হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৭
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা
আহান ভি’ক্ষু’কে’র ছদ্ন’বে’শ ধরে নিলার বাসার জানলার পিছু উঁকি মারছে যদি কিছু শোনা যায়। ধরা পড়ে গেলেও নিলা যেনো আহানকে চিনতে না পারে সেই মতনই ভি’ক্ষু’কের ছ’দ্ন’বেশ ধরা। আহান জানলার কাছে গিয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রয়েছে সবটা জানার জন্য।
-‘ নিলা আমরা তো ওদেরকে আলাদা করে দিলাম, মিথ্যা চিরকুট, ডির্ভোস সবই বানালাম। কিন্তু আহান তো বললো পরশু দিন ও বিয়ে করবে তার মানে কি ও মৃদুলাকেই বিয়ে করে ফেলবে?’
-‘ তুমি এতো ভ’য় কেনো পাও বলোতো? আহান ওরকমই। আরে ভুলে যাচ্ছো কেনো মৃদুলা আমাদের কাছে বন্দি। আমরা যতোক্ষণ না পর্যন্ত চাইবো ততক্ষন অব্দি আহান মৃদুলাকে বিয়ে করবে তো দূর খুঁজেও পাবে না বুঝেছো? আর রইলো বাকি বিয়ের কথা সে আহান আমাকেই করবে।’
সামাদ এবার উৎফুল্ল খুশি মনে বসে রইলো খাটে। নিলা রান্নাঘরে গেলো খাবার আনতে।
আহানের কাছে এবার সবটা পরিষ্কার সচ্ছ কাঁচের মতন! বোঝার বাকি নোই যে মৃদুলাকে কি’ড’ন্যা’প নিলা আর সামাদই মিলে করেছে। কিন্তু কেনো করেছে? সেই প্রশ্র মনের ভেতর উঁকি মারছে আহানের
তবে পরিস্থিতি বুঝে মা’থা থেকে এসব চিন্তা বাদ দিয়ে দেওয়াই উচিত! আপাততো একটাই চিন্তা কি করে মৃদুলাকে ফিরিয়ে আনা যায়….
নিলা খাবার এনে সামাদকে দিলো আর সামাদও খেতে লাগলো
-‘ নিলা আহানতো মৃদুলাকে বিয়ে করবে বলছে।’
নিলার ভ্রু খানি কুচকে গেলো। এবার বেশ রে’গে গেলো সামাদের উপর!…
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘ উফফ! এই মৃদুলা মৃদুলা মৃদুলা! কি পেয়েছো টা কি বলতো? আহানও সবর্ক্ষন মৃদুলা করতো এখন তুমিও কানের পোকা নাড়িয়ে দিচ্ছো ওই মেয়ের নাম বলে বলে? বলেছি তো একবার মৃদুলাকে আটকে রেখেছি। আহান বলেছে বিয়ে করবে তো বিয়ের দিন মৃদুলাকে খুঁজে না পেলে তো আমাকেই বিয়ে করবে না কি? আর রইলো মৃদুলা! আহান আর আমার বিয়ের কথা শুনলে ও এমনিতেই তোমাকে বিয়ে করবে বুঝলে? তখন তুমি তোমার ভালোবাসা ফিরে পাবে আর আমি আমার আহানকে বিয়ে করবো! একটা কথাও বলবে না আর! খেয়েছো তো এবার বিদেয় হও।’
সামাদ চলে গেলো। ওদিকে নিলা ফোনে ভিডিও দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। কালকেই মৃদুলা আর আহানের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবার কথা পরশু দিন বিয়ে! অথচ কালকেই এসব ঝামেলা আর একদিন হাসপাতালে থাকার কারনে আহানের সময় নষ্ট হয়ে গেলো। যে করেই হউক কালকের ভেতর মৃদুলাকে খুঁজে আনতেই হবে।
আহান সিদ্ধান্ত নিলো সে রাতটুকু নিলার বাসার সামনেই ভি’ক্ষু’ক সেজে থাকবে।
যদি নিলা বের হয় তাহলে আহান পিছু পিছু গিয়ে মৃদুলার খোঁজ করবে! যদি আজকে না-ও যায় কালকে সকালে তো যাবে? তখনিই আহান যা করার করবে। আপাততো এখানে বসে রইলো….
একটু পর আহানের সেলফোন বেজে ওঠলো। আহান তাকিয়ে দেখলো বাড়ি থেকে মৃদুলার আব্বু ফোন করেছে…
-‘ আহান মৃদুলার কোনো খোঁজ পেলে? সেই সকালে বেরোলে এখনো অব্দি তো কিচ্ছু জানালে না বলো?’
-‘ চাচ্চু তুমি চিন্তা করো না। আমি মৃদুলাকে ঠিক খুঁজে নিয়ে আসবো। ‘
-‘ আহান ভেবে দোখো নিয়ে আসবে। তার মানে এখনো মৃদুলার খোঁজ পাও নি তুমি। অথচ কালকেই হিসবে মতন তোমাদের গায়ে হলুদ কি করে কি করবে তুমি?’
-‘ কিচ্ছু হবে না বলেছি তো। কালকে সবকিছু ঠিকঠাক মতন হবে। তোমরা অনুষ্ঠান সবকিছু রেডি করে রাখবে যা যা প্রয়োজন হয়। আর শোনো বাড়ির কাউকে এভাবে হুটহাট ফোন দিতে নিষেধ করো। তোমার ফোনটা খোলা রাখবে তোমার সাহায্যের প্রয়োজন আছে আমার। আমি যেভাবে বলবো সেভাবে একটু করতে হবে তোমায় বুঝেছো? ‘
-‘ হ্যাঁ বুঝেছি। তুমি নিজের খেয়াল রেখো আর সাবধানে থেকো।’…
আহান ফোন রেখে দিয়ে বসে রইলো রাস্তায়। ওদিকে সামাদ পৌঁছেছে মৃদুলার কাছে। শহড় থেকে একটু বেশ দূরে জ’ঙ্গ’লের দিকে একটা পো’ড়া বাড়ি আছে সেখানে মৃদুলাকে আটকে রেখেছে নিলা। বাড়িটা পুরোনো হলেও বেশ শক্ত পোক্তই আছে। চারিদিকের দেয়ালে ফা’টল ধরেছে। সামাদ অতিরিক্ত নিশ্চিত হবার জন্য বাড়ির সামনে পিছে দু’জন গার্ড রেখেছে আর মৃদুলাকে যেখানে আটকে রেখেছে সেই রুমে একটা দরজা সামের দিকে আর পিছনের দিকে একটা দরজা রয়েছে এছাড়া আর কিচ্ছু নেই। দরজা দু’টোয় বাইরে থেকে তালা মেরে দেওয়া আছে।( আমি ব্যাতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা টাইমলাইনে পোস্ট নিষিদ্ধ! যারা অন্য কোনো গ্রুপ বা টাইমলাইন থেকে পড়বেন তারা দয়া করে ওখানে আর গল্প পড়বেন না। গল্প পড়তে হলে আমি পোস্ট থেকে পড়বেন। মানা করলেও একদল শুনছে না যার জন্য মাঝখানে বলা।
মৃদুলা বেডে শুয়ে ছিলো। দরজা খোলার আওয়াজে বেড থেকে ওঠে বসে সামাদকে দেখতে পেয়েই সজোরে ঠাস করে দু’টো থা’প্প’ড় দিয়ে দিলো! সামাদ গালে হাত দিয়ে থ হয়ে আছে। সে এসেছিলো মৃদুলাকে খাবার দিকে কিন্তু মৃদুলাকে খাওয়ানোর পরিবর্তনে যে সে নিজের থা’প্প’ড় খাবে সেটা বোধহয় কল্পনাতীতও করেনি…😕
-‘ আমাকে খাওয়াতো এসে নিজে খেয়েছেন তো? এবার হয়েছে বিদেয় হন এখান থেকে।’
-‘ বিদেয় তো হবোই কিন্তু তোমাকে নিয়েই বিদেয় হবো। জানো তো কালকে আহানের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান আছে?’
-‘ হ্যাঁ জানি। আর আপনিও এটা জেনে রাখুন কালকে আমার আর আহানের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে তারপর পরের দিন বিয়ে!’
-‘ সেগুড়ে বালি! বিয়ে তো তোমার আমার সঙ্গেই হবে আর আহানের নিলার সঙ্গে কথাটা মিলিয়ে রেখেো।’
সামাদ চলে যায়। মৃদুলা আহানের ডায়েরি টা জরিয়ে বসে রইলো।…..
-‘ কেনো আমি বুঝলাম না তোমার ভালোবাসা আহান! কেনো বুঝলাম না। সেদিন রাত্রে তোমার ভালোবাসা শুনে অভিমান করে সেই তুমি থেকে আপনি করে বলেছি। এখন এতো বছর পর তোমাকে তুমি করে বলছি কিন্তু তুমিই নেই! কেনো এরকম হলো? পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে শেষেমেশ না খারাপ কিছু হয়। তোমার মূল্য বুঝিনি আমি। হারিয়ে ফেলেছি! #হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে আহান! ফিরে এসো।
মৃদুলা কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে যায়। আহানের ডায়েরি টা বুকে জড়িয়েই!…
সকালের আলো ফুটে ওঠেছে চারিদিকে। আযান দিয়ে দিয়েছে একটু আগে। সারারাত ঘন্টা খানেকও ঘুমায়নি আহান। সারাক্ষণ নিলার বাসার সামনে বসে ছিলো। বেশি ঘুম আসলে দশ মিনিট করে ঘুমাতো এর্লাম দিয়ে আবার কখনো কখনো চোখে মুখে পানি দিয়ে ঘুমের রেশ কাটাতো। বেশ নির্ঘুম কেটেছে বলা যায়। তবুও নামাজ পড়ে ফুটপাত থেকে শুকনো পাউরুটি এনে বসে বসে চিবাতে লাগলো। একজন ভি’খারি এর চেয়ে বেশি কি খেতে পারে? সেই মতনই আহান শুকনো পাউরুটি চিবোচ্ছে! এভাবেই ঘন্টা কয়েক পরে নিলা বের হলো রুম থেকে।
আহান নিলাকে দেখতে পেয়েই ওর অটো ড্রাইভার বন্ধুকে ফোন করলো। অটো ড্রাইভার ওর বন্ধু নয়। কালকে রাত্রেবেলা ওর বন্ধুকে অটো ভাড়া করে এনে অটো ড্রাইভার সাজিয়ে রেখেছে যাতে নিলার পিছু পিছু যেতে পারে। নিলা বের হলে যদি ওর পিছু যাবার মতন সঠিক সময়ে অটো না পায় তাহলে তো তীরে এসে তরী ডুববে তাই এই ব্যবস্থা! আর একটা ভিখারি অটো ছাড়া গাড়িতে বসলে সেটা স’ন্দে’হের! নিলা গাড়িতে ওঠা মাত্রই আহান তার বন্ধুকে ফোন দিয়ে অটোতে উঠে বসলো। পিছু করতে বললো নিলার গাড়ি। একসময় পিছু করতে করতেই গাড়ি গিয়ে থামলো জ’ঙ্গ’লের পাশে।….
এখানে অটো নিয়ে গেলে বি’পদ! সেই মতন আহান তার বন্ধুকে বলে দিলো অটো নিয়ে অপেক্ষা করতে আর যদি ঘন্টার ভেতরে আহান না বেরোয় তাহলে পুলিশকে ফোন করতে। আহানের বন্ধু আহানের কথা মতন দাঁড়িয়ে রইলো ওই জায়গায়।
আহান নিলার পিছু পিছু যাচ্ছে। দূর থেকে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে দেখতে পেলো বাড়িটার দু’পাশে দু’জন গার্ড! নিলা দরজার সামনে যেতেই গার্ড গুলো নিলাকে সালাম করলো। নিলা পানি খাচ্ছিলো ওখানে দাঁড়িয়ে। আহানের মা’থায় বুদ্ধি আসলো সে নিলার নম্বরে ফোন করলো…
-‘ নিলা তুমি কোথায় আছো? প্লিজ আমাকে সাহায্য করো দয়া করে কোথায় আছো তুমি? মৃদুলাকে খুঁজতে গিয়ে আমার এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে! তুমি জলদি সিটি হাসপাতালের সামনে চলে***
হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১৬
এবার আহান ইচ্ছে করেই ফোন কেটে দিলো যাতে নিলা বুঝে সত্যিই তার এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে। ওদিকে নিলা আহানের এরূপ কথা শুনে ঘা’বড়ে গেলো! যাকে পাবার জন্য এতোকিছু সে যদি ঠিক না থাকে তাহলে এতোকিছু করে কি লাভ? নিলা জলদি গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হলো….
এদিক আহান এগিয়ে যাচ্ছে তার প্ল্যান মোতাবেক