শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৩৪
ফাবিহা নওশীন
পুরো বাড়ি থমথমে অবস্থা। ফায়াজ রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছুক্ষণ পর পর তুষারের দিকে তাকাচ্ছে। ফায়াজের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। বুকটা হু হু করছে অজানা আশংকায়। ও আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। কিন্তু তুষার ওকে আঁটকে রেখেছে। মেহেরকে একজন মহিলা ডাক্তার দেখছেন।
ফায়াজ মেহেরকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে আর ওর চিৎকার শুনে সবাই জড়ো হয়। ফায়াজ মেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আর ওর বন্ধুরা দ্রুত একজন ডাক্তারকে ফোন করে। ফায়াজ মেহেরের চোখে-মুখে পানি ছিটা দিয়েও জ্ঞান ফেরাতে পারছিল না। ফায়াজ অস্থির হয়ে পড়ছিল। কি করবে বুঝতে পারছিল না। পাগলামি শুরু করেছিল। এমনকি ডাক্তার আসার পরেও ফায়াজ বারবার ডাক্তারকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করছিন। ফলে ডাক্তার তার ট্রিটমেন্ট করতে পারছিল না। তাই তুষার ওকে বাইরে নিয়ে আসে।
পুরো রুম ফাকা। মেহেরের জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার ওকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। ডাক্তার মেহেরের কথা শুনে একচুয়াল কি হয়েছে বলতে পারছে না। কিন্তু উনার একটা ডাউট হচ্ছে। ডাক্তার ফায়াজকে ডাকল। ফায়াজকে ডাকতেই ও দ্রুত ভেতরে গেল। মেহেরের চোখ খোলা দেখে হন্তদন্ত হয়ে মেহেরের কাছে গেল।
তারপর দ্রুত জিজ্ঞেস করল,
“মেহের, তুমি ঠিক আছো?”
মেহের কিছু বলতে যাবে তখন ডাক্তার বলল,
“উনি ঠিক আছেন। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
ফায়াজ ও মেহের দুজনেই ডাক্তারের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিল। ডাক্তার বলল,
“আপনার ওয়াইফের ঠিক কি হয়েছে বুঝা যাচ্ছে না। উনার কিছু টেস্ট করলে ভালো হয়। তবে প্রাথমিকভাবে সব কিছু বিবেচনা করে যেটা মনে হচ্ছে উনি প্রেগন্যান্ট।”
প্রেগন্যান্ট শব্দটা শুনে মেহের শোয়া থেকে উঠে বসল। আর ফায়াজের কান যেন ঝিমঝিম করছে। মেহের চোখ কপালে তুলে বসে আছে। মুখ দিয়ে হু হা শব্দ করতে পারছে না। ফায়াজ মেহেরের দিকে তাকাল।
মেহের ফায়াজের দৃষ্টি বুঝতে পেরে ডাক্তারকে বলল,
“আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
ডাক্তার স্মিত হেসে বলল,”হয়তো। হয়তো বা না। টেস্টগুলো করা জরুরী। তাহলেই সবটা ক্লিয়ার হবে। আপনারা কাল একবার গিয়ে টেস্টগুলো করিয়ে নিবেন। আমি এখন উঠি।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
ডাক্তার উঠে যেতেই দরজার সামনে থেকে ফায়াজের এক বন্ধু এসে ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে গেল। ফায়াজ গভীর ভাবনায় বিভোর। মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ফায়াজ ধীরপায়ে বেরিয়ে গেল। মেহের তখনও চুপ করে বসে আছে। ও নিজেও কিছু বুঝতে পারছে না।
ফায়াজ বাইরে যেতেই ওর বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরল। ওরা ঠাট্টা-মশকরা শুরু করেছে।
“কিরে চাই তলে তলে এত কিছু?”
“ভাই অবশেষে চাচা হয়ে যাচ্ছি।”
“আরে ফায়াজ তো বাবা হয়ে যাচ্ছে। কিউট পাপা।”
ফায়াজের ওদের কথা একদম ভালো লাগছে না। ফায়াজ বিষন্নতা নিয়ে বলল,
“তোরা সবাই চলে যা। আমাকে একটু একা ছেড়ে দে।”
ফায়াজের বন্ধুরা ফায়াজের মুখ দেখে কিছু আচ করতে পারছে না। মনে হচ্ছে ওরা যেমনটা ভাবছে তেমন না।
ফায়াজ ওদের কৌতূহল থামানোর জন্য বলল,
“এখন আমি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।”
ওরা ফায়াজকে কিছু জিজ্ঞেস করল না। ওরা চলে গেল। ফায়াজ তখনও দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটা কেমন করছে। মনে হচ্ছে পোকারা কিলবিল করছে। মেহের পেছনে এসে দাঁড়াল। ফায়াজ মেহেরের অস্তিত্ব অনুভব করে পেছনে ঘুরে বলল,
“তুমি উঠে এসেছো কেন?”
মেহের ছলছল চোখে বলল,
“আপনি কি আমাকে অবিশ্বাস করছেন? আপনার কি মনে হচ্ছে ডাক্তার ঠিক বলেছে?”
ফায়াজ মেহেরের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“না তা কেন হবে?”
“আপনার আচরণ তাই বলছে।”
“না মেহের। আমি তোমাকে অবিশ্বাস করি না। আমি অন্য ব্যাপারে চিন্তিত। তোমার অসুস্থতার কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করছি। আমার তোমার জন্য টেনশন হচ্ছে।”
মেহেরের ফোনটা বারবার বেজে থেমে যাচ্ছে। ফায়াজ মেহেরের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে বলল,
“হয়তো সামিরা ফোন করেছে। কল রিসিভ করো।”
মেহের ফোন হাতে নিয়ে দেখল ওর মা ফোন করেছে। মেহের ফোন রিসিভ করে কানে নিতেই ওর মা বলল,
“মেহের! তুই কই? হোস্টেল থেকে ফোন এসেছে। কত টেনশন হচ্ছে জানিস? তুই কি বুঝিস না? হোস্টেলে থাকিস তাতেই তোকে নিয়ে টেনশনে থাকি। আর এত রাত হয়েছে হোস্টেলে ফিরিস নি। কোথায় আছিস তুই?”
মেহের নরম সুরে বলল,”মা আমি ঠিক আছি।”
মেহেরের মা বিচলিত হয়ে বলল,” কিন্তু আছিস কোথায়? সামিরাও জানে না তুই কোথায় আছিস।”
মেহের ঘড়ির দিকে তাকাল। ৮টা ৪০বাজে। কত রাত হয়ে গেছে। হোস্টেলের গেট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আর এখন ৮টা ৪০।
মেহের মিথ্যা বলতে চায় না। তাই বলল,
“আমি ফায়াজের বাড়িতে এসেছি। উনার জন্মদিন ছিল তাই।”
মেহেরের মা ফায়াজের নাম শুনে বিস্ময়ের পাশাপাশি ভয় পেয়ে গেল।
“মেহের, তুই ফায়াজের বাড়িতে!! তুই পাগল হয়েছিস? মেহের তুই আবার কি করছিস? তুই সব ভুলে গেছিস? যাকে ভালোবেসে সব ছেড়েছিস সে তো মাঝরাস্তায় একা ফেলে চলে গেছে। তুই বাড়িতে পর্যন্ত জায়গা পাস নি। মেহের আর ভুল করিস না মা। তুই হোস্টেলে যা।”
ওর মা-তো আর সত্যটা জানে না। কার জন্য মেহেরকে এত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কে এসবের মূলে?
মেহের ওর মা’কে বলল,
“মা, ফায়াজ আগের মতো নেই। উনি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আর আমি তো থাকতে আসি নি। হোস্টেলেই যাব।”
মেহেরের মা চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“মেহের, তুই আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছিস না। আমার তোর জন্য অনেক টেনশন হচ্ছে৷ হাজার চেষ্টা করেও তোকে বাড়িতে রাখতে পারি নি তোর বাবার জন্য। হোস্টেলে আছিস কত টেনশন করি৷ আর এখন তোর বোকা বোকা কথা শুনে আরো টেনশন লাগছে। তুই এখুনি হোস্টেলে যাবি। পৌছে ফোন করবি। আমি আগামীকাল তোর সাথে দেখা করব তারপর ফায়াজকে নিয়ে কথা বলব। কিন্তু এখন তুই হোস্টেলে যা।”
“আচ্ছা, যাচ্ছি। গিয়ে তোমাকে ফোন করব। তোমাকে কিছু বলার আছে।”
মেহের ফোন কেটে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফায়াজ দেখল। ফায়াজ বলল,
“এই শরীরে না গেলে হয় না? আজ নাহয়…।”
মেহের বলল,”আমাকে যেতে হবে। মা টেনশন করছে। আমাকে দিয়ে আসবেন প্লিজ।”
ফায়াজ বিধ্বস্ত কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ আমি খারাপ মানুষ। আমার সাথে থাকলে টেনশন করারই কথা। চলো তোমাকে দিয়ে আসি। আর আগামীকাল রেডি থেকো। তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। তোমার শরীরের কন্ডিশন আমার ভালো লাগছে না। ভালো একজন ডাক্তার দেখাতে হবে।”
মেহের মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
মেহেরের মা কিচেনে সবজি কাটছে। মেহের ফোন করেছে। তাই উনি আঙুল দিয়ে ফোন পিক করে লাউডস্পিকার দিল।
“হ্যাঁ, মেহের। তুই হোস্টেলে ফিরেছিস? আগামীকাল আসছি আমি। তোর আর ফায়াজের সাথে কথা বলব। ফায়াজের যদি পরিবর্তন হয় তবে আমি বিষয়টা বিবেচনা করে দেখব। কিন্তু এইবার আর তোকে নিজে নিজে বোকামি করতে দেব না।”
মেহের বিষন্নকন্ঠে বলল,
“মা, আমার মনে হচ্ছে আমার কিছু হয়েছে।”
মেহেরের মা সবজি কাটা থামিয়ে দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হয়েছে?”
মেহের ইতস্তত করে বলল,
“মা আজ আমি পেট ব্যথায় সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম। ডাক্তার বলল মেবি আমি প্রেগন্যান্ট অথবা অন্য কিছু হয়েছে।”
মেহেরের মা কিছুটা জোরে বলল,
“কি? প্রেগন্যান্ট?”
“মা, আমি প্রেগন্যান্ট নই। বাট ডাক্তার অনুমান করছে শুধু। আগামীকাল গিয়ে কিছু টেস্ট করিয়ে আসতে বলেছে।”
মেহেরের কথা শুনে ওর মায়ের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। মেয়েটার কি হলো? খারাপ কিছু নয়তো?
“আমি সকালে হোস্টেলে যাব। তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব। তুই তো কখনো বলিস নি
তুই অসুস্থ? কেন বলিস নি?”
মেহের আমতা আমতা করছে। সেদিনের মতো মা’কে বিদায় জানাল।
ফায়াজ ঘুমে বিভোর। ওর ফোন বাজছে। এই সকাল সকাল কে ফোন দিবে? ফায়াজ ঘুমেঘুমে হাতড়ে ফোন নিয়ে রিসিভ করে কানে দিল। ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,” হ্যালো।”
“ভাইয়া, মেহের খুব অসুস্থ। ওকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।” ফায়াজ সামিরার কন্ঠ শুনে চমকে গেল৷ মেহের অসুস্থ শুনে ওর পিলে চমকে গেল। ওর চোখ থেকে ঘুম বিদায় নিল। শোয়া থেকে উঠে বসল। তারপর আতংকিত কন্ঠে বলল,
“মেহের…! কি হয়েছে ওর? সামিরা কি হয়েছে ওর?”
ফায়াজ শোরগোল আর এম্বুলেন্সের শব্দ পাচ্ছে।
“ভাইয়া, হটাৎ করেই ওর পেটে প্রচন্ড ব্যথা করছে৷ ও অনেক চিৎকার, কান্নাকাটি করছে। ওকে দেখে অনেক খারাপ লাগছে। ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে ভাইয়া।” সামিরাও কেঁদে দিল।
ফায়াজের পুরো দুনিয়া এলোমেলো লাগছে। হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। কখনও এমন ভয়ংকর অনুভূতি হয় নি। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“আমি আসছি।”
“ভাইয়া, আপনার এখানে আসতে হবে না। আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন। আমি ওর বাসায় ফোন করব।”
সামিরা গাড়িতে উঠতে উঠতে মেহেরের বাড়িতে ফোন করল।
ফায়াজ পাথর হয়ে আছে। নড়তে পারছে না। ওর বুকে চিনচিনে ব্যথা করছে। কি জানি হারিয়ে ফেলছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তখনই ব্রেইন জানাল ওকে যেতে হবে।
ফায়াজ বিছানা ছেড়ে ফোন নিয়ে রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেল। তারপর মনে হল গাড়ির চাবি নিতে হবে। ফায়াজ আবারও দৌড়ে দিয়ে রুমে এলো। ড্রয়ার খুলে চাবি নিল। চাবি নিয়ে এলোমেলো ভাবে দৌড়াচ্ছে। বারবার ভুল হচ্ছে। কয়েকবার হোচটও খেয়েছে। ফায়াজের বুক ফেটে যাচ্ছে।
।
হসপিটালে সবাই জড়ো হয়েছে। মেহেরের বাবা-মা, মাহি-তূর্জ, সামিরা, মেহেরের বন্ধুরা, ফায়াজের কয়েকজন বন্ধু। ডাক্তার ভেতরে মেহেরকে দেখছে। ডাক্তার বাইরে বের হতেই সবাই এগিয়ে গেল।
ডাক্তার বলল,” ওর কিছু টেস্ট করতে দেওয়া হয়েছে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনারা সময় দিন একটু।”
মেহেরকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। মেহের ঘুমাচ্ছে। সবাই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। ফায়াজের বাবা কিছুক্ষণ পর পর ফায়াজের দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। ফায়াজ সে দৃষ্টি উপেক্ষা করছে বারবার।
।
মেহেরের রিপোর্ট আসার পর থেকে সবাই চুপ হয়ে গেছে। মেহেরের মা কাঁদতে কাঁদতে যেন পাথর হয়ে গেছে। ফায়াজ স্থির দৃষ্টিতে কডিটোরের এক কোনায় একা দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর চোখের কোনা থেকে পানি মুছছে। মেহেরের টিউমার ধরা পড়েছে। ওর এই পেটে ব্যথাটা স্বাভাবিক ছিল না। টিউমারের জন্য ব্যথা করত কিন্তু মেহের বারবার হেলা করেছে।
মেহেরের জ্ঞান ফেরার পর ওর বাবা-মা আর মাহি ভেতরে গেল। ফায়াজ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মেহের কিছুই জানে না। সবার সাথে টুকটাক কথা বলছে আর ফায়াজকে খোঁজছে। ওর এমন একটা ঘটনা ঘটেছে আর ফায়াজ আসবে না তা হয় না।
ফায়াজ দূর থেকে মেহেরের দৃষ্টি বুঝতে পেরে সব উপেক্ষা করে ভেতরে এলো। মেহের ফায়াজকে দেখে মৃদু হাসল। মেহেরের বাবা মেহেরের জন্য ফায়াজকে কিছুই বলতে পারল না। ডাক্তার তখন ভেতরে এসে মেহেরকে বলল,
“তোমাকে হয়তো কেউ কিছু জানায় নি। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছুদিন মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে।”
মেহের কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে বলল,” মানে? কিসের মেডিসিন? আর কি হয়েছে?”
“তোমার টিউমার ধরা পড়েছে।”
মেহের ডাক্তারের কথা শুনে ফায়াজের দিকে ছলছল চোখে তাকাল।
ডাক্তার শান্তনা দিয়ে বলল,” ভয় পাচ্ছো? মেডিসিন নিলেই সুস্থ হয়ে যাবে। তুমি এই টিউমার এতদিন কি করে সহ্য করলে? এতে তো প্রচন্ড ব্যথা হয়।”
মেহের মলিন হেসে বলল, “আসলে সবার কাছে থেকে এতটা মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছি সে শরীরের যন্ত্রনাকে কিছুই মনে হয় নি। সব তুচ্ছ মনে হয়েছে।”
মেহেরের কথা শুনে মাহি, ফায়াজ আর ওর বাবা মাথা নিচু করে নিল। কারণ ওরাই ওর মানসিক যন্ত্রণার কারণ ছিল।
ফায়াজ আপসোস করে বলল,
শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৩৩
“আমি ওর পেটের ব্যথার ব্যাপারে জানতাম৷ আমি কেন বুঝতে পারি নি। আর মেহেরও আমাকে তেমন করে বলে নি। আমি এসেছি পাঁচ মাস। আর এই পাঁচ মাস ধরে তোমার এমন ব্যথা হয় অথচ তুমি কাউকে তেমন ভাবে বলো নি। কেন বলো নি?”
মেহের নিজেও বুঝতে পারে নি।
“আপনি আসার আগ থেকেই অল্প অল্প ব্যথা হত। কিন্তু তখন এতটা ছিল না। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কিন্তু আমি এটাকে হোস্টেলের খাবারের জন্য ভেবেছি। ভাবি নি এমন কিছু।”
ডাক্তার ফায়াজ আর মেহেরের বাবাকে ডেকে নিয়ে গেল কথা বলতে। ডাক্তার জানাল দু সপ্তাহের জন্য ওষুধ দিবে যদি ইম্প্রুভ না হয় তবে অপারেশন করতে হবে। আর যদি তাই হয় সেটা রিক্সি হবে।
এ-সব শুনে ফায়াজের জান যায় যায় অবস্থা। ফায়াজ মেহেরকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায় আর এদিকে ওর পরিবার ওর বাড়িতে নিতে চায়। মেহেরও নিজের বাড়িতে যেতে চায়। কতদিন বাড়িতে যায় নি।
ফায়াজ বলল,
“হয় মেহের আমার সাথে যাবে আর নয়তো মেহের যেখানে যাবে আমিও ওর সাথে যাব।”
মাহি বলল,
“মেহেরকে একা ছেড়ে দেও। ও অসুস্থ। প্লিজ।”
মেহের মা’য়ের দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বলল,
“উনি আমার সাথে যাবে। মা প্লিজ। না করো না।”
মাহি অবাক হয়ে মেহেরের দিকে তাকাল।