ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ৪- Golpo Bazar

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ৪ || কষ্টের গল্প || Golpo Bazar

ইমপারফেক্ট কাপল

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ৪
লেখা রিমি ইসলাম

স্টুডিওর লোকগুলো অদ্ভুত চোখে আমাকে এবং তিথিকে দেখছে। অর্ক প্র্যাকটিস
রুমে থাকার দরুন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। প্রায় এক ঘন্টা পর অর্ক বেরিয়ে
আসলো। ওর চোখ লাল, মেজাজ খিটখিটে বোঝাই যাচ্ছে। কোনো একটা ব্যাপারে
নিশ্চয় ভীষণ আপসেট। তবুও আমাদের দেখে হালকা হেসে বললো,

— তোমরা অনেকক্ষণ ওয়েট করলে তার জন্য স্যরি। আমার কাজ
এর প্রেসার ইদানীং একটু বেশি যাচ্ছে। তিথি বললো,
— সে বুঝতেই পারছি।
অর্ক পুনরায় হাসে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
— কি অবস্থা অদ্রিজা? আমার তো সকাল থেকে খেটে খেটে পেট ফাঁকা।
কিছু অর্ডার করি? কি খাবে, পিৎজা?
— আমার কোনো কিছুতেই প্রবলেম নেই।
অর্ক কুইক ফোন করে পিৎজা অর্ডার দিলো। তিথি মিটমিট করে হাসছে।
আমাকে চুপিচুপি বললো,

— দেখছিস ছেলেটা আমাদের কত খাতির যত্ন নিচ্ছে? আমিতো ডাবল ফিদা।
তিথির কথাটা শুনতে মন্দ না হলেও আমার ভেতরে এর প্রভাব পড়লো না। অর্কর
মাঝের হেঁয়ালিপূর্ণ আচরণ আমাকে ডিপ্রেশনে ফেলে বারবার৷ প্রথম দিকে তার প্রতি
আমার মনে যে সফ্ট কর্নার ছিলো এখন তা শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে। পিৎজা ডেলিভারি
দিতে এলো একটা কমবয়সী ছেলে। পেমেন্ট এর বেলায় এসে অর্ক আমাকে ইশারায়
ডাকলো। তিথি আর আমি রুমের কোণার দিকের সোফায় বসে ছিলাম। ওর ডাকে উঠে
যেতেই বললো,

আমাদের ফেসবুক গুপে জয়েন হউন

— টাকা দাও বিল পে করব। আমি তাজ্জব হয়ে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছি। আমি কেন পে
করব? সেধে সেধে নিজেই অর্ডার করলো। একবারের জন্যও তো আমি বলিনি অর্ডার
করতে। মনে মনে শত গালি আর প্রশ্নের তুফান থাকলেও বাস্তবে চুপ করে থাকলাম৷
অর্ক আবার বললো,

— কি হলো? টাকা দাও। নেই?
— কত?
দাঁত চেপে বললাম।
— দুই হাজার সাতশত টাকা মাত্র।
— দুই….হাজার..সাত…শত? এই আপনি পাগল?
অর্ক ভ্রূ নাচিয়ে বললো,
— তিনজনের জন্য তিনটে অর্ডার করেছি। আমি বসে গিলব তোমরা কি চেয়ে দেখবে?
বের করো বলছি টাকা। এটাও তোমার তরফ থেকে আমার পাওনা ট্রিট।
মাড়ি চেপে সহ্য করে পার্স থেকে টাকা বের করে দিলাম। টাকাগুলো দিতে এত কষ্ট
হচ্ছিল! আম্মুর কাছে আবদার করে একটা ড্রেস কিনতে কত প্যানপ্যান করে তিন
হাজার টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলাম। প্ল্যান মতো এখান থেকে বেরিয়ে শপিং মলে যেতাম।
হাতে বাকি মাত্র তিনশত টাকা। জামা কেনা আমার লাটে।

অর্ক গোগ্রাসে পিৎজা গিলছে। তিথিও বেশ সাচ্ছন্দ্যে খাচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হলো
ওরা আমার টাকা ছিঁড়ে খাচ্ছে। কোনো মতে এক টুকরো খেয়ে বাকিটা রেখে দেই।
তিথির পিএস হবার চাকরি কনফার্ম হলো। চলে যাবার পূর্বে অর্ক রিকুয়েষ্ট করলো তার
গান গাওয়া শুনে যেতে। অর্থাৎ সে এখন গাইবে আর আমরা বাহবা দিতে বসে থাকবো
। এর কোনো মানে হয়?

গল্প শুনতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিট করুন

অর্ক রেকর্ডিং রুমে গ্লাসের ওপারে আর আমরা এপারে। সাউন্ড বক্সে ওর গান শুনে মুগ্ধ
হচ্ছি বরাবরের মতন। নতুন করে ফ্যান হয়ে গেলাম আবারো। গান শেষে এপারে
করতালির ধ্বনিতে ভেসে উঠলো।
অর্ক গ্লাসের এপাশে এসে সবার উদ্দেশ্যে বললো,

— থ্যাংক ইউ গাইজ। ইট ইন্সপায়ার মি আ লট। মিউজিক ডিরেক্টর তার প্রশংসায়
পঞ্চমুখ।সবার সাথে কথোপকথন শেষে হঠাৎ করেই অর্ক বলে উঠলো,
— অদ্রিজা নামক আমাদের সামনে অবস্থিত মেয়েটার গলাও বেশ সুন্দর। হয়ে যাক
একটা সং গেয়ে শোনাও। যদি পারফেক্ট হয় তবে আমার অপজিট ফিমেল ফয়েজটা
তোমার নেওয়া হবে। আমি চোখ গোল করে অত্যাধিক বিস্ময় সূচক দৃষ্টিতে তাকালাম।
কিন্তু কে শোনে কার! অর্ক আর তিথি যাচ্ছে তাই করে আমাকে ফোর্স করলো। এক
প্রকার অসহ্য হয়েই গেলাম। মাইক্রোফোনের কাছে দাঁড়িয়ে কি গাইব করে যখন
দিশেহারা তখন একটা নিজের মতো দুই লাইন গেয়ে নিলাম।

” ভাল লাগেনা এত যন্ত্রণা
পড়ব এখন কিযে মন্ত্রণা!

কপাল আমার ফুটলো, পড়লাম আমি কোথায়?”
— স্টপ।
অর্কর সাথে বাদ বাকি টিম মেম্বার চিৎকার করে উঠলো। আমার মার্কারি গলার
আওয়াজে ওদের নাস্তানাবুদ হাল বোঝাই যাচ্ছে। তবে এখানে সম্মানটা তো আমারই
গেল। আমি ওদের কাছে আসতেই দলের একজন বললো,

— আপু সব করেন বাট গান করেন না। জনগন মাঠে মারা পড়বে। ওদের আকস্মিক
মৃত্যুর জন্য আসামি আপনাকে বানানো হবে। অর্কর দিকে তাকাতে দেখি ওর ঠোঁটে
অবজ্ঞার হাসি লেগে আছে। এই ছেলেটাকে আমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। আজ
সকলের সামনে মাথা কাটা পড়লো। মিউজিক ডিরেক্টর বললো,

— তোমার গানের সাথে জগতের কোনো মিউজিক জোড়া তালি দিলেও গান কেউ
শুনবে না। একে তো কণ্ঠগত প্রবলেম, তার উপর গলার হাই বা লো স্কেলের মাপ তুমি
জানো না। অর্ক এবারে মুখ খুলে বললো,
— অদ্রিজা চলো তোমাদের বাইরে এগিয়ে দেই। তাছাড়া আজকের মতো আমার কাজ
শেষ। আমি বুঝলাম ব্যাটা কোন কাজ শেষের কথা বললো। তিথি তো অর্ক যা বলবে
তাতেই মাথা দুলিয়ে সায় জানাবে। আমার প্রবলেম বলার মতো কিংবা বোঝার মতো
কেউ নেই।রিকশায় করে যেতে যেতে তিথি একটু পর পর গা দুলিয়ে হেসে উঠছে।
আজকের বিনোদনে সে আবেগাপ্লুত। আমি রেগে বলি,

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ৩

— খবরদার দাঁত কেলিয়েছিস তো। এত হাসি কই পাস?
— আর যাই বল, অর্কর সাথে তোর জুটি যায় না। একদম ইমপারফেক্ট
কাপল যাকে বলে।
আমি মুখ বেঁকে বলি,
— আমার বয়েই গেছে ওর সাথে জুটি বাঁধতে। জঘন্য ছেলে। শুরু থেকেই জীবনটা
তেজপাতা করে দিয়েছে। ওর মতো কেউ পারমানেন্ট লাইফে আসলে আমি চারদিনে
কোমায় চলে যাবো। এক সপ্তাহ অর্কর সাথে আমার আর দেখা নেই। তিথি বেশ জমে
পিএস এর জব করছে। বলতে গেলে তার সাথেও কথা তেমন একটা হয় না। যখন থেকে
অর্কর জব জয়েন করেছে তখন থেকেই শুধু দ্য স্টারের প্রশংসা। বিধায় যোগাযোগ
টোটালি অফ করতে বাধ্য হয়েছি। একদিন হঠাৎ ই তিথি এলো।

ইমপারফেক্ট কাপল শেষ পর্ব

ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব ৪
লেখা রিমি ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.