হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৫
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা
-‘ দেখলি তো আহান ঠিক এইজন্যই তখন ওভাবে কথাগুলো বলছিলাম তোকে আমি। নিলা যখন এই কথাগুলো বলে প্রথমে আমরা কেউই ওকে বিশ্বাষ তো দূর উল্টে কতো কথা শোনাই কিন্তু যখুনি ডির্ভোস পেপার আর চিঠিটা দেখায় তখন সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় আমার সামনে। আমি বুঝতে পারছি না মৃদুলার এতো আপত্তি থাকলে আমাদের বলে দিতো আজকে কিন্তু এভাবে চলে যাওয়াটা কি ঠিক করলো ও বলতো?’
আহান মায়ের কথার কোনো প্রতুত্তর করলো না চুপটি করে রইলো। ওদিকে মৃদুলার বাবা সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে মা’থা নিচু করে বেরিয়ে গেলো হাসপাতাল থেকে। উনার মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে মেয়ের জন্য কতোটা অপ’মা’নি’তো হতে হয়েছে তাকে। শুধু অ’প’মা’নি’তো হয়েছে তা তো না? ক’দিন পর ওদের বিয়ে ছিলো আর মৃদুলা পালিয়ে গেছে। লোকসমাজে যখন কথাটা জানাজানি হবে তখন ল’জ্জা’য় মা’থা কা’টা যাবে একেবারে।
-‘ মা, তোমরা সবাই একটু চলে যাও আমাকে একলা থাকতে দাও কিছুক্ষণের জন্য। ‘
আহানের কথায় আহানের মা-ও কিছু না বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বুঝতে পেরেছে ছেলের এখন কিছু সময় একলা থাকা খুব প্রয়োজন।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরতেই আস্তে আস্তে চোখ খুল খুলে তাকালো মৃদুলা। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো একটি রুমের ভেতর। যার পুরোটা জুড়ে রয়েছে দেয়াল আর সামনে শুধু একটা দরজা! মৃদুলা দরজার কাছে গিয়ে দেখে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ। মৃদুলা চি’ৎ’কা’র করতে থাকে দরজা খোলার জন্য। মৃদুলার চিৎকারের আওয়াজ শুনে সামাদ আর নিলা রুমের ভেতর যায়। মৃদুলা সামাদ আর নিলাকে দেখে অবাক হয়ে যায়!
-‘ তোমরা দু’জন এখানে? তার মানে তোমরাই আমাকে এখানে ধরে এনেছো? ‘
মৃদুলার কথা শুনে নিলা হেসে ওঠলো।
-‘ বুঝেছো। তার মানে যতোটা বো’কা তোমাকে ভেবেছি ততোটাও বো’কা তুমি নও। কিন্তু আজকে তো চরম বো’কামি করে ফেলেছো। ‘
-‘ কি বলছেন কি আপনি নিলা? আমি তো আহানের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন-ই জ্ঞা’ন হারাই কি হয়েছে কিচ্ছু মনে পড়ছে না ভালো করে। আহান তো আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু ওকে বলতে পারেনি আর আমিও অ’জ্ঞা’ন হয়ে যাই। এখন বুঝতে পারছি এইগুলো সমস্ত কিছু আপনাদের প্ল্যান ছিলো। ‘
-‘ মৃদুলা, এতো কথা কেনো বলছো তুমি? চুপচাপ থাকতে পারো না?
-‘ সামাদ ভাইয়া আপনি! আপনিও আছেন নিলার সঙ্গে? কিন্তু কেনো? কি ক্ষ’তি করেছি আমি আপনাদের? কেনো এরকম টা করছেন আমার সঙ্গে? ‘
মৃদুলার কথা শুনে সামাদ ঘরে থাকা একটা ফুলদানি মাটিতে সজোরে আছড়ে ফেলে! ফুলদানি ভা’ঙা’র আওয়াজে মৃদুলা কেঁ’পে ওঠে।
-‘ আমি কি ক্ষ’তি করেছি তোমার মৃদুলা? তুমি কেনো আমার হলে না? কম ভালোতো বাসিনি তোমাকে তারপরও কেনো এরকম করলে? কেনো আহানকে বিয়ে করলে? কেনো আমাকে ভালোবাসলে না তুমি?’
-‘ ভালোবাসা মন থেকে হয় জোর করে না। আপনার জন্য আমার মনে ভালোবাসা আসে নি কোনোদিন। এই সোজা কথা মেনে নিন। ‘
-‘ হা, মেনে নিবো? কখনোই না। তুমি শুধু আমার মুদৃলা শুধুই আমার তুমি। তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো! তুমি হবে আমার আর ওই আহান হবে নিলার!
এবার নিলা আসলো মৃদুলার সামনে ।
-‘ চল তোকে সব সত্যি বলে দিই এবার। আর ক’দিন পর জানতে পারবি না। তখন আফসোস থাকবে।
-‘ কি সত্যি বলার কথা বলছো তোমরা?’
-‘ তুই তো জেনেছিলি আহান মিলা মানে আমাকে ভালোবাসে পাঁচ বছর ধরে তাই তো?’
-‘ হ্যাঁ তাই তো জেনে এসেছি।’
নিলা এবার হেঁসে ওঠলো! মৃদুলা ভ’য় পেয়ে গেলো।
-‘ সেটা ভুল! আহান মৃদুলা মানে মিলাকে ভালোবাসতো আর সেই মিলা হচ্ছিস তুই! ভেবে দেখ আহান তোকে কখনোই তোর পুরো নামে ডাকেনি লাইক নিরা থেকে নুড়ি তেমনি মৃদুলা থেকে মিলা! আর সেই পাঁচ বছর আগে আহান তোকেই প্রপোজ করতে গেছিলো ও যখন এটা নিয়ে ওর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলো তুই পেছন থেকে শুনে নিয়ে ওকে ভুল বুঝিস। ধরে নিয়েছিলি মিলা বলে অন্য কেউ আছে যাকে আহান ভালোবাসে! কিন্তু সেই মিলা যে তুই নিজে সেটা একবারো বুঝিস নি। আর তুই এতোটা বোকা আহান তোকে ছলে বলে বোঝাতো তাও তুই বুঝতিস না তাই তো আমাকে নিয়ে মিলা সাজিয়ে মিথ্যা বলছিলো তোকে বোঝার জন্য। তুই তাও যখন বুঝলি না বেচারা আহান হ’তা’শ হয়ে আজকে দুপুরে আমাকে বলেছিলো তোকে সব বলে দিবে কিন্তু তুই এতোটাই বো’কা যে আবার ভুল বুঝলি আর সেই সুযোগ টাই আমি, সামাদ নিয়েছি।’
নিলার কথা শুনে মা’থায় আকাশ ভে’ঙে পড়েছে এরূপ অবস্থা! মানে আহান আমাকে ভালোবেসে এসেছে এই এতোগুলো বছর! এই জন্যই উনাকে যখন আমি বলতাম মিলার কাছে যান উনি বলতেন মিলা আমার সঙ্গেই আছেন! এতোটা বো’কা’মো আমি কি করে করতে পারলাম। আহানকে বুঝলাম না আমি? মনে হচ্ছে এখুনি গিয়ে ছুট্টে যাই উনার কাছে! বলে দিই ভালোবাসি। উনি যে উত্তরের অপেক্ষায় ছিলেন জিগেস করেছিলেন উনার নুড়ি পাথর উনাকে ভালোবাসে কিনা? আমি সেই উত্তরটুকুও দিই নি। বলা হয়নি উনাকে উনার নুড়ি পাথর উনাকে ভালোবাসে!
-‘ কিন্তু নিলা আপনি এসব করলেন কেনো? আপনি কো আহানের বন্ধু তাই না?’
-‘ বন্ধু মাই ফুট! হ্যাঁ তুই ভুল কিছুও বলিস নি। আহান আমার বন্ধুই ছিলো যখন পাঁচ বছর আগে তোর কাছ থেকে প্র’ত্যা’খা’ন হয় লন্ডনে গেছিলো তখন আমিই ওকে বুঝিয়েছি। তারপর বাংলাদেশে আসার পর ভেবেছি তোরা একসঙ্গেই থাকবি কিন্তু যখন তোদের বিয়ে হয় আমি বুঝতে পারি আহানকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। ওর থেকে দূরে যাওয়া সম্ভব নয় কখনোই। তাই তোকে আলাদা করে দিলাম আমি!’
-‘ ছিহঃ! আপনাকে তো আহানের বন্ধু বললেও ভুল হবে দেখছি। তবে আপনাদের এই কু’ৎ’সি’ত পরিকল্পনা সফল হবে না। আমি ভালোবাসি আহানকে! আজকেই বলে দিবো ওকে। এতোদিন বলিনি ভেবেছি ও অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই সড়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজকে সত্যিটা জানার পর আর কোনো প্রশ্নই আসে না আহানের থেকে দূরে যাবার! ‘
নিলা আর সামাদ একে অপরের দিকে চেয়ে হাসতে থাকে। মৃদুলা বুঝতে পারে না ওদের এরুপ হাসার মানে।
-‘ তুই কি ভেবেছিস এতোটা সহজ? তোর বানানো ডির্ভোস পেপার দিয়ে এসেছি আহানকে। তোর নামে মি’থ্যা চিঠি লিখেছি আহানকে। ওকে বলে দিয়েছি তুই ওর সঙ্গে থাকতে চাস না বলে ডির্ভোস পেপার দিয়েছিস। এবার বল আহান কি তোর জন্য অপেক্ষা করবে? পরশু তোদের বিয়ে না? সেদিন বিয়ে হবে আমার আর আহানের। তোর সঙ্গে বিয়ে হবে সামাদের বুঝলি?’
নিলার কথা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না! এবার অশ্রুগুলোকে ছেড়ে দিলাম। এতোটা খারাপ কেউ হতে পারে? নিজের বন্ধুর সাথে এতোটা? আর সামাদ উনি এতোটা খারাপ! আগে ধারনাও ছিলো না আমার।কি করবো এখন আমি? আহানকি আমায় ভুল বুঝবে? নিলা তো চলে গেলো আমি এই চারদেয়ালে ব’ন্দি হয়ে রইলাম। এইখানে তো এই একটা খাট আর টেবিল, পুরো রুম জুড়ে কিছুই নেই! শরীরটা বড্ড ক্লা’ন্ত লাগছে। বিছানায় একটু বসতেই চোখ পড়লো আমার ব্যাগের দিকে। যেটা আমার কাঁধেই ছিলো। ব্যাগটার একপাশের চেন খুলে পানির বোতল থেকে একটু পানি খেলাম। অপর পাশের চেনের দিকে একটু ভারী লাগছে বিধায় খুলতেই আহানের সেই ডায়েরীটা পেলাম! এইত্তো এটাই সেই ডায়েরি এটাই তো এতোদিন খুঁজেছি আমি অথচ এই ব্যাগে রেখে দিয়ে আমি পুরো ঘর খুঁজে বেরিয়েছি! এইবার পড়ে দেখার পালা এই ব্যাগে ঠিক কি রয়েছে(আমি ব্যাতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা আইডিতে পোস্ট নিষিদ্ধ! মানা করার পরেও অনেকে এরকম করছেন প্লিজ যারা গল্পটা পড়বেন তারা দয়া করে আমি যেখানে পোস্ট করি সেখানে পড়বেন অন্য কারো আইডি বা গ্রুপে পড়বেন না।
সবাই চলে যেতেই আহান আরো একবার চোখ বোলালো সেই চিঠিটাতে। নিরব অশ্রু কনা গিয়ে পড়লো সাদা চিঠিটার উপর। আহান ভাবছে সত্যিই কি তার নুড়ি পাথর তার সঙ্গে এরকমটা করলো। হঠাৎই আবারো লেখাগুলো পর্বযবেক্ষন করতে লাগলো আহান। লেখাগুলো বেশ ছোটো অক্ষরের এবং অক্ষরগুলো অনেকটাই পেঁচানো লেখা! এই লেখা তো আহান আরোও অনেক বার দেখেছে। আহান মস্তিষ্কে চা’প প্রয়োগ করলো মনে করার জন্য।
হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৪
-‘ এই লেখা তো নিলার! হ্যাঁ নিলা বাংলা লেখাতো এইরকমই। আর এই কাগজটাও নিলাই এনে দিয়েছিলো তার মানে কি নিলাই? ভাবতে পারছি না কোনোকিছু। যদি নিলা এটা না লিখে থাকে তো মৃদুলা এটা লিখবে? আমি তো মৃদুলার লেখাও চিনি ও তো কতোবারই আমার চোখের সামনে লিখেছে এটা মৃদুলা লিখেনি আমি ১০০% শিওর! এটা নিলারই লেখা আর তখন তো মৃদুলা আমাকে সবটা বলতে বলেছিলো তাহলে সবটা বলতে বলে কেনো ও মাঝপথে চলে যাবে এই ডির্ভোস পেপার দিয়ে? চলে গেলে তো আমাকে বলতে বলতো না। আর তখন আমার মা’থায় কে আ’ঘা’ত করেছিলো মৃদুলা? সম্ভব নয় ও আমার সামনে বসা ছিলো তার মানে পেছন থেকে কেউ এরকমটা করেছে! আর যে-ই এটা করেছে।সে এসব লিখেছে আর লেখার ধরন তো বলে দিচ্ছে এটা নিলার লেখা আর নিলাই তো আমাকে হাসপাতালে এনেছে তার মানে নিলা! উফফ ভাবতে পারছি না আর! আমাকে এখুনি সবটা জানতে হবে।