হারিয়ে চাইছি তোমাকে - Golpo bazar

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১২

হারিয়ে চাইছি তোমাকে

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১২
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা

-‘ কি খুঁজছিস ওরম করে? কোনো কিছু হারিয়ে গেছে?’
-‘ না তো। হারায়নি। খুঁজে পেয়েছি আমি।’
উনার কাছ থেকে যথা সম্ভব দূরে চলে গেলাম। এখন কাছে থাকলে উনি একশো একটা প্রশ্ন করতেন যার জন্য আমার ধরা খাওয়ার আশংকা ছিলো। আমি চুপচাপ রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করতে লাগলাম। এক পর্যায়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় ঘুমালাম। আমার পাশেই আহান শুয়ে আছে। আজকে উনি কোলবালিশ সরিয়ে আমার কাছে আসেনি। আমিও সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে চুপ করে শুয়ে আছি।

-‘ নুড়ি পাথর তুই কি আমাকে নিজের স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছিস এখনো অব্দি?’
উনার প্রশ্নে অবাক হলাম। চক্ষুজোড়া বন্ধ করে ফেললাম। কি উত্তর দিবো আমি? উত্তর দিবো যে আমি উনাকে ভালোবাসি? কিন্তু উনি তো বাসেন না। কঠোর হলাম। গলায় বেশ দৃঢ় কন্ঠস্বর আনলাম।
-‘ সেটা আপনার দেখতে হবে না নিশ্চয়ই? আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে মেনে না নিলেও আপনি তো নিলাকে ভালোবাসেনই তাহলে এতো কথা কেনো বলছেন? ‘
-‘ ইচ্ছে হলো বলতে। যতোই হউক এই যে আমরা একসঙ্গে থাকছি, ঘুমাচ্ছি সেটা তো কেবল এই স্বামী, স্ত্রীর সম্পর্কের রেশ ধরেই। যেদিন এই সম্পর্ক থাকবে না তখন তো তুই আমার কেউ নস আমিও তোর কউ থাকবো না। ঠিক না বল?’
উনার কথায় মনঃক্ষুণ্ন হলো। কষ্টরা দলা পাকিয়ে কান্না রুপ নিয়ে অশ্রু কনা দু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। মানে উনার কাছে এই সম্পর্কের কোনো মূল্যই নেই? আসলে তঁ এই সম্পর্কটা তো নাম মাত্র সম্পর্ক এর বাহিরেও কিছু নেই ভেতরেও কিছু নেই। হয়তো আশা আমিই করছি।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মৃদুলা ঘুমিয়ে আছে বেশ উল্টো ভাবে। মাথার চুলগুলো তেল দেয় না যার দরুন চুলগুলো খোঁপা থেকে খুলে গিয়েছে। প্লাজুটা একটু উপরে ওঠে গেছে বেশ। সোজা হয়ে না শুয়ে কেমন টেরা ব্যাকা ভাবে শুয়ে আছে। আহান বেশ ভালো করেই মৃদুলাকে পর্যবেক্ষন করছে।
-‘ মৃদুলা রানী! কবে যে বুঝবে তুমিই আমার মিলা। আর তোমাকেই আমি পাঁচ বছর ধরে ভালোবেসে আসছি। এখনো অব্দি তো কিছুই বুঝলে না। নিলাকে দিয়ে কতো কিছু করেছি যাতে তোমার মন বুঝতে পারি আফসোস তাও পারছি না! না জানি যখন বুঝো তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। শেষ মেষ না হারিয়ে চাইতে হয় তোমাকে।’
আহান চলে যায় মৃদুলাকে রেখে।
ঘুম ভেঙে ওঠতেই নিলা নামক বি’ষা’ক্ত মানুষটিকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পেয়েই মনে হচ্ছিলো যেনো উনাকে একেবারে উপরে পাঠিয়ে দিই! কি আছে এমন এই মেয়ের মধ্যে যার জন্য আহান আমার দিকে ফিরেও তাকায় না? এসব ভাবনা বাদ দিলাম। কিন্তু এই সাত সকালে এই মানবীর এখানে কি?

-‘ কিরে ঘুম ভেঙেছে তোর?’
-‘ ঘুম না ভাঙলে কি ওঠে বসতাম না কি? ‘
কথাটা বেশ রে’গেই বললাম। উত্তরটাও দেয়নি সোজাভাবে। কি করবো এই নিলাকে দেখলে তো কোনো কিছুই ঠিক থাকে না আমার!
-‘ সকাল সকালই হাওয়া গ’রম?’
-‘ বাজে কথা বলবেন না। আমাকে আরো একটু আগে ডাক দিতে পারতেন? ‘
-‘ তুই ঘুমাচ্ছিলিস তাই। ইদানীং তো তোকে রাত্রেবেলা কোনো ডির্স্টাবই করি না তাও তোর এত্তো ঘুম!’
আহানের কথা শুনে নিলার কাশি ওঠে গেলো। আমি নিলার এরূপ হঠাৎ কাশির মানে বুঝতে অক্ষম হলাম।
-‘ আর কথা বাড়াস না প্লিজ। এবার ওঠে রেডি হবি তো নাকি ভার্সিটি যেতে হবে।’
-‘ বাজার করে এনেছেন তো?’
-‘ সবকিছুই করা আছে। কিন্তু তুই যদি এখন রান্না করতে যাস তো দেরি হয়ে যাবে। আমি জ্যাম পাউরুটি খেয়েছি তুইও আপাততো ওটাই খেয়ে নে।’
এতোক্ষণ খেয়ালই ছিলো না নিলা এখানে উপস্থিত আছো? আসলে আমি আর আহান কথা বলতে বলতে এতো কথা বলি যে বেচারি নিলার কথা ভুলেই গেছি! তুমি বসো আমি তোমাকেও জ্যাম পাউরুটি দিচ্ছি। ‘
-‘ আমার ওসব কিছু লাগবে না। আমি আহানের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম তো এখন চলে যাচ্ছি। ‘
নিলার কথা বলার ধরন আমার মোটেও সুবিধার মনে হলো না। কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে যখনি আসে। আমি আপাততো সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চললাম।

-‘ ওদের এই সবসময় একসঙ্গে চিপকে থাকা এসব কিন্তু আমার বেশিদিন সহ্য হচ্ছে না! তুমি কি কিছু করবে নাকি আমিই এর ব্যবস্থা নিবো?’
ফোনের ওপাশ থেকে কালো জ্যাকেট পরা এক লোক প্রতুউত্তর করলো।
-‘ বেশি দিন তো নয় আর তো মাত্র দেড় মাস আছে তারপরই দেখি মৃদুলা কি সত্যিই আহানকে বিয়ে করে নাকি তোমার হাতে তুলে দেয়।’
-‘ আমার হাতে তুলে দিতে যাবে কোন দুঃখে? কি বলছো কি তুমি?’
-‘ আরে তুমি কি প্ল্যান সবকিছু ভুলে গেলে নাকি বলোতো? আহানের প্ল্যান হলো সে তোমার কথা বলে মৃদুলাকে জে’লা’সি ফিল করিয়ে বুঝবে মৃদুলা তাকে আদৌ ভালোবাসে নাকি সেই পাঁচ বছর আগের মতনই ফিরিয়ে দিবে! আহানের এটা প্ল্যান কিন্তু মৃদুলার কাছে তো তুমি আহানের ভালোবাসা। আহান তো মিলাকে পাঁচটা বছর ধরে ভালোবাসে কিন্তু মৃদুলাকেই যে মিলা বলে সেটা তো মৃদুলা বুঝতে পারেনি। আহান যে পাঁচ বছর ধরে মৃদুলাকেই ভালোবাসে এটা তো ঘুনাক্ষরেও এতোদিন বুঝতে পারলো না মৃদুলা। মৃদুলার কাছে তো তুমিই আহানের ভালোবাসা। আর ওর যা ভাব ভঙ্গি দেখছি ও আহানকে ভালোবাসে না! দেড় মাস পরে দেখবে ঠিক ও তোমার হাতেই তুলে দিবে আহানকে।’

নিলার মুখে তৃপ্তির হাসি। যেনো এই কথাগুলোই শোনার জন্য সে এতোদিন অপেক্ষা করে এসেছে।
-‘ তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে আমারও পাঁচ বছরের সাধনা পূর্ন হবে! আহান মৃদুলার কাছ থেকে প্র’ত্যা’খান হয়ে আমাদের এখানে এসেছিলো যখন তখন আমিই ওকে সামলিয়েছি, বুঝিয়েছি। এক সময় ওকে বোঝাতে বোঝাতে ওর সঙ্গে থাকতে থাকতে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি ওর প্রতি। কখনো প্রকাশ করিনি ওর সঙ্গে। আহান তো আমাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে! ভেবেছিলাম বাংলাদেশে এসে আমরা বিয়ে করে সেটেল হবো কিন্তু যখন দেখলাম বাংলাদেশে ওর পুরনো ক্ষ’ত আবারো তাজা হয়েছে মানে মৃদুলাকে আবারো মনে জায়গা দিয়েছে তখন ভাবলাম এক হয়ে যাক ওরা দু’জন। কিন্তু আমি এটা ভাবলেও বাস্তবে মেনে নিতে পারিনি। আমি মৃদুলার সঙ্গে আহানকে কোনো দিনই মেনে নিতে পারবো না। তোমার কথা অনুযায়ী যদি মৃদুলা নিজ থেকে সরে যায় তো ভালো নয়তো ওকেই সরিয়ে****

-‘ ভুলেও এসব চিন্তা করবে না আর বাস্তবে করার কথা তো ভুলেও না বুঝেছো? মৃদুলাকে পাবার জন্য আমি এতোকিছু।’
ফোনের অপর প্রান্তের থাকা লোকটির কথা শুনে নিলা ঘাবড়ে যায়। আমতা আমতা করে ঠিকআছে বলে ফোন রেখে দেয়। অপেক্ষা করতে থাকে কবে দেড় মাস পূর্ন হবে আর ঠিক কবে আহানকে নিজের করে পাবে।

ভার্সিটি থেকে এসে একটু এগিয়ে আহানের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু তার তো কোনো পাত্তাই নেই! এদিকে এই কাঠফাটা রোদ্রে দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্ট কর হয়ে ওঠছে। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সামাদ। আমাকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লেন।
-‘ মৃদুলা নতুন বাইক কিনেছি চলো তোমাকে ছেড়ে দিই বাসায়? ‘
-‘ আপনি ভুল করছেন। আমি তো এখন আর বাপের বাড়ি থাকি না। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে থাকি।’
-‘ কিচ্ছু হবে না তুমি ঠিকানা বলে দাও আমি তোমাকে সেইখানেই পৌঁছে দিচ্ছি। এই রৌদ্রে আর কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে বলো?’
সত্যিই তো এই রৌদ্রে আর কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো আমি। সামাদ যখন এসেছে তখন চলে যাই ওর সঙ্গে না হয় একদিন।
মৃদুলা যেই না সিটে বসতে যাবে ওমনি একজন মৃদুলার হাত ধরে টান দিলো! টান সামলাতে না পেরে মৃদুলা গিয়ে বলিষ্ঠ লোকটির গায়ের উপর পড়লো। মৃদুলা বেশ ভালো করেই দেখতে পেলো লোকটা আহান!
-‘ আমার বউকে সাহায্য করতে চেয়েছেন তাই অশেষ ধন্যবাদ। কিন্তু কি বলুন তো? বউটা তো আমার তাই আমি আমার বউকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো আপনি যেতে পারেন। ‘
সামাদ কিছু না বলে আহানের দিকে এক প্রকার তাকিয়ে চলে গেলো। আহান মৃদুলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

-‘ আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলে কি হতো তোর?’
-‘ একটু কই? পুরো আধ ঘন্টা যাবত এই রৌদ্রের মধ্যে অপেক্ষা করেছি আমি।’
-‘ তো কি হয়েছে? আমি আসিনি বলে তুই ওই ছেলের বাইকে বসবি? গাড়িতে হলে না হয় কথা ছিলো কিন্তু বাইকে?’
বুজলাম উনি রে’গে গেছে,,
-‘ আরে বাইক কি গাড়ি নয় নাকি আজব তো?’
-‘ গাড়িতে আলাদা সিট আছে বাইকে আছে তোর আলাদা সিট? চিপকে বসতে হতো ওই লোকের সঙ্গে।’
বুঝতে পারলাম উনার জে’লা’সি হচ্ছে! হউক এবার উনিও বুঝেন যখন নিলার সঙ্গে উনি এরকম করে তখন আমার কিরকম লাগে। উনাকে ক্ষে’পা’তে আরো একটু বললাম….

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১১

-‘ তো বসলে আমি বসতাম আপনার কি? আপনার তো নিলা আছে। সে তো বসেনি আর।’
-‘ তুই আমার বউ হস! আমার বউ অন্যের বাইকে চিপকে বসতে যাবে কেনো? আর মিলার কথা বলছিস ও তো চব্বিশ ঘন্টাই আমার চোখের সামনে থাকে। ওর সঙ্গে যখন খুশি যা ইচ্ছে সব করতে পারি।’
-‘ তো যান উনার কাছে যান!’
এ তো দেখছি হিতে বিপরীত হয়ে গেলো। কোথায় উনাকে রা’গা’বো এখন দেখছি আমারই রা’গ ওঠে যাচ্ছে! উনার সঙ্গে রা’গ করে হেঁটে চললাম খোলা রাস্তায়!

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.