বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৯
ইশরাত জাহান ফারিয়া
“প্রকৃতিতে এখন অক্টোবর।হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় জীবনকে নতুনভাবে উপভোগ করা যায় নতুন করে।মৃদুমন্দ হাওয়ায় বাতাসে ভাসে
ফুলের সুবাস।গুঞ্জন সবুজ রঙের জামা পড়ে ব্যলকনিতে বসে আছে।আজ ইংল্যান্ড থেকে মৃন্ময়ের কিছু রিলেটিভরা
আসবে।সেইজন্য সকাল থেকেই বাড়িতে একটা হইহই রব।সবার সাথে গুঞ্জনও রান্নাবান্নায় সাহায্য করেছে।আনিসা চৌধুরী গুঞ্জনকে
হাজারবার মানা করা স্বত্তেও গুঞ্জন জোর করে কাজ করেছে।কিন্তু আগের মতো সেই প্রাণোচ্ছলতা গুঞ্জনের মধ্যে টের পাওয়া যায়
না আর।”
“দুপুরের শেষ দিকে মৃন্ময় অফিস থেকে বাসায় ফিরলো।মেহমান আসা উপলক্ষে তাড়াতাড়ি আসা,নয়তো সব কাজ শেষ করে বাসায়
ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। রুমে ঢুকেই মৃন্ময় বিছানায় হাত-পা মেলে শুয়ে পড়লো।ব্যলকনি থেকে ফিরে গুঞ্জন যেই না বিছানায় বসতে
যাবে ঠিক তখনি মৃন্ময় বলে উঠলো, কানা হয়ে গেলা নাকি?””গুঞ্জন চমকে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা মৃন্ময়কে
দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো, আপনি?আপনি এইসময় এখানে কি করছেন?”
-“কি করছি মানে?”
-“মানে আপনার তো এখন অফিসে থাকার কথা,আপনি বাসায় কেন এই অসময়ে?”
“মৃন্ময় শুয়ে থেকেই বললো, আমার বাড়িতে আমার কি এখন টাইম মেইনটেইন করে ঘরে আসতে হবে নাকি?আমার যখন ইচ্ছা
তখন আসবো।বাই দ্যা ওয়ে..তুমি আমার বিছানায় কি করতে চাইছিলে?”
“গুঞ্জন মৃদু হাসলো। বললো, সারারাত তো সোফায় শুয়ে থাকতে হয়,তাই আপনি না থাকলে গড়াগড়ি দেওয়ার জন্য আমি
বিছানাতেই থাকি,বুঝলেন!”
“গুঞ্জনকে উদ্দেশ্য করে মৃন্ময় বললো, তা কার পারমিশন নিয়েছিলে তুমি?”
“গুঞ্জন হাসলো। বললো, আমি দুঃখিত।এখন থেকে আপনার জিনিস ইউজ করার আগে পারমিশন নিয়ে নিবো!”
“মৃন্ময় সন্দেহী চোখে তাকিয়ে রইলো।বললো,তা তো অবশ্যই!”
“গুঞ্জন আর কিছু বললো না।রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এদিকে মৃন্ময় ভাবছে গুঞ্জনের কি হয়েছে?সেদিনের পর থেকে আজ
অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে। সেদিন হয়তো মৃন্ময় একটু বেশিই হার্ট করে ফেলেছিলো,যদিও পরে জানা যায়,খাবার টেবিলে
গুঞ্জনকে সত্যিই কেউ লাথি দিয়েছিলো। তবে সেটা লাথি নয়,আরিশা পা নাচাচ্ছিলো আর হঠাৎ করে ওর পা খুব জোরে গুঞ্জনের
পায়ে লেগে যায়।সেটা অবশ্য আরিশাই বলেছে মৃন্ময়ের কাছে।তাও মৃন্ময় এখন গুঞ্জনকে আগের মতো পাগলামো করতে আর দেখে
না,মেয়েটার মধ্যে আগের সেই প্রাণোচ্ছলতা আর দেখা যায় না।অতিরিক্ত বকবক বা ঝগড়া, মারামারি করে না।যদিও গুঞ্জন
কোনোকালেই অতিরিক্ত সুন্দরী ছিলো না, তবে এই ক’দিনে মেয়েটাকে বেশ সুন্দর বলে মনে হচ্ছে মৃন্ময়ের।রেশমের মতো ঘন
কালো চুল,গভীর কালো চোখ যেন সারাক্ষণ কিছু একটা নেশা লেগে আছে।গোলগাল শ্যামবর্ণ চেহারার মেয়েটাকে আজকাল
অতিরিক্ত সুন্দর এবং বেশ ম্যাচিউর বলে মনে হয়।”
১২.
“বিকেলের দিকে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা দুই দুইটা গাড়ি করে এলো মৃন্ময়ের দুই চাচা-চাচীর পরিবার আর ওদের একদল
ছেলে-মেয়ে।এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা হলো অনু!এই অনু আবার মৃন্ময়ের প্রতি একটু দুর্বল।অতিরিক্ত সুন্দরী এই
মেয়েটার ভেতর রয়েছে প্রচুর হিংসা আর অহংকার।”
“বাড়িতে আসার পর সবাই মিলে ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিলো।মৃন্ময় দুপুরে অফিস থেকে ফিরে যে ঘুম দিয়েছিলো সেই ঘুমে এখনো
কাদা।গায়ে স্লিভের পাতলা গেঞ্জি পরিহিত।এমন সময় ড্রয়িংরুমের একদল মানুষকে উপেক্ষা করে অনু জিজ্ঞেস করলো, মুনু
কোথায় বড়মা?”
“আনিসা চৌধুরী একটু থমকালেন।কিছু একটা ভেবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গুঞ্জনকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, আরে অনু!ও হলো গুঞ্জন।
মৃন্ময়ের ওয়াইফ।”
“অনু দপ করে জ্বলে উঠলো যেন।রাগটা গিলে গুঞ্জনকে বললো,হাই গুঞ্জন!”
“গুঞ্জন হাসিমুখে বললো, হ্যালো! কেমন আছো?”
“অনু একটা আলগা হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে বললো, ভালো আছি!”
“গুঞ্জন ব্যাপারটা বুঝতে পারলো যে,মেয়েটার ঠিক ওকে পছন্দ হচ্ছে না,আর না গুঞ্জনের এই শার্ট-প্যান্ট পরিহিতা একগাদা মেক
আপ লাগানো মেয়েটাকে পছন্দ হচ্ছে। তাও কর্তব্য রক্ষার জন্যই মৃন্ময়ের আত্মীয় স্বজনদের সাথে ও পরিচিত হলো, কথা বললো।
সবাইকেই ওর খুব ভালো লাগলো শুধুমাত্র অনু ছাড়া।”
“আর এদিকে অনু সোফার এক কোণে পায়ের উপর পা তুলে বসে মোবাইল ঘাটছে।একসময় আবারও বলে উঠলো, মুনু কোথায়
বড়মা?আসার পর থেকে ওকে দেখতে পাচ্ছি না কেন? ও কি বাসায় নেই?”
“আনিসা চৌধুরী বললেন, ও তো অফিসে।”
“অনু বললো, ওহ!ও কি জানেনা যে,আজ আমরা ফিরেছি?”
“দাদীমা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে গুঞ্জনের উদ্দেশ্যে বললেন,গুঞ্জন তুই ওকে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বল।
বাসায় এত্ত মানুষ থাকতে অফিসে সে কি করে? ফোন কর ওকে!”
“গুঞ্জন এবার কথা বললো। দাদীমাকে বললো,উনি তো আজ দুপুরেই বাসায় ফিরেছেন।তোমরা জানো না?”
“আনিসা চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন,সে কি?আমরা তো কেউ জানি না!তুমিও তো বলো নি?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
“গুঞ্জন অবাক গলায় বললো, আসলে আমি ভেবেছিলাম উনি বোধহয় আমার কল্পনাতে এসেছেন, কোনোদিন তো দুপুরে অফিস
থেকে ফিরেননি,তাই ওনার ফেরার কথাটা মাথায় ছিলো না।”
“মৃন্ময়ের মেজো চাচী হেসে বললেন, বাহ!আমাদের ছেলেটা তোমার কল্পনায়ও আসে নাকি?”
“গুঞ্জন বললো, খুব আসে।তখন ইচ্ছে হয় উনার ফর্সা দুইটা টমেটোর মতো গালকে থাপড়াইয়া লাল বানিয়ে দিই।”
“একথা শুনে অনু ফোঁস করে উঠলো। ঝাঁঝ লাগা গলায় বললো,কি বলছো এসব তুমি? কারো স্ক্রিনে এভাবে আঘাত করলে স্ক্রিনে কি
এফেক্ট পড়ে তুমি জানো?ত্বকের সৌন্দর্যতা নষ্ট হয়ে যায়।”
“গুঞ্জন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছু বললো না।”
“অনু আবারও রাগী গলায় বলে উঠলো, আর তুমি এতক্ষণ আমায় বললে না কেন যখন আমি জিজ্ঞেস করছিলাম মুনু কোথায়?
এতো বেয়াদব কেন তুমি?বলতে বলতে ছুট লাগালো মৃন্ময়ের ঘরের দিকে।”
“এদিকে অনুর কান্ড দেখে দাদীমা গুঞ্জনকে গুঁতো দিয়ে কানে কানে বললেন, যা তুই।আমার নাতিটাকে বাঁচা।”
“গুঞ্জন অবাক হয়ে বললো,কি বাঁচাবো মানে?কি হয়েছে তোমার নাতির?”
-“কিছু হয়নি তবে এবার হবে!”
“গুঞ্জন ভ্রু কুঁচকে বললো, কি হবে?”
বৃষ্টি নামার পরে পর্ব ৮
“দাদীমা নিচু স্বরে বললেন,দেখছিস না?অনু কিভাবে দৌড়ে ঘরে গেলো?আরে, অনু আমার নাতির জন্য পাগল,বুঝলি?
দেশে ফিরলেই ওকে জ্বালিয়ে মারে।সারাদিন গলায় ঝুলে থাকতে চায়!”
“গুঞ্জন হাসি হাসি গলায় বললো,ইন্টারেস্টিং, ইট’স ভেরি ইন্টারেস্টিং।”
“দাদীমা গুঞ্জনকে বললেন, এখন ঘরে গেলেই দেখতে পাবি এই অনু কি কি করে!আমার মেজো ছেলে আমার
এই নাতনিটাকে মানুষ বানাতে পারেনি রে গুঞ্জন, পারেনি!”
“গুঞ্জন বললো,তাহলে মজা দেখে আসি!”
“বলেই একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে রুমে এলো। ভেড়ানো দরজাটা ঠেলে রুমে দেখলো,অনু একহাতে মৃন্ময়ের গলার উপর জড়িয়ে
ধরে মৃন্ময়কে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে!”
“গুঞ্জন এই দৃশ্য দেখে একটা চিৎকার দিলো আর সেই চিৎকারে মৃন্ময়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। নিজেকে অনুর সাথে দেখতে পেয়ে
এতটাই অবাক হলো যে,হা করে গুঞ্জনের মুখের দিকে তাকিয়ে গুঞ্জনের মুখের এক্সপ্রেশান দেখার চেষ্টা করছে।”