হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ৫
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা
ধরিত্রীপুরে গোধুলি বেলার রেশ ছড়িয়ে পড়ছে! দুপুরে খটখটে রৌদ্রের তাপ কমিয়ে দিয়ে বিকেলের শান্তিময় আভা ফুটো ওঠেছে। রিক্সা পাইনি তেমন তাই হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। ক্লা’ন্ত হয়ে আসছে শরীর! ভেবেছিলাম আহান হয়তো আমাকে নিতে আসবে মাঝপথে কিন্তু কই উনার দেখাটুকুও পর্যন্ত পেলাম না।
-‘ কিরে মধু? তুই এতোক্ষণ পর এলি যে?’
-‘ উফফ দাদি! তুমি এতো ভুলোমনা হলে কবে থেকে বলোতো? আমি তো একটু আগেই বললাম ওর একটা ক্লাস ছিলো বেশি তাই ওর আসতে দেরি হয়েছে।’
উপরোক্ত কথাগুলো বললেন আহান ভাইয়া! এদিকে আমি উনার কথা শুনে হতভম্ব! উনি আমার আগেই এসে পড়েছেন অবশ্য উনার কাছে বাইক ছিলো আর আমিতো হেঁটে এসেছি। আপাততো এসব কিছু বাদ দিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। হেঁটে আসায় গরমে জামাকাপড়ের অবস্থা না’জে’হা’ল! তাই গোসল সেড়ে বের হলাম ওয়াশরুম থেকে। তোয়ালে নিতে ভুলে গেছিলাম যার ফলে চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ে পড়ছে আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো সযত্নে মুছতে লাগলাম। এর ভিতরেই ঘরে প্রবেশ করলেন আহান ভাইয়া!
-‘ তখন এভাবে চলে এলি কেনো? ‘
-‘ তো কি আপনাদের দুজনের মাঝখানে থাকতাম?’
-‘ দু’জন মানে?’
-‘ ভুলে যান নাকি সবকিছু?’
-‘ কথা পেঁচানো বাদ দে। কাল থেকে এরকম করবি না।’
-‘ দেখুন এখন এতো কথা বলবেন না ভালো লাগছে না! আর দেখছেনই তো আমি গোসল করে কেবল বাহির বের হয়েছি এখন নিজেকে গুছাবো আর আপনি এভাবে রুমে চলে এসেছেন কেনো?’
-‘ তো কর কে মানা করছে?’
লোকটাকে যতো দেখি ততো অবাক হয়ে যাই। বাহিরে ওনান নিলা না মিলা ওকেও ঠিক রাখছে আবার ঘরের ভেতর আমার সঙ্গে উ’দ্ভট ব্যাবহার!
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘ আপনি আরেকজনকে ভালোবাসলে বিয়ে করলেন কেনো আমায়?’
আমার কাছ থেকে হয়তো উনি এরকম প্রশ্ন আশা করেনি। তাই কিছুটা অবাকই হয়েছেন বটে!
-‘ মানে!’
-‘ মানে কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে?’
-‘ পরিবাররর সকলে জো’র করছিলো। বিশেষ করে দাদি!’
-‘ তাই বলে নিজের ভালোবাসা যাকে নিয়ে সেদিন এতো বড়ো বড়ো কথা বললেন তাকেই ভুলে গেলেন?’
-‘ ই’ডি’য়েট! সেদিন বলেছি না আমার ভালোবাসা আমার সঙ্গেই আছে! খুব যতন করে আগলে রেখেছি তাকে। তোর আমার ভালোবাসা নিয়ে এতো ভাবতে হবে না!’
উনি ছাঁদের দিকে চলে গেলেন! আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো তাচ্ছিল্যের হাসি। উনার মনে ভালোবাসা ঠিকই রয়েছে কেবল আমার মন বেহুদাই উনার মনে বিচরন করে!
-‘ আপু আছিস?’
-‘ হ্যাঁ ভেতরে আয়।’
-‘ তোকে আজকে নিজের হাতে খাওয়াবো বলে তোর রুমে এসেছি রে।’
খেয়াল করে দেখলাম ইতুর হাতে খাবারের প্লেট রয়েছে। এর আগে যখনই ইতুর মন খারাপ হয়েছে সে আমার কাছে এসেছে।
-‘ আপু তুই বোস আমি তোকে খাইয়ে দিই। কতোদিন তোকে খাইয়ে দিই না।’
-‘ ইতু? তোর কি কোনো কিছু নিয়ে মন খা’রা’প?’
সঙ্গে সঙ্গে ইতু কেঁদে দিলো! আমি ভড়কে ওঠলাম। আমি তো কিছু করিনি তাহলে কাঁদার কারন?
-‘ কাঁদছিস কেনো? ‘
-‘ আপু আহান ভাইয়া থেকে দুলাভাই হয়ে গেছে। তুই যেমন আমার বোন তেমনি আহান ভাইয়ার বোন হয়ে গেছিস। আর কিছুদিন পর একেবারে চলে যাবি আমাকে ছেড়ে আমার খুব খারাপ লাগছে তোর জন্য।’
বোনের কথায় নিজেরও আচমকা খারাপ লেগে ওঠলো। আপাততো এসব বাদ দিয়ে দিতে চাইছি। ওর মন খারাপ বাড়াতে চাইছি না আর। ছোটো বোনের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে চাইছি।
-‘ ইতু খাইয়ে দে তাড়াতাড়ি!’
-‘ নে ভালো করে খা!’
ইতু খাইয়ে দিতে লাগলো আমাকে আমিও ওকে খাইয়ে দিলাম বেশ ক গ্রাস! খাওয়ার পালা শেষ করে বিকালের দিকে একটু বেরিয়েছি হাঁটার জন্য। বাড়ি থেকে একটু সামনেই রাস্তায় হাঁটছি। বেশ ভালোই লাগছে হাঁটছে ফুরফুরা বাতাস, স্নিগ্ধ শান্ত প্রকৃতি। বেশ আনন্দ নিয়ে হেটে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ হাটাহাটির পর রুমে চলে আসলাম পড়তে বসার জন্য!
-‘ খুব জরুরি ছিলো মৃদুলার সামনে আমাকে জ’ড়ি’য়ে ধ’রার?’
-‘ ইট’স নরমাল! তুমি এতো হা’ইপা’র কেনো হচ্ছো? (নিলা)
-‘ হাই’পা’র! যার জন্য এতোকিছু করলাম পুরো পাঁচ পাঁচটা বছর অপেক্ষা করলাম আর এখন বলছো হা’ই’পা’র হবো না?’
-‘ আরে বোঝার চেষ্টা করো এভাবেই তো বোঝা যাবে মৃদুলার মনে তোমার জন্য কোনো ফিলিংস আছে কিনা!’
-‘ ও আমি ঠিক বুঝে নিবো। ওর জন্যই তো এতোকিছু করছি আমি। ভালোতো আমি ওকেই বাসি! মৃদুলাকেই যে মিলা বলেছি সেটা ও বুঝতে পারেনি। আর আজকে ভেবেছে তুমিই বোধহয় মিলা! তোমার নাম নিলা হবার কারনে আমি মিলা বানিয়ে দিই তোমার নাম যাতে বুঝতে পারি আসলেই কি ও আমাকে ভালোবাসে?? নাকি বেহুদাই পড়ে আছে এই বিয়েতে….
-‘ বোঝাতে পারতে সেদিন মৃদুলাকে তাহলে তো আর এই দীর্ঘ দিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো না তোমাকে?’
-‘ সেই সুযোগ টুকুও সে দেয়নি। ভেবেছিলাম ছেড়ে দিবো কিন্তু কি করবো? ভাগ্যে তো নুড়ি পাথরই ছিলো!’
-‘ এখন দেখো সময় সবটা ঠিক করে দেবে। বিয়েটা যখন হয়েইছে তখন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। ‘
-‘ ঠিক তো হতেই হবে নিলা পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করে আসছি ঠিক না হলেও ঠিক করার দায়িত্ব আমার!’
নিলা কোনো প্রতিত্তোর না করে চুপটি করে চলে যায় সেখান থেকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে তার কষ্ট হতো এসব কথা শুনে। মৃদুলা কষ্ট দিয়ে দূরে সরে দিয়েছিলো আহানকে কিন্তু নিলা? সে তো আহানের দুঃসময়ে পাশে থেকে তাকে বুঝিয়েছে। আর এখন পরিশেষে আহান মৃদুলাকেই ভালোবাসে হয়তো ভুলতে পারেনি মৃদুলাকে। যদি পারতো তাহলে এই পাঁচ বছরে আহানের মনে হয়তো নিলা থাকতো কিন্তু তা যখন হয়নি তখন এসব ভেবে নিজেকে কষ্ট দিতে চায় না নিলা তাই মাথা থেকে ঝে’ড়ে ফেললো!
ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটার ঘরে গিয়ে পৌঁছালো! এখনও আহান ঘরে আসেনি বিধায় মৃদুলা ছটফট করে চলে ঘরের মধ্যে। শুধু তার আব্বুকে বলে গেছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেছে। দশটার ভেতর ফিরে আসবে বাড়ির সবাই এখন ঘুমন্ত আহান বাড়িতে আছে কি নেই সেটা কেউ বুঝেনি। মৃদুলা এবার এগিয়ে দেখতে বাড়ির বাহিরে গেলো। বাড়ির গেট খুলে রাস্তায় দাঁড়াতেই সে সামাদকে দেখতে পেলো। সাইকেল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সামাদ। সামাদ বেশ ভোলাভালা টাইপের মাথায় চুলগুলো সিথি করে আচড়ানো থাকে সবসময়। শার্ট প্যান্ট পড়ে তবে শার্টগুলো পড়ে মুরব্বিদের মতন। এই সামাদও কিন্তু ইনিয়ে বিনিয়ে বেশ কয়েকবারই মৃদুলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে সে মৃদুলাকে ভালোবাসে মৃদুলা বুঝেও না বোঝার ভান করে ছিলো সবসময়ই।
-‘ আরে মৃদুলা! এই মধ্যেরাত্রি বেলা তুমি বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কিছু প্রয়োজন? আমাকে বলো আমি সব করে দিচ্ছি।’
চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটে ওঠলো মৃদুলার!
-‘ আমি আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছি সামাদ ভাইয়া! ‘
-‘ ওহ্ সুখেই আছো বলো তাহলে স্বামীকে নিয়ে?’
-‘ হ্যাঁ তাই। এবার আর কথা বাড়াবেন না চলে যান।’
সামাদ চলে গেলো তার সাইকেল নিয়ে। ওদিকে আহান বাড়িতে ফিরছিলো ঠিক তখুনিই দেখতে পায় মৃদুলা সামাদের সঙ্গে কথা বলছে। এতো রাত্রে একটা মেয়ে ছেলের সঙ্গে কথা বলছে তাও আবার সেই ছেলে যে কি না মৃদুলাকে ভালোবাসে! ব্যাপারটা খটকা লাগে আহানের! রা’গে মু’ষ্টিব’দ্ধ করে ফেলে হাতদুটো।
-‘ ওই ছেলের সঙ্গে কিসের এতো কথা তোর এই রাত্রিবেলা?’
আচমকা আহানের কন্ঠস্বর শোনায় ভ’য় পেয়ে যায় মৃদুলা! ভ’য়ে তুতলিয়ে ওঠে….
-‘ আপপপনি আহান! কককিছু করছিলাম না তো!’
-‘ তাহলে তোতলাচ্ছিস কেনো?’
-‘ আপনি আচমকা ডাক দিলেন তাই ভ’য় পেয়েছি!’
-‘ ওই ছেলের সাথে কি বলছিলি?’
-‘ আমি এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম উনি জিগেস করছিলো কেনো?’
-‘ মিথ্যা বলবি না!
-‘ আরে আজবতো আপনি! আপনি বাসায় কেনো আসছেন না সেটা দেখার জন্যই এগোতে যাচ্ছিলাম আর আপনিই স’ন্দে’হ করছেন! একেই বলে যার জন্য চু’রি করলাম সেই বলে চো’র!’
আমি রা’গ দেখিয়ে চলে আসলাম রুমে। সবসময়ই চুপ করে থাকবো আর উনি আমার নামে যা খুশি বলবেন সেটাতো হতে দেওয়া যায় না!
মৃদুলা চলে যাবার পর ওদিকে আহানের মুখে হাসি! সে হয়তো খুশি হয়েছে….
হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ৪
-‘ তাহলে আমার নুড়ি পাথর আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো? এবার হয়তো আর পাঁচ বছরের মতন দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে না আমাদের বিয়ের আগেই সবটা নিজের মুখে বলবে নুড়ি পাথর! তখন তাকে আপন করে নিবো একদম নিজের করে…..