নাচ, গান দুটোতেই পার্টিসিপ্যাট করবে। মেহের নাচটা শখের বশে শিখলেও কখনো কোথাও ট্রাই করে নি। বাড়িতে নিজের ঘরে, বাবা-মায়ের সামনে, আপুর সাথে, কাজিন আর বান্ধবীদের সামনে পার্টিসিপ্যাট করেছে। কিন্তু আজ প্রথম ভার্সিটিতে গানের সাথে সাথে নাচও করবে। কেন করবে নিজেও জানে না। এখন অনুশীলন করতে যাচ্ছে।
“আমার কি কপাল। সবার রুমালে প্রেমিকার অথবা বউয়ের লিপস্টিকসহ ঠোঁটের ছাপ থাকে আর আমার রুমালে আমার বউয়ের চোখের কাজলের কালি। কি কপাল দেখেছিস শান।”
ফায়াজ ওর বন্ধু শান আর তুষারের মাঝে বসে ওদের দুজনের কাঁধে দুহাত তুলে বসে আছে। মেহের ফায়াজের কন্ঠস্বর শুনে ফায়াজের দিকে তাকাল। ফায়াজের কথা শুনে মেহেরের হাসি পাচ্ছে। মেহের মিটমিট করে হাসছে আর হাঁটছে।
ফায়াজ ওদের ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল। ওর যেন হার্টবিট মিস হয়ে গেল। তারপর বুকে হাত দিয়ে বলল,
“মাই গড।”

তারপর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এটা কি দেখলাম আমি? মেহেরজান হাসলো? স্বপ্ন দেখলাম না কি?”
শান দাঁড়িয়ে ফায়াজের পিঠে হাত দিয়ে বলল,
“আরে না স্বপ্ন না। ভাবি সত্যিই হেসেছে।”
ফায়াজ ভ্রু কুচকে বলল,
“তুই দেখেছিস? তোকে কে দেখতে বলেছে? আর দেখবি না খবরদার।”
শান হাত তুলে বলল,
“ওকে ভাই আর দেখব না। কখনো দেখব না।”
ফায়াজ মেহেরের দিকে তাকিয়ে। যতদূর দেখা যাচ্ছে দেখেই যাচ্ছে।
“কি সুন্দর তোমার হাসি। অদ্ভুত সুন্দর। এর আগে কখনো তোমাকে ভালো করে দেখি নি। তাই তোমার এই হাসির সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য হয় নি।”
ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যার দৃষ্টিকোন থেকে প্রিয় অথবা প্রিয়ার সবটাই ভালো লাগে। তার হাসি, তার কথা বলা, তার হাঁটা-চলা সবটা।ব্যক্তির ছোট ছোট ক্ষুতগুলোও অদ্ভুত সুন্দর হয়ে ধরা পড়ে চোখে। ফায়াজ আর মেহের দূরে থেকেও যেন কাছাকাছি অনুভূতি দ্বারা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

মেহের নাচের ক্লাসে গিয়ে থ। ওর নাম
নেই লিষ্টে। স্যারের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারল মেহের না-কি নামই দেয় নি। কিন্তু মেহেরের স্পষ্ট মনে আছে ও সামিরার সাথে গান আর নাচ দুটোরই ফ্রম ফিলাপ করেছে। তাহলে কি হলো?
মেহের রুম থেকে বের হয়ে গেল। সামিরা ওর পেছনে পেছনে।
“মেহের তুই তো নাম দিয়েছিস। তাহলে লিষ্ট থেকে বাদ পড়লি কিভাবে? ”
“বাদ পড়ি নি। বাদ পড়ানো হয়েছে।”
সামিরা অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
মেহের দাঁড়িয়ে গেল। তারপর সামিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বুঝিস নি এখনো? ফায়াজ করেছে এ-সব। ও আমার ফ্রম সরিয়ে দিয়েছে। কত্ত খারাপ দেখেছিস?” (কাঁদো কাঁদো হয়ে)
সামিরা মৃদু হেসে বলল,
“খারাপের কি হলো? জিজু চায় তোর নাচ শুধু উনি দেখবেন। অন্য কেউ না। কত্ত প্রেম দেখেছিস।”

মেহের সামিরার দিকে ঠোঁট ফুলিয়ে চোখ সরু সরু করে তাকাল।
ফায়াজ ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আর সিগারেট ফুকছে। সামিরা ফায়াজকে দেখতে পেয়ে মেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে জোরে জোরে ফায়াজকে ডাকছে।
“ফায়াজ ভাই, মেহের আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চায়।”
মেহের চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে সামিরার দিকে। ফায়াজ ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর এক পা আগাল। মেহের হাত ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“একটা থাপ্পড় মারব। মিথ্যা,,,।
মেহের আর কিছু বলতে পারল না। মুখে হাত চেপে এক পাশে গিয়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই গরগর করে বমি করে দিল। সামিরা দৌড়ে গিয়ে ওকে পানি দিল। ফায়াজ হাতের সিগারেটের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছুড়ে ফেলে দিল। মেহের বমি করে চোখে মুখে পানি দিয়ে বসে পড়ল ঘাসের উপর।
ফায়াজ মেহেরের কাছে গিয়ে পাগলের মতো করছে।
” মেহের খুব খারাপ লাগছে? চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।”
ফায়াজ হাত বাড়াতেই মেহের বলল,
“দূরে সরুন। গন্ধটা আমার সহ্য হচ্ছে না।”
সামিরা মেহেরকে দাঁড় করিয়ে ফায়াজকে বলল,
“আপনার তো জানার কথা মেহেরের সিগারেটে সমস্যা হয়।”
ফায়াজ মাথা নিঁচু করে নিল। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আর কখনো সিগারেট খাবে না।

ফায়াজ মেহেরের হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“অনুষ্ঠানের দিনে পরবে।”
মেহের প্যাকেট খুলে লাল রঙের শাড়ি দেখতে পেল, সোনালী পাড়। শাড়িটা দেখে মেহেরের চোখ জুড়িয়ে গেল। মেহের শাড়িটা হাতে নিয়ে বলল,
“আমি শাড়ি পরব না। নিন আপনার শাড়ি।”
মেহের শাড়ি ফেরত দিতেই ফায়াজ নিয়ে নিল।
তারপর বলল,
“ঠিক আছে। পরতে হবে না। তুমি ওইদিন আসার পর আমি নিজ হাতে তোমাকে পরিয়ে দেব।”
মেহের ঢোক গিলে ফায়াজের দিকে তাকাল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“পরিয়ে দিবেন মানে কি?”
“মানে সুন্দর করে যত্ন করে পরিয়ে দেব৷ যদি সেটা সবার সামনে,,।”
মেহের ফায়াজের কথা শেষ না হতেই ওর হাত থেকে নিয়ে নিল। তারপর দৃষ্টি নত করে বলল,
“ঠিক আছে আমি পরব।”

ফায়াজ মুচকি হাসল। মেহের ঠোঁট নাড়িয়ে বিরবির করে কিছু বলছে।
ফায়াজ সেটা দেখে বলল,
“আবারও মনে মনে গালাগাল করছো? তোমার পুরনো অভ্যাস গেল না?”
মেহের ফায়াজের দিকে চোখ তুলে তাকাল। ফায়াজ পুরনো কথা মনে রেখেছে। মেহের একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আপনি আমার ফ্রম কি করেছেন?”
ফায়াজ ভ্রু চুলকে বলল,
“সত্যিটা জেনে গেছো? তাহলে শুনো তুমি এত মানুষের সামনে নাঁচবে না। তুমি নিজেও চাও না। তবে জানি না কেন নাম দিয়েছো। শুধু এটুকু জানি তুমি নাঁচবে না।”
মেহের আর কিছু বলল না। ফায়াজ এটা করেছে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছে।
মেহের মনে মনে ঠিক করল ও কিছুই করবে না। না গান আর না নাচ। ফায়াজের দেওয়া শাড়িটা নিয়ে চলে এল।

মেহেরের ফোন বাজছে কখন থেকে। মেহের ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দ্রুত কল রিসিভ করল। মেহেরের মা ফোন করেছে। মেহের ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেহেরের মা উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলল,
“মেহের মাহির ছেলে হয়েছে। তুই আসবি?”
মেহেরের মনের রাগ অভিমান ওর বোনের প্রতি বোনের ছেলের প্রতি না। মেহেরের খুব ভালো লাগছে যে ও খালা হয়ে গেছে। মেহেরও দ্বিগুণ উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলল,

“আসব না মানে? আমি আসছি। এখুনি আসছি।”
মেহের ফোন কেটে দ্রুত রেডি হয়ে নিল। সাথে সামিরাকেও নিল।
মাহি ছেলেকে দেখে কেঁদে দিয়ে গালে হাত রেখে বলল,
“তোর মা খুব পঁচা জানিস তো। সে ভালো মেয়ে, ভালো বোন, ভালো স্ত্রীও হতে পারে নি। কিন্তু ভালো মা হবে। দেখিস।”
মেহের দরজায় উঁকি দিয়ে মাহি আর বাবুকে একসাথে দেখল। মাহি বাবুকে বিরবির করে কি জানি বলছে।
মেহের ভেতরে ঢুকতেই মাহি মৃদু হাসল। মেহের মাহির দিকে না তাকিয়ে বাবুর দিকে তাকাল। তারপর কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেল। কিছুক্ষণ আদর করল।
মাহি মেহেরকে দেখছে। তারপর বলল,
“শুনলাম ফায়াজ না কি ফিরে এসেছে?”
মেহের ওর প্রশ্ন শুনে থমকে গেল।
তারপর বলল,
“হ্যাঁ, তো?”
মাহি কিভাবে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলল,
“তোর সাথে ওর কথা হয় নি? ”
মেহের হালকা হাসল প্রতিউত্তরে।

“এসেছে তার খবর যখন পেয়েছো। কিছু বলেছে কি না, কথা হয়েছে কি না তাও জানার কথা।”
মাহি আর কোনো কথা বলল না। কারণ মাহি জানে মেহের ঠিক বলছে। মাহি সব খবর জানে।

মেহের তার পরের দিন ভার্সিটি মিস দিয়ে হসপিটালে গিয়েছে মাহির ছেলেকে দেখতে। হাতে অনেকগুলো ব্যাগ। মাহির ছেলের জন্য অনেক কিছু কিনে এনেছে। ছোট ছোট জামাকাপড়। খেলনাও এনেছে। জানে এতটুকু বাচ্চা খেলতে পারে না তবুও নিয়ে এসেছে।
ফায়াজ আজ মেহেরকে পায় নি ভার্সিটিতে। ফায়াজ গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। আজ মেহেরকে দেখে ছাড়বে। এতবড় সাহস ভার্সিটিতে আসে নি। ফায়াজকে কষ্ট দিচ্ছে।
ফায়াজ মেহেরের হোস্টেলের সামনে যেতেই মেহেরকে ভেতরে ঢুকতে দেখে। মেহের ঢুকতে যাবে তখনই ফায়াজ ওকে ডাকল। ভেতরে ঢুকবে না ফায়াজের সামনে যাবে বুঝতে পারছে না। এসব ভাবাভাবির মাঝেই ফায়াজ আবারও ডাকল।
মেহের বাধ্য হয়ে ফায়াজের গাড়ির সামনে গেল। ফায়াজ গাড়ির দরজা খুলে মেহেরকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেল। তারপর নিজের কোলের উপরে বসাল। মেহের সরার জন্য দস্তাদস্তি করছে বের হওয়ার জন্য। ফায়াজ ওকে চেপে ধরে বলল,
“সারাদিন কই ছিলে? কোথায় ঘুরঘুর করছিলে? আমার ফোন রিসিভ করো নি কেন?”

মেহের কাচুমাচু করে বলল,
“হসপিটালে ছিলাম।”
ফায়াজ হসপিটালের কথা শুনে বলল,
“কেন? শরীর খারাপ না কি তোমার?”
“না আসলে আপুর বেবি হয়েছে।” (নিচুস্বরে)
ফায়াজ উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলল,
“তাই না কি? আমার প্রমোশন হয়ে গেছে। খালু হয়ে গেছি।”
মেহের ফায়াজের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। তারপর চোখ নামিয়ে নিল। ভাবল কি আর হলো কি। ভেবেছিল ফায়াজ মন খারাপ করবে কিন্তু না। মেহের চুপ করে আছে।
ফায়াজ মেহেরকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল,
“ফোন তুলো নি কেন? আমাকে ছটফট করাতে তোমার ভালো লাগে?”
মেহের কোনো উত্তর না দিয়ে বলল,
“ছাড়ুন আমি যাব।”
“আরেকটু দেখতে দেও।”
“দেখেই তো যাচ্ছেন। আমি কি আইসক্রিম না চকলেট এভাবে তাকিয়ে আছেন?”
“তার চেয়ে লোভাতুর কিছু।”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল। চোখে মুখে লজ্জা নিয়ে বলল,
“আপনার দেখা শেষ? ”

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৪

“তোমাকে দেখে আমার মন ভরে না।”
“এত মন ভরাতে হবে না। আমাকে যেতে দিন।”
“মন না ভরলে তো মরে যাব।”
মেহেরের বিরক্ত লাগছে। বিরক্ত নিয়ে বলল,
“তাহলে মরে যান।”
ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে মেহেরকে ছেড়ে দিল। মেহের ছাড়া পেয়ে হেঁটে হেঁটে ভেতরে চলে গেল।
মেহের যেতে যেতে ভাবছে, “মুখ ফস্কে এটা কি বলে ফেলল?”
ওর খুব খারাপ লাগছে। এই কথাটা বলা একদম ঠিক হয় নি।

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.