বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ২
ইশরাত জাহান ফারিয়া
“মৃন্ময় গুঞ্জনের হাত মুচড়ে ধরেছে।এমনভাবে ধরেছে যে গুঞ্জনের হাতে লাল দাগ বসে গিয়েছে।গুঞ্জনের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো
পানি।যতই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নারী হোক না কেন,এতসব ঘটনা যে নিজের জীবনের সাথে ঘটছে সেই ভেবে গুঞ্জন ভেতর
থেকে ভেঙে যাচ্ছে,কষ্ট পাচ্ছে।সারাজীবন পরিবারের মানুষদের অনাদর-অবহেলা সহ্য করে শুধু নিজের জন্য সে
বেঁচেছিলো।কিন্তু সেটাও হয়তো কারো সহ্য হলো না,বিয়ে দিয়ে দিলো। পাঠার বলি হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না
গুঞ্জন।জোর করে বিয়ে দিয়েছে নিজেদের পছন্দের ছেলের সাথে,যে ছেলে গুঞ্জনকে সহ্যই করতে পারেনা।কোনো মানে হয়
এসবের?এসব সম্পর্ক,পিছুটানের জাঁতাকলে নিজের জীবন পিষ্ট করার কি খুব দরকার আছে?না,গুঞ্জন কখনোই জীবনের প্রতি
এমন অবিচার করবে না।কেউ যখন গুঞ্জনকে নিয়ে ভাবে না,তাহলে গুঞ্জন কেন এখানে পড়ে থাকবে?কি দায় পড়েছে ওর?সে
বেরিয়ে যাবে এ সম্পর্ক থেকে, মানুষগুলো থেকে!এটাই হয়তো ওর ভবিতব্য!”
“মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পারে?গুঞ্জনও যে একটা মানুষ,ওরও যে কষ্ট হয় এটা হয়তো মৃন্ময় ভুলেই গিয়েছে।নইলে
এতক্ষণে গুঞ্জনের হাত ছেড়ে দিতো।কিন্তু মৃন্ময় ছাড়েনি,নিজের রাগ আর জেদের বশে শুধু শুধুই এরকম করছে।গুঞ্জন কিছু বলার
ভাষায় খুজেঁ পাচ্ছে না।সামনে থাকা মানবটাকে বদ্ধউন্মাদ বলে মনে হচ্ছে।শেষ পর্যন্ত না পেরে হালকা করে একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো মৃন্ময়কে।”
“ধাক্কা দেওয়াতে গুঞ্জনের হাত থেকে ওর হাত একটু আলগা হয়ে গেলো। সেইসুযোগে গুঞ্জন ওর হাতটা সরিয়ে নিলো।গুঞ্জন সোজা
গিয়ে বিছানায় কম্বলমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।একটা কথাও বললো না।”
“এদিকে মৃন্ময় রাগে ফুঁসছে।কি বেহায়া মেয়েরে বাবা।কত সাহস আবার ওর বিছানা দখল করেছে,আর গুঞ্জনকে যখন বউ হিসেবে
মানেই না তখন প্রশ্নই উঠে না একবিছানায় ওর সাথে থাকার।মৃন্ময়ের আবার এক সমস্যা,নিজের বিছানা ছাড়া ওর ঘুমই হয় না।তাই
সে চেঁচিয়ে বললো,এই বেয়াদব মেয়ে।আমার বিছানায় শুয়েছো কেন?এক্ষুণি উঠো বলছি।”
“গুঞ্জন চুপ করে রইলো।কম্বলটা টেনে আরও আয়েশ করে শুয়ে পড়লো।
মৃন্ময়ের ইচ্ছে করছে গুঞ্জনকে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে ফেলে আচ্ছামতো থাপ্পড় দিতে।পাঞ্জাবির হাতাটা ফোল্ড করে কম্বলটা
টানতে টানতে বললো,
এই মেয়ে,কথা কানে যায় না??এতো বেহায়া কেনো তুমি?লাস্ট বারের মতো ওয়ার্ন করছি
গল্প শুনতে আমাদের চ্যানেল থেকে গুরে আসুন
এক্ষুনি নামো আমার বিছানা থেকে।বিয়ে করেছ বলে কি মাথা কিনে নিয়েছ আমার?সবকিছুতে ভাগ বসাতে এসেছ?ড্যাম ইট!”
“গুঞ্জন বেশ বিরক্ত হলো।সোজা হয়ে বসে রাগী গলায় বললো,ঐ মিয়া!আপনার সমস্যাটা কি হুম?এতো আজাইরা প্রলাপ বকছেন
কেন?নিজেকে কোন দেশের প্রেসিডেন্ট মনে করেন হা?যত্তসব!আপনার এসব ছাতার মাথা সো কল্ড জিনিসপত্রে কোনো ছাগল
ছাড়া আর কেউ ভাগ বসাতে আসবে না,বুঝলেন?এখন সামনে থেকে সরেন আর আমাকে ঘুমুতে দেন।বলেই আবারও শুয়ে পড়লো!”
“গুঞ্জনের বলা কথায় রীতিমতো রাগের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গিয়েছে মৃন্ময়।নিজের সম্পর্কে গুঞ্জনের এসব অপমানজনক কথায়
একটান মেরে গুঞ্জনের উপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে গুঞ্জনকে খাট থেকে ফেলে দিলো মৃন্ময়।বললো, তোমাদের মতো সো কল্ড
মিডেলক্লাস মেয়েদের এসব বলেও কোনো লাভ নেই,তাই না?সো,এখন খাটের তলায় ঘুমাও আর ভুলেও আমার বিছানার
ধারেপাশেও আসবে না।গট ইট!”
“এবার আর গুঞ্জন চুপ থাকতে পারলো না।এভাবে মৃন্ময় ওকে অপমান করলো?অনেক হয়েছে আর নয়।নিজের
রাগ,ক্ষোভ,অভিমানকে জড়ো করে উঠে দাঁড়ালো সে।অতঃপর বেড-সাইড টেবিলে রাখা ল্যাম্পটা ঠাস করে ফ্লোরে ফেলে দিলো
, ঝনঝন শব্দ করে ওটা ফেটে চৌচির হয়ে গেলো। এখানেই ক্ষান্ত হলো না গুঞ্জন। একেএকে কাচের গ্লাস,মৃন্ময়ের ছবিওয়ালা
ফটোফ্রেম ভেঙ্গে ফেললো। তারপর আলমিরা থেকে মৃন্ময়ের সব কাপড় বের করে মাটিতে ফেলে দিলো। শার্টগুলো টেনে টেনে
ছিঁড়ে দিলো।লম্বা একটা দম নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।তারপর কম্বলটা নিয়ে
সোজা সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।মৃন্ময়ের উদ্দেশ্যে বললো,ভুলেও আমাকে অবলা ভাববেন না।আমি এমন না যে,নামমাত্র স্বামী
নামক আহাম্মক লোকের অত্যাচার চুপচাপ সহ্য করবো।নেক্সট টাইম আমার সাথে লাগতে আসলে এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু করে
ফেলতে পারি।দ্যান আমি এখন ঘুমাবো,আমাকে যাতে আর কেউ ডিস্টার্ব না করে।”
-“গুঞ্জ….জ…ন.ন..ন!”
-“চিল্লাবেন না।নয়তো পুরো বাড়ি এখন মাথায় তুলবো।”
“মৃন্ময় চুপ করে গেলো।এ মেয়েকে বিশ্বাস নেই। রাগে ওর গা কাঁপছে।ঘেমে একাকার।তবুও গুঞ্জনকে আর ঘাটালো না।চুপচাপ
বিছানায় শুয়ে পড়লো।সেই সময়ই ওর ফোন বাজতে লাগলো।তাতে যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো হলো।গুঞ্জনের রাগটা মৃন্ময়
ফোনের উপর ঝাড়লো।ঠাস করে মোবাইলে ফ্লোরে ফেলে দিলো।”
“এদিকে কম্বলের ফাঁক দিয়ে গুঞ্জন মৃন্ময়কে দেখছে আর মনে মনে হাসছে।ক্যায়সা লাগা ম্যারা মাজাক,মিস্টার মৃন্ময় চৌধুরী?যাক,
ব্যাটার মুখের উপর উচিৎ জবাবাটা দিতে পেরে গুঞ্জনের এখন প্রচন্ড শান্তি লাগছে।আজ রাতে মনের সুখেও ঘুমুতে
পারবে।এতোদিন জানতো বাসরঘরে বিড়াল মারা হয়,কিন্তু বাসরঘরে যে টর্নেডো হয় সেটা আজ জানলো।পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা
থাকা উচিৎ এই রাতের কথা,আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ুক মহিয়সী, সাহসী নারী গুঞ্জনের সাহসীকতার কথা,গ্রেট গুঞ্জন!গ্রেট!”
“আর মৃন্ময় ভাবছে কিভাবে এই মেয়েকে শায়েস্তা করা যায়।ওর মতো ড্যাশিং একটা ছেলেকে এই গুঞ্জন মুখের উপর বিচ্ছিরি বলে
দিলো?ওর প্রিয় জিনিসপত্র,শার্টগুলোকে এভাবে ছিঁড়ে দিলো? এর শোধ তো নেবেই ও।যেখানে ওকে দেখলে ভয়ে কেউ কথা বলতে
পারেনা,সেখানে ও একটা পুঁচকে মেয়ের কাছ থেকে এতো ইনসাল্ট মেনে নিতে কখনোই পারবে না।”
________
“সকালবেলা দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দে আরামের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো গুঞ্জনের।মাথাটা কেমন ধরে আছে,চোখ খোলে বোঝার চেষ্টা
করলো ও কোথায়। সবকিছু মনে পড়তেই লাফিয়ে উঠলো।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে মৃন্ময় নেই,ওয়াশরুমে পানি পড়ার শব্দ
হচ্ছে।তার মানে ব্যাটা ওখানে।রুম ঝকঝকে,পরিষ্কার। কোথাও ভাঙ্গাভাঙ্গির চিহ্ন নেই।নিশ্চয়ই মৃন্ময় করেছে।এভাবেই পড়ে থাক
আমার পায়ের তলায় মনে মনে বললো গুঞ্জন। যাক,ভালো। এখন কারো সামনে আর লজ্জ্বায় পড়তে হবে না।ভেবে দরজা খুলার
জন্য এগিয়ে গেলো গুঞ্জন।”
“দরজা খুলে গুঞ্জন দেখলো,মৃন্ময়ের মা দাঁড়িয়ে আছে।অদ্ভুত কারণে এই মহিলাকে খুব ভালোবাসে গুঞ্জন।কেউ গুঞ্জনকে খুব
একটা পছন্দ না করলেও মৃন্ময়ের পরিবারের মানুষজন গুঞ্জনকে খুব ভালোবাসে।আনিসা চৌধুরী মিষ্টি হেসে বললেন,কি?ঘুম
ভাঙলো?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
“গুঞ্জন হাই তুলতে তুলতে বললো,এতো সকালবেলা ঘুমটা না ভাঙালেও পারতে!”
“আনিসা চৌধুরী বললেন,নতুন বউদের একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠতে হয়!”
“গুঞ্জন চোখমুখ কুঁচকে বললো,সেটা কি সংবিধানে লেখা আছে?”
-“লেখা নেই,তবে নিয়ম।”
-“সেই নিয়মও কি কোথাও লেখা আছে?”
-“ওফফ,,ছাড়োতো।তুমি আমার ছেলের বৌ বলে কথা।মৃন্ময়ের দাদীমা ডাকছে তোমায়।বেচারি নাতবউয়ের মুখে বাসররাতের গল্প শুনতে চায়!”
“গুঞ্জন খুশি খুশি গলায় বললো,রিয়েলি খালামণি?গ্রেট!যাক,শান্তি মতো তো বলতে পারবো একজনের কাছে,নইলে তো আমার
শান্তিই হবে না!কিভাবে কাবু করলাম তোমার ছেলেকে।”
“মৃন্ময়ের মা চোখ কপালে তুলে অবাক হয়ে বললেন, কি বলছো এসব গুঞ্জন?এসব লজ্জ্বাজনক কথা কেউ বলে না,বলতে নেই।”
“গুঞ্জন অবাক হয়ে বললো,এখানে লজ্জ্বার কি আছে?দুটো ছেলে-মেয়েকে সবাই মিলে বিয়ে দিয়েছে, এখন তারা প্রথম রাতে ঘরে
একসাথে কি কি করেছে সেগুলো জানার অধিকার তাদের অবশ্যই আছে।এখানে লজ্জ্বার তো কিছু নেই।”
“আনিসা চৌধুরী মুখে হাত দিয়ে বললেন,এসব কাউকে বলতে নেই মামণি।”
“গুঞ্জন বললো,আরে তুমি বুঝতে পারছো না,টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মানুষ যেভাবে উপভোগ করে, বাসররাতের কাহিনীও তারা এভাবেই
উপভোগ করবে।”
“আনিসা চৌধুরী লজ্জ্বায় পড়ে গেলেন।তিনি গুঞ্জনকে থামানোর জন্য বললেন,যাইহোক!গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নাও,আমি নাস্তা
রেডি করছি।”
বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ১
“গুঞ্জন চোখ পিটপিট করে বললো,এতো সকালে কে গোসল দেবে!আমিতো ঠিক করেছি দুপুরে গোসল করবো!এই ঠান্ডায় আমি
নেই বুঝলে?বলেই রুমে চলে আসলো।”
“আনিসা চৌধুরী চোখ গোল গোল করে ভাবছে, মেয়েটা এখনো ছোটই রয়ে গিয়েছে।বয়স হয়েছে ঠিকই,কিন্তু একেবারে
সরলমনা।তিনি মুচকি হেসে চলে গেলেন।”
“এদিকে গুঞ্জন রুমে ঢুকে দাঁতব্রাশ করার জন্য ওয়েট করছে।কিন্তু মৃন্ময় সেই কখন ঢুকেছে, এখনো বেরুবার নাম
নেই।অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কানোর পরেও মৃন্ময় দরজা খুলছে না।ভেতর থেকে বলছে,আমার আরও দেরি হবে।ওয়েট করো।”
“এভাবে অনেকক্ষণ ওয়েট করার পরেও যখন মৃন্ময় বের হলো না তখন গুঞ্জন বুঝলো যে,ইচ্ছে করেই ও এরকম করছে।তখন
গুঞ্জন রেগে একটা লাথি দিলো ওয়াশরুমের দরজায়,ফলে দরজা খুলে গেলো।তারপর গুঞ্জন যা দেখলো,তাতে ওর চোখ ছানাবড়া
হয়ে গেলো।”