হারিয়ে চাইছি তোমাকে - Golpo bazar

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ৬

হারিয়ে চাইছি তোমাকে

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ৬
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা

সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠেই অনুভব করলাম আহান পাশে নেই! কালকে রাত্রেবেলা উনার সংগে রা’গ দেখিয়ে ঘরে এসে শুয়ে পড়ি আর কখন যে ঘুমিয়ে ও পড়েছিলাম তাও বুঝিনি। কিন্তু উনি গেলেন কোথায় এতো সকাল সকাল? নিচে নেমেই দেখতে পেলাম দাদিমা বসে বসে পান চিবুচ্ছেন!
-‘ তোমার আহু কোথায় গো?’
-‘ আরে মধু তুই জানিস না? তোকে বলে যায়নি কোনো কিছু আহু?’
-‘ নাতো.. কি হয়েছে?’
-‘ আর বলিস না! আহু দাদুভাই চাচ্ছে তোদের ভার্সিটির সামনে যে পুড়নো বাড়িটা আছে না? ওখানে থাকতে!’
-‘ মানে! ‘
-‘ ওই বাড়িটায় তো তোর চাচ্চু থাকতো তোর চাচী কে নিয়ে। ওরা দু’জন ছিলো তখন তাই ছোট্ট করে বানিয়েছিলো বাড়িটা। ওটা তো তালাই পড়ে আছে। দারোয়ান মাঝে মাঝে এসে পরিষ্কার করে যেতো। ক’দিন আগে আহু ওই বাড়িটা রঙ করে আরো বেশ ঝকঝকে করে তুলেছে। সে এখন চায় তোকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতে!’
-‘ কি বলছো তুমি? আমি আমার বাড়ি ছেড়ে যাবো না দাদি।’

-‘ মধুরে এটা তোর বাড়ি নেই আর! আহুর বাড়িই তো তোর বাড়ি এখন। আহু আমাকে বললো আর কতোদিন চাচার বাড়িতে মানে সম্পর্কে তো তোর বাবা এখন আহুর শশুড় মশাই না? তো কতোদিন আর শশুড়বাড়ীতে থাকবে সে? ওই বাড়িটা তো খালিই পড়ে আছে তাই ওখানে গিয়ে থাকবে! ও বলেছিলো একেবারে ওদের বাড়িতে চলে যেতে কিন্তু আমিই বললাম এখানেই থাক না দু’জনে মিলে। ছোট্ট সংসার শুরু কর। আর ওখান থেকে তো আহুর ভার্সিটি যেতেও বেশ দেরি হবে তাই বললাম আর আহুও তাই করলো!’
সবটা রা’গ গিয়ে পড়ছে দাদির উপর! তাকে পাকামো করে কে বলতে বলেছিলো ওই পুরনো বাড়ির কথা? এখন আমাকে ওখানে একলা একলা থাকতে হবে এটা ভেবেই তো কেমন জানি লাগছে!
-‘ মৃদুলা এতোক্ষণে তো সবটা জেনে গেছিস নিশ্চয়ই। তাহলে ভার্সিটি থেকে এসে জামাকাপড় গুছিয়ে রাখ বিকেলে আমরা রওনা হবো।’
আমি কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে গেলাম! পিছু পিছু আহানও আসছে দেখলাম।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ কিরে নুড়ি পাথর এতো রা’গ কেনো তোর?’
-‘ ওই বাড়িতে না গেলে কি হতো?’
-‘ আ’বা’লের মতন প্রশ্ন করিস না। শশুড় বাড়িতে আমি কতোদিন থাকতাম? ওই বাড়িটা তো ফাঁকাই আছে থাকতে কি প্রবলেম বল?’
-‘ প্রবলেম তো এটাই আমি যাবো না! আপনি কেনো নিজের বাড়িতে চলে গেলেন না!’
কি বলতে কি বলেছি ভেবেই নিজের মুখে হাত দিয়ে ফেললাম! কাউকে এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা টা কোনো সভ্য ঘটনা মনে হলো না। আহান কথাটা হয়তো ভালো করে শুনতে পায়নি আমি তৎক্ষনাৎ কথা ঘুরানোর জন্য অন্য কথা বললাম….
-‘ কিচ্ছু হবে না! আর তো এক দু মাস তারপরে তো একেবারেই আপনাদের বাড়িতে চলে যাবো। থাকি না এখন এখানে?’
আহান আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। আমি খাটে বসে ছিলাম উনি আসতেই উনার থেকে দূরে যেতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উনি ও আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। আমার ঠোঁটে উনি উনার হাত দিয়ে ধরতে লাগলেন। আমি বুঝলাম না এর মানে কি!

-‘ এরকম করছেন কেনো?’
-‘ এই ঠোঁট টা বড্ড বেশি কথা বলছে তাই ভাবছি এটাকে কা’ম’ড়ে দিলে কেমন হবে?’
আমি উনার বলা কথার মানে বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে আলমারি থেকে জামাকাপড় খাটে ফেললাম!
-‘ এই যে আমি গুচ্ছাছি!’
-‘ ভালো কথা তোর ভালো লাগেনি তো কি করবো বল?’
উনি চলে যেতেই এক রাশ বি’রক্ত নিয়ে জামাকাপড় গুছাতে লাগলাম। ঘরের কোনে চোখ পড়লো আরো একটা লাগেজের! মানে উনারটা উনি কি সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলেছেন কাল রাত্রেই! আর আমাকে এখন সবটা গুছাতে হবে। কাজে লেগে পড়লাম। সবটা গুছানো শেষ করে ভাবলাম ভার্সিটি যাবো না কিন্তু এই আহানের জন্য তা-ও হলো না! অগত্যা সবগুলো ক্লাস শেষ করে বাসায় এসে খাবার খেয়ে বসার সুযোগ পেলাম না! উনার কথায় রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যাবার সময় মা খাবার দিয়ে দিলো যাতে রাত্রে খেতে পারি। সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম! কিন্তু পথিমধ্যে ঘটলো আরে ঘটনা! গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলো বাধ্য হয়ে সিএনজিতে কোনোরকম করে গেলাম।

কিছুক্ষণের ভেতর ওই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম! গিয়ে দেখি বাড়ির ভেতরটা কি সুন্দর! কেউই বলবে না এটা পুরনো বাড়ি! একদম নতুন রঙ করা হয়েছে। বাড়িতে মাত্র দু’টো রুম রয়েছে একটা রুমের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দা রয়েছে। আর একটা রুম বেশ ছোটো কোনো বারান্দা নেই ওটাতে। আর রয়েছে কিচেন রুম! ব্যস এই শেষ! তবে এই ছোট্ট বাড়িটাতে আবার ছাঁদও করেছে চাচ্চু ভেতরটাতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সবকিছুই রয়েছে দেখলাম আর সবটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নই আছে….
আমি দেরি না করে আগেই শাওয়ার নিতে গেলাম। শাওয়ার সেড়ে ভেবেছিলাম থ্রি পিস পড়বো কিন্তু এই গরমে টি শার্ট আর প্লাজুর থেকে আরামদায়ক কাপড় আছে বলো মনে হলো না আমার! চট করে পড়ে বের হয়ে নিলাম!
আয়নার সামনে এসে চুল আচড়াতে লাগলাম তখুনি আহান পিছণ থেকে এসে আমাকে হুট করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো!
আমি বিস্মিত! উনি এরকম কান্ড করবেন জানা ছিলো না! অনুভব করলাম এটা আহান! এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে তাকে আমার এতোটা কাছে পেয়ে। আহান কেমন ঘোরলাগা কন্ঠে কথা বলছেন। বুঝতে পারলাম না উনার হলো টা কি?

-‘ এভাবে কাছে আনার ধা’ন্ধা তোর!’
-‘ কিসব বলছেন কি!’
-‘ এরকম ভাবে থাকলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করবো কি করে? এমন জামাকাপড়, ভেজা চুল, এসব দেখলে সা’ধুপুরুষও তো অ’সা’ধু পুরুষ হয়ে যাবে!’
উপরোক্ত কথাটি বলেই উনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমি প্রায় জমে যাচ্ছি উনার এরকম স্পর্শে! উনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে ব্যর্থ হলাম। বুঝে গেলাম শক্তিতে কুলোবো না তাই বুদ্ধি প্রয়োগ করলাম!
-‘ আমাদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা সম্পর্কের মতন নয়! তাই ছেড়ে দিন!’
আর কিছু করতে হলো না ব্যস সঙ্গে সঙ্গে উনি ছেড়ে দিলেন। আমার দিকে চেয়ে রে’গে স্যরি বললেন! বোঝাই যাচ্ছে আমি উনাকে বিরক্ত করলাম।
কিন্তু আমারও এসব ভালো লাগে না। যে আমাকে ভালোবাসেনা তার এমন স্পর্শ কেনো? ভালোবাসলে না হয় কথা ছিলো।

আপাততো ঘরের বাকি সব কাজ করতে করতেই রাত্রিবেলা হয়ে গেছে। ক্ষিদেও পেয়েছে খুব। ওদিকে আহান আরাম করে ঘুমাচ্ছে! আমি বক্স খুলতেই দেখি সি এনজিন ঝাঁকুনি তে সব খাবার নষ্ট হয়ে গেছ! এখন খাবো কি? এই রাত্রেবেলা রান্না করবো কখন আর খাবোই বা কখন? আর কি বা রান্না করবো? বাড়িতে তো কোনো বাজার পাতি কিছুই নেই। এসব ভাবতে ভাবতে দেখলাম আহান উঠে পড়েছে।
-‘ খাবার নষ্ট হয়ে গেছে সবকিছু গাড়ির ঝাকুনিতে। ‘
-‘ রেডি হয়ে নে। রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো।’
-‘ এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলেন?’
-‘ তো? আমাকে কি মনে হয় তোর মতন? ঘরে বাজার নেই এখন বাজার করে রান্না করতে করতে রাত শেষ হয়ে যাবে! আর অনলাইনে এই রাত্রেবেলা কে খাবার দিবে? তাছাড়া খাবার আসতে আসতে আমরাই বরং চলে যাই রেস্টুরেন্টে খেতে!’

আমি রেডি হতে গেলাম। আর যাই হউক টিশার্ট পড়ে তো বাহিরে যাওয়া যায় না। আমি থ্রি পিস পড়ে মাথায় ঘোমটা খানি টেনে রেডি হয়ে নিলাম। ইতিমধ্যেই আহানও রেডি হয়ে গিয়েছে। দু’জনে মিলে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। ওয়েটার মেনু কার্ড দিয়ে গেছেন আমি একটু নুডুলস, পাস্তা অর্ডার করতে যাচ্ছিলাম আমাকে তা করতে না দিয়ে নিজে অর্ডার দিলেন।বসে আছি ওয়েটার কখন খাবার দিয়ে যাবেন। এরই মধ্যে হঠাৎ নিলা কোত্থেকে উদয় হলো! ওকে দেখেই রা’গের পরিমানটা শরীরে তড়তড় করে ওঠলো! বরের সঙ্গে প্রথম এসেছি তাও উনি চলে এসেছেন পিছু পিছু…

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ৫

-‘ তোমরা এখানে!’ আমি তো আজকে এখানে ফাস্ট এসেছি খেতে! তোমরা কি করছো?’ (নিলা)
-‘ আজ্ঞে এটা খাবার জায়গা আপনি যেমন খেতে এসেছেন তেমনি আমরাও খেতেই এসেছি!’
বলেই মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলাম! এই মহিলার জন্য কোথাও গিয়ে শান্তি নেই!

হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.