হারিয়ে চাইছি তোমাকে - Golpo bazar

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৩

হারিয়ে চাইছি তোমাকে

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৩
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা

দেখতে দেখতে সময় কেটে গেছে দুই মাস। আহান এই দুই মাসে বিভিন্ন ভাবে মৃদুলার পরিক্ষা নিয়েছে। দেখেছে মৃদুলার মনে তার জন্য কোনো ভালোবাসা আছে কিনা কিন্তু মৃদুলা প্রতিবারই এরকম করেছে আহান দ্বিধায় পড়ে যায় আদৌও মৃদুলা আহানকে ভালোবাসে নাকি ভালোবাসে না! এর মাঝখান দিয়ে মৃদুলার পরিক্ষাও ছিলো যার দরুন আহান আর ঘাটায়নি মৃদুলাকে। আগের মতন ভার্সিটি, বাসা, পড়াশোনা এভাবেই দিন কেটেছে মৃদুলা আর আহানের। তবে মৃদুলার পরিক্ষা শেষ হয়েছে কালকে। আহানের পরিবার বিয়ের জন্য চা’প দিচ্ছিলো। কিন্তু কালকে উনারা বললো আর কিছুদিন পরেই নাকি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান! সবমিলিয়ে মৃদুলা আর আহানের অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার যে সময় ছিলো অলরেডি সরই সময় থেকে এক মাস দেরি হয়ে গিয়েছে। ওদের বিয়ের বয়স চার মাস চলছে। ওদিকে আহান আকুপাকু করছে মৃদুলার মুখ থেকে সত্যি টা জানার জন্য। নিলা কে দিয়ে এতোকিছু করেও যখন মৃদুলা কিছুইতে কিছু স্বীকার হচ্ছে না তখন আহান সিদ্ধান্ত নিলো সে এমনিতেই সরাসরি সবটা বলে দিবে। সেই মতনই মৃদুলার ফেরার অপেক্ষা করছে।

ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে আহানের কথা মতন বাকিটুকু পথ উনার সঙ্গে করেই যায়। তাই আজকেও রিক্সা থেকে নেমে উনার সঙ্গে যাবো বলে নেমেছি।
-‘ আহান তুমি এখনো সত্যিই কি ওকে আগের মতনই ভালোবাসো বলো?’
-‘ স’ন্দে’হ আছে? আমি ভালোবাসি এবং ভালোবেসেছি আজীবন ভালোই বেসে যাবো। চাইলেও এই ভালোবাসা আমি আটকাতে পারবো না কারন আমি যে বড্ডই বেশি ভালোবাসি। ‘
রিক্সা থেকে নেমেই আহানের এরূপ ভালোবাসি ভালোবাসি শুনতে পেলাম। আর সামনে থাকা ব্যাক্তিটি উনার নিলা! আমি উনার পেছনে আছি তাই উনি আমাকে দেখতে পেলেন না কিন্তু নিলা ঠিকই দেখতে পেলেন। আমাকে দেখেই তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো নিমিষেই….! আহান সঙ্গে সঙ্গে আমার দিক ফিরে তাকালো! আমি রা’গ, কষ্ট দু’টো মিলিয়ে যেনো পাথর হয়ে গেছি সত্যি সত্যি! এতোই ভালোবাসেন উনি নিলা আপুকে?

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি সেদিন ডির্ভোস পেপার রেডি করিয়ে রেখেছিলাম আমার এক বন্ধুকে দিয়ে। ও রেডি করে পেপারও দিয়ে দিয়েছে আমার হাতে কিন্তু আমি সই করিনি আর না আহানকে জানিয়েছি এ সম্পর্কে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো উনি বিয়েটাকে মেনে নিবেন। তখন রা’গের বশে ডির্ভোস পেপার করে রেখেছিলাম ভেবেছি লাগবে না কিন্তু এখন তো দেখছি ডির্ভোস পেপারগুলো কাজে আসবে। অনেক হয়েছে আর মেনে নিতে পারছি না আমি! এই কয়েক মাসে উনার আর আমার মধ্যে কোনো উন্নতি হয়নি বরং উনি সবসময়ই আ’ঠার মতন লেগে ছিলো নিলার পিছু পিছু…. সারাদিন ভার্সিটি করে এসে বিকেলের নিলার সঙ্গে আড্ডা দিতো বা ঘুরতে যেতো নিয়ম করে। আমি সবটা দেখতাম আর উনিও এরম করতেন যেনো সবটা আমাকে দেখিয়েই করাতো চায়। তারপর রাত্রিবেলা এসে পাশে শুয়ে পড়তো শেষ কাহিনী এভাবেই দিনগুলো কাঁটিয়েছেন উনি! কই নিলা আসার আগে বিয়ের তিন চার দিন তো উনি আমাকে হুটহাট করে জড়িয়ে ধরতেন সেগুলোও এখন করেন না!

পুরাটাই বদলে গেছে আহান। আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ের মতন বন্ধনে যখন বাঁধা পড়েছি সেই বাঁধন থেকে এতো সহজে ছাড়া পাওয়া যাবে না। কিন্তু যার মনে এখনো অন্য কেউ বিচরন করছে তার সঙ্গে থেকে কি করবো আমি? নিজে মুখ ভে’ঙে উনাকে কখনো কিছু বলিনি কারন উনি নিলাকে ভালোবাসতেন বলে কিন্তু বোঝানোর চেষ্টা করেছি যখন উনি নিলার সঙ্গে থাকতো। হয়তো উনি বুঝেনি! নিজেকে স্বাভাবিক করলাম।
আমি আহানের সামনে যেতেই উনি জিগেস করলেন
-‘ তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো বলতো? কিছু শুনেছিস?’
-‘ হুম শুনেছি তো! যা শোনার সবটা শুনেছি আমি। ভালোবাসিও শুনেছি! আমি বাড়ি যাচ্ছি আর কিছু বলার নেই আমার। আপনারা নিজেদের মতন করে টাইম স্পেন করুন।’
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে এলাম রিক্সায় করে। আর তো বাকি নেই কোনো কিছুর! আজকেই সব মিটমাট হবে। তারপরে উনাকে আর বাঁধা দেবার কেউই থাকবে না!
ওদিকে আহান দাঁড়িয়ে আছে! বুঝতে পারছে না ঠিক কি হলো। মৃদুলা কি তাকে ভুল বুঝলো?..

-‘ আহান তুমি এতো চিন্তা করো না তো। কিচ্ছু হবে না।’
-‘ এবার অনেক হয়েছে নিলা। এবার থামা উচিত। জানিনা মৃদুলা কি শুনছে ও যদি উল্টোটা ভাবে? আর ক’দিন পর আমাদের বিয়ে। আমাদের এবার থামা উচিত। অনেক হয়েছে এবার থেকে এই যে তুমি আমার মিলা যাকে আমি পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসছি এই নাটকটা বন্ধ করা উচিত। মৃদুলা আমাকে ভালোবাসুক আর নাই বাসুক আমি তো ওকে ভালোবেসে এসেছি এটাই যথেষ্ট। আমি ঠিক ওকে আপন করে নিতে পারবো। তুমি আর আমাদের মাঝখানে এসো না। ‘
আহান চলে গেলো মৃদুলার কাছে। বাড়িতে গিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজলো কিন্তু মৃদুলাকে পেলো না। ওদিকে মৃদুলা বাড়িতে না গিয়ে নদির পাড়ে বসে রয়েছে। নদীতে মাঝিরা নৌকা নিয়ে বসে আছে। মৃদুলা পাড়ে বসে হাত দিয়ে পানিগুলো ছুঁইয়ে দিলো। কিছুক্ষণ নিথর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আচমকাই কাঁদতে লাগলো।
-‘ কেনো এরকম টা হলো আমার সঙ্গে? এই নদীর সচ্ছ পানির মতন আমার জীবনটা কেনো সচ্ছ হলো না? কি করবো আমি? চলে যাবো ওদের একা ছেড়ে? কিন্তু আহানের সঙ্গে তো এখনো আমার শেষ বোঝাপড়া টা বাকি রয়ে গেছ। ‘
হাত ব্যাগ থেকে আহানের নম্বরে ফোন দিলো মৃদুলা একবার রিং হবার পরেই আহান ফোন রিসিভ করলো। রিসিভ করেই হন্তদন্ত হয়ে গেলো।

-‘ নুড়ি পাথর কোথায় তুই? বাড়িতে যাস নি কোথায় গেলি? আমাকে সবটা বলার সুযোগ দে একবার। ‘
-‘ আজকে আপনি নন। বলবো আমি। যদি শুনতে চান তাহলে বাড়িতে চলে আসুন। আমি বাড়ি আসছি। ‘
মৃদুলা ফোন কেটে দেয়। বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। নদির ঘাটটা বাসা থেকে মিনিট দশেকের দুরত্বে ছিলো যার দরুন মৃদুলা আহানের আগে বাড়িতে পৌঁছে যায়। বাড়িতে পৌঁছেই মৃদুলা ড্রয়ার থেকে ডির্ভোস পেপার টা বের করে। সই করার জন্য কলম নেয় হাতে। কিছু একটা ভেবে সই না করেই পেপারটা হাতে নিয়ে বসে রইলো আহানের অপেক্ষায়। আহানও বাড়িতে ঢুকেই দেখে মৃদুলা খাটের উপর বসে রয়েছে স্থির হয়ে।
-‘ নুড়ি পাথর তুই ভুল বুঝছিস আমাকে। আমিতো ওই কথাগুলো নিলাকে বলছিলাম*
আহানকে থামিয়ে মৃদুলা বলা শুরু করলো….

-‘ হ্যাঁ আমি জানি তো আপনি ওগুলো নিলাকে বলছিলেন। ঠিক পাঁচ বছর আগের রাত্রে যেমন করে নিলাকে কথাগুলো বলে আমার কাছে মিথ্যা ভালোবাসা নিয়ে এসেছিলেন ঠিক তেমন করে আজকেও এসেছেন ভুজুম ভাজুম বোঝাতে। ‘
মৃদুলার কথায় আহানের রা’গ ওঠলেও পরিস্থিতি বুঝে আহান শান্ত রইলো।
-‘ সেদিন রাত্রে তোকে যা বলেছিলাম কিচ্ছু ভুল ছিলো না। তুই সেদিনও আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিস নি আজকে অন্ততো বলার সুযোগ টা দে। ‘
-‘ সবকিছু শুনেছি আমি আহান! পাঁচ বছর আগেও শুনেছি আর এখনো একটু আগে শুনেছি।’
-‘ শোনা আর বোঝার ক্ষেত্রেও কিন্তু ভুল হতে পারে নুড়ি পাথর। ‘
-‘ স্পষ্ট করে বলুন।’

-‘ বলবো কিন্তু তার আগে তুই আজকে সোজা সাপ্টা উত্তর দে তুই আমাকে ভালোবাসিস কিনা? অনেক হয়েছে এই নিলার কাহিনী! এতে ভুল আমারই আমি ওকে এনে ভুল করেছি তবে ভুল শোধরানোর সুযোগ দে এবার, আমাকে বোঝানোর সুযোগ দে দয়া করে। পাঁচ বছর আগের কাহিনী পুনরাবৃত্তি ঘটাস না। আগের বার ফিরে এসেছি এবার আমি কিন্তু আর ফিরবো না! তাই বলে দে সোজাসুজি। তুই আমাকে ভালোবাসিস? সামনে তিন চারদিনের দিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে। সেই অনুযায়ী টুকটাক কাজও শুরু করে দিয়েছে চাচ্চুরা। তুই সেই বিয়েটা করবি তো? আমার সঙ্গে থাকবি তো? আমাকে ভালোবাসে তো আমার নুড়ি পাথর? ‘

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১২

আহানের কথা শুনে সমস্ত রা’গ উবে গেলো। উনার কথা শুনে মনে হচ্ছে না উনি আদৌও নিলাকে ভালোবাসেন! কারন উনার পুরো কথা জুড়ে শুধু উনার নুড়ি পাথরই আছে। কি জবাব দিবো আমি? বলে দিবো যে ভালোবাসি উনাকে? নাকি নিজের কানে শোনা, চোখে দেখা জিনিশটা ভুল? অন্যের ভালোবাসা কে’ড়ে নিবো? আদৌও কি বলবো “আপনার নুড়ি পাথর ও আপনাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে?’

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.