হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১১
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা
আজানের শব্দ ধ্বনি কানে প্রবেশ করতেই তড়িঘড়ি করে ওঠে নামাজ টুকু পড়ে নিলাম। নামাজ পড়া শেষ হতেই রান্নাঘরে চলে গেলাম খাবার বানাতে। খাবার বানানো শেষ করে সকলকে খাইয়ে দিয়ে খাবার নিয়ে রুমে গেলাম আহানকে ডাকার জন্য। রুমে গিয়েই দেখতে পেলাম আহান মন দিয়ে কিছু একটা লিখছে। আমাকে দেখতেই হরবর করে ডায়েরি টা বন্ধ করে দিলো..!
-‘ কি লিখছিলেন এতো? ‘
-‘ অন্যের পার্সনাল জিনিসে এতো দেখতে হয় না।’
উনি ধরাম করে ডায়েরি টা বন্ধ করে দিলেন। আমি রুম থেকে চলে গেলাম। কিন্তু উঁকি মেরে দেখলাম উনি আসলে কি করতে চাইছেন। তারপর যা দেখলাম উনি ডায়েরিটা বন্ধ করে উনার আলমারিতে একটা জামার ভেতর লুকিয়ে রাখলেন! বুঝলাম না একটা ডায়রীর জন্য এতোকিছু কেনো? কি এমন লেখা আছে ওতে? কিসের জন্য উনি এতো লুকোচুরি করছেন ওটা নিয়ে?? এই এতো প্রশ্ন নিয়ে থাকতে পারবো না! সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হউক উনার সেই ডায়েরি আমাকে একবার হলেও পড়তে হবে। জানতে হবে কি এমন আছে। তবে আপাততো হাসপাতালে যাওয়া দরকার। চাচিকে ছেড়ে দিবে আজকে। আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমার সঙ্গে চাচা, আহানও গেছে। হাসপাতাল থেকে ভালোয় ভালোয় চাচিকে বাসায় আনলাম।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘ মৃদুলা এই ক’দিনে তুই যা সেবা করলি আমার! আমি কৃতজ্ঞ! ‘
-‘ চাচি এসব বলো না তো। ‘
-‘ তোর থেকে দূরে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না এবার বল দেখি তোর পরিক্ষার আর কতোদিন বাকি আছে?’
-‘ উমম দেড় মাস তো কেটেই গেলো আর বাকি আছে দেড় মাস।’
-‘ উফ এই দেড় মাস এবার তাড়াতাড়ি চলে গেলে বাঁচি। তারপর তোকে একেবারের জন্য নিয়ে আসবো আমার কাছে। ধুমধাম করে তোদের বিয়ে দিবো। ‘
আমি প্রতুত্তর করলাম না। চলে আসলাম রুম থেকে। কেনো জানি ভালো লাগছে না এসব কিছু। আহান তো আমাকে ভালোইবাসে না এসব বিয়ে না হলেই কি? এই দেড় মাসে আমার আর উনার বিয়ের তিন মাস পূর্ন হবে। তিন মাসের আগে যেহেতু ডির্ভোস হয় না তাই এই দেড় মাস আমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। তারপর আহানকে স্বাধীন করে দিবো তার নিলার কাছে..!
দেখতে দেখতে সময় অতিবাহি হয়েছে সাত দিন! এখন আহানের মা পুরোপুরি সুস্থ। এই ক’দিনেও আহান আর মৃদুলার সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি বললেই চলে। আহান বেশিরভাগ সময়ই বাহিরে থাকতো। মৃদুলা ঘরের কাজ করতো বা কখনো লতার সাথে গল্প করতো। দিনশেশে আহান এসে মৃদুলার পাশে চুপটি করে শুয়ে থেকে গোটা দিন পার করে দিয়েছে! এভাবেই কেটেছে সময়.. এখ মৃদুলারও যাবার সময় এসেছে। আহান রেডি হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে ফিরে যাবার অপেক্ষায়। ওদিকে মৃদুলা বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে আসলো। হঠাৎই মৃদুলার মনে হলো সেই ডায়েরির কথা! যেটা সে এখনো নিজের কাছে আয়ত্ত করে ওঠতে পারেনি! আহান সবসময়ই আলমারির চাবি নিজের কাছে রাখতো। কখনো কিছু দরকার পড়লে নিজে বের করে দিতো কিন্তু কখনো মৃদুলাকে আলমারির চাবি ধরতে দেয়নি।
-‘ একটু আপনার আলমারির চাবিটা দিবেন? আপনার আলমারিতে আমার একটা জামা আছে। ওটা আনবো। ‘
-‘ না আনলে হয় না?’
-‘ ওটা আমার প্রিয় জামা। প্লিজ না করবেন না। আপনি চাবিটা দিন আমি যাবো আর আসবো। ‘
-‘ আচ্ছা চল তোর সঙ্গে আমিও যাচ্ছি! ‘
উফ এই লোকটা কি এমন লুকিয়ে রেখেছে আলমারিতে? আমাকে চাবিটুকুও দিচ্ছে না! এখন যে ডায়েরির জন্য এতকিছু বললাম ওটা আহানের সামনে থেকে আনবো কি করে?
-‘ কিরে চল? ‘
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন। ‘
রুমে গিয়ে আহান আলমারিতে আমার জামাটা খুঁজতে লাগলো। ততক্ষণে মা’থায় একটা বুদ্ধি আসলো। উনাকে যে করেই হউক আলমারি থেকে একটু সরাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ উনাকে সরানোর জন্য কার্য সিদ্ধি করতে লাগলাম। উনি জামাটা আমার কাছে দিলেন যেউ না আলমারি তালা দিবেন ঠিক তখুনি ফুলদানিটা মাটিতে ফেলে দিলাম ঠিক নিজের পায়ের কাছে! পায়ের কাছে পড়ার জন্য পায়ের একটু জায়গা কে’টেও গেছে! আমার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি ব্যাথায় আ’র্ত’না’দ করতেই আহান আমার কাছে আসলো হন্তদন্ত হয়ে..!
-‘ কি হয়েছে! একটা কাজও ঠিকমতন করতে পারিস না? পা টা কতোটুকু কেটে গেলো দেখলি?’
-‘ আমাকে না বকে একটু ফাস্ট এইড বক্সটা আনলেও তো পারেন! ‘
-‘ হ্যাঁ যাচ্ছি! ‘
এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলাম আমি। উনি চলে গেলেন ফাস্ট এইড বক্স আনতে! তাড়াহুড়োয় আলমারি বন্ধ করতে ভুলে গেছেন। আমি চট করে আলমারি থেকে উনার সেই ডায়েরি টা বের করে চটজলদি নিজের সাইড ভ্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে আবারো সেই আগের জায়গায় বসে রইলাম চুপটি করে।কিছুক্ষণ পর উনি আসলেন আমার পায় ব্যান্ডেজ করে দিলেন সযত্নে!
-‘ জামাটা নিয়েছিস তো? ‘
-‘ হ্যাঁ নিয়েছি এবার চলুন। ‘
– ‘ এভাবে যাবি কি করে? পায়ে সদ্য আ’ঘাত পেয়েছিস এখন এই সিঁড়ি বেয়ে নেমে হেঁটে গেলে তো আরো ব্যাথা পাবি! তার চেয়ে বরং আমিই একটা ব্যবস্থা করছি! ‘
আহান আমাকে কোলে তুলে নিলো! আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। এই প্রথম উনি আমাকে কোলে নিলেন। উনার অনেকটা কাছে আমি। কেমন জানি অনুভূতি হচ্ছে উনাকে এতোটা কাছ থেকে দেখতে পেয়ে.. উনিও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। দু’জনের দৃষ্টি আবদ্ধ একে অপরের দিকে। উনার ওই ঘোর লাগা দৃষ্টি উপেক্ষা করবার সাহস আমার মধ্যে নেই। আমি তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে! কেউ বলবে না উনার মায়া ভরে চোখটায় আমার জন্য কোনো ভালোবাসা নেই! এতোটাই মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে আছেন উনি। গাড়িন সামনে নামিয়ে দিলেন আমাকে। গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন! গাড়ি ছুটে চলেছে আমাদের গন্তব্য স্থলে। আমিও চুপটি করে বসে রয়েছি।
বাসায় পৌঁছালাম। ডায়েরিটা যে খুলে দেখবো তারও উপায় নেই! আহান আঠার মতন সঙ্গে চিপকে রয়েছে আমার। বাজার করতে পাঠাবে যে আজকে রান্না করতে হবে না আর চাচি খাবার দিয়ে দিয়েছে। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সারাদিন জার্নি করে এসে বিছানায় শুতেই ঘুমের রাজ্য এসে ভর করলো চোখে। ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম। সেই ঘুম থেকে ওঠলাম একেবারে আহানের ডাকে! ঘুম থেকে ওঠে দেখি সকাল আটটা বেজে গেছে। আমি সন্ধ্যা সাতটায় ঘুমালাম আর ওঠলাম সকাল আটটা বাজে! এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি?’
-‘ হ্যাঁ তুই এতোক্ষণই ঘুমিয়েছিস। এবার ফ্রেশ হয়ে ওঠে ব্রেকফাস্ট করে আমাকে উদ্ধার কর দেখি!’
-‘ কি বানিয়েছেন আপনি?’
-‘ আমি বানাতে পারলে তো বানাবো নাকি বেকুব! বাজার করে এনেছি রান্নার জন্য। আর নাস্তার জন্য বাহির থেকে ব্রেড আর বাটার কিনে এনেছি। ব্রেডে বাটার দিয়ে খেয়ে রেডি হয়ে নে ভার্সিটি যেতে হবে তো।’
এতো ঘুম ঘুমিয়ে ঘুমের রেশ কাটেনি এরূপ অবস্থা আমার! চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রয়াস চালাতেও ব্যার্থ হলাম আহান নামক মানুষটির জন্য! রেডি হয়ে উনার ব্রেড বাটার খেয়ে কোনোমতে উনার সঙ্গে গেলাম। সেই আগের নিয়মেই উনি আমাকে ভার্সিটি থেকে কিছু দূরে নামিয়ে দিলেন আমি রিক্সা নিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলাম। ভার্সিিট শেষে করে রুমে আসতেই আমি ডায়েরি খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু একি!! আমি ডায়েরি তো দূরের থাক আমার সাইড ব্যাগই তো খুঁজে পাচ্ছি না এখন কি হবে? ঘরের সবটুকু জায়গা এলোমেলো করে খুঁজেও ব্যার্থ হলাম! ইশশ এতো কষ্ট করেও যদি ডায়েরি টা না পড়তে পারলাম কেমন হলো! আমার সব কষ্ট বৃথাই গেলো!
হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১০
-‘ কিছু খুঁজছিস নুড়ি?’
উনাকে হ্যাঁ বললেও বি’প’দ আবার না বললেও বি’প’দ! উপায়ন্তর না পেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিলাম।