হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৪
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা
-‘ আমি উত্তর দিবো কিন্তু আপনার মুখ থেকে সবটা শোনার পর! আপনি কিছু একটা বোঝাতে চাইছিলেন না? আজকে আপনার কথা শেষ হবে তো তারপরে আমি মুখ খুলবো।’
-‘ বেশ তাহলে শোন বেশ ভালো করে শুনবি কিন্তু। আমি নিলাকে ভালোবা**
আহানের কথা সম্পূর্ণ হতে পারলো না। এর আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো আহান! মা’থা থেকে র’ক্ত বেরোচ্ছে!! র’ক্তে লাল হয়ে গেছে বিছানার কাপড়। আমি স্তম্ভিত হলাম। পাথরের ন্যায় তাকিয়ে রইলাম আহানের নিথর পড়ে থাকা শরীরের দিকে! আমার দৃষ্টি এখন আহানের দিকেই স্থগিতো। চোখ দু’টো বন্ধ করে মাটিতে পড়ে রয়েছে আহান! পিছনে কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা দু’জন লোক রয়েছে। আমি আহানের কাছে যাবার জন্য অগ্রসর হলাম। আহানের মা’থাটুকু ধরলাম বেডে ওঠানোর জন্য তৎক্ষনাৎ লোকগুলো আমার চোখে মুখের সামনে কিছু একটা স্প্রে করলো যার দরুন জ্ঞা’ন হারালাম!
-‘ উফ সামাদ! তুমি আহানকে এতো জো’রে মা’র’লে কেনো? ওর কতোখানি চো’ট লেগেছে বলোতো? আমি তোমাকে বলেছি না মৃদুলাকে নিয়ে যা ইচ্ছে করো তুমি কিন্তু আমার আহানের গায়ে যেনো একটা আঁচড় ও না পড়ে? তারপরেও কেনো তুমি আহানকে মা’র’লে?’
নিলার চি’ৎ’কা’রে পুরো রুম যেনো কেঁপে ওঠলো এমন অবস্থা! সামাদ ভ’য় পেয়ে গেলো কিছুটা। তবুও নিজেকে শক্ত রেখে বললো……
-‘ আরে এটা তো তোমারই প্ল্যানের একটা অংশ ছিলো নাকি বলো? আজকে যখন আহান মৃদুলাকে সব সত্যি বলে দিতে যাচ্ছিলো তখন তো তুমিই আমাকে ফোন করে বললে আহানকে সব সত্যি বলা থেকে আটকাতে হবে নইলে আমি মৃদুলা আর তুমি আহানকে পাবে না। সেই মোতাবেকই তো আমি আহানকে মা’রি। ‘
-‘ তাই বলে তুমি আহানকে এভাবে মা’র’বে? মানছি যে প্ল্যানটা আমারই ছিলো কিন্তু সেটা তো করেছি আহান আর মৃদুলাকে আলাদা করার জন্য বলো? ‘
-‘ হ্যাঁ আমরা তাতে সফলও হয়েছি। এবার মৃদুলাকে আমার করে নিবো আমি আর আহানকে তুমি তোমার করে নিবে।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিলার মুখে এবার বিজয়ীর হাসি। যেনো এই দিনটার জন্যই সে এতোদিন অপেক্ষা করেছে…
-‘ উফফ সামাদ আমার এতোদিনের অপেক্ষা শেষ হলো বুঝলে? আমি সেদিন তোমার সেই আহানের প্রতি রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে বুঝে গেছিলাম তুমি মৃদুলাকে ভালোবাসো। তাই তোমাকে সঙ্গে নিলাম সাহায্যের জন্য। ‘
-‘ হ্যাঁ। আমি মানতে পারিনি সেদিন যখন মৃদুলা বলছিলো আহানের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে। ছোটো থেকে দেখে আসছি মৃদুলাকে। কি করিনি আমি ওর জন্য বলো? ওর সকল সমস্যার সমাধান করে দিতাম আমি। মন প্রান উজার করে সবটা ভালোবেসে এসেছি এতোকাল। অবশেষে কি পেলাম? কিচ্ছু না! আমার সহজ সরল মনটা নিয়ে খেলেছে মৃদুলা। ওর স্বার্থে ব্যাবহার করেছে আমাকে। ভালোবাসেনি কোনোদিনও। যখনি আমি ভালোবাসি বলেছি তখুনি এড়িয়ে গেছে আমাকে। আমি ভেবেছি ওর সঙ্গে মিশে সবটা ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এর আগেই বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ে হয়ে যায় মৃদুলার! আমি তো ভালোবাসি মৃদুলাকে বলো? নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি মৃদুলাকে। এবার আহানের জীবন থেকে মৃদুলাকে একেবারের জন্য সরিয়ে দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসবো। কিন্তু কি করে করবো সেটা? সবাই তো মৃদুলাকে খোঁজাখুঁজি করবে বলো? পু’লি’শ কে’স করলে তখন? তখন কি হবে নিলা? ‘
নিলা টেবিলের কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো! যেনো কিছুই হয়নি এরকম ভাব। সামাদ ও বুঝতে পারলো না নিলার এরূপ হাসার কারন…
-‘ সামাদ মৃদুলাই সবটা করে দিয়েছে! এই দেখো এই টেবিলে ডির্ভোস পেপার! আর আমি নিশ্চিত এটা মৃদুলাই করেছে কারন আহান কখনোই মৃদুলাকে ডির্ভোস দিতো না। আমার মনে হয় যখন আমার সম্পর্কে মৃদুলাকে বলেছিলো বো’কা মেয়ে সেটা ধরেই ডির্ভোস পেপার রেডি করে গিয়েছে আর আজকে পিছন থেকে অর্ধেক কথা শুনেছিলো ভেবেছে হয়তো আহান আমাকেই কথা গুলো বলছে তাই হয়তো আজকে ডির্ভোস দিতে এসেছিলো আহানকে! দেখলে? মেয়েটা কিরম বো’কা? নিজেই কতো সহজ করে দিয়েছে আমাদের কাজটুকু? আপাততো আহানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দাও আর মৃদুলাকে আমি দেখে নিচ্ছি। ‘
-‘ দেখে নিচ্ছি মানে কি করবে তুমি? মৃদুলার কোনো ক্ষতি করবে না বলে দিচ্ছি (সামাদ)
-‘ চিল! কোনো কিচ্ছু করবো না আমি কিন্তু মৃদুলা যে একেবারে চলে গেছে সেটা প্রুভ করতে হবে না? তুমি আহানকে নিয়ে যাও বললাম না বাকিটুকু আমি দেখছি। কাহিনীতে এখনো টুইস্ট বাকি আছে তো।’
হাসপাতালের বেডে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো আহান!! অক্ষি জোড়া খুলেই সামনে পরিচিতো মুখ দেখতে পেলো। সকল মুখেন ভীড়ে আহান খুঁজে চলেছে সেই চেনা প্রিয় মুখ কিন্তু পুরো রুম জুড়ে চোখ বুলিয়েও কোথাও নজরে পড়লো না সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে! হ্যাঁ রুমের সর্বত্র কোথায় দেখতে পেলো না তার নুড়ি পাথরকে।
আহানকে চোখ খুলতেই আহানের মা ছেলের দিকে অগ্রসর হলেন।
-‘ কিরে আহান বাবা ভালো লাগছে তোর?’
আহানের মা’থায় ব্যা’ন্ডে’জ করা। শোয়া থেকে হেলান দিয়ে একটু ওঠে বসতেই মা’থায় টান অনুভব করে। তবুও আধশোয়া হয়ে বসলো।
-‘ মা আমি এখন ঠিক আছি। কিন্তু আমি এই হাসপাতালে কখন এলাম বলোতো? ‘
আহানের মায়ের চোখে বিস্ময়ের ছাঁপ! সে বুঝে ওঠতে পারছে না কোনো কিছু।
-‘ তুই কালকে রাত থেকে এই হাসপাতালে আছিস আহান। কালকে দুপুরের পর নিলা তোকে এই হাসপাতালে ভর্তি করে এনেছে। ‘
-‘ কিন্তু মা নুড়ি মানে মৃদুলা কোথায় বলো? ওকে তো দেখতে পাচ্ছি না আশেপাশে কোথাও? ‘
-‘ তুই হাসপাতালের বেডে শুয়েও এখনো ওই মেয়ের কথা ভাবছিস!’
আহান কিঞ্চিৎ প্রহর অবাক হলো। বুঝতে পারলো না তার মায়ের এরূপ কথা বলার ধরন। আহানের মা তো মৃদুলাকে বেশ ভালোবাসতো তাহলে কি এমন হলো যে মৃদুলাকে ওই মেয়ে বলে সম্মোধন করছে তার মা?
-‘ কি হয়েছে মা? খুলে বলবে তো আমায় সবটা বলো?’
-‘ আমি বলছি তোমাকে আহান ঠিক কি হয়েছে?’ (নিলা)
আহান উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিলার দিকে ঠিক কি হয়েছে সেটা জানার জন্য।
-‘ এই যে নাও ডির্ভোস পেপার। এটা মৃদুলা রেখে গেছে তোমার জন্য। আর এই চিরকুট। এটা পড়ার পর নিশ্চয়ই তোমার আর মৃদুলাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। ‘
আহান ডির্ভোস পেপারটা হাতে নেওয়া মাত্রই হাত দু’টো যেনো তার থরথর করে কেঁপে ওঠছে! সে তো সবটা বলতে চেয়েছিলো মৃদুলাকে কিন্তু মাঝপথে এই ডির্ভোস পেপার? তার মানে সত্যিই কি মৃদুলা আহানের ভালোবাসা বোঝেনি কিংবা আহানকে আদৌও কোনোদিন ভালোই বাসে নি? যার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করলো সে চলে গেলো এভাবে ফাঁকি দিয়ে গেলো? বুকের ভেতর চাপা কষ্ট অনুভব করলো আহান! প্রকাশ করতে পারছে না কারন ছেলেদের যে কাঁদতে নেই? কৌতুহল নিয়ে চিরকুটটি খুললো।
আহান…..
আপনাকে প্রিয় বলে সম্মোধন করার মতন সম্পর্ক আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি এই এতোদিনে। তাই আপনার নাম ধরেই বলছি। আপনাকে আমি ভালোবাসতে পারিনি এতোদিন একসঙ্গে থেকেও। কারন আমার মনে অন্য একজন আছে ঠিক আপনারই মতন। তাই আমাকে আমার মতন থাকতে দিন আর আপনিও আপনার মতন থাকুন। আমি বিয়েটা করতে চাইনি। হুট করেই একপ্রকার আমাকে জো’র করে বিয়েটা করানো হয়েছিলো। আর জো’র করে কোনো কিছু টিকে থাকে না। আপনার আর আমার মধ্যে সারাজীবন একসঙ্গে কাটানোর মতন কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি পারছি না আপনার সঙ্গে থাকতে।
যার প্রতি কোনো মায়া, ভালোবাসা নেই তার সঙ্গে সারাজীবন কি করে থাকা যায় বলুন? এতোদিন থেকেছি কিন্তু আর নয়। আমি পারবো না জোর করে আপনার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে। আপনার আর আমার বিয়ে বেশি লোক জানাজানি হয়নি যার দরুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না আপনাকে। আর আমিতো ডির্ভোস পেপার বানিয়ে দিয়ে গেলাম সই করে দিবেন। তারপর থেকে আপনার আর আমার পথ পুরোপুরি ভাবে আলাদা হয়ে যাবে। যেটুকু জোড়ায় ছিলাম আমরা এই সম্পর্কের সুত্র ধরে সেই জোড়া ছেড়ে দিন! সই করে দিয়েন ডির্ভোস পেপারে। যদি কোনো কিছু ভুল করে থাকি তো সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আমার মতন করে চলে যাচ্ছি। আমাকে খুঁজবেন না কেউ।
মৃদুলা ইসলাম নিরা…..
হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৩
আহান চিঠিটা পড়ে নিথর দৃষ্টিতে ডির্ভোস পেপারের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ! উপস্থিত সবাই আগের মতনই রয়েছে কারোর মধ্যে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই যেনো সবাই-ই সত্যি টা জানে। সে জন্যই আহানের মা এভাবে মৃদুলাকে কথাগুলো বলছিলো। এবার সবটা পরিষ্কার আহানের সামনে। কিন্তু আহানের নুড়ি পাথর আহানকে এভাবে ধো’কা দিলো? মানতে পারছে না আহান অপরদিকে বেডে পড়ে থাতা ডির্ভোস পেপারটি বলে দিচ্ছে এটা সত্যি হলেও হয়তো সত্যি!