Rain Of Love - Golpo Bazar

Rain Of Love part 1|| ফারজানা আফরোজ

Rain Of Love

Rain Of Love part 1
ফারজানা আফরোজ

কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বার বার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এক রাজ্যর বিরক্তি নিয়ে বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে
শুভ্রা। শুভ্রাকে দেখেই মনে হচ্ছে রাগে তার মাথা আগুন হয়ে আছে। মুখ দিয়ে বার বার অকথ্য ভাষায় গালি
দিতে চেয়েও আশে পাশে মানুষ থাকার জন্য মনে মনে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে।
—” আজ আমি এই মেয়েকে রেখেই চলে যাবো। সব সময় দেরি করবে। জন্মের সময় হয়তো দেরি করে
এসেছে। লেট লতিফ মেয়ে একটা।”
বাস তার সময় মতো স্টেশনে হাজির হয়ে গেছে। শুভ্রা আশে পাশে এদিক ওদিক তাকিয়ে তারিনকে দেখতে না
পেয়ে রাগে বাসে উঠে পড়লো।

বাসে উঠার পর শুভ্রার রাগ এখন আকাশের সপ্তম চূড়ায় পৌঁছে গেল। তারিনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে
সে ভুলেই গিয়েছিল তাড়াতাড়ি বাসে উঠার কথা। বাসে এখন জায়গা নাই বললেই চলে। একটি সিট তাও
আবার জানালার সিট ছাড়া। শুভ্রা দ্রুত গতিতে ওই সিটের দিকে পা বাড়ালো। কথায় আছে নাই মামার চেয়ে
কানা মামা ভালো দিন দিন এখন বাসের সিটের সে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে কিছুদিন পর ড্রাইভারের কোলে বসে
যেতে হবে।
শুভ্রা বসে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে আধা বোতল পানি শেষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেললো।

—” এক্সকিউজ মী ম্যাম।”
পাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠ শুনে শুভ্রা পাশ ফিরে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলেকে দেখতে ফেলো।
চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলল…..
—” সরি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। অন্য কোথায় চেষ্টা করেন।”
ছেলেটি হয়তো এই রকম কথা শুভ্রার কাছ থেকে আশা করে নাই । ভদ্রতার খাতিরে বলল…..
—” সরি আমি আপনাকে অন্য কিছু বলবো বলে ডেকেছি। আপনি যদি দয়া করে আমাকে……..”
ছেলেটি আর কিছু বলার আগেই শুভ্রা বলে উঠলো…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

—” সরি মাফ করবেন টাকা ভাংতি নেই। কি দিনকাল আসলো ইংলিশে কথা বলে জিন্স শার্ট পরে এখন ভিক্ষা
করতে আসে। গার্মেন্টস করেও তো টাকা আয় করা যায়। দেখতে তো মাশা-আল্লাহ ভালো ভিক্ষা করার কি
আছে আজব।”
ছেলেটি এইবার শুভ্রার কথায় বেশ ক্ষেপে গেল। রাগান্বিত স্বরে বলল……
—” আপনি আমার সিট দখল করে বসে আছেন এখন আবার আমার সাথে মিস বিহেভ করছেন। আপনার
মত অভদ্র মেয়ের জন্য আজকাল সব মেয়েদের অভদ্র বলা হয়।”
শুভ্রাও কম যায় না বসা থেকে উঠে ব্যাগ সিটে রেখে ঝগড়া করা শুরু করে দিলো……

—” ভাই রে ভাই কে তুমি? ভালো মত কথা বলতে পারেন না আবার এখন আসছে অভদ্র বলতে। আপনি
নিজেই তো মিনমিন গলার মঙ্গল গ্রহের খেদমত করা চাকর প্রাণী। আমাকে আসছে বলতে আমি না-কি
অভদ্র। যত্তসব । আজ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছি কে জানে।”
—” আপনি যার মুখ দেখেই ঘুম থেকে উঠেন আগে আমার সিট আমাকে দিয়ে পরে ভাবতে থাকেন। উঠুন
বলছি।”
—” এই সিট যে আপনার কোনো প্রমাণ আছে? কই আমি তো সিটের গায়ে আপনার নাম দেখতে পাচ্ছি না
তাহলে এই সিট আপনার কি করে হলো?”

—” আমিও তো আপনার নাম খুঁজে পাচ্ছি না তাহলে আপনি কেন বসেছেন?”
—” আজব অসভ্য ছেলে তো আপনি। সিট খালি ছিল তাই এসে বসে পড়েছি এখানে নাম থাকার কি কারণ?”
—” ধ্যাত আপনি কি আমাকে এই সিট দিবেন না?”
—” এক-দমেই না।”
ছেলেটি শুভ্রার সাথে কথায় না পেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই যেতে লাগলো। শুভ্রা আড়চোখে ছেলেটি দেখছে আর
মিটিমিটি করে হাসছে। আজকের সকালটা তার খারাপ যাওয়া সত্বেও এখন ভালো যাচ্ছে। মনে মনে বিশ্ব
জয়ের তৃপ্তি তার শরীর ও মন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো।

.

বাস থেকে নেমে কলেজ মাঠের উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করলো শুভ্রা। হটাৎ হাতে থাকা মুঠোফোন বেজে উঠলে
চোখ দুটি ছোট ছোট করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে ফোনটা রিসিভ করে বলল……
—-” আপনি এখন যে নাম্বারে ফোন দিয়েছেন সে এখন কলেজে পৌঁছে গিয়েছে। অনুগ্রহ পূর্বক যদি কলেজ
আসতে চান তাহলে পরের বাসে উঠে পড়ুন। ক্লাস শুরু হতে এখনও ত্রিশ মিনিট বাকি ধন্যবাদ।”
শুভ্রার ফোন কাঁটার আগেই তারিন বলে উঠলো…..
—” এক্সকিউজ মী ম্যাম আমি প্রায় এক ঘন্টা আগে কলেজ এসে পড়েছি। আপনার জন্য ওয়েট করতে করতে
লাস্ট বাসের আগের বাসে আমি চলে এসেছি। আর কি যেন বলছিলেন ক্লাস শুরু হতে ত্রিশ মিনিট বাকি ম্যাম
আপনার কি ফোন খারাপ না-কি মাথা খারাপ? ”

—“তোর মাথা খারাপ মাত্রই তো দশটা দশ বাজতে শুরু করেছে। ক্লাস তো দশটা চল্লিশে শুরু হয়।”
—” দশটা দশ নয় ম্যাম এগারোটা দশ বাজতে চলেছে। তাড়াতাড়ি ক্লাসে চলে আসুন। ম্যাম এখনও আসে
নাই।”

তারিন ফোন কেটে দিলো শুভ্রার মুখ এখন রসগোল্লার মতো হয়ে আছে। গতকাল শুক্রবার ছিল বলে ঘড়ির
সময় এক ঘন্টা কমিয়ে দিয়ে ছিল সে। এতক্ষণ তার মাথায় এই কথা আসে নাই। বাস্তব জগতে ফিরে আসার
পর এক মিনিটও দেরি না করে দ্রুত পা চালিয়ে ক্লাসের দিকে হাটা শুরু করলো। অনার্স ভর্তি বর্ষে এই নিয়ে
সে চতুর্থ বার ক্লাস করছে। কিছুদিন আগেই কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হলো। প্রজাপতির রঙিন
ডানার মত তার স্বপ্ন গুলোও খুব রঙিন। ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন গুলো এখন ধীরে ধীরে বড় হতে চলেছে। পরিবারের
ছোট মেয়ে হওয়ায় কোনো আবদার তার অপূরণ থাকে নি।

ক্লাস রুমে ঢুকে তারিনের সাথে বসে বাসের ঘটনা গুলো বলতে লাগলো। ক্লাসের ফাঁকে কথা বলার মজাই
আলাদা। সামনে স্যার বা ম্যাম লেকচার দিচ্ছে আর পিছন বা মাঝে বসে ম্যামের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে
কথা যাকে বলে রোজা রেখে সামনে খাবার রাখা। যদি খাবার খেয়ে ফেলা যায় রোজা হবে না তেমনি স্যার বা
ম্যাম দেখতে পেলে নানান ধরনের কথা ও প্রশ্ন ছুড়ে দিবে।

.

—-” ছেলেটি দেখতে কেমন রে হ্যান্ডসাম আছে?”
—“ভালো করে দেখিনি। ঝগড়া করার সময় কি এইসব দেখা যায় যে ছেলেটি কিউট না-কি বোকা? ”
তারিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলল……
—-” তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না এখন চুপচাপ ক্লাস কর দয়া করে আমার মাথা খাবি না।”
শুভ্রা তারিনের কথা কর্ণপাত না করে এমন একটি ভাব নিলো যেন এতক্ষণ তারিন তার সাথে বাজে বকবক
করে তার পড়ায় বিরক্ত করছিল।

রোয়ান ক্যাম্পাসে বসে ছোট চিকন লাটি দিয়ে বার বার দেওয়ালে বারী দিচ্ছে। রাগে তার সমস্ত শরীর জ্বলছে।
রোয়ানের বন্ধু সিফাত ও আবির বার বার জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে কিন্তু রোয়ান রাগের চোটে ঠিক মত কথা
বলতে পারছে না। চোখের সাদা অংশ লাল হচ্ছে রাগে।
—-” এত্ত বড় সাহস আমার সাথে নাটক করে। মেয়ে মানুষ বলে কিছু করেনি যদি ছেলে হতো তাহলে মেরে
তক্তা বানিয়ে ফেলতাম। বেয়াদব, ফাজি, অসভ্য ঝগড়ুটে মেয়ে কোথাকার। মন চাচ্ছে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে
ফেলি।”
রোয়ানের কথা শুনে আবির বলে উঠলো……

—-” আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
রোয়ান তাড়াতাড়ি তওবা পড়। মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে চিবিয়ে খাওয়ার কথা বলছিস। কিসব রাক্ষসের
মতো কথা বার্তা। ইয়াক ছিঃ।”
রোয়ান আবিরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আবির গিয়ে সিফাতের পিছনে লুকা-লো। রোয়ান চোখ বন্ধ করে
বলল……
—-” জুতার বারি খেতে না চাইলে ভাগ এইখান থেকে। এমনিতেই এখন মারতে খুব ইচ্ছা করছে। বেশি ফাউল
কথা বললে তোদের-কেই উড়া-ধুরা মারা শুরু করবো।”
সিফাত আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল……
—” মার খাবি?”
আবির মাথা এদিক ওদিক হেলিয়ে বলল……
—-” নাহ।”
সিফাত রোয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল…..

অনুভূতির অন্তরালে সকল পর্ব

—” চল মাঠে যায়। ঘুরাঘুরি করলে মন ভালো হয়ে যাবে।”
রোয়ান সিফাতের কথায় রাজি হলো। তিন বন্ধু হেঁটে মাঠের দিকে যেতে লাগলো। আবির এইদিকে ঘোষণা
দিচ্ছে……
—” অফার চলছে অফার। ফ্রী-তে মার খাওয়ার অফার। কেউ যদি ফ্রী-তে মার খেতে চান এক্ষুনি চলে আসুন।
কোনো অপরাধ ছাড়াই খুব ভালো মার দেওয়া হবে। যোগাযোগ করার ঠিকানা আবির ফ্রেন্ড ফর ফ্রী মার।
অফার অফার অফার খাঁটি শুদ্ধতম অফার।”
রোয়ান আবিরের কথায় হেসে দিল। আবির নিজের মাথার চুল টেনে বলল…..

—” রোয়ানের মত ছেলেকে হাসানো যে সেই ব্যাপার না। অনেক কষ্ট করতে হয়। তাকে যেহেতু হাসাতে
পেরেছি ইনশাআল্লাহ হাসির কোনো অনুষ্ঠানে সবাইকে হাসাতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না। ভাবছি হাসি
ওয়ালা কোম্পানি বা মীরাক্কেলে চলে যাবো। আর আমি শিওর জয়ী হয়েই ফিরবো।”
কথাটা বলে ছোট একটি ইটের টুকরা মাঠ থেকে কুড়িয়ে জোড়ে ছুড়ে মারলো। শুভ্রা আর তারিন হেঁটে
এই-দিকেই আসছিল। ছোট্ট ইটের টুকরা টি শুভ্রার মাথায় এসে পড়ল……
—” আহ……”

Rain Of Love part 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.