বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৮
ইশরাত জাহান ফারিয়া
“ইকবাল চৌধুরী মৃন্ময়কে বললেন, ফাজলামো পেয়েছো তুমি?খাবার টেবিলটা কি ফাজলামো করার জায়গা?”
“মৃন্ময় হালকা গলায় বললো, আমি কিছু করিনি আব্বু।”
“তোমার এত অধপতন হয়েছে মৃন্ময়? মিথ্যে বলাও শিখে গিয়েছো?মেয়েটা দুদিন হলো বাড়ির বউ হয়ে এসেছে আর তুমি তার সাথে
এখন থেকেই খারাপ ব্যবহার করা শুরু করেছো?দেখো আনিসা,দেখো আমাদের ছেলে কিসব শিখে গিয়েছে।”
“আনিসা চৌধুরী হতভম্ব হয়ে গেলেন।মৃন্ময় যে এরকম অভদ্র একটা কাজ করতে পারে সেটা তিনি ভাবতেও পারছেন
না।বললেন,এসব কি বেয়াদবি তোমার? তোমাকে আমি এইসব শিক্ষা দিয়ে বড় করেছিলাম?দিনরাত খেটেখুটে তোমাকে বড় করেছি
আমার বাড়ির বউকে এভাবে টর্চার করার জন্য?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
“ইকবাল চৌধুরী তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখেছেন আম্মা, আপনার আদরের নাতি আমার বাড়ির বউকে সবার সামনেই
কি অপমানটা করলো,আড়ালে কি করে কে জানে!”
“দাদীমা ইকবাল চৌধুরীকে বললেন, এভাবে রাগারাগি করছিস কেন? তোর শরীর খারাপ হয়ে যাবে তো!”
“ইকবাল চৌধুরী বললেন,আপনি আপনার নাতিকে বলে দিয়েন যে,আমি যেন এসব আর না দেখি!”
“আনিসা চৌধুরী মৃন্ময়ের উদ্দেশ্য বললেন,শুনলে তো?শুনে রাখো,তোমার এসব ফাজলামো কাজকর্ম যাতে আমি আর না শুনি,
আর তুমি তো এতোটা ইয়ে ছিলে না,গুঞ্জনের সাথে তাহলে এরকম করছো কেন?”
“মৃন্ময় নতমুখে বললো,স্যরি আর হবে না।”
“এদিকে গুঞ্জন বিশ্বজয়ী হাসি হাসছে।বেচারা তার বাবার কাছ থেকে বকা খেয়ে মুখ কালো করে খাবার খাচ্ছে।তাড়াতাড়ি খেয়ে
একসময় উঠে গেলো।”
“এদিকে কাচুমাচু মুখ করে খাবার গিলছে আরিশা।কিছু বলছে না,কারো দিকে তাকাচ্ছে না।গুঞ্জন ভাবলো,ওর আবার কি হয়েছে?”
__________
“খাবার খেয়ে রুমে ঢুকতেই মৃন্ময় পথ আটকালো গুঞ্জনের।গুঞ্জন হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলো।বললো,কি..কি..ক..কি হয়েছে
আপনার?আমার পথ আটকাচ্ছেন কেন?”
-“তুমি জানোনা?”
-“না!”
-“তাই?”
-“জানিনা।তবে খেতে বসে আপনি আমায় লাথি দিলেন কেন?”
-“দেখো,আমি তোমাকে লাথি দিইনি।মেজাজ খারাপ করাবানা।যত্তসব।”
-“আপনিই দিয়েছেন, আমার উপর প্রতিশোধ নিতে। একটা খারাপ লোক কোথাকার।”
“গুঞ্জন বেশি ব্যথা না পেলেও ইচ্ছে করে পায়ে হাত দিয়ে মৃন্ময়ের বকা থেকে বাঁচার জন্য এবং মৃন্ময়কে বকা খাওয়ানোর জন্য ওহ,
আহ করে চেঁচাতে লাগলো!””গুঞ্জনের এসব দেখে মৃন্ময় রেগে মুখ লাল করে তাকিয়ে রইলো। চোখের দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে
গুঞ্জনকে চিবিয়ে খেতে পারলে ওর শান্তি হবে। এর আগে নয়।””এই সুযোগে গুঞ্জন হালকা ধাক্কা মেরে মৃন্ময়কে দূরে সরিয়ে
দিলো।মৃন্ময় তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে ধপাস করে পড়ে গেলো।এই অবস্থায় গুঞ্জন হা হা করে হেসে উঠলো।বললো,আপনার
মুখটা দেখে আমার যা শান্তি লাগছে ওফ,,হাউ কিউট।””মৃন্ময় ধীরেধীরে উঠে দাঁড়ালো। দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে গমগম করে
বললেন, খুব হাসি পাচ্ছে তাই না?”
-“হুম,পাচ্ছে তো!হাসারই কথা!”
-“তোমার হাজব্যান্ডকে সবার সামনে এভাবে ইনসাল্ট করে তোমার হাসি পাচ্ছে?এদিকে আমার মাথার সব রাগ রক্তারক্তি পর্যায়ে
চলে যাচ্ছে গুঞ্জন।আর তুমি মজা নিচ্ছো?””গুঞ্জন হতভম্ব হয়ে বলল,রক্তারক্তি কোথায় হলো?সামান্য রাগ উঠায় আপনি এটাকে
রক্তারক্তি বলছেন?আজব!””মৃন্ময় রাগী গলায় বললো, দেখো গুঞ্জন সিরিয়াসলি বলছি তোমার এসব ফানগুলো আমি আমি আর
টলারেট করতে পারছি না।”
-“কেন?এখন কি করবো তাহলে আমি?”
“মৃন্ময় বললো,তুমি এটা কি ফান ভাবছো?”
“গুঞ্জন দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,জ্বি!”
-“আমার সব কথা কি তোমার কাছে ফান মনে হয়?”
বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৭
“গুঞ্জন ভাব নিয়ে বললো,আসলে আপনি মানুষটাই কার্টুন,তাই আপনার হাঁটা-চলা,কথাবার্তা, রাগ সবকিছুই ফান বলে মনে হয়।”
“মৃন্ময় খুব বিরক্ত হলো।বিরক্তিকর ভঙ্গিতে রেগে চিল্লিয়ে বললো,তোমার এসব ফান আমি আর জাস্ট নিতে পারছি না।তুমি প্লিজ যে
কয়েকটা দিন আছো ততদিন আমাকে শান্তিতে বাসায় থাকতে দাও।তোমার এসব বাচ্চামো,ফাজলামি আমি সহ্য করতে পারছি
না।তোমার তো অনেক বয়স হয়েছে,তাই না?তুমি আসলেই একটা অসহ্যকর,ফালতু,বেয়াদব মেয়ে।আমার আআম্মু-আব্বু তো
তোমায় কত্ত ভালোবাসে আর তার বদলে তুমি এসব ফাজলামো করে বেড়াচ্ছো?তোমার ফ্যামিলি কি তোমাকে এসব কিছুই শিক্ষা
দেয়নি?আসলে তুমি কারো ভালোবাসা পাওয়ারই যোগ্য না!”
“গুঞ্জন আচমকা এমনসব কথাবার্তায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।শেষের কথাটা ওর বুকে গিয়ে লাগলো।দু’চোখ বেয়ে পড়তে লাগলো
পানি।আসলেই কি গুঞ্জন কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়?