গুন্ডি মেয়ের ভালোবাসা পার্ট ২ - Golpo Bazar

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ২ || লেখা রিমি ইসলাম || Golpo Bazar

ইমপারফেক্ট কাপল

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ২
লেখা রিমি ইসলাম

কোনো মানুষের কথায় এতটা কষ্ট পাইনি যতটা তার কথায় পেলাম। বললাম,
— আপনি একটা জঘন্য মানুষ। বইটা ভালোই ভালো বলছি দিয়ে দিন।
অর্ক ভ্রুতে ভাঁজ ফেলে বললো,
— নো, নেভার। ইউ ফুল।
আমি অদ্রিজা। কখনো হারতে শিখিনি। তবুও
আমি হতভম্ব বনে গেলাম। এত খারাপ বিহেভিয়ার এর লোক কি করে বেস্ট ইউটিউব
সিঙ্গার হয়! এই সুশ্রী চেহারার ভেতরের রঙ যদি পাবলিক দেখতো তবে বুঝত। যাগ
গে, আমার এখন কাজ হাসিল করা বলে কথা। র‍্যাপিং শেষে দোকানী অর্ককে যেই না
বইটা হাতে দিয়েছে অমনি আমি বইটা টান দিয়ে নিতে যেতে অর্ক আরো শক্ত করে তা
ধরে ফেলে। আমি টানাটানি অব্যাহত রেখেই বললাম,

— বইটা দিন বলছি, ভালো মতো বলছি। এরপর আপনার রেপুটেশন পাবলিকের
সামনে ধূলোয় উঠিয়ে ছাড়বো। অর্ক বললো,
— মাই গড্, এ কোন ত্যাঁদড় মেয়ে রে বাবা! সামান্য একটা বইয়ের জন্য এত
সিনক্রিয়েট!
— ছাড়ুন বইটা আমাকে সমর্পণ করুন। ত্যাঁড়ামোর দেখেছেন কি! সব দেখবেন।
— আজব!! ছাড়বো না।আমাদের এহেন কর্মকাণ্ডে দোকানের সকল কাস্টমার থেকে
শুরু করে দোকানদার পর্যন্ত জড়ো হয়ে গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক দুজন মানুষের ছেলেমানুষী
অনেকের চোখে বিদ্রুপের কারণ হয়েছে। ফলস্বরূপ গুটিকয়েক মেয়ের মুখে
বেলাগাম উটকো হাসি সেঁটে বসেছে। দোকানের সহকারী ছেলেটা রিকুয়েষ্ট করে
বললো,

আমাদের ফেসবুক গুপে জয়েন হউন

— প্লিজ আপনারা এমন করবেন না। আশেপাশে প্রচুর লোক জড় হয়ে গেছে।
অর্ক একবার আশপাশ দেখে নিয়ে সাথে সাথে বইটা ছেড়ে দিয়ে সহজ হয়ে দাঁড়ায়।
হাজার হলেও সেতো ভীষণ পরিচিত মুখ। এধরনের আচরণে তার ভবিষ্যৎ খারাপ হতে
পারে ভেবে ও থেমে গেল। আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম,

— ইয়েস, আই উইন। অর্ক মুখ কুঁচকালো। ভিড় কমে মানুষ আবার নিজেদের কাজে
লেগে পড়লো। দুই একটা পাবলিক অর্কর ছবি মোবাইলে ধারণ করেও নিলো। অর্ক
মাথার টুপিটা আরো ভালোমতো দিয়ে সানগ্লাস ঠিক করে ফিসফিসিয়ে বললো,

— বইটা এখনো আপনাকে দেইনি। একটা ডিল করি আসেন। আপনি বইটা নিয়ে
যান। তারপর পড়া হলে ফেরত দিবেন। আগামী শুক্রবার এখানে ঠিক এই সময় দেখা
হবে। সাথে বই আনতে ভুলবেন না। এ্যন্ড বইয়ে একটুও দাগ বা ভাঁজ পড়া চলবে না।
আই রিকুয়েষ্ট ইউ।কথাগুলো বলেই গটগট করে হেঁটে চলে গেল।আমি একটা কথা
বলারও সুযোগ পেলাম না।বই নিয়ে বাসায় চলে এলাম।প্রথম ফোন করে তীথিকে সব
বলতেই ওতো বিচলিত হয়ে পড়লো। সাথে হিংসেও করলো।

যে বইটার জন্য এত মান, ইজ্জত খুইয়েছি তা হলো ‘ Buffy the vampire
slayer’. আমি পড়তে শুরু করলাম। বাইরে থেকে বইয়ের মলাট যেমন
ইন্টারেস্টিং ভেতরটা তার চেয়ে বেশি মজার। দু’দিনে বই পড়ে শেষ করলাম।
বৃহস্পতিবার রাতে বইটা আবারো র‍্যাপ করবো ভেবে টেবিলে রেখে কস্টেপ আনতে
গেছি। বাড়িতে বাবা-মা আর ছোট বোন নুক্তা ছাড়া কেউ নেই। আমার কোনো জিনিসে
কারো হাত দেয়ার পারমিশন নেই। কাজেই বইটা উন্মুক্ত রেখেই চলে গেলাম।

গল্প শুনতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিট করুন

তখন ঘটে বিপত্তি। হুটহাট নুক্তা এলো দুই মগ কফি হাতে। একটা আমার জন্য
, অপরটা ওর নিজের জন্য। টেবিলে আকর্ষণীয় কভারের বই দেখে আগ্রহবশত হাতে
নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিল।একহাতে ধরা কফিতে চুমুক দিয়ে অপর হাতে বই নিয়ে
বেশ হেলেদুলে পড়ছে নুক্তা।সেই সময় ঘটে আমার আগমন। নুক্তার হাতে বই দেখেই
আমার জান শেষ। এই মেয়ে ক্ষয় ক্ষতি ব্যতীত কোনো কাজ করতে পারে পারে।

— স্টপ! বলে চেঁচিয়ে উঠতে নুক্তার হাত হতে কফি গড়িয়ে পড়লো বইয়ের উপর।
তারপর বইয়ের যাচ্ছেতাই হাল। আমার মাথা দুলে উঠলো। অন্যের আমানত এনেছি।
তার উপর ওই খাটাশ ব্যাটা যদি দেখে তার বইয়ের এই দশা, তবে আমাকে বাংলাদেশ
ত্যাগ করিয়েই ছাড়বে। মাথা হাত দিয়ে বললাম,— আল্লাহ তুই এটা কি করলি?
নুক্তাও পুরো শকড। সে তড়িৎ অনিচ্ছুক হেসে বললো,

— সরি রে আপি, বকিস না প্লিজ। ফ্যানের নিচের রাখলেই শুকিয়ে যাবে।
— গাধী, ফ্যানের নিচে শুকালেও দাগ তো দূর হবে না। এই বিপদ আমি উদ্ধার পাবো কেমনে?বই ফ্যানের তলায় রেখে শুকানোর পর দাগ আরো কটকটে হয়ে বসে
গেল। বুঝতেই পারছেন কফির দাগ মানে সুপার গ্লু আঠার দাগ। আমার মনেও সেই
দাগ লেগে গেল। আতঙ্কের ছাপ। রাতে ঘুম হলো না। কাল সকালে কোন মুখে বই নিয়ে যাবো ভেবে পেলাম না।

আমাদের ফেসবুক গুপে জয়েন হউন

বইটা সুন্দর ভাঁজে র‍্যাপ করে সকালে নীলক্ষেতের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। নির্ধারিত
দোকানে পৌঁছে দেখি অর্ক আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত। তার উপস্থিতিতে একটু
কেঁপে উঠি। শিরশির করছে সমস্ত শরীর। যদিও জানি ওর সামনে ধরা খাওয়ার কোনো
চান্স নেই। তবুও সে যখন বাসায় যেয়ে বইয়ের নাস্তানাবুদ হাল দেখবে তখন আমাকে
আকাশ পাতাল ফুড়ে হলেও নিশ্চয়ই খুঁজে বের করবে।

তার মতন ভয়ংকর ছেলে আমি দ্বিতীয় টা দেখিনি। সে পারবে না এমন কোনো কাজ
নেই। কি বিচ্ছিরি ব্যবহার তার! আল্লাহ হেফাজত করো।অর্ক আজ আমায় দেখে প্রথম
হাসলো। আমি অবাক হই। বাব্বাহ, এই ছেলে দেখি হাসতেও জানে! রাবনের মুখে
সন্যাসীর হাসি। আমি কাছে যেতেই বললো,

— আসবেন ভাবিনি। তবুও গিফটের বই তো। না এসে উপায় নেই।
আমি উজবুকের মতো হঠাৎ প্রশ্ন করে বসি,
— কার জন্য?
অর্ক কেমন নাক ছিটকে বললো,
— আপনার না জানলেও চলবে। ইট’স পার্সোনাল। ওকে থ্যাংক ইউ। গুড বাই।
আশা করছি আমাদের আর কখনো দেখা হবে না।
কারণ আমি চাই না তা হোক।
আমিও গাছাড়া ভাবে বললাম,

— আমার বয়েই গেছে আপনাকে বার বার দেখতে! আমিও চাই না। গুড বাই।
আমি বইটা ওর হাতে দিয়েই দোকান ত্যাগ করি। মনে মনে ভাবি, ব্যাটা এইবার বুঝবি
ঠ্যালা। নির্ঘাত গার্লফ্রেন্ডকে দিবে বইটা। ওই মেয়ে যখন র‍্যাপ খুলবে তখনই হবে
ধামাকা। নিশ্চয়ই ভাব্বে অর্ক তার সাথে দুষ্টু ফাজলামো কিংবা অপমান হেতু এমনটা
করেছে। এটাই হওয়া উচিত ওই খচ্চর ব্যাটার সাথে।

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ২

নিশ্চয়ই ভাব্বে অর্ক তার সাথে দুষ্টু ফাজলামো কিংবা অপমান হেতু এমনটা করেছে। এটাই হওয়া উচিত ওই খচ্চর ব্যাটার সাথে।দুটো দিন ভালোই ভালো কেটে গেল। সদ্যসকালে উঠে চায়ের পেয়ালা হাতে বসেছি। আয়েশ করে চা খেতে খেতে নুক্তারসাথে গল্প জুড়েছি। নুক্তা উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

— বইটা দেওয়া পর লোকটা কিছুই বলেনি? অবাক করা ব্যাপারটা।
আমি মুখ বেঁকে বলি,
— অবাকের কি আছে? ও বুঝলেতো আমাকে বলবে। বইটা এত পারফেক্টলি
র‍্যাপ করে মুড়ে দিয়েছিলাম যে, ব্যাটা বুঝতেই পারেনি।নুক্তা হাসে সাথে আমিও।
এমন সময় কলিংবেল বাজতে বিরক্তি নিয়ে নুক্তা খুলতে গেল। সে ফিরলো হাতে
একটা সুন্দর প্যাকেট নিয়ে। আমি ইশারায় প্রশ্ন করতে বললো,

— তোর পার্সেল এটা। কে দিলো রে আপি?
— আমি কি জানি! দেখি দে তো।
পার্সেলের প্যাকেট খুলে ভেতরে একটা র‍্যাপ করা বই আবিষ্কার করলাম৷ আমি আর
নুক্তা হা হয়ে একে অপরকে দেখছি। কে দিতে পারে? আমি এবার ঝটপট খুলে যা দেখি
তাতে চোখ দুটো আমার বিস্ফারিত। কি ভয়াবহ কান্ড! সেই বইটা যেটা আমি অর্ককে
দিয়েছিলাম। ভেতরে পৃষ্ঠা উল্টে দেখি কফির দাগটা ঠিক রয়েছে। নুক্তা ঢোক গিলে বললো,

— বুঝেছিস আপি?
— হুম।
— ওই লোক বাসার ঠিকানা পর্যন্ত বের করেছে মানে ধরে নে যে কোনো দিন চলে আসতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। ভেরি ডেঞ্জারাস!
— খুব ভয় করছে যে নুকু।
— আরে ধূর রেখে দাও। যা হবার হবেই।
নুক্তার কথায় আমার ভয় কমলো না। সেদিন পার হয়েও যখন অর্ক এলো না তখন খুশি
হয়েও আবার হতে পারিনি। আজ আসেনি বলে যে কখনোই আসবে না তা বলা মুস্কিল।
সে আমাকে জব্দ করতে কি না করবে ভেবেই আমার রাতের ঘুম উবে গেল।

সকালে ঘুম ভেঙে সব ভুলে গেলাম। ব্রেন বেশি চাপ নিতে পারেনি বলে একা একাই
ডিলিট মেরে দিয়েছে। নিত্যদিনের কাজ সেরে তিথিকে বলি জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির
সামনে আসতে। ওখান থেকে ওকে নিয়ে ভার্সিটিতে যেয়ে মাঠে বসলাম। এখন ক্লাস
অফ। তাই ফুল আড্ডা টাইম।বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে তিথি বললো,

— অর্ক দ্য স্টারের সাথে দেখা হয়েছিল গত পরশু।

আমি পানির বোতল থেকে সবে পানি খেতে লেগেছি। এমন সময় একথা শুনে
হেঁচকি উঠলো ভীষণ। তিথি তড়িঘড়ি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
— ঠিক লাগছে?
ওর কথার জবাব দেওয়ার অবস্থায় নেই।
আমি পাল্টা প্রশ্ন করি,
— কোথায়, কিভাবে দেখা?
তিথি ন্যাকা হেসে বললো,

— তুই যেদিন থেকে বললি নীলক্ষেত ওর সাথে বই কিনতে যেয়ে দেখা, সেদিন থেকে
মনে মনে প্ল্যান করি আমিও যাবো। তাই সেখানে গিয়ে দেখি ছেলে হাজির। আমিতো
বিস্মিত। একটা মানুষ প্রত্যেকটা দিন বইয়ের দোকানে কি করে? পরে আগ বাড়িয়ে
কথা বলতে আমি শুরুতেই তোর পরিচয় দিয়ে বলি, আমি অদ্রিজার ফ্রেন্ড।
প্রথমে চিনতে পারলো না।পরে যখন বললাম ওই যে যার সাথে বই নিয়ে
টানাটানি ওই মেয়েটার ফ্রেন্ড। তারপর চিনতে পারলো। অর্ক বললো ও নাকি
তোর নাম অদ্রিজা সেটা জানেই না।আমি কাঁপা গলায় বললাম,

— তুই কি আমার বাসার ঠিকানা ওকে দিয়েছিলি?
— আরে হ্যাঁ, ঠিকানার কথা শুনে মনে হলো। ও আমার কাছে তোর ঠিকানা আর ফোন
নাম্বার চেয়েছিলো। তোকে থ্যাঙ্কস বলতে। তুই না-কি ফার্স্ট দিন ওকে অনেক হেল্প
করেছিলি লেডিস টয়লেটে ঢুকে পড়েছিল যেদিন।

— মরেছি, আমার মরার টিকেট কনফার্ম করে এসেছিস তুই তিথি।

তিথির সাথে কথা শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হই। একটা রিক্সার দেখা
পেলাম না। কটকটে রোদের তাপে ঝলসে উঠছে পুরো শরীর। তখনই পাশে
কেউ একজন দাঁড়িয়ে বললো,
— হাই মিস অদ্রিজা! হাউ ওয়াজ দ্য ডে?
কটকটে করে তাকিয়ে ঝাড়ি দিতে যাচ্ছি তখন
দেখি ওই ছেলে এখানেও হাজির।
— অর্ক আপনি?
— গিফট কেমন লেগেছে?
আমি ঢোক গিলে বললাম,
— কার গিফট? কেনই বা গিফট?
অর্ক সেসবের তোয়াক্কা করলো না। একটা রিক্সা ডেকে বললো,
— উঠুন।

আমি নাবালিকার মতো সব কথায় হ্যাঁ মিলিয়ে উঠে পড়তেই পাশে অর্কও উঠে বসে।
আমি থ। এই ছেলে বাসা পর্যন্ত সাথে যাবে না তো? তাহলে আমার বারোটা বেজে যাবে।
অর্ক আমার নজর লক্ষ্য করে বললো,
— আপনাকে নিয়ে একটু ঘুরবো। সামনে কোথাও ফুচকার দোকান দেখলে রিক্সা
থামিয়ে খাবো। খাবো বলতে আপনি খাওয়াবেন আমাকে। একটা ট্রিট পাওনা আপনার
থেকে।
— ট্রিট?
— জি। আপনি আমার বই অক্ষত রাখতে পারেননি। ট্রিট তো পাওনাই।
আমি পড়ি ভীষণ বিপাকে। জানি না এ জল কতদূর গড়াবে। মনে হচ্ছে আমার জীবন
তছনছ করেই ছাড়বে। অর্ক কি ফন্দি আঁটছে তা জানা না থাকলেও এটা বুঝি ঘোর
বিপদ ডেকে আনবে ছেলেটা।

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ১

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.