হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৬
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা
দুইয়ে দুইয়ে চার করলে তো সবটা নিলার দিকে দাঁড়াচ্ছে! কিন্তু নিলা এরকমটা করবে কেনো সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ওতো আমাকে সাহায্য করছিলো তাহলে ওকে স’ন্দে’হ করবো কি করে আমি? কিন্তু হিসেব মিলালে যে সবটা নিলার দিকেই যাচ্ছে! আমাকে সব সত্যি টা জানার জন্য এই বেডে শুয়ে থাকলে হবে না আমাকে সত্যির খোঁজ করতেই হবে!
আহান হাসপাতালের বেড থেকে নেমে বাহিরে যেতেই সবাই ওকে চে’পে ধরলো!
-‘ আহান তুই তো এখনো পুরোপুরি সুস্থ নস। এই অবস্থায় কোথায় যাচ্ছিস তুই?’
-‘ মা আমি এখন ঠিকআছি। আর হ্যাঁ তোমরা তো বিয়ের আয়োজন করছিলে সেটাই করো। ‘
-‘ কিন্তু মৃদুলা তো নেই। সে তো তোকে ডির্ভোস দিয়ে চলে গেছে আহান। ‘
-‘ মা মৃদুলা ডির্বোস পেপারে সই করেনি। তোমাদের এখন সবটা বললে তোমরা সবটা গুবলেট করে দিবে তার চেয়ে বরং বিয়ের ব্যাবস্থা করো এইরকম ভাবে করবে যাতে লোকে চেয়ে চেয়ে দেখে। আমি ফিরবো ঠিক ফিরবো সঙ্গে মৃদুলাকে নিয়েই ফিরবো। তোমরা টেনশন করবে না আমার জন্য। আমি আমার নুড়ি পাথরকে নিয়ে ঠিক ফিরবো। ‘
আহান চলে যায় মৃদুলার খোঁজ করতে। প্রথমে যখন নিলাকে স’ন্দে’হ হয়েছে তো নিলার পিছু পিছু যাওয়া যাক একদিন দেখা যাক স’ন্দেহ সঠিক হয় কিনা।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
_আমি আগ্রহের সঙ্গে ডায়েরিটা হাতে নিলাম। ডায়েরীর মলাটে বড়ো করে লেখা আছে মিলা রানী! প্রথম পৃষ্ঠা উল্টোতেই লেখা চোখে পড়লো।
১ম পৃষ্টা
উমমম মৃদুলা! তোর নামটা বেশি বড়ো তাই তুই মিলা। আমার মিলা রানী! তোকে প্রথমে দেখতেই পারতাম না আর ভাগ্যের কি অদ্ভুত খেলা দেখ এই ক’দিনে তোর প্রতি কি মায়া জন্মে গেছে!
কিছু পৃষ্ঠা উল্টাতেই আবার লেখা চোখের সামনে পড়লো….
আজকে তোকে খুব ব’কে দিয়েছি। রা’গও দেখিয়েছি কিন্তু কি করবো বল? আমি চাই না তুই অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাস। জানি তুই রা’গ করবি কিন্তু তাও আমি তোকে অন্য কোথাও যেতে দিবো না।
মৃদুলা লেখাগুলো পড়ছে আর মিটিমিটি করে হাসছে।
জানিনা লেখাগুলো কেনো লিখছি তবে লিখে রাখতে ইচ্ছে হলো খুব করে… পরে না হয় এক সময় পড়বো। এই ক’দিন তোর সঙ্গে থেকেছি, তোকে দেখেছি, বুঝেছি বেশ ভালোই লেগেছে। অনেকটা সময় পর তোদের সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু এই যে বাড়িতে এসেছি না? তোকে বড্ড মিস করছি রে মিলা রানী! কি করবো বল আমি কি ভেবেছি নাকি ক্লাস এইটে পড়া একটা পুচকি মেয় আমার মনে জায়গা নিয়ে নিবে তাও যাকে সর্বক্ষন আমি ধ’মকে যেতাম! তবে খুব মিস করছি তোকে…
কিছু পৃষ্ঠা উল্টানোর পর…..
ফাইনালি আজকে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটলো! দীর্ধ এক বছর পর আমি আবারো আমাদের গ্রামে যাচ্ছি এই আনন্দ টা গ্রামে যাবার জন্য নয় এই আনন্দ টা আমার মিলা রানীকে দেখার জন্য। এবার আর তাকে ছেড়ে আসবো না একেবারে নিজের করে নিয়ে আসবো। উমম মানছি সে ছোটো তবে কি হয়েছে আমি তাকে বুকিং করে রাখলাম না হয় আমার জন্য। আমার মিলা রানী পড়াশোনা করবে আরো বড়ো হবে তখন আমি তোকে বিয়ে করে এক্কিবারে নিজের কাছে রেখে দিবো। তবে গ্রামে গিয়েই আমি তোকে আর হাতছাড়া করছি না…
মৃদুলা ডায়েরি টা বন্ধ করে দিলো! লোকটা এতোটা ভালোবাসে ওকে ডায়েরি টা না পড়লে হয়তো বুঝতোই না। কিছু পৃষ্ঠা উল্টানোর পর….
হা! ভাগ্যের নিষ্ঠুরতম পরিহাস ঘটলো আমার সঙ্গে! কতো আশা নিয়ে গিয়েছিলাম মিলা রানীর কাছে! সে প্রত্যাখান করলো আমাকে। বুঝলো না আমাকে। কতো আশা, বিশ্বাস, ভালোবাসা সবটা নিয়ে গিয়েছিলাম তার কাছে সবটা বলবো বলে কিন্তু সে শুনলোই না? এভাবে ভুল বুঝে চলে গেলো আমাকে? এতোগুলো দিন অপেক্ষা করার পর যখন আজকে আমার জমে থাকা অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতে গেছি আমার মিলা রানী আমার সেই অনুভুতির কোনো মূল্যই দিলো না! বুঝলোও না একটিবার! বুঝবে হয়তো যেদিন আমি হারিয়ে যাবো! ওর জন্য আমার ভালোবাসাটা এমনি এমনি আসেনি। ওর সঙ্গে কাটানো প্রতি মুহুর্ত, সময় মিস করেছি আমি, প্রচন্ড পরিমানে মিস করেছি ওর থেকে দূরে গিয়ে। বুঝতে পেরেছিলাম মিলাকে কাছে থেকে নয় দূরে গিয়েই ভালোবেসেছি আমি। কিন্তু ও যখন বুঝলোই না তখন আমিও চলে যাচ্ছি ওর কাছ থেকে! আমি যেমন দূরে সরে গিয়ে ওর প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেছি ঠিক তেমনি ওর মনে আমার জন্য যদি সামান্য পরিমান অনুভুতি জন্মে থাকে একদিন না একদিন ও নিজেই বুঝতে পারবে আমাকে ভালোবাসে কিনা? তখন আমার শুন্যতা ওকে ভো’গাবে। এখন আমি চলে যাচ্ছি! যদি আমার ভালোবাসা সত্যি হয় তো আমার মিলা রানী আমারই হবে……
মৃদুলা এবার কষ্টে কান্না করে দিলো। কি সুন্দর অনুভুতি আহানের! ডায়েরি টা না পড়লে হয়তো জানতোই না!
কিন্তু আমার কি দোষ? পরিস্থিতির চা’পে পড়ে আমি উনাকে ভুল বুঝেছি। ফিরিয়ে দিয়েছিলাম উনার পবিত্র ভালোবাসা!
কিছুক্ষণ কান্না করার পর মৃদুলা আবারো ডায়েরি টা খুললো….
ডায়েরিতে মৃদুলা আর আহানের ছোটো ছোটো কিছু মুহুর্ত লেখা আছে যা আহান লন্ডনে গিয়ে লিখেছিলো।
মৃদুলা আরো কয়েকটি পাতা উল্টালো….
ভেবেছিলাম এই ডায়েরি তে আর কিছু লিখবো না তোকে ভালোবাসা নিয়ে! কিন্তু দেখ আজকে বাংলাদেশে আসা মাত্রই আবারো তোর প্রেমে পড়েছি মিলা রানী! এখন তুই আগের থেকে অনেকটা বেশি সুন্দরী হয়েছিস কিন্তু আমি সেই সৌন্দর্য নয় তোর মায়ায় পড়ে তোকে ভালোবেসেছিলাম। আটকাতে পারছি না নিজেকে তোর থেকে। কিন্তু তুই নিজে আমাকে দূরে যখন ঠেলে দিয়েছিস তখন আমি আর ফিরে যাবো না তোর কাছে…..
আবারো আরো কয়েকটি পাতা উল্টানোর পর….
আমি বলেছিলাম আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আমার মিলা রানী ঠিক আমারই হবে একদিন! অবশেষে হয়েই গেলো। চাচ্চুরা হঠাৎই বিয়ের আয়োজন করে আমি না করতে পারিনি। যেই ভালোবাসা তুই ফিরিয়ে দিয়েছিলিস আজকে সেই ভালোবাসাই বেঁধে দিলো আমাদের সারাজীবন একসঙ্গে থাকার! আমার ভালোবাসা তো সত্যি ছিলো তাই তোকে মুছতে পারিনি জীবন থেকে। নিজের করে পেয়েছি তোকে। কিন্তু এবার পরিক্ষা দেবার পালা তোর! সব মিলিয়ে দির্ঘ সাতটি বছর অপেক্ষা করেছি তোর জন্য আমি। তোর থেকে রি’জে’ক্ট হয়েও তোকে ভালোবেসে এসেছি। এবার অপেক্ষার পালা তোর! এবার তুই নিজে এসে ধরা দিবি আমার কাছে। আমার অপেক্ষার অবসান তুই ঘটাবি।
তারপরেই মৃদুলা সবটা বুঝতে পারে। এবার নিলার কথার সঙ্গে আহানের লেখাগুলো মিলে যাচ্ছে! আবারো ডায়েরি পড়ায় মনোযোগী হলো মৃদুলা….
এতোটা বো’কা হবি তুই মিলা রানী আগে বুঝিনি! আমার ডায়েরি চু’রি করে এনেছিস ভালো কথা ভেবেছি এবার বুঝবি কিন্তু তুই তো দেখছি মনভুলো! ডায়েরিটা আমার ব্যাগে রাখলি শেষমেষ নিজের ব্যাগ মনে করে? থাক চু’রি যখন করেছিস আমি এটা তোর কাছেই দিয়ে দিবো তবে সবটা লেখার পর।
তোকে পাবার জন্য কতো কি করলাম
নিলাকে দিয়ে জে’লা’সি ফিল করালাম তোকে। আমি বুঝেছি তুই ভালোবাসিস হয়তো আমাকে কারন তোর চোখগুলোর ভাষা পড়তে পারতাম আমি। সে ভাষা বলে দিতো তুই বোধহয় আমাকে ভালোবাসি। তবে শিওর হতে পারছিলাম না যার জন্য নিলাকে মাঝখানে আনি। নিলাকে কখনোই আমাদের দু’জনের মাঝখানে আনতাম না কিন্তু তুই তো স্বীকারই করছিস না আমাকে ভালোবাসিস। এদিক দিয়ে নিজেও মনের কথা তোকে খুলে বলতে পারছি না কারন একবার তোকে বলেও প্র’ত্যা’খা’ন হয়েছি তাই পরিক্ষা এবার তোর দেবার পালা! তোকে কতো ভাবে বুঝালাম আমার মিলা আমার সঙ্গেই আছে, আমার মিলাকে আমি চব্বিশ ঘন্টা দেখতে পাই। কিন্তু তুই ভাবিস আমি নিলাকে আমার সঙ্গে রেখেছে! ইশশ এরকম করলে তো আর চলবে না! আমি যে ধৈর্য্য হারা হয়ে পড়ছি।
আর অপেক্ষা করতে পারবো না এবার আমিই নিজেই সবটা বলে দেবো তোকে আজকে। আর ডায়েরিটাও রেখে দিলাম তোর ব্যাগে।
ডায়েরি টায় আর কিছু লেখা নেই কারন সেই বলার দিনটা তো আজকেই ছিলো। বলতে পারলো না আহান। এতোটা ভালো বেসেছেন উনি আমাকে? আর আমি কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না! সত্যি এতোটা বো’কা আমি। উনাকে সেদিন রাত্রেবেলা ভুল বুঝেছি আর গা’ধার মতন ডায়েরিটাও খুঁজে পাইনি। সবশেষ যখন আজকে বলার দিন এলো নিলা আর সামাদ মিলে সবটা ঘেঁটে দিলো! আরো বড়ো ভুল হয়েছে ডির্ভোস পেপারটা এনে। কিন্তু আমি তো বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছি উনি হয়তো সত্যিই নিলাকে ভালোবাসেন আর আমি চেয়েছি আমি যাকে ভালোবাসি সে ভালো থাকুক। ভাগ্যিস পেপারে সইটা করিনি।
এখন যখন সবটা পরিষ্কার হয়েছে তো যে করেই হউক আহানের কাছে আমাকে যেতেই হবে। পরশু দিন আমাদের বিয়ে আমি এবার নিজের সবটা উজার করে আনন্দ করে আহানকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করবো।
আহান অনেক্ক্ষণ ধরে নিলাকে ফোন করেছে কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলছে। আহান বাধ্য হয়ে নিলার বাসার সামনে ভি’ক্ষু’কে’র ছ”দ্ন’বে’শ ধরে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন নিলা আসবে। অবশেষে আহানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিলা বাসায় আসলো। নিলা একা আসেনি সঙ্গে ছিলো সামাদ! সামাদকে দেখে আহান বেশ বুঝতে পারছে কোনো কিছু একটা আছে।
হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৫
নিলা যদি এসবের ভেতর জড়িয়ে না থাকে তো সামাদ মানে যে মৃদুলার পিছু পিছু ঘুরঘুর করতো তার সঙ্গে নিলার কি? সব যোগ সুত্র নিলার দিকেই ইঙ্গিত করছে। আমি গিয়ে নিলার ড্রয়িং রুমের দিকে জানলার দিকে উঁকি পাতলাম কিছু শোনার জন্য। নিলাকে স’ন্দে’হ হচ্ছে কিন্তু আমি জানি আমার নুড়ি পাথর কখনোই এসব করতে পারে না! এখান থেকে কিছু হলেও জানতে পারবো আমি। নিরাশ হবো না। আর তো মাত্র দু’দিন তারপর আমার মিলা রানী একেবারে আমার হব।