হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ১০
লেখিকাঃমুনিয়া মিরাতুল নিহা
-‘ আপনি আমার জন্য এসব শাড়ি এনেছেন! থ্রি পিস আনলেন না কেনো?’
-‘ বিয়ে হবার পর এই বাড়িতে এসেছিস শাড়ি না পড়লে কেমন দেখায়? আপাততো ক’দিন শাড়ি পড়।’
উনার সঙ্গে কথা না বাড়িয়ে চটজলদি শাড়ি পড়তে চলে গলাম। শাড়ি পড়া শেষ করে রুমে আসলাম। শাড়িটা টাটকা লাল রঙের! শাড়ি পড়েই রুমে আসতেই দেখি আহানও রেডি হয়ে গেছেন! আমি গিয়ে শুধু শাড়িটা উপরে ওঠিয়ে কুচি দিয়ে পড়ে এক্কিবারে রেডি হয়ে নিলাম। আচমকাই আহান আমার সামনে এসে শরীর থেকে শাড়ির আঁচল টি টান মে’রে খুলে দিলো এক নিমিষেই!
-‘ এটা কি ধরনের কাজ?’
-‘ এটা কি ধরনের শাড়ি পড়া? তোর পে’ট তো সাইড দিয়ে দেখা যাচ্ছে! ‘
-‘ গরম লাগছিলো তাই উঠিয়ে পড়েছি।’
-‘ আমি যেরকম নামিয়ে দিয়েছি ওরকমই থাকবে! এবার চল।’
উনার সঙ্গে কথায় না পেরে চলে গেলাম হাসপাতালে! চাচ্চু আর দাদিকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। আমি গেলাম চাচির কাছে। আমার উপস্থিত টের পেয়ে চাচি চোখ খুলে ওঠে বসলেন। আমি খাবার বের করে উনার দিকে ধরলাম আগের ন্যায়। উনি এবার চুপটি করে খেয়ে নিলেন। খাওয়া শেষ করে একটু আধটু কথাও বললেন। এক পর্যায় ওষুধ খাইয়ে দিতে চাচি ঘুমের দেশে পাড়ি জমালেন। আহান আর আমি বেরিয়ে আসলাম হাসপাতাল থেকে। গাড়িতে ওঠবেো তার আগেই চোখ যায় রাস্তায় থাকা ফুচকাওয়ালার দিকে! মেয়ে হয়েছি অথচ ফুচকাকে ইগনোর করে চলে যাবো? উঁহু! এটা তো এক্কিবারে হতে দেওয়া যাবে না!
বায়না জুড়লাম আহানের কাছে। উনার চোখে মুখে বিরক্তিকর ছাপ! আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে ফুচকাওয়ালার কাছে চলে গেলাম!
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘ মামা ঝাল দিয়ে ফুচক দিন তো!’
-‘ ঝাল তো খেতে পারিস না তাহলে ঝাল ফুচকা খাচ্ছিস?’
-‘ ফুচকা ত ঝাল ছাড়া ভালো লাগে না!’
বলতেই ফুচকা মামা দু প্লেট ঝাল দেওয়া ফুচকা দিয়ে দিলেন আমার হাতে। আহানের প্লেট হাতে দিতেই উনি মুখে পুড়ে নিলেন। আমি একটা খাই তো উনি দু’টো খান! বুঝলাম উনি প্রচুর ঝাল খেতে পারে যা আমি পারি না! তবুও জেদ করে ফুচকা গুলো খেলাম। ইতিমধ্যে উনি নিজের খাওয়া শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এদিকে ঝালের চোটে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে! উনি সযত্নে আমার হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিলেন!
-‘ পাকামো করলে এমনিই হয়। এবার এটা খেয়ে উদ্ধার করুন আমায়!’
আমি খেয়ে নিলাম। রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছি আহানের পাশে। হঠাৎই উনি কোথায় যেনো চলে গেলেন। ভড়কে ওঠলাম উনাকে ছাড়া! ফোন করবো যে ফোনও আনিনি। ইতিমধ্যে কান্না চলে আসছে আমার। তারপরই পাশে অনুভব করলাম কেউ আমার হাত টেনে ধরেছে। তাকাতেই আহানকে দেখতে পেলাম। কান্না সামলাতে পারলাম না আর।
-‘ কোথায় গেছিলেন হ্যাঁ? জানেন আমি কতো ভ’য় পেয়ে গেছিলাম?’
-‘ ভ’য় পেতে হবে না আমি তো তোর পাশেই আছি!’
আমি আর কিচ্ছু না বলে উনার হাত দু’টো আমার মুঠোয় পুড়ে নিলাম শক্ত করে। যেনো হাতগুলো ছাড়লেই উনি পালিয়ে যাবেন আমাকে ছেড়ে। ফুটপাতে দাঁড়ালেন। এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও এখন দেখলাম উনার হাত একটা প্যাকেট রয়েছে! উনি আমার মা’থায় খোপায় হাত দিলেন। উনার বাম হাতে থাকা সেই প্যাকেট থেকে বেলী ফুলের মালাখানি আমার খোঁপায় গুঁজে দিলেন!
ফুলগুলো সতেজ, টাটকা। আমার গা থেকে টাটকা বেলীফুলের সুঘ্রান ভেসে আসছে।
-‘ উমমম খারাপ না সুন্দরই লাগছে তোকে!’
-‘ তো এবার কয়েকটা ছবি তুলে দিন আমাকে?’
-‘ আবার ছবি?’
-‘ হ্যাঁ আমাদের দু’জনেরই। এই প্রথম আপনি আমাকে কিছু কিনে পড়িয়ে দিলেন ভাবা যায়? সেটা স্মৃতিবন্ধি করতে হবে না?’
-‘ শাড়িটাও কিন্তু আমারই!’
– হ্যাঁ এবার দু’টো ছবি তুলুন না এরকম করছেন কেনো?’
-‘ তুলছি তো!’
ছবি তোলা শেষ করে গাড়িতে ওঠলাম। গাড়ির জানলা দিয়ে মা’থা বের করে সন্তপর্নে তাকিয়ে আছি বাহিরের খোলা প্রকৃতির দিকে! রাত্রের আবছা আলোয় শহরটা কেমন রঙিন লাগছে। মাথার উপর বিশাল চাঁদ তার রশ্নি ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বোত্র! আকাশ জুড়ে ঝিকিমিকি তারা জ্বলছে। বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না আমার সেই দৃশ্য দেখার শখ! ধ’মক দিয়ে ওঠলেন আহান! নির্দেশ দিলেন মা’থা ভেতরে আনার। আমি তার কথা শুনে চুপটি করে গাড়িতে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিতো হবার পর বাড়িতে এসে পৌঁছালাম। বাবা মা চলে গিয়েছেন আমাদের বাড়িতে। এখন আহানদের বাড়িতে আমি লতা, আহান, দাদি, চাচ্চু, আর একজন কাজের বুয়া আছেন। আমি রান্না করে গিয়েছি এখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় দশটা বেজে গেছে। ইতিমধ্যে সবাই নাকি খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেছে। আমিও দু’টো খেয়ে ঘুমানোর উদ্দেশ্য রুমে গেলাম। কিন্তু শাড়ি পড়ে তো ঘুমানো যায় না। তাই গায়ের সেই থ্রি পিস যেটা এখন শুকিয়ে গেছে ওটা পড়েই শুয়ে পড়লাম। বিছনার মধ্যিভাগে কোলবালিশ দিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে। একটু পর অনুভব করলাম আহান আমার পাশে শুয়ে আছে। তিনি কোলবালিশ টা সড়িয়ে দিয়ে আমার মধ্যে থাকা দুরত্ব ঘুচিয়ে আমার কাছে আসলেন।
-‘ এই কোলবালিশ দিয়ে দুরত্ব বাড়াস কেনো প্রতিদিন?’
-‘ সে দুরত্ব আগে থেকেই বিদ্যমান!’
-‘ তুই যতো দুরত্ব বাড়াবি আমি ততোই দুরত্ব ঘুচিয়ে দিবো!’
উনার কথা শুনে ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাস বেড়িয়ে আসলো! উনি কতোটুকু দুরত্ব ঘুচাবেন আর? যেখানে ভালোবাসাই নেই…!
-‘ এই দুরত্ব ঘুচাবার নয়!’
-‘ মানে?’
-‘ মানে আপনি তো মিলাকে ভালোবাসেন তাহলে এসব বলছেন কেনো?’
-‘ মিলাকে শুধু আজকে নয় সেই পাঁচ বছর ধরেই মনের কোনে লুকিয়ে রেখেছি!’
উনার কথা শুনে কান্নারা ভর করলো! বুঝতে দিলাস না। অতি সন্তপর্নে চোখ থেকে অশ্রু মুছে নিলাম। মানে সেই পাঁচ বছর আগে যে ফোনকল শুনেছিলাম সেটাই সত্যি! উনার এইসব ব্যাবহারে মনে হয় উনি হয়তো আমার প্রতি দুর্বল! কিন্তু আজ তো ভে’ঙেই বলে দিলেন তিনি পাঁচ বছর ধরে মিলাকে ভালো বেসে আসছেন! কষ্টের পাশাপাশি অভিমান এসে জড়ো হলো! কোলবালিশ টা আবারো মাঝখানে রাখলাম। উনার উল্টোদিক ফিরে শুয়ে পড়লাম..!
-‘ কিরে আবারো কোলবালিশ দিলি?’
-‘ বললাম না দুরত্বই বজায় থাকবে!’
-‘ যেটা তোর মর্জি!’
-‘ তো খ’বর’দা’র! আর ভুলেও কোলবালিশ সরাবেন না! মিলাকেই জড়িয়ে ধরে ঘুমান আপনি!’
-‘ তাই তো করতে যাচ্ছি! ‘
-‘ মানে?’
-‘ তোর মো’টা মা’থায় ঢুকবে না! চুপ করে থাক!’
মা’থা মো’টা বলায় রা’গ এবার আরো বেড়ে গেলো! উনার হাত সড়িয়ে বারান্দায় চলে গেলাম! দাঁড়িয়ে থাকলাম নিরবে কিছুক্ষণ! কিয়ৎক্ষন পূর্বের কথা মনে পড়তেই আবারো কান্না রা এসে ভড় করলো! উনি নিজের মুখে স্বীকার করলেন তবুও আমার কাছে আসার বাহানা! উনি যখন এতোই মিলাকে ভালোবাসে তাহলে সেদিন প্রপোজ কেনো করেছিলো আমাকে? আমার পুতুল পেয়েছেন নাকি?
-‘ সে তুমি যতোই মা’থা মো’টা হও না কেনো! তুমি আমাতেই সীমাবদ্ধ! হয়তো এবার উপলব্ধি করতে পারবে ঠিক কতোটা ভালোবাসো আমাকে। তোমার চোখে দেখেছি আমার জন্য ভালোবাসা! সেটা কেবল প্রকাশ করার পালা। দীর্ঘ অপেক্ষা করেছি এবার একটু অপেক্ষা তুমিও না হয় করো মৃদুলা!’
আহানের ঠোটে বিজয়ীর হাসি! সে বুঝতে পেরেছে মৃদুলা কষ্ট পাচ্ছে! এটাই দরকার এখন তাদের সম্পর্কের উন্নতির জন্য! মৃদুলা যতো কষ্ট পাবে রা’গ হবে ততো বুঝতে পারবে সে আহানকে কতোটা ভালোবাসে!..
-‘ ভেতরে চল!’
-‘ আমি যাবো না তো আপনার কি?’
-‘ সোজা আঙুলে ঘি না ওঠলে বাঁকাতে হয় সেটা তো জানিসই…?’
-‘ এখান থেকে চলে যান!’
-‘ তোকে নিয়েই তবে যাবো।’
হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব ৯
আহান মৃদুলাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মৃদুলা জোরাজুরি করছিলো কিন্তু একজন পুরুষের কাছে একজন নারীর শক্তি নিতান্তই তুচ্ছ!! মৃদুলা ব্যার্থ হলো! চুপটি করে শুয়ে রইলো আহানের পাশে.. ভাবতে লাগলো যদি আহানের মনে সে থাকতো? তাহলে হয়তো আজকে মনের না বলা কথা বলে দিতে পারতো…!