বর্ষণের সেই রাতে - Golpo Bazar

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১৫ || লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

বর্ষণের সেই রাতে

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১৫
সিজন ২
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

শুক্রবারের দিন। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পরছে। পুরো পরিবেশটাই সিগ্ধ। বর্ষণ জিনিসটাই এরকম। যখনই আসে নিজের সাথে সিগ্ধতা নিয়েই আসে। অনিমা আজ নিজেই রান্না করছে। আদ্রিয়ান বারণ করেছে কিন্তু অনিমা শোনেনি। ওর ভালোই লাগে মাঝেমধ্যে একটু রান্নাবান্না করতে। অনেক রান্না তাই সার্ভেন্টরাও ওকে হেল্প করছে। আজ দুপুরে ওদের বাড়িতে আদিব, আশিসকে ডেকেছে। আদ্রিয়ান এই বাড়িতে একা থাকে। তাই যেকোন ছুটির দিনেই আদিব আর আশিসকে ডেকে নেয়। অভ্র সকাল বেলাতেই এসে পরেছে। সোফায় বসে আদ্রিয়ানের সাথে কাজের অকাজের মিলিয়েই কথা বলছে। ওদের কথার মধ্যে হঠাৎ কলিং বেল বাজল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দরজার দিকে তাকাল। আদিব, আশিসের তো আরও দেরীতে আসার কথা। এতো তাড়াতাড়ি কেন? অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি দেখছি স্যার”

অভ্রকে যেতে দেখে সার্ভেন্টের মধ্যে কেউ আর গেলোনা। অভ্র দরজাটা খুলে সামনে তাকাতেই কিছুক্ষণের জন্যে থমকে গেল। গোলাপি কুর্তি, কালো জিন্স, গলায় স্কার্ফ জড়ানো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সা গায়ের রং, মাঝারী আকারের চোখ, বাদামি রঙের লেন্স। একদম আদ্রিয়ানের মত। একদম বাচ্চা বাচ্চা দেখতে। ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বলল,
” দরজার সামনে এভাবে হা তাকিয়ে আছেন কেন? ঢুকতে দিন!”
মেয়েটার কথায় হুস এল অভ্রর। অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,
” জি?”
” কী? ভেতরে যেতে দিন?”
” আপনি কে?”
” আমি কে সেটা আপনাকে কেন বলব? সরুন।”
বলে অভ্রকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেল মেয়েটি। অভ্র দ্রুত এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে ফেলে বলল,
” এক্সকিউস মি ম্যাম। আগেতো বলবেন আপনি কে? এভাবে কীকরে ভেতরে যাচ্ছেন?”
মেয়েটা ঝাড়া মেরে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল,
” এই? আপনি কে হ্যাঁ? আপনাকে কেন বলব? হুহ।”

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন 

বলে হনহনে পায়ে ভেতরে চলে গেল। অভ্রও হতভম্ব হয়ে দু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে দৌড় দিল। মেয়েটা আদ্রিয়ান দেখে ‘ভাইয়া’ বলে ডাকতেই আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকাল। অবাক হওয়া অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে গেল ও। মেয়েটাকে ভাইয়া ডাকতে শুনে বেশ বড় একটা ঝটকা খেল অভ্র। এটা ওর বসের বোন? আর ও কীসব বলছিল। মেয়েটা দৌড়ে এসে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” কেমন আছিস?”
আদ্রিয়ানও হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আ’ম গুড। তুই কেমন আছিস?”
” খুব ভালো।”
অাদ্রিয়ানের আশেপাশে একবার তাকিয়ে বলল,
” হঠাৎ এখানে চলে এলি? বাবা মা এসছে?”
মেয়েটা আদ্রিয়ানকে ছেড়ে বলল,
” উহু লম্বা ভ্যাকেশন আছে তাই আমি একাই এসছি। এই ঐ উজবুক টা কে রে? জানিস কী ঠ্যাটা? আমাকে ভেতরে ঢুকতেই দিচ্ছিল না।’
অভ্র বোকার মত তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান জাবিনের মাথায় চাটা মেরে লল,
” তোর অনেক বড় ও। সম্মান দিয়ে কথা বলবি।”
মেয়েটা মাথা ঘষতে ঘষতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেংচি দিল। অভ্র গলা ঝাড়ল। অনিমা মূখ মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে আসতে বলল,
” শুনছেন? রান্না হয়ে গেছে, ভাইয়ারা..”

এটুকু বলে দেখে একটা মেয়ে এসছে। মেয়েটাকে তো আগে কখনও দেখেনি। কে হয় আদ্রিয়ানের? এসব ভাবতে ভাবতে অনিমা এগিয়ে ড্রয়িংরুমে এল। মেয়েটার চোখ অনিমার ওপর পরতেই কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জোরে চেঁচিয়ে বলল,
” ভাইয়া? আম্মু ঠিক সন্দেহ করেছিল। তুই বিয়ে করে ফেলেছিল? আর আমাকে তো অন্তত বলবি? ধ্যাত!”
বলে ন্যাকাকান্না জুড়ে দিয়ে সোফায় বসে পরল। অনিমা সম্পূর্ণ বোকার মত তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে,
” চুপ কর ড্রামা কুইন। ও আমার বউ না। আর আমি বিয়েও করিনি।”
মেয়েটা মিথ্যে চোখ মোছার ভান করে বলল,
” মিথ্যে বলছিস তুই। আমি এখুনি আম্মুকে ফোন করে বলে দেব।”
বলে ফোনটা বেড় করতে নিলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে নিলো। ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
” চুপচাপ বস মেরি মা। সব বলব। একটু ধৈর্য ধর। আপাতত বাবা-মার সামনে হাটে হাড়ি ভাঙিস না।”
মেয়েটা মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” অনি ও আমার বোন জাবিন। আর জাবিন, ও অনিমা। আমার এখানেই থাকে। ও কিন্তু তোর দুই ক্লাস সিনিওর।”
জাবিন এতক্ষণ দুষ্টুমি করলেও এবার গিয়ে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” কেমন আছো আপু?”
অনিমা মুচকি হেসে বলল,
” হ্যাঁ ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?”
জাবিন মাথা নেড়ে আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বলল,
” ভাইয়া এবার ঠিক করে বলতো। এই রাজকুমারীকে কোন রাজ্য থেকে চুরি করে আনলি?”
আদ্রিয়ান জাবিনের নাক টেনে দিয়ে বলল,
” আমি চুরি করে আনিনা। জিতে নিয়ে আসি।”
” ওহ! তারমানে স্বয়ম্বরে বিজিতা কন্যা?”
আদ্রিয়ান আড়চোখে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” সেটা কীকরে বলি বল। স্বয়ম্বরা তো এখনও বরমালা পরালোই না। ”

জাফিন দুষ্টু চোখে একবার অনিমার দিকে তাকাল। অনিমার এবার বেশ লজ্জা লাগছে। বিশেষ করে আদ্রিয়ানের শেষ কথাটা শোনার পর। তাই দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেল। অভ্রতো এখনও জাবিনকেই দেখছে। কত ছটফটে মেয়েটা। আদ্রিয়ান জাবিনকে সবটাই বলল অনিমা সম্পর্কে আর আপাতত ওর বাড়িতেও জানাতে বারণ করল। এরমধ্যে আদিব আর আশিসও চলে এল। সকলে মিলে আড্ডা আর হাসি মজাতেই দিনটা পার হল। অনিমারও ভালোই লাগছে আজ। এতোদিন একা একটা মেয়ে থাকত বাড়িতে। জাবিন চলে আসায় ওরও একটা সঙ্গী হল।

রিক ফ্লোরে বসে ড্রিংক করছে আর রাগে ফুসছে। সময় যত যাচ্ছে ওর রাগ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনিমা পালিয়ে গেছে তাও অন্যকারো সাথে এটা শোনার পর ঘরের দরজা বন্ধ করেছে এখনও খোলেনি। অনেক ডাকাডাকি করেও কেউ খোলাতে পারেনি। ঘর পুরো লন্ডভন্ড হয়ে আছে। মোটামুটি সব জিনিস ভাঙা শেষ। যদিও দেয়ালে টানানো অনিমার ছবিটা এখনও অক্ষত আছে। কিন্তু অনিমার ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওর। এতটাই রাগ যেটা এর আগে কোনদিনও হয়নি ও। এতটা সাহস কীকরে হয় যে কারো হাত ধরে পালিয়ে যায়? আজ নেশাটাও চরছে না। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। অনিমার ছবিটা দেখলেই ওর শরীরের রগ ফুলে উঠছে।

সিগ্ধা রিকের ডুপলিকেট চাবি নিয়ে এসছে। আজ ভেতরে যেতেই হবে। কারণ এতক্ষণ না খেয়ে থাকলে রিক অসুস্থ হয়ে পরবে। রিক যতই রেগে থাকুক না কেন, যেকোন পরিস্থিতিতে রিকের সামনে দুজন মানুষই নিরাপদ। একজন অনিমা, আরেকজন হল স্নিগ্ধা। অনিমাকে দেখলে রিক এমনিই শান্ত হয়ে যায়, আবার ওর সর্বোচ্চ রাগের কারণ কোন না কোনভাবে অনিমাই হয়। আর স্নিগ্ধার রিককে শান্ত করার ক্ষমতা আছে। স্নিগ্ধা দরজাটা খুলল। রিক দরজা খোলার আওয়াজ পেয়েও কিছু বলল না কারণ ওভাবেই বসে রইল। স্নিগ্ধা গিয়ে রিকের পাশে বসে ট্রে টা রেখে বলল,
” কাল থেকে কিছুই খাওনি। খেয়ে নাও।”
” ইচ্ছে নেই।”
রিকের শক্ত কন্ঠে কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ রইল স্নিগ্ধা। এরপর বলল,
” তুমি না খেয়ে থাকলে অনি চলে আসবে?”
রিক বিরক্তি নিয়ে বলল,
” ভালো লাগছে না। যা এখান থেকে।”
” তুমি চাওনা ও ফিরে আসুক।”
রিক চোখ লাল করে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল,
” আসতে ও বাদ্ধ। আমিও দেখি ও অন্যকোথাও কীকরে থাকে।”
স্নিগ্ধা একটু হেসে বলল,

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১৪

” সেটা ঘরে বসে নিশ্চয়ই হবেনা। আর না খেলে দুদিন পর এমনিই দাঁড়াতে পারবেনা। একজন ডক্টরকে যদি এসব বোঝাতে হয় তাহলে?”
রিক কিছু একটা ভেবে ট্রে টা নিয়ে খেতে শুরু করে দিল। স্নিগ্ধা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। ইচ্ছে থাকলেও ও বলতে পারছেনা অনিমার সাথে ঠিক কী হয়েছে। ওরাতো মেয়েটার ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলল। কিন্তু তুমিও কী অনিমাকে চেনোনা রিক দা? মেয়েট কী করতে পারে সেটা বোঝনা? মেনে নিলে সবটা? এখন ওর সাথে কী হচ্ছে, কোথায় আছে সেটাও তো জানিনা। আদোও বেঁচে আছে কী না সেটাও বলা মুসকিল। আনমনেই স্নিগ্ধা বলে উঠল,
” ওকে পেলে আর এ বাড়িতে রেখোনা রিকদা। দূরে কোথাও নিয়ে যেও।”
রিক অবাক হয়ে বলল,
” কেন এই বাড়িতে কী হয়?”
স্নিগ্ধার হুস এল যে ও কী করছে। তাই নিজেকে সামলে চোখ মুছে উঠে চলে গেল রুম থেকে। রিক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে।

বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.