বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১ - Golpo Bazar

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১ || ইশরাত জাহান ফারিয়া

বৃষ্টি নামার পরে

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১
ইশরাত জাহান ফারিয়া

“অনেক কাহিনী করে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর বাসরঘর নামক সাজসজ্জা হীন একটা ঘরে
বসে আছে গুঞ্জন।দীর্ঘক্ষণ সোফায় বসে থাকার পর একসময় বিরক্ত হয়ে উঠলো সে।সারা ঘরময় পায়চারি
করতে করতে ভাবছে কি করা যায়?যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সেই অতিব সুন্দর মানবের কাছে তো আর
নিজেকে ছোট করা যায় না।তাই গুঞ্জন মনে মনে ঠিক করে ফেললো যে,মৃন্ময় ঘরে আসলেই যা করার করে
নিতে হবে ওর।”

“কিছুক্ষণ পর নিজের ঘরে এলো মৃন্ময়।দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।মৃন্ময়ের এটা ভাবতেই রাগ হচ্ছে
যে,ওর ঘরে ওর জন্য কেউ অপেক্ষা করছে।সেটাও নাকি আবার ওর বউ,এটা নাকি বাসরঘর। দরজা
লাগিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।এদিকে গুঞ্জন সোফার উপর দু’পা তুলে বসে আছে।শাড়ি
ছেড়ে সাধারণ সালোয়ার-কামিজ পড়ে নিশ্চিন্ত মনে বসে আছে।মৃন্ময়কে দেখেও না দেখার ভান করলো।
মিনিট দশেক পরে রুমে প্রবেশ করা মাত্রই নিজের সব জামা কাপড় ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললো।
এদিকে গুঞ্জন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।যেখানে ও ভেবেছিলো এ লোকটার অন্য ব্যবস্থা করবে সেখানে
নিজেই ভড়কে গেলো।মৃন্ময় ননস্টপ কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো।গুঞ্জন রেগে গিয়ে বললো, এসব কি
করছেন?”

“মৃন্ময় রক্তচক্ষু নিয়ে বললো,আমার যা ইচ্ছা তাই করবো।তুমি বলার কে?আম্মুর চামচা কোথাকার!তোমার
সাহস হলো কি করে আমাকে বিয়ে করার?”

“গুঞ্জন এবার ভয় পেয়ে গেলো।”

“মৃন্ময় ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,খুব শখ না আমাকে বিয়ে করে আমার টাকা-পয়সা
হাতানোর?তোমার মতো এমন আলাভোলা মেয়ে যে এমন কিছু করতে পারে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।”

“গুঞ্জন ভয়ে কান্না করে দিলো।ও নিজেই যেখানে বিয়েটা মানতে পারছে না সেখানে মৃন্ময় বলছে কিনা ও
মৃন্ময়কে টাকার জন্য বিয়ে করেছে?এর কি উত্তর দেবে গুঞ্জন?যত যাই-ই হোক আত্মসম্মানবোধ প্রবল
ওর।সেজন্যই তো বিয়ে করতে চাইছিলো না মৃন্ময়কে।কিন্তু মৃন্ময়ের দাদীমার কথা রাখার জন্য নিজের চাচাতো
বোনের ছোট মেয়ে গুঞ্জনের সাথে ওর বিয়ে দিয়েছেন মৃন্ময়ের মা।গুঞ্জন কিছুতেই মৃন্ময়কে বিয়ে করতে রাজি
ছিলো না।ওর পরিবারের সবাই একপ্রকার ওকে জোর করে,শেষপর্যন্ত থাপ্পড় মেরে কবুল বলিয়েছে।আর এখন
মৃন্ময়ের এসব কার্যকলাপে অবাক হচ্ছে গুঞ্জন।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“পরক্ষণেই ওর মাথা গরম হয়ে গেলো।ধাক্কা দিয়ে মৃন্ময়কে সরিয়ে দিয়ে বললো,ঢং কম করেন।এসব নাটক
দেখালেই কি আপনি ভেবেছেন আমি গলে যাবো?আপনার মতো রূপবান পুরুষের প্রেমে হাবুডুবু
খাবো?আপনার এসব ছাতার মাথা টাকার জন্য এই গুঞ্জন কখনো আপনাকে বিয়ে করেনি।এসব সস্তা
ন্যাকামুগুলো আপনার প্রেমিকা রুহিকে দেখাবেন, আমাকে নয়।অহংকারী লোক একটা।অলওয়েজ আমার
থেকে দূরে থাকুন।”

“মৃন্ময় ধাক্কা খেয়ে বেক্কল বনে গেলো।রাগে ফর্সা মুখটা থমথমে অবস্থা ধারণ করেছে। এই দুদিনের পুচকি বলে
কিনা মৃন্ময় ন্যাকামি করছে?অহংকারী?আবার বলে কিনা টাকার জন্য বিয়ে করেনি?এইভাবে? এইভাবে
গুঞ্জন মৃন্ময় চৌধুরীকে অপমান করলো?ভাবতে পারছে না সে।”

“রেগে গিয়ে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো গুঞ্জনের গালে।”

“গুঞ্জন যেন ব্যাপারটার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিলো। জানতোই যে মৃন্ময়ের রাগ অনেক। ওর কথা শুনে থাপ্পড়
দেবেই।তাই মৃন্ময়ের দেওয়া থাপ্পড় হজম করে নিজেকে সামলে নিয়ে মৃন্ময়ের পায়ে একটা লাথি মেরে দিলো।”
“পুরো মেঝেতে মৃন্ময়ের অগোছালো জামাকাপড় গুলো ছড়িয়ে আছে।সেগুলোতে পা পিছলে মৃন্ময় একেবারে
আলমিরার দরজার উপর পড়লো।তাতে মাথার একপাশ কেটে রক্ত পড়ছে একটু একটু।গুঞ্জন এগুলোকে
আবার পুনরায় ভাঁজ করে শান্তশিষ্ট ভাবে আলমিরাতে রেখে দিলো। অতঃপর সোফায় পা তুলে বসে চুটকি
বাজিয়ে মৃন্ময়কে বললো,ভুলেও আমার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করবেন না।আজ তো একটু কেটেছে, আবার
চেষ্টা করলে পুরো মাথাই কেটে যাবে।সো..আমাকে অবলা ভেবে মারতে আসবেন না।”

“মৃন্ময় আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। লম্বায় বেশ,ফর্সাও প্রচুর, পড়নের পাঞ্জাবিটা খুব সুন্দর। কিন্তু এ মুহূর্তে
এসবকিছু গুঞ্জনের কাছে বিষের মতো লাগছে।কিছু বলতে যাবার আগেই মৃন্ময় ওকে সোফা থেকে টেনে তুলে
বললো, তুমি আসলেই একটা চরিত্রহীনা মেয়ে।তোমার টাকাপয়সার প্রতি লোভ খুব বেশি,তাই না?বলো,কত
টাকা পেলে তুমি আমায় ছেড়ে দেবে?”

আরও পড়ুন : গুন্ডি মেয়ের ভালোবাসা

“গুঞ্জন রেগে উঠলেও নিজেকে সামলালো।বললো, ওকে।আপনাকে ছাড়তে হবে তাই তো?”
“মৃন্ময় রেগে বললো,অফকোর্স।দ্যান আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।”
“গুঞ্জন বললো, আহ!থামুন মিয়া।এসব গার্লফ্রেন্ডের কাহিনী রাখুন।আমি তো আপনাকে এমনিই ছেড়ে
দিতাম।ইভেন দেবোও।যে ছেলে এতটা খারাপ তার সাথে বিয়ে দিয়ে আমার ফ্যামিলি আমার জীবনটা নষ্ট
করতে চাইছে!কিন্তু আমি তা হতে দেবো না।আমি নিজেই কাল চলে যাবো। বুঝলেন?আর আপনার মতো
ছাগলকে যে কোন মাইয়া পছন্দ করলো কে জানে।সেও নিশ্চয়ই আপনার মতো বাঁদর টাইপ শাকচুন্নী মহিলা
হবে। দেখতে কি বিচ্ছিরি আপনি, ছিহ।বলেই নাক সিঁটকালো গুঞ্জন।”
“মৃন্ময় রেগে বললো, কি বললে তুমি?”

-“যা সত্য তাই বললাম।”

”আর ঠিক এমন সময় দরজায় কে যেন নক করলো।মৃন্ময় রেগে বিরক্ত হয়ে বলল,খুলছি!ওয়েট।”
“ওপাশ থেকে এই মৃন্ময়ের দাদীমা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, খুলতে হবে না। নাতির বাসর ঘরে যা হয়েছে তা
কাল তোমার বউয়ের কাছ থেকেই শুনবো।খুব তাড়াতাড়ি যাতে সুখবর পাই।আমি আসি।”
“গুঞ্জন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, খুব তাড়াতাড়ি সুখবর শুনতে চেয়েছে আপনার দাদীমা।যান আপনার
গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসুন।
বলেই হাসতে লাগলো।”
মৃন্ময় রাগে চোখমুখ লাল করে ফেললো। গুঞ্জনের দিকে একবার তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো, তুমি কিন্তু
বাড়াবাড়ি করছো।

-মোটেও না।

-তাহলে আমাকে এসব উল্টো পাল্টা কথা বলছো কেন?
-আমি কই বললাম?আপনার দা…দীই তো…
-চুপ একদম। তাই জন্য তুমি হাসবে?
-অবশ্যই হাসবো।আজ বিয়ে হলো আর তাড়াতাড়ি বাচ্চাকাচ্চাদের কথা বললে কে না হাসবে?আর আপনার
দাদীমা তো এসব জানেও না যে তার নাতি একটা নষ্ট, লুচ্চা মানুষ। যে বউ থাকতেও রীতিমতো গার্লফ্রেন্ড এর
জন্য হাসফাস করছে।

“মৃন্ময় বোধহয় এবার সত্যিই রেগে গেলো।গুঞ্জনকে সোফার সাথে চেপে ধরে ঠাস করে ঠোঁটে চুমু দিয়ে
বসলো।আর এদিকে গুঞ্জন ফ্রিজড হয়ে বসে ভাবছে এই লুনুষটা এটা কি করলো।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে
এসে মৃন্ময়ের গলায় এক কামড় বসিয়ে দিলো।একটা চিৎকার করে মৃন্ময় গুঞ্জনের হাত চেপে ধরলো।তারপর
যা করল সেটা গুঞ্জন ভাবতেও পারেনি।ওর চোখে পানি এসে গেলো!”

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.