বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১৭- Golpo Bazar

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১৭ || ভালবাসার কষ্টের গল্প

বৃষ্টি নামার পরে

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১৭
লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া

“গুঞ্জন তুমি আবারও এসব আবোলতাবোল বকছো?তোমার এসব শুনলে কবিরা কচু গাছের সাথে ফাঁসি লাগবে,বুঝলে?”
“দেখুন, মেজাজ খারাপ করাবেননা।যত্তসব!”
“মৃন্ময় চোখ টিপে বললো, তাহলে এখান আমি শুরু করি কবিতা!শুনো..!
” গুঞ্জন মুখ বাঁকা করে হাই তুলতে তুলতে বললো,আমার প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে।আমি ঘুমাতে গেলাম,স্যরি!”
“বলে উঠে চলে গেলো। ঠাস করে চাদর নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।আর মৃন্ময় রাগে কাঁপতে লাগলো। কি ধোঁকাটাই না দিলো,মনের ঝালটা
ঝেড়ে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।বেয়াদব মেয়ে!”

“মৃন্ময় কিছুক্ষণ বিছানায় বসে রইলো।যখন দেখলো গুঞ্জন ঘুমে কাদা হয়ে গিয়েছে,তখনই ও উঠে গুঞ্জনের কাছে গেলো। এলোমেলো
চুলগুলোতে বিনুনি বাঁধার চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না।নয়বার চেষ্টা করার পরেও যখন পারলো না তখন রাগে বিরক্তিতে ওর মুখ লাল হয়ে
গেলো।চুলগুলো দুইভাগ করে একটার সাথে আরেক পাশ প্যাঁচিয়ে বেঁধে নিলো,এবার অন্তত কিছুটা হয়েছে ভেবে উঠতে নিলো ঠিক তখনই
মৃন্ময়ের ফোনে সিফাতের কল আসলো।”

“মৃন্ময় একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে বললো, এত রাতে কি?”
“সিফাত গলার স্বর নিচু করে বললো,দোস্ত তুই ঘুমাচ্ছিস?”
-“না, এত রাতে বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরাঘুরি করি!”
-“আমাকেও একটু সুযোগ করে দেস না!”
-“মানে?”
-“ও এখন তো বুঝবাইনা দোস্ত,নিজে তো বিয়ে,বাসর কইরা বইসা আছো!আর আমার মতো সিঙ্গেল পোলার জন্য একটা গফ খুঁইজা দিতে
পারস না?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“মৃন্ময় রেগে বললো,আমাকে কোনোদিন কোনো মেয়ের পিছনে ঘুরতে দেখছিস বেয়াদব?”
“সিফাত হু হা করে হেসে উঠলো। বললো, মাম্মা রুহি,রুহির পিছনে তুই ঘুরস নাই?”
“মৃন্ময় বিরক্ত হয়ে বললো,না ঘুরি নাই।ওই রুহি নিজে আমায় প্রপোজ করেছিলো, আমি না করে দেওয়াতে কান্নাকাটি করে একেবারে পায়ে
পর্যন্ত ধরেছিলো। পরে আমি জাস্ট বন্ধু হয়ে থেকেছি বাট রুহি বুঝলো আমি বুঝি ওর প্রপোজালে রাজি।তাই সবসময় বয়ফ্রেন্ড হিসেবে সবার
কাছে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতো,যাইহোক ও আমার বিয়ের পর নিজে থেকেই সরে গিয়েছে।আর তুই কোনোদিনভদেখছিস আমি ওর
পেছন পেছন ঘুরসি বা ওকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে তুই দেখছিস ডাফার?”

“সিফাত চুপসে গেলো।আসলেই মৃন্ময় কখনো এরকম কাজ করেনি।নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস থাকায় রুহির সাথেই তিন-চারদিন পরপর
ফোনে কথা হতো মৃন্ময়ের।তাও আবার দরকারি কথা থাকলে,এছাড়া বন্ধুমহলে আড্ডা দিবার সময় ওদের দেখা হতো।আর সিফাতের সাথে তো
ওদের একবছর ধরে প্রায় দেখাই হয় না।”
“মৃন্ময় ওপাশ থেকে সিফাতের উদ্দেশ্যে বললো,কি কথা বলিস না কেন?”
-“বাদ দে দোস্ত।তারপর বল!”
-“কি বলবো?আসলে তুই কি জানতে চাস?”

“সিফাত হেসে বললো,দোস্ত তোর ওই কাজিনের ফোন নাম্বার চাই!”
“মৃন্ময় বুঝতে পারলো সিফাত কার কথা বলছে!তাও শোনার জন্য রেগে বললো,কে?”
-“আরে গুঞ্জন না কি যেন!”
“মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে রাগী গলায় বললো,তুই তো একসময় রুহিকে পছন্দ করতি তাই না?তো রুহির কাছে যা।
ও এখন তোকে একসেপ্ট করে নিবে যেহেতু তোর অনেক বড় চাকরি হয়েছে!”
-“সেসব তো আগের কথা!”
-“ওহহ!তুই তাহলে আমায় মিথ্যা বলেছিলি যে তুই কখনো রুহিকে ভুলতে পারবি না।ও-ই তোর ফার্স্ট এন্ড লাস্ট পার্সন!”
“সিফাত কেমন অসহায় গলায় বললো, এরকম বলিস না দোস্ত।এই টপিক বাদ দে আর গুঞ্জনের নাম্বার দে।”
“মৃন্ময় পেছনে ঘুরে গুঞ্জনকে দেখে নিয়ে কড় গলায় বললো,গুঞ্জন ঘুমাচ্ছে।”
“সিফাত অবাক হয়ে বললো,তুই কেমনে জানলি?”

-“ও আমার সামনে!”

“সিফাত বললো,এত রাতে তুই ওর ঘরে কি করিস?”
-“আমি ওর ঘরে না,ও আমার ঘরে ঘুমুচ্ছে।”
-“শালা,তোর বউ কই?”
-“বউ ই তো ঘুমাচ্ছে।”
-“শালা!তুই বউ বইন দুইজনের সাথে একঘরে ঘুমাবি?ছিহ!”
“মৃন্ময় রাগী গলায় বললো,গুঞ্জন আমার বউ!”
“সিফাতের মনে হলো কেউ ওর কান কেটে নিয়েছে তাই ও ভুলভাল শুনছে।কিন্তু না,সে সত্যিই শুনেছে।এই মুহূর্তে হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করার
ইচ্ছা করছে,’শালা তুই বারোভাতারি।নেশা কইরা মাতাল হইয়া তুই উল্টোপাল্টা বকতাছিস।নিজের কাজিনকে বউ ভাইবা ওর ঘরে বইসা
আছিস!’কিন্তু সিফাত বলতে পারলো না।”

“মৃন্ময় বললো,আসলে তোর বোঝা ভুল হয়েছিলো।গুঞ্জন আমার কাজিন ঠিক আছে,বাট ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে,দ্যান ও আমার বউ।
আর আমার পাশের শাড়ি পড়া মেয়েটা আমার চাচ্চুর মেয়ে অনু ছিলো আবাল।সো, তুই রুহি নয়তো অনু দুজনের পিছনে ঘুরা শুরু কর।
পাত্তা পেলেও পেতে পারিস।বাই দ্যা ওয়ে,রুহি আবার গুঞ্জনের ফুফাতো বোন।বাই!”

“মৃন্ময় এক দমে কথাগুলো বলে ফোন কেটে দিলো।গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।বিছানায় শুইয়ে
দিলো।গায়ে চাদর টেনে দিয়ে নিজেও ওর পাশে শুয়ে গুঞ্জনকে জড়িয়ে ধরলো।মৃন্ময়ের মনটা হালকা লাগছে,মনে হচ্ছে পাথর নেমে
গিয়েছে।সিফাত বেচারার কি অবস্থা সেটা ভেবে ওর ভীষণ হাসি পাচ্ছে।গুঞ্জন এতদিন সোফায় থেকেছে,এখন থেকে ওকে বিছানায় ঘুমাতে
হবে, দ্যাটস ফাইনাল।ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।”

______

“ভোরের রোদ চোখেমুখে লেপ্টে আছে গুঞ্জনের।মৃন্ময়ের ঘুম ছুটে গেলো।এমন রূপবতী মেয়েকে এত কাছ থেকে দেখে নিজেকে আর
সামলাতে পারলো না।মুখে এসে পড়া এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে গুঞ্জনের কপালে একটা চুমু খেলো।কপালে কপাল ঠেকিয়ে কম্পিত কন্ঠে
বলে উঠলো,আমি তোমাকে ভালোবাসি গুঞ্জন।ইউ আর মাই লাইফ পার্টনার।দ্যাটস ওকে।সো,সিফুর কথা ভুলে যাবা আর শুধু আমাকে নিয়ে
ভাববা।”

“গুঞ্জনের ঘুমও ছুটে গেলো। মৃন্ময়কে এভাবে থাকতে দেখে একটা আত্মচিৎকার দিয়ে উঠলো।ধড়ফড়িয়ে ওকে ঠেলে বিছানায় বসে জিজ্ঞেস
করলো,আপনি এখানে? আর আমিই বা বিছানায় এলাম কিভাবে?” মৃন্ময় ভাব নিয়ে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো,আমি নিয়ে
এসেছি।বাই দ্যা ওয়ে এখন থেকে বিছানায় ঘুমাবে!সোফায় তোমার কষ্ট হয়!”
-“আহারে!কি আমার দয়ার সাগর রে..এতদিন সোফায় ফেলে রেখে হঠাৎ এত ঢংয়ের কারণ কি?আমি কি বলেছি আমার কষ্ট হয়?”
“মৃন্ময় রেগে বললো,না,বলোনি।

-” এত মেজাজ আমাকে দেখাচ্ছেন কেন?নিজে এনেছেন আবার ঢং!”
“মৃন্ময় আর কিছু বললো না। বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বেরুবার জন্য দরজা খুললো।পেছনে ফিরে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ
করে ঠাস করে দরজা আটকে চলে গেলো।”
“গুঞ্জন হতভম্ব হয়ে নিজের চুলগুলো খোপা করার জন্য হাতে নিলো। প্যাঁচিয়ে বাঁধা দেখে হতভম্বের উপর হতভম্ব হলো।

_________

“এভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।গুঞ্জন যতই রাতে সোফাতে গিয়ে শোয়,ততই মৃন্ময় ওকে বিছানায় এনে ফেলে। আর আজকাল অনুও
মৃন্ময়ের কাছ থেকে দূরে থাকে,আগের মতো ন্যাকামিটা খুব কমই করে।সারাদিন ফোনে আর ল্যাপটপে এক বিদেশি ছেলের সাথে কথা
বলে।রুহিও মাঝেমধ্যে ফোন দেয়,কথা বলে গুঞ্জনের সাথে হাসিমুখে। যেন মৃন্ময়কে বিয়ে করেছে বলে গুঞ্জনকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া
উচিৎ।মৃন্ময় ও গুঞ্জনকে আগের মতো অতটা হার্ট করে না।গুঞ্জন সবার এতো চেঞ্জ হওয়ার কারণটা বুঝতে পারে না।হয়তো ও চলে যাবে বলেই
মৃন্ময়ের এতো এমন ব্যবহার।”
“গুঞ্জনের আজকাল শরীরটা একটু খারাপ যায়,মাথাটা প্রচন্ড ঝিমঝিম করে,হঠাৎ হঠাৎ ব্যথায় মাথার ভেতরটা একেবারে উলটপালট হয়ে যায়।
কাউকে বলে না অবশ্য।”

“মাথাটা ঝিমঝিম করছে গুঞ্জনের।এইমাত্র শাওয়ার নিয়ে এসে ব্যলকুনিতে বসেছে।এটা যেন সহ্য হলো না মৃন্ময়ের।চিৎকার করে ডাকতে
লাগলো, গুঞ্জন গুঞ্জন?”
“গুঞ্জন শুনতে পেলো না।একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে।”
“মৃন্ময় আরও দু’বার ডাকলো।তাও ওর সাড়াশব্দ না পেয়ে এবার প্রচন্ড রেগে গেলো।ব্যলকুনিতে গিয়ে গুঞ্জনের নাম ধরে চিৎকার করে
বললো,গুঞ্জন??????”

গল্প শুনতে আমাদের চ্যানেল থেকে গুরে আসুন

“গুঞ্জন হকচকিয়ে উঠলো।বললো,এই মিয়া,আমাকে কি কালা মনে হয় আপনার? নাকি আপনি জিরাফ?জিরাফের মতো লম্বা গলায় এভাবে
গরুর মতো গুঞ্জন গুঞ্জন করছেন কেন?”
-“তোমাকে এতক্ষণ ধরে ডাকছি, সাড়া দিচ্ছো না কেন?বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!”
“গুঞ্জন রেগে বললো,মরে গিয়েছিলাম তাই শুনতে পাইনি।বিড়ালের মতো মিঁউ মিঁউ না করলেই শুনতে পেতাম!”
-“ফাজিল কথা বন্ধ করো আর আমার কথা শুনো!”

-“বাংলা সিনেমার মতো কাহিনী ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে না বলে সোজাসুজি বলুন তো,কি?”
“মৃন্ময় আহত গলায় বললো,মরার কথা বলবে না!”
“গুঞ্জন ম্লান হাসলো।বললো,বাই দ্যা ওয়ে, আপনি কি কিছু বলতে এসেছেন?”
“মৃন্ময় ভাবুক হয়ে বললো, হুম!”
-“কি জানিয়ে উদ্ধার করবেন প্লিজ?”
-“বিকেলে রেডি থেকো,তোমাদের বাসায় যাওয়ার ইনভাইট পেলাম!”

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১৬

“গুঞ্জন অবাক হলো।বিয়ে করে যেদিন সে বাড়ি থেকে এ বাড়িতে এসেছে এর মধ্যে একদিনও যাওয়া হয়নি।হয়নি বললে ভুল হবে,গুঞ্জনকে ওর
আব্বু-আম্মু বা কেউ যেতে বলেনি।মৃন্ময়কে বলেছে শুধু এবং মৃন্ময়ও বেশ ক’বার গিয়েছে।অথচ এটা গুঞ্জনের নিজের বাড়ি।যেখানে যেতে হলে
ওর পারমিশন নিতে হবে!”
“গুঞ্জন বললো, কোনো দরকার আছে ও বাড়িতে?”
-“হুম।”
-“কি দরকার? দরকারটা ইম্পোর্টেন্ট না হলে আমি যাবো না!”

“মৃন্ময় ভাবলো, গুঞ্জনকে বুঝাই কিভাবে? বললো,অন্যের বাসায় ঘুরাঘুরি করছো তো,তাই এটা তোমার বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।নিজের
মানুষগুলোকে ভুলে গিয়েছে!””গুঞ্জন ছলছল চোখে তাকালো।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে হাসিমুখে বললো,নিজের মানুষ বলতে আমার
কেউ আছে এ জগতে?সবাই পর,সবাই অন্যের।গুঞ্জনের কেউ নেই,গুঞ্জনকে কেউ পছন্দ করে না, ওকে কেউ ভালোবাসে না।

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.