বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৬- Golpo Bazar

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৬ || Motivational love story

বৃষ্টি নামার পরে

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৬
ইশরাত জাহান ফারিয়া

“যতটা খারাপ লাগবে বলে ভেবেছিলো সৌখিন তার থেকেও বেশি ওর কষ্ট হচ্ছে গুঞ্জনের জন্য।রাতে ছাদ থেকে ফিরে ভেজা
কাপড়চোপড় পাল্টে স্বাভাবিকভাবেই রাতের খাবার খেয়ে সবার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করে রুমে এসে মোবাইল দেখতে লাগলো
গুঞ্জন।ওর বাসার সবাই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই রাতে চলে গিয়েছে।যাবার সময় কেউ গুঞ্জনকে কিছু বলেও যায়নি,তবে
গুঞ্জনের গুটিকতক বান্ধবী আর নিভৃত বিদায় নিয়ে গিয়েছে।এসব নিয়ে গুঞ্জনের কোনো মাথাব্যথাই দেখলো না মৃন্ময়।ওর বেশ
খারাপ লাগলো।”

“বৃষ্টির পানিতে ভেজায় রাতারাতি ওর ঠান্ডা লেগে অবস্থা কাহিল।কোনো এক অদ্ভুত কারণে ও রাতের খাবারটা পর্যন্ত খায়নি,সবার
জোরাজুরি স্বত্তেও।রুমে এসে গুম মেরে বসে রইলো।ঠান্ডা লাগায় একেবারে চোখমুখ লাল হয়ে আছে।গুঞ্জন মোবাইলটা রেখে
সন্দেহী চোখে বললো,মন খারাপ কেন আপনার?””মৃন্ময় জবাব দিলো না।টিস্যু পেপার দিয়ে নাক মুছছে আর হাঁচি দিচ্ছে।গুঞ্জন
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মৃন্ময়কে লক্ষ্য করে বললো,আপনি না বেশ শক্তিশালী মানুষ, তাহলে আপনার ঠান্ডা লাগলো কেন?”
“মৃন্ময় রাগী গলায় বললো, সব হয়েছে তোমার জন্য! ”
-“আমার জন্য মানে কি?আমি আবার কি করলাম?”

-“কি করেছো মানে?”

-“আরে মিয়া,আজব তো!আপনার ঠান্ডা লেগেছে তাতে আমি কি করেছি?”
-“তুমি ওইসময় বৃষ্টিতে ভিজলে কেন?তোমাকে আনতে গিয়ে আমিও ভিজলাম,এখন ঠান্ডা লেগেছে সেইজন্যই।
তাই এসবের জন্য তুমিই দায়ী।”
-“হোয়াট দ্য হেল মিস্টার মৃন্ময়!আপনি কোথাকার দয়াবান ব্যক্তি আমি তো জানি না,আমি বৃষ্টিতে ভিজলাম নাকি সাগরে ডুবে
মরলাম সেটা আপনার দেখার বিষয় না।আপনি কেন আমার পিছু পিছু দয়া দেখাতে গেলেন?ওহহ,বুঝেছি আপনি ভেবেছেন
আপনার এই হিরোগিরি দেখে আমি গুঞ্জন আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাবো?রিডিকিউলাস!”
-“লাইক সিরিয়াসলি গুঞ্জন? তুমি এত্ত কথা কিভাবে বলো?যত্তসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা!পাগল কোথাকার।”
-“গুঞ্জন তেড়ে উঠে কিড়মিড় করে বললো,কিহ বললেন আপনি?”
-“মৃন্ময় দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,পাগল বলেছি বুঝলা?পাগল!দুনিয়াতে তোমার মতো আর একটাও পাগল নেই!
তোমাকে পাগলের এওয়ার্ড দেওয়া উচিৎ!”

“গুঞ্জন রেগে বললো, আপনি আমায় পাগল বললেন!পাগলের এওয়ার্ড দিবেন বলেছেন!!”
“মৃন্ময় কড়া বলায় বললো, তোমাকে ইন্টারন্যাশনাল পাগলি বলা উচিৎ, ইন্টারন্যাশনাল পাগলির এওয়ার্ড দেওয়া উচিৎ!”
“গুঞ্জন অতিরিক্ত রেগে গেলো।অতিরিক্ত রেগে গেলে ও কারো সাথে কথা বলে না,নিজে নিজে একাই গজগজ করতে থাকে।তাই
মৃন্ময়কেও কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়লো। বলে দিয়েছে,গুঞ্জনের সাথে যেন কথা না বলে।রাগে সোফায় শুয়েই গজগজ
করতে লাগলো।বলতে লাগলো,আমাকে কি পেয়েছে হুহ?আমি পাগল! আমাকে ইন্টারন্যাশনাল পাগলির এওয়ার্ড দেওয়া
উচিৎ!আমাকে অসহ্য লাগে,তাই না?লাগবেই তো!ঘরে বউ রেখে যে ছেলে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলে,অসহ্য তো লাগবেই!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

আরে মিয়া,তোর বউ হতে আমার এতো ঠ্যাকা পরে নাই।শালা আবাল কোথাকার,একটা গার্লফ্রেন্ড তো গেলো খালি,নতুন মেয়ে
পটাই ফেললেই পারিস।শুধু শুধু গুঞ্জনের পেছন লাগিস কেন?আমি তো চলেই যাবো,তখন তো আরও মজা পাবি,সারারাত ফোনে
ফোনে তোর নিউ গার্লফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে পারবি।দেখিস,তোর কপালে সব ইন্টারন্যাশনাল পাগলির মেলা বসবে।যত্তসব!!”

“মৃন্ময় গুঞ্জনের প্রত্যেকটি কথা মন দিয়ে শুনছিলো।আসলেই গুঞ্জনকে ওর পাগল বলে মনে হচ্ছে, আবার হাসিও পাচ্ছে।এ মেয়ে যে
চব্বিশ বছর বয়সের সেটা কারো মনে হবেই না,এতো বাচ্চাস্বভাবের কেমনে কি?””মৃন্ময় গুঞ্জনকে একটিও কথা না বলে ঘর থেকে
বের হয়ে গেলো ব্যলকুনিতে।থাকুক এ মেয়ে নিজের বকবক নিয়ে।ব্যলকুনির দরজা খুলতেই ঠান্ডা ফুরফুরে বাতাস গ্রাস করলো
মৃন্ময়কে।ঘন নীল আকাশে মস্ত বড়ো পূর্ণিমার চাঁদ।এ মুহূর্তে মৃন্ময়ের মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা কি আশ্চর্য সুন্দর।রাতের আঁধার কাটিয়ে
কি সৌন্দর্য বের করে এনেছে প্রকৃতি!অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হচ্ছে মৃন্ময়ের মনে,প্রাণে।সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কবিতাটার কথা মনে
হচ্ছে!”

“গুঞ্জন সোফায় শুয়ে ছিলো। ব্যলকুনির দরজা গলে বিশুদ্ধ বাতাস এসে গায়ে লাগছে।মুহূর্তেই গুঞ্জনের রাগ গলে পানি।লাফ দিয়ে
উঠে গায়ের ওড়না গুছাতে গুছাতে দৌড়ে গেলো।ব্যলকুনিতে ঢুকে মৃন্ময়কে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো, কি ব্যাপার
ব্রো?এতো রাতে এখানে জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?সরুন সরুন ভেতরে যান।আরে আমাকে দাঁড়াবার জায়গা দিন।”

-“দেব না!”

-“আপনি না অসুস্থ?যান ভেতরে গিয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে নাকমুখ ঢেকে অসুস্থ সেজে শুয়ে থাকুন।”
“মৃন্ময় রেগে বলে উঠলো, একদম বিরক্ত করবে না!”
-“আচ্ছা, আপনি কি চাঁদ খাবেন?”
“মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে বললো,চাঁদ আবার কিভাবে খায়?”
-“ধরুন চাঁদটা একটা আটার রুটি!”
-“সিরিয়াসলি গুঞ্জন? তোমার মাথার তার সব ছিঁড়া, বুঝলা!”
-“একদম চুপ,আরেকবার এসব বললে সোজা মুখের উপর ঘুসি মেরে দিবো।চুপচাপ আমার কথা শুনুন।”

“এ মেয়েকে বিশ্বাস নেই।ঘুসি মারতেও পারে,যা ডেঞ্জেরাস!তাই মৃন্ময় দু’হাত ভাঁজ করে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, বলো।”
-“ধরুন!আপনি চাঁদটাকে প্রথমে রুটি মনে করবেন।অতঃপর দু’হাতে চাঁদটাকে নামিয়ে এনে মুখে পুরে দিবেন,দেখবেন কি
মজা,সুস্বাদু।একসাথে সবটা খেতে না পারলে ছুরি দিয়ে কুচিকুচি করে খেতে পারেন।যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে খেতে পারেন।”
-“তাতে লাভ কী?চাঁদ না থাকলে তো পৃথিবীই অন্ধকার হয়ে যাবে।আর চাঁদ খেয়ে আমি করবোই বা কি?”
-“অন্ধকার হবে কেন?চাঁদটা গিলে খেলে দেখবেন আপনার রুপ চাঁদের মতো ঝলমলে সুন্দর হয়ে গিয়েছে।আপনার আলোয়
সারা পৃথিবী আলোকিত হয়ে যাবে।এককথায়, হোয়াইট ম্যান!”

-“আমার হোয়াইট ম্যান হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।আমি এমনিতেই ফর্সা!”
“গুঞ্জন ব্যলকুনিতে রাখা একটা চেয়ারে পা তুলে বসলো।বললো,ফর্সা হলেই বা কি আসে যায়!রুপ দেখে তো আর পানি খাবো না!”
-“তোমাকে তো পানি খেতে বলিনি।”
“গুঞ্জন পাত্তা না দিয়ে চোখ কুঁচকে বললো,দেখুন আমার না এখন খুব কবি হতে ইচ্ছে হচ্ছে।আপনি শুনবেন আমার কবিতা?”
“মৃন্ময় ফিকে হাসলো।বললো,কাকের মতো করে না বললে অবশ্যই শুনবো।যেহেতু আমি কবিতা প্রেমী!”
“গুঞ্জন হেসে দিলো।আহারে!আমার কবিতা প্রেমী জামাই রে!”

গল্প শুনতে আমাদের চ্যানেল থেকে গুরে আসুন

“মৃন্ময় পাশের চেয়ারে বসলো। দু’হাত ভাজ করে একদৃষ্টে তাকালো গুঞ্জনের দিকে।মৃদুমন্দ বাতাসে ব্যলকুনির লতানো গাছগুলো
দুলছে।নিঃস্তব্ধ শহর চুপচাপ, কোলাহল নেই একদমই।টিমটিম করে বাতি জ্বলছে দূরের আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকাগুলোতে।চাঁদের
আলোয় গুঞ্জনকে মায়াবতী লাগছে।চুলগুলো পিঠের উপর আলগোছে ছড়ানো,এলোমেলো চুলগুলোতে টুকরো হয়ে চাঁদের আলো
পড়ছে।গুঞ্জন তাঁর কবিতা আবৃত্তি শুরু করলো এভাবে,

” আমার বিয়ের দিন রাতে
করেছিলাম খুব মজা,দিয়েছিলাম কাপড় ছিঁড়ে।
আমাকে বিছানায় ঘুমাতে না দেওয়ার জন্য
ভেঙেছিলাম গ্লাস,শুয়েছিলাম সোফায়।
আমার ভীতুর ডিম নকল প্রিন্স চার্মিং বর

ভয়ে আর কিছু বলতে পারেনি,আমি লেপের নিচে শুয়ে দেখেছিলাম তাকে,রেগে ভেঙেছিলো তাঁর ফোন।
পরেরদিন তাঁকে ঘুসি মেরেছিলাম,দিয়েছিলাম পিঠে কিল।
গিয়েছিলাম পালিয়ে দিদার ঘরে,রাতে হিরো সাজতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিলো,পরে খুকখুক করে কাশে।
অতঃপর গুঞ্জনের বর ব্যলকুনিতে বসে গুঞ্জনের বিশ্বসেরা কবিতা শুনে,আর ব্যক্কলের মতো তাকিয়ে থাকে।
এভাবেই হাজার বছর ব্যক্কলের মতো থাকুক সে,
কারণ সে গুঞ্জনের বর!”

“মৃন্ময়ের মনে হচ্ছে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে ওর শরীর থেকে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম কেটে বের করে নিয়েছে।
সে কি রিয়েকশন করবে বুঝে উঠতে পারছে না।”
“গুঞ্জন মৃন্ময়কে ঝাঁকিয়ে বললো, আপনি কি হার্ট-এ্যাটাক করেছেন?”
“মৃন্ময়ের সম্বিৎ ফিরে এলো।বললো,না।এটা কি ছিলো গুঞ্জন?”
“গুঞ্জন সন্দেহী গলায় বললো,ঐ টা কবিতা ছিলো। আর আপনি হার্ট-অ্যাটাক না করলে এভাবে ঘামছেন কেন?”
“মৃন্ময় কাঁপা গলায় বললো, গুঞ্জন প্লিজ চুপ করো।”
“গুঞ্জন হালকা গলায় বললো, যাক গে।আমার কবিতা কেমন হয়েছে?”
“মৃন্ময় বললো, বাজে,খুব বাজে!”

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৫

“বলেই গুঞ্জনকে আর কিছু বলার অবকাশ দিলো না।দ্রুত রুমে চলে গেলো। এদিকে গুঞ্জন হাসতে হাসতে শেষ।ব্যাটাকে এই রাতে
আর ঠান্ডায় বেশিক্ষণ বসতে দিলো না,নিঞ্জা টেকনিক কাজে দিয়েছে।এই ঠান্ডায় কোনো অসুস্থ মানুষ এসে ব্যলকুনিতে বসে থাকবে
এটা গুঞ্জন কিছুতেই হতে দেবে না।যাইহোক, একে এখন কিছু খাওয়াতে হবে।””রান্নাঘরে গিয়ে গুঞ্জন প্লেটে করে মৃন্ময়ের জন্য
খাবার নিয়ে আসলো।ওর সামনে রেখে বললো, নিন খান!””মৃন্ময় হাঁচি দিচ্ছিলো। গুঞ্জনের কান্ড দেখে ওর হাঁচি একেবারেই পালিয়ে
গেলো। বললো, খাবো না।””গুঞ্জন কাঠ কাঠ গলায় বললো,আমার সামনে না খেয়ে সারারাত কেউ ক্ষিধেয় জ্বলবে তা তো আর এই
গুঞ্জন মেনে নিবে না,সো খান তাড়াতাড়ি।”

“মৃন্ময় উঠে দাঁড়ালো।রেগে বললো,বললাম তো খাবো না!”
“গুঞ্জনও রাগী গলায় বললো,গুঞ্জনের সামনে এমন সঙের মতো দাঁড়িয়ে না বলা?দাঁড়ান দেখাচ্ছি মজা!
ধাক্কা মেরে ওকে বিছানায় ফেলে দিলো!”
“রাগে গজগজ করে হাজার কথা বলে প্লেটের খাবার নিয়ে চেপে ধরে মুখে পুরে দিলো।আর কোনো উপায় না দেখে,মৃন্ময় খাবার
গিলতে আরম্ভ করলো।এটা শেষ না হতেই,আরও এক লোকমা ভাত মৃন্ময়ের মুখে দিয়ে দিলো।মৃন্ময় এবার গুঞ্জনের হাতের খাবার
চুপচাপ খাচ্ছে।ওর কাছে কেমন অদ্ভুত ভালো লাগছে,খাবারগুলো অমৃত মনে হচ্ছে। হঠাৎ ওর এরকম মনে হচ্ছে কেন?”

বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.