বর্ষণের সেই রাতে - Golpo Bazar

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১০ || লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

বর্ষণের সেই রাতে

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১০
সিজন ২
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

আকাশটা ধূসর রঙে ছেয়ে আছে। হালকা হালকা বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা বাতাস বইছে। চারপাশটা বেশিই স্তব্ধ হয়ে আছে। সবটা কেমন চুপচাপ। অনিমা অনেকটা মনমরা হয়ে জানালার সাথে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বাইরের প্রকৃতির সাথে ওর মনে অবস্থাও মিলে গেছে। এখন ও পুরোপুরি সুস্হ আছে। শরীরের ব্যাথাটাও সেড়ে গেছে, তারসাথে ক্ষতগুলোও শুকিয়ে গেছে। কিন্তু মনে নতুন ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আদ্রিয়ানের জন্যে মনের মধ্যে যেই ভরসার জায়গা খুঁজে পেয়েছিল সেটা আর নেই। ও বুঝে গেছে সব ছেলেই একরকম হয়। সবাই সুযোগ সন্ধানী হয়, এই ধারণাটা আবারও জেকে বসেছে ওর মনে। সেদিন আদ্রিয়ান অনিমার এতোটা কাছে আসাতে নিজেকে সামলাতে পারেনি ও। নিজের জ্ঞানে ছিলনা সেই মুহূর্তে। অনিমার চুলে নাক ঢুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে নিতে নিজের অজান্তেই অনিমার কাঁধে মুখ গুজে দিয়েছিল, আরো কাছে টেনে নিয়েছিল ওকে। আদ্রিয়ানের এমন আচমকা স্পর্শে কেঁপে উঠেছিল ও। এটার জন্যে মোটেও তৈরী ছিলনা। মেনে নিতে পারেনি আদ্রিয়ানের এরকম স্পর্শ। কিছুক্ষণ আগেও যেই লোকটার প্রতি মনে শ্রদ্ধা ছিল, এখন তার কাছেই অসুরক্ষিত আর অস্বস্তি লাগছে। কষ্টে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরেছিল সঙ্গে সঙ্গে। তাই ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল আদ্রিয়ানকে। অনিমার ধাক্কায় আদ্রিয়ানেরও হুস এসছিল। ও বুঝতে পারছিল যে কী করেছে। তাই অনিমাকে কিছু বলার আগেই অনিমা হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়েছিল আদ্রিয়ানকে। দৌড়ে ঐ রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে পাশের রুমে দরজাটা আটকে দেয়াল ঘেষে বসে প্রচন্ড কেঁদেছিল ও। এতোটা অসহায় কেন ও?

ওর কেন নিজের কোন জায়গা নেই? যেখানে ও নির্ভয়ে কোন সংকোচ ছাড়াই স্বাধীনভাবে থাকতে পারে। ওর জীবনটা এমন কেন? সেদিন থেকেই অনিমার রুমটা আলাদা। আদ্রিয়ান ও খুব একটা ওর সামনে আসেনি এই দুদিন। ওর ঔষধ, খাবার আরো প্রয়োজনীয় সবকিছু সার্ভেন্টই দিয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের ওপরই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ও। মুখোশ গুলো হয়ত এমনই হয়। খুব দ্রুতই খসে পরে যায় মুখ থেকে। আদ্রিয়ানকে নিয়ে সবসময় খুব ভয়ে থাকে ও। কিন্তু ওরতো কিছুই করার নেই। বাধ্য হয়ে এখানেই থাকতে হচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে কারো কাশির আওয়াজে চমকে তাকাল অনিমা। তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা ভীত দৃষ্টিতে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান একটু এগিয়ে আসতেই অনেকটা গুটিয়ে বসল অনিমা। সাথেসাথে আদ্রিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে অনিমার কাঁধে হাত রাখতেই অনিমা একপ্রকার ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে দ্রুত উঠে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়াল। শরীর মৃদু কাঁপছে ওর। আদ্রিয়ানের এবার মেজাজটা খারাপ হল। কতক্ষণ সহ্য হয় এসব? ও রেগে পাশে রাখা ফ্লাওয়ার ভাসটা প্রচন্ত জোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারল। আচমকা এমন ঘটনায় ভয়ে দুকানে হাত দিয়ে একপ্রকার লাফিয়ে উঠল অনিমা। চোখ খিচে বন্ধ করে দুকানে হাত রেখে দেয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হনহনে পায়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। অনিমা দেয়াল ঘেষে ওখানেই বসে পরল। কান্নাও আসছে না এইমুহূর্তে। কিন্তু বুকের মধ্যে ভীষণ ভার হয়ে আছে, কাঁদতে ইচ্ছে করছে, ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

সোফায় বসে ওর নেক্সট গানটার লিরিক্স দেখে নিচ্ছে আদ্রিয়ান। কিন্তু মন বসাতে পারছেনা ঠিকভাবে। মন মেজাজ খুব ভীষণ খারাপ হয়ে আছে ওর। এই দুদিন যাবত অনিমা প্রচন্ডরকমভাবে ইগনোর করেছে ওকে। ওকে দেখলেই ভয় পেয়ে যায়, নিজেকে গুটিয়ে নেয়।যেটা এই মুহূর্তে প্রচন্ড বিরক্তি লাগছে ওর। কী ভাবে কী মেয়েটা? সবকিছুর তো একটা সীমা থাকে। ওকে দেখে কী রেপিস্ট মনে হয়? ও এরকম বাজে কোন ইচ্ছে থাকলে মেয়েটা এখনও সুরক্ষিত থাকত? কিন্তু ওকে দেখলেই অনিমা এখন বিহেভ করে জেন একটা হিংস্র জন্তুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কী করেছে কী ও? কিছুক্ষণ আগে ওর মামার সাথে কথা হয়েছে ওর। মামার কথা ভাবতেই হঠাৎ করে রিকের কথা মনে পরল। অনেকদিন হল কথা হয়না। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে রিকের নাম্বরে ডায়াল করল। বেশ অনেকক্ষণ বাজার পর ফোন রিসিভ করল রিক। আসলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল ও । স্নিগ্ধার সাথে কথা হয়েছিল। স্নিগ্ধাও একই কথা বলেছে যে অনিমা ওর সাথে কথা বলতে চাইছেনা। ওও আর ফোর্স করেনি যা কথা বলার ওর সাথে বাড়িতে ফিরেই বলবে। জানতে চাইবে এরকম বাচ্চামোর কারণটা কী? কী করেছেটা কী ও? এখন ওর মনে হচ্ছে ওর বাবা আর মামা ঠিকই বলে। অনেক বেশি ছাড় দিয়ে ফেলছে মেয়েটাকে, সেইজন্যেই সাপের পাঁচপা দেখেছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ফোন বাজার আওয়াজ পেয়ে ভেতরে চলে এল ও। ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে আদ্রিয়ানের নামটা দেখে একটু হাসল এরপর রিসিভ করে বলল,

” আরিব্বাস! রকস্টার বাবুর হঠাৎ আমাকে মনে পরার কারণ?”
আদ্রিয়ান বলল,
” ডক্টর সাহেব তো আমাকে রোজ মনে করে। রাইট?”
” আচ্ছা মানলাম। কেমন আছিস সেটা বল?”
” চলে যাচ্ছে। আসবি কবে?”
” নেক্সট মান্থেই আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন একটু আটকে গেছি আরও কয়েকটা দিন থাকা লাগবে।”
” তোর নীলপরীর কী খবর?”
” ওই ওটা আমার নীলপরী।”
” আরে ভাই তোরই বলেছি।”
রিক মুখ খানিকটা ছোট করে বলল,
” কথা হয়না এক সপ্তাহ যাবত।”
আদ্রিয়ান চরমভাবে অবাক হয়ে বলল,
” বাপড়ে! তুই এখনও বেঁচে আছিস?”
রিক বিরক্ত হয়ে বলল,
” মজা নিসনা তো! ভালোলাগছে না।”
আদ্রিয়ান খানিকটা হাসল। কিছুক্ষণ হাসার পর বলল,
” সত্যি ভাই, তোর মত রুড টাইপ মানুষও যে কারও প্রেমে এতটা পাগল হতে পারে বিশ্বাস হচ্ছেনা। মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছে তো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। একটা ছবিও তো দিতে পারিস।”
” উমহুম, রিস্ক নিতে পারবোনা ভাই। যদি প্রেমে পরে যাস? তোর সাথে অন্তত ফাইট করার শখ নেই আমার। তাও আবার নীলপরীকে নিয়ে। তোকে তো টেনেও ঐ বাড়ি নিতে পারবোনা হয়ত। তাই আমাদের বিয়ের সময় দেখে নিস।”
” আচ্ছা আগে আয়।”
” খালা, খালু, জাবিন কেমন আছে?”
” হ্যাঁ সবাই ভালো আছে।”
” আচ্ছা রাখছি তাহলে। পরে কথা হবে।”
” হুম রাখছি।”
রিক ফোনটা রেখে লম্বা শ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল রিক। এখানে থাকতে আর ভালোলাগছে না ওর। একটুও ভালোলাগছে না। দেশে গিয়েই হসপিটাল জয়েন করবে। আর তারপরেই তো অনিমার সাথে ওর বিয়ে হবে। দিনগুলো কাটছেনা কেন? প্রতিটা সেকেন্ড যেন ও টেনে টেনে পার করাচ্ছে।

আজ গানের রেকর্ডিং শেষ করতে বেশ রাত হয়ে গেছে। আদিব আর আশিসকে বিদায় দিয়ে আদ্রিয়ান আর অভ্র এখন আদ্রিয়ানের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। অভ্র ফ্রন্ট সিটে বসে আছে, ড্রাইভার ড্রাইভ করছে। আদ্রিয়ান পেছনের সিটে বসে ফোন স্ক্রোল করছে। আকাশ হালকা হালকা গুরুম গুরুম শব্দ হচ্ছে। আজ রাতে যে আবার জোরে বৃষ্টি হবে বোঝাই যাচ্ছে। অভ্র পেছন ঘুরে একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” স্যার ম্যাম কেমন আছে?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
” কোন ম্যাম?”
রিক বেশ অবাক হল। কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
” অনিমা ম্যাম?”
” আমি তোমার ম্যামের বডিগার্ড নই অভ্র। যে সারাদিন সে কেমন আছে সেটার খেয়াল রাখব। আমার যেটুকু ডিউটি ছিল করেছি, এবার ভালো থাকার দায়িত্ব তার। এতদিন অসুস্থ ছিল তাই সাথে থাকতে হয়েছে। এখন তো আর তা নয়?”
অভ্র অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের সেসবে কোন মাথাব্যথা নেই, ও ওর মতো আছে। অনেকটা সময় ইতস্তত করে অভ্র বলল,
” স্যার অাপনার কী ম্যামের ঝগড়া হয়েছে।”
আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
” তোমার ম্যাম কী আমার বউ লাগে না গার্লফ্রেন্ড লাগে যে ঝগড়া হবে?”
আদ্রিয়ানের ধমক খেয়ে অভ্র একদম ভদ্র ছেলের মত শান্ত হয়ে বসে রইল। আদ্রিয়ানও আর কিছুই বলল না। অভ্রর বাড়ির সামনে অভ্র নেমে গেল। আর তার আধ ঘন্টা পর আদ্রিয়ান ওর বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকে সবার আগে নিজের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিল ও। বাইরে থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। মাথাটাও হালকা ধরেছে। ডিনার করার কোন ইচ্ছা নেই। এইমুহূর্তে একটু কফি হলে ভালো হতো। হঠাৎ করেই অনিমার কথা মনে পরল। কী করছে এখন? খেয়েছে? যা খুশি করুক ওর তাতে কী? এসব ভেবে কিচেনের দিকে নিজেই গেল কফি বানাতে। এইমুহূর্তে সার্ভেন্টদের বিরক্ত করার ইচ্ছা নেই ওর।
অনিমা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু শীত শীত করছে বাইরের ঠান্ডা হাওয়ায়। তাই ঘুমের ঘোরেই কুকঁড়ে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই শরীরে উষ্ণতা অনুভব করতেই হুট করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান ওর দিকে ঝুকে আছে। এমনিতেই হঠাৎ ঘুম ভেঙেছে, আর আদ্রিয়ানকে নিয়ে ওর মনে এমনিতেই ভয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই দ্বিতীয়বারের মত আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দিল ও। যাতে আদ্রিয়ান একটু দূরে সরে গেল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমার এবার প্রচন্ড রাগ হল। ভেতরের সব চাপা কষ্ট রাগ হয়ে বেড়িয়ে এলো। ও হাফানো কন্ঠে বলল,

” দেখুন, এটা ঠিক যে আমি আপনার আশ্রয়ে আছি। তাই বলে আপনি আমার সাথে এরকম করতে পারেন না। একটা মেয়ে অসহায় হয়ে আপনার কাছে আছে বলে আপনি এভাবে সুযোগ নেবেন? আপনি হুটহাট আমাকে এভাবে টাচ করবেন না।”
আদ্রিয়ান সব ধৈর্যের সীমা এবার পেরিয়ে গেল। এতদিন অসুস্থ ছিল তাই সহ্য করেছে কিন্তু এখন আর সহ্য করা যাচ্ছেনা। ও অনিমার হাত চেপে ধরে টেনে নামালো বিছানা থেকে। এক টানে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তোমার সুযোগ নেওয়ার বা তোমাকে টাচ করার ইচ্ছা যদি আমার থাকত তাহলে সেটা করতে আমাকে তোমার ঘুমের বা নিজে থেকে কাছে আসার সুযোগ নিতে হতোনা। আমি চাইলে তোমার সাথে তোমার পূর্ণ সজ্ঞানে যা ইচ্ছা করতে পারি। এন্ড আই সোয়ার তুমি আটকানো তো দূর নড়তেও পারবেনা।”
অনিমা মাথা নিচু করে আছে। ঠোঁট ভেঙ্গে আসছে ওর। যেকোন মুহূর্তে কান্না করে দেবে। আদ্রিয়ান অনিমাকে আরেকটু কাছে টেনে বলল,
” আর আসবো না তো কী করব বলো? বাড়িতে একটা পরপুরুষ থাকার পরেও এভাবে দরজা খুলে রেখে, পোশাক এলোমেলো করে ঘুমিয়ে ছিলে। কেন? নিশ্চয়ই আমাকে এট্রাক্ট করার জন্যে? তুমি চাইছিলে আমি তোমার কাছে আসি, রাইট? আর সেদিন নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে। কারণ নিশ্চয়ই তুমি চাইছিলে আমি তোমার সাথে কিছু একটা করি। তাহলে এখন আমার দোষ কেন দিচ্ছ? একটা ছেলেকে তুমি যদি নানাভাবে সিডিউস করা চেষ্টা করতে থাকো সেতো তোমার কাছে আসবেই।”
অনিমা এবার অবাক দৃষ্টিতে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। চোখ দিয়ে জমে থাকা অশ্রুগুলো গড়িয়ে পরল। ওর ঠোঁট দুটোও ভীষণ কাঁপছে। লোকটা এত জঘন্য কেন? এরকম নোংরা কথা কেন বলছে ওকে? অনিমাকে কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলল,
” এই একদম চুপ! সত্যি কথা শুনতে খারাপ লাগছে তাইনা? আচ্ছা এবার বলোতো ঐ জায়গায় কেউ তোমাকে নিয়ে গিয়েছিল নাকি নিজের ইচ্ছাতেই ছিলে? হুম?”

অনিমা এবার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। এর আগে কখনও কেউ ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলেনি। কিন্তু এই লোকটা কতটা চেনে ওকে? যে এভাবে বলছে? ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ভাঙা গলায় বলল,
” আপনি খুব খারাপ একটা লোক, বাজে একটা লোক। থাকতে দিচ্ছেন বলে যা খুশি বলবেন? থাকবো না আমি আপনার এই বাড়িতে। চলে যাবো আমি।”
আদ্রিয়ানের মেজাজ এতে আরো বেশি খারাপ হল। রাগে এবার সারা গা কাঁপছে ওর। ও রাগে গজগজ করে বলল,
” আচ্ছা! চলে যাবে? ভালোতো, আমি শুধুশুধু এসব উট্কো বোঝা নিজের ঘাড়ে কেন নিতে যাবো? শুভ কাজে দেরী কেন? চলো এক্ষুনি বেড় হও।”
অনিমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। এই রাতেরবেলা চলে যেতে বলছে ওকে? আদ্রিয়ান জোরে বলল,
” কী হল যাও?”
অনিমা মাথা নিচু করে বলল,
” কাল সকাল অবধি..”
ও কথাটা শেষ করার আগেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,
” নো, আমি আর এক মুহূর্তও এই বাড়িতে এলাও করব না তোমাকে।”
অনিমা শুধু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। ও কী করবে বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান বলল,
” আচ্ছা চল আমি সাহায্য করছি।”
বলে অনিমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করল। অনিমা অবাক আর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমাকে মেইন ডোরের সামনে এনে দরজা খুলে গিয়ে বলল,
” বেড় হও!”

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৯

অনিমা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। মানুষটা কী এতটাই নির্দয়? কই এতোদিন তো ওর এরকম মনে হয়নি? চেঁচামেচিতে সার্ভেন্টরাও উঠে গেছে। সবাই আড়াল থেকে দেখছে। অনিমার জন্যে মায়াও হচ্ছে ওদের। এতোদিনে মায়া পরে গেছে মেয়েটার ওপর। কিন্তু আদ্রিয়ানকে তো কিছু বলতেও পারবেনা। আদ্রিয়ান রাগী গলায় বলল,
” আই সেইড গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ।”
অনিমা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান এবার ঘর কাঁপানো আওয়াজ করে বলল,
” আউট!”

অনিমা কেঁপে উঠল। ভয়ে গুটিগুটি পায়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ান সাথেসাথেই সোজা অনিমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল। অনিমা অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রইল ওখানে। বাইরে পরিবেশ, আকাশের অবস্থা বলছে রাতে জোরে বৃষ্টি নামবে, ঝড়ও হতে পারে। কোথায় যাবে এখন ও? কার কাছে যাবে?

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.