শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৮ || ভিনদেশি তারা

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৮
ফাবিহা নওশীন

মেহের কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে আছে। ফায়াজ প্লেটে খাবার রাখছে, মেহের ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফায়াজ খাবারসহ প্লেট মেহেরের হাতে দিল। ফায়াজ এ-সব কি করছে, কেন করছে? সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
মেহের প্লেট হাতে নিয়ে বসে আছে। ফায়াজ মেহেরকে চুপ দেখে বলল,
“তোমাকে কি খাইয়ে দিতে হবে? তুমি কি তাই চাইছো? তবে সরি আমি খাইয়ে দিতে পারব না। অত ঢং করতে পারব না।”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে লজ্জা পেল। তারপর বলল,
“না মানে, এ-সব কেন? আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন কেন?”
ফায়াজ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“হোস্টেলের খাবার খেয়ে রোজ রোজ অসুস্থ হয়ে পড়ছো সেটা কি আমি জানি না? তুমি আর বাইরের খাবার খাবে না। আমি রোজ তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসব। নেও এখন এত কথা বলো না। চুপচাপ খাও।”
মেহের বুঝতে পারছে না কি করে খাবে ফায়াজের সামনে। গাড়িতে বসে ফায়াজের সামনে বসে খেতে ওকওয়ার্ড লাগছে। ফায়াজ বুঝতে পেরে গাড়ি থেকে নেমে গেল। মেহের মুচকি হেসে খেতে শুরু করল।

মেহেরের জন্য ফায়াজ রোজ রোজ খাবার নিয়ে আসে। সন্ধ্যায় হোস্টেলের সামনে খাবার নিয়ে যায়। মেহেরকে বাইরের খাবার খেতে দেয় না।
মেহের এখন ফায়াজের আনা খাবারই খায়।
মেহের, অনু আর সামিরা এক সাথে সিড়ি দিয়ে নামছে কথা বলতে বলতে। হটাৎ করে মেহের ছিটকে পড়ে গেল। সামিরা আর অনু মেহেরের নাম ধরে চিতকার করে মেহেরকে ধরে উঠালো। মেহের পায়ে ব্যথা পেয়েছে। তাছাড়া ডান হাত মারাত্মক ভাবে কেটে গেছে। রক্ত পড়ছে গড়িয়ে। হাতের কনুই ছিলেও গেছে। মেহের ব্যথায় কুকড়ে যাচ্ছে। কাটা-ছেঁড়া, রক্ত এগুলোকে মেহের মারাত্মক ভয় পায়। মেহেরকে ভার্সিটির মিনি হসপিটালে নিয়ে গেল। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকদের জন্য একজন ডাক্তার নিয়োজিত আছে সব সময়ের জন্য। সেখানে কয়েকটা বেডও আছে। প্রাথমিক চিকিৎসার সব ব্যবস্থা আছে সেখানে।
মেহের টলমলে চোখে সামিরার হাত এক হাতে চেপে ধরে কাটা জায়গা দেখছে আর ডাক্তারের দিকে তাকাচ্ছে। ডাক্তার মেডিসিন বের করছে। মেহেরের খুব ভয় লাগছে।
ফায়াজ তার দু’চার জন বন্ধু নিয়ে ভেতরে ঢুকে। ফায়াজের দৃষ্টি প্রথমেই মেহেরের দিকে গেল। মেহেরের অসহায় ফেস দেখে ফায়াজের খুব কষ্ট হচ্ছে। মেহের ফায়াজকে দেখে চেহারা থেকে ব্যথাতুর ভাব সরিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

ফায়াজ মেহেরকে একবার দেখে সামিরাকে বলল,
“কি করে হলো এ-সব?”
সামিরা ফায়াজকে দেখে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলল,
“ও হটাৎ করে পড়ে গেছে। কিভাবে পড়ল বুঝতে পারছি না। আমাদের সাথেই তো হাঁটছিল।”
ফায়াজ মেহেরের পাশে বসে বলল,
“দেখেশুনে সাবধানে হাঁটতে পারো না?”
ডাক্তার স্যাভলন আর তুলো নিয়ে কাটা জায়গায় স্পর্শ করতেই মেহের “আহ” করে লাফিয়ে উঠল।
ফায়াজ বিচলিত হয়ে ডাক্তারকে বলল,
“আংকেল একটু আস্তে। দেখছেন তো ব্যথা পাচ্ছে।”
ডাক্তার হেসে বলল,
“বাবা আমি তো আস্তেই দিয়েছি। তুলোতে মেডিসিন দিয়েছি অন্য কিছু না। একটু ধরবেই।”
ফায়াজ মেহেরের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল যাতে না দেখে কাটাস্থানটা। মেহেরের হাতে আবারও ওষুধ দিতেই ও ফায়াজের বুকে মুখ গুজে দিল। আর অন্য হাতে ফায়াজের টিশার্ট খামচে ধরে চোখের পানি ফেলছে। খুব জ্বলছে কাটা জায়গা গুলো।
ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে মেহের মাথা তুলে। ফায়াজ মেহেরের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,
“ব্যান্ডেজ করা শেষ। ভালো হয়ে যাবে।”
ডাক্তার ফায়াজের কথা শুনে বলল,
“ইঞ্জেকশন দিতে হবে। নয়তো ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ইঞ্জেকশন দিলে দ্রুত সেরে উঠবে।”
ইঞ্জেকশনের কথা শুনে মেহের আবারও কেঁদে দিয়ে বলল,
“ফায়াজ, আমি ইঞ্জেকশন দেব না। আমার খুব ভয় লাগে। খুব ব্যথা লাগবে ইঞ্জেকশনে।”

ফায়াজ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“না দিলে হয় না?”
ডাক্তার বলল,
“ইঞ্জেকশন নিয়ে রাখা ভালো। ওর জন্য ভালো হবে।”
মেহের সেটা শুনে দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে।
“আমি দেব না। বাস্।”
ফায়াজ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আংকেল আস্তে করে দেবেন। ব্যথা যেন না পায়।”
ফায়াজের বন্ধু মজা করে বলল,
“জি আংকেল, লাইলিকে দিলে মজনুর ব্যথা লাগবে। দেখছেন না এক জনের ব্যথায় অন্যজন কুকঁড়ে যাচ্ছে। তাই আস্তে করে দেবেন।”
ফায়াজ চোখ পাকিয়ে তাকাল। ওরা থেমে গেলেও মুখ চেপে হাসছে।
ফায়াজ বলল,
“সবাই ভীড় কমাও এখান থেকে। যাও যাও।”
একে একে সবাই বের হয়ে গেল। ফায়াজ ডাক্তারের দিকে তাকাল। তারপর ইশারা করল ইঞ্জেকশন দিতে। ফায়াজ মেহেরকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কেউ ইঞ্জেকশন দিবে না তোমাকে। কান্না থামাও।”
ডাক্তার মেহেরের হাতে ইঞ্জেকশন পুশ করলে মেহের তাতিয়ে উঠে। সরতে নিলে ফায়াজ চেপে ধরে। ডাক্তারের কাজ শেষ। তিনি চলে গেলেন। মেহের শব্দ করে কেঁদে দিল। ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে আর বিরবির করে বলছে,
“আপনি এত খারাপ কেন? খুব খারাপ। জোর করে ইঞ্জেকশন দিয়ে দিলেন।”
ফায়াজ মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“আহারে! ফেচফেচ করে শুধু কাঁদতেই পারে। কাদুনি বউ আমার।”
ফায়াজ মেহেরকে নিয়ে বাইরে বের হচ্ছে ধীরে ধীরে। অনু আর সামিরা ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সামিরা ফায়াজকে বলল,
“ভাইয়া অনু বলছে কেউ হয়তো ওকে ফেলে দিয়েছে। ও পড়ে যায় নি।”
ফায়াজ মেহেরের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি দিল। মেহের আমতা আমতা করে বলল,
“কেউ ফেলে নি। আমি নিজেই পড়ে গিয়েছি।”
তারপর অনুকে ইশারা করল চোখ দিয়ে।
ফায়াজ সেটা দেখে খেকিয়ে বলল,
“মেহের কি লুকাচ্ছো? সত্যি করে বলো।”
তারপর অনুকে বলল,
“ঘটনা খুলে বলো।”

অনু মেহেরের দিকে অসহায় ফেস করে তাকাল।
তারপর বলতে শুরু করল,
“আমরা যখন হাটঁছিলাম তখন একজন ইচ্ছে করেই মেহেরকে ধাক্কা মারে। এটা যে এক্সিডেন্ট নয় সেটা বুঝাই যাচ্ছিল। আমি দেখেছি।”
ফায়াজ কপাল কুচকে বলল,
“কে সে? কার এত বড় স্পর্ধা?”
অনু তাকে দেখে নি। তাই কনফিউজড হয়ে বলল,
“আমি তাকে চিনি না। আমাদের সিনিয়র হবে শিউর।”
ফায়াজ ডান হাতের কব্জি উল্টো করে অন্য হাতে চাপকে বলল,
“শিট! হু ইজ দ্যা ইডিয়ট?”
অনু তো তাকে চিনে না।
“ভাইয়া একটা মেয়ে। তাকে আমি চিনি না বাট দেখলে চিনতে পারব।”
“গুড। ভেরি গুড।”
ফায়াজ মেহেরের হাত ধরে নিয়ে চলে যেতে যেতে বলল,
“খুঁজতে শুরু করে দেও তাকে।”
মেহের চোখ বড়বড় করে ফায়াজের দিকে তাকাল। আর বেচারি অনু ফেসে গেছে। এখন সারাদিন ধরে খুঁজতে থাকো।
মেহের ফায়াজকে বলল,
“অনু কি এখন সারাদিন ওই মেয়েকে খোজঁবে? বাদ দিন না। যা হওয়ার হয়েছে।”
ফায়াজ মেহেরের দিকে রাগী ফেস করে তাকিয়ে বলল,
“না বাদ দিব না। কেউ তোমাকে ইচ্ছে করে ফেলে দিবে, তোমার এই হাল করবে আর আমি তাকে ছেড়ে দেব? কখনো না। তোমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছে ওকে ততটা কষ্ট পেতে হবে। এত বড় সাহস ওই মেয়ের। ওকে আমি পাই একবার।”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। ভয়ার্ত স্বরে বলল,
“পেলে কি করবেন হা? মেয়েদের গায়ে একদম হাত দিবেন না। এটা ব্যাড ম্যানার।”
“না গায়ে হাত দেব কেন? আমি কি পাগল নাকি?”
মেহের মিনমিন করে বলল,”সেরকমই। সাইকো একটা।”
ফায়াজ মুচকি হেসে বলল,
“তোমার জন্য।”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে থমকে গেল।
ফায়াজ মেহেরকে গাড়িতে বসিয়ে বলল,

“তুমি কি আমাকে ক্ষমা করোনি এখনও? ফিরবে না আমার কাছে?”
মেহের জবাব দিল না। ফায়াজও ফোর্স করল না।
মেহের গাড়ি থেকে নেমে গেটের কাছে যেতে নিয়ে থেমে গেল। তারপর ফায়াজের কাছে এসে বলল,
“আপনার মাথায় ঘোরতর প্রব্লেম আছে। খুব ভয়ংকর আপনি। কিন্তু তাতে আমার প্রব্লেম নেই। যদি কোন দিন মনে হয় আপনি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন তাহলে আমি নিজেই আপনার কাছে ফিরব আপনার দেওয়া যেকোনো শর্তে।”
মেহের চলে যেতে নিলে ফায়াজ গাড়ি থেকে নেমে মেহেরের হাত ধরে বলল,
“আমার কোনো শর্ত নেই। তুমি যেদিন ফিরবে সেদিন আমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে ফিরো তাহলেই হবে। আমি মানুষটা ভালোবাসার বড্ড কাঙাল। তাই চাই কেউ আমাকে এমন ভাবে ভালোবাসুক আমাকে ছাড়া যেন তার নিশ্বাস আটকে আসে।”
ফায়াজ মেহেরের হাত ছেড়ে গাড়িতে ওঠে বলল,
“নিজের খেয়াল রেখো। আর আমি মেডিসিন পাঠিয়ে দেব। সময় মতো খেয়ে নিও।”
সে মেয়ের খোঁজ পেয়েছে অনু। বেচারি তাকে হন্য হয়ে খুজেছে এতদিন। সে হচ্ছে ফায়াজের ক্লাসমেট হিমি। সেই হিমি যে কি না মাহিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল ফায়াজকে প্রেমে পড়াতে পারবে না। হিমি ফায়াজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার ফেসে যতটা ভয় থাকার কথা ততটা নেই। এই অতি সামান্য ভয় দেখে মেহেরের আশ্চর্য লাগছে। একটা মেয়ে হিমির হাত ধরে রেখেছে। ফায়াজ ওর চারদিকে এক চক্কর দিয়ে বলল,
“হোয়াটস ইউর প্রব্লেম উইথ মেহের?”
হিমি মেহেরের দিকে ক্ষীণ দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“কোনো সমস্যা নেই।”
ফায়াজ চেঁচিয়ে বলল,
“তাহলে ধাক্কা মেরেছো কেন?”
মেহের নরম স্বরে বলল,
“ফায়াজ বাদ দিন।”

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৮

ফায়াজ হিমির দিকে তাকাল। হিমির চোখে আগুন দেখতে পাচ্ছে। ফায়াজের ডাউট নেই কোনো। হিমি ওকে ইচ্ছে করেই ফেলেছে। ফায়াজ একটা ব্লেড নিয়ে ওর হাতে পুচ দিল। মেহের সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে চিতকার করল হিমির আগেই।

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ২৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.