Rain Of Love - Golpo Bazar

Rain Of Love part 2 || you are only my queen

Rain Of Love

Rain Of Love part 2
ফারজানা আফরোজ

মাঠ ভর্তি মানুষের সামনে চড় নামক বস্তুটি গালে পড়লো। আবিরের এমন চড় খাওয়া অভ্যাস আছে কিন্তু
চড়টা ভুলবশতঃ আবিরের গালে না পরে রোয়ানের গালে পড়েছে। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চড় নামক
বস্তুটি তার সাথে কোনোদিন ঘটে নাই। গালে হাত দিয়ে ড্যাবড্যাব করে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছে রোয়ান।
—” অসভ্য, অভদ্র ছেলে কোথাকার। আমি বাসেই বুঝতে পেরেছি আপনি মানুষটা সুবিধার নয়। বাসে জায়গা
পান নি তাই এখন ইট মেরে রিভেঞ্জ নিচ্ছেন? আপনার নামে এক্ষুনি প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নালিশ
করবো।”

শুভ্রা প্রিন্সিপাল স্যারের উদ্দেশ্য যেতে নিলে রোয়ান রাগে খপ করে তার হাতটি ধরে ফেলে। এমনিতেই সে
শুভ্রার প্রতি ভীষণ রেগে আছে আর এখন সবার সামনে তাকে চড় মারাতে আরো ভীষণ রেগে গিয়েছে। মেয়ে
মানুষ বলে এখন শুভ্রা আর ছাড় পেল না। রোয়ান সবার সামনে শুভ্রার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। রোয়ানের
পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ শুভ্রার ফর্সা গালে বসে গিয়েছে।

শুভ্রা গালে হাত দিয়ে ভ্যাবলা-কান্তের মতো তাকিয়ে রইলো রোয়ানের মুখের উপর। অন্য কোনো সময় হলে
হয়তো কান্না করে সাগর বানিয়ে ফেলতো কিন্তু এখন তার কান্না করতে এক-দমেই ইচ্ছা করছে না। অবাক
চোখে তাকিয়ে আছে। শুভ্রা ভেবেছিল রোয়ান শান্ত ও বোকা প্রকৃতির ছেলে যা বলবে তাই করবে কিন্তু এখন
রোয়ানের মুখের দিকে তাকানোর সাহস সে পাচ্ছে না।
তারিন শুভ্রার গালে হাত রেখে রোয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল……

—-” আপনি ওকে থাপ্পড় কেন মেরেছেন? নিজে দোষ করে অন্যের গায়ে হাত তুলতে খুব ভালো লাগে
তাই না? এক্ষুনি বিচার দিবো প্রিন্সিপাল স্যারকে।”
—” নাম কি?”
শুভ্রা মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। তারিন শুভ্রার হয়ে বলল…..
—” সাজিয়া আফরিন শুভ্রা।”
—” আপনার নাম কে জানতে চেয়েছে আমি ওই বেয়াদব মেয়ের নাম জানতে চেয়েছি।”
তারিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুভ্রা কান্না করতে শুরু করে দিল। আজকের মত অপমান সে আর
কোনোদিন হয় নাই। কাঁদতে কাঁদতে বলল……

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

—” সাজিয়া আফরিন শুভ্রা আমার নাম। আর শুনুন আমি মোটেও বেয়াদব মেয়ে না। বেয়াদব ছেলে তো
আপনি কথা নেই বার্তা নেই ইট ছুড়ে মারেন যার তার গায়ে। পুলিশে দিবো আপনাকে বলবো আমাকে
মার্ডার করতে আমার কলেজে এসেছে এই ছেলে। তখন বুঝবেন এই শুভ্রা কি হুম।”
রোয়ান শুভ্রার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল……
—” ওয়াও কি সুইট কথা বার্তা। শোনো আমাকে পুলিশ বা প্রিন্সিপালের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।
তুমি চাইলে আমি এক্ষুনি ওদের ডেকে আনতে পারি। আনবো কি?”
আশে পাশে মানুষগুলো তাকিয়ে দেখছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। এই দেখে তারিন শুভ্রার
কানে কানে বলল…..

—” এই শোন এইখান থেকে চলে যাই। এই ছেলেকে দেখে মনে হচ্ছে পাওয়ার ফুল ছেলে। আমরা বাজে বকে
কিছু করতে পারব না। এখন কিছু বললে পরে এতে বিপরীত কিছু হয়ে যাবে। তাছাড়া সবাই দেখছে এইখানে
দাঁড়িয়ে থেকে অপমানিত হওয়ার চেয়ে কেন্টিনে বসে খাবার খেয়ে পরের ক্লাস করা ভালো হবে।”
শুভ্রা তারিনের কথা শুনে রাজি হলো। রোয়ানের দিকে ঘৃনা চক্ষু দৃষ্টিতে তাকিয়ে তারিনের হাত ধরে যেতে
নিলে পিছন থেকে রোয়ান ডেকে উঠলো…….
—” মিস শুভ্রা আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?”

শুভ্রা দাঁড়িয়ে রইল। রোয়ানের সাথে কথা বলার কোনো শখ বা ইচ্ছা কোনোটাই তার নেই। রোয়ান শুভ্রার মুখ
দেখে ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো। বুঝার পরেও মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে আবির আর সিফাতকে বলল……
—” গা-ইস ফাস্ট ইয়ারের কোনো রেগিং হয়েছিল?”
সিফাত মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে ফোন বের করে এমনকি একটি ভাব নিচ্ছে মনে হচ্ছে কোনো বড়
ধরনের অফিসে কাজ করে অফিসের কোনো মিটিং কবে কখন কোন সময়ে করে তার হিসাব ফাইলে রাখে
আবার দরকার হলে ফাইল বের করে সব ডিটেলস অফিসের কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক বলে। ফোন ঘাটাঘাটি
করার পর ভ্রু জোড়া কুচকে মাথার চুল টেনে বলল……

.

—” সরি রে এইবার ফাস্ট ইয়ারের কোনো রেগিং হয় নি।”
রোয়ান ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি রেখে দিয়ে তারিনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো…..
—” কোন ইয়ার?”
—-” ফাস্ট……?”
শুভ্রা তারিনের হাতে চিমটি কেটে দ্রুত গতিতে বলল…..
—” আমরা দ্বিতীয় বর্ষে।”
রোয়ান আগেই বুঝতে পেরেছে শুভ্রা ফাস্ট ইয়ারে কজ শুভ্রা তাকে চিনে নাই। নতুনরা অবশ্যই চিনবে না।
তবুও জিজ্ঞাসা করলো…..

—” কোন ডিপার্টমেন্ট? কত নম্বর রুমে ক্লাস করছো? ক্লাসের প্রধান কে? রোল কত?”
শুভ্রা এইবার খুব বড় মুশকিলে পরে গেল। ডিপার্টমেন্টের নাম আর ক্লাসের প্রধানের বলতে পারলেও কত
নম্বর ক্লাসে দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস হয় এইটা তার অজানা। শুভ্রার চুপ থাকা থেকে রোয়ান মনে মনে আরেকটি
কু-বুদ্ধি তৈরি করে নিলো…….
—” এমনিতেই দোষ করেছো তার উপর মিথ্যা তোমার শাস্তি তো খুব জটিল হবে মিস শুভ্রা। এই সিফাত আবির
বলতো এদের দুইজনকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?”
আবির বলল……

—” এদের দিয়ে ড্যান্স করালে কেমন হয়? ফ্রী তে বাঁদর নাচ দেখা যাবে হাহাহা।”
রোয়ান ধমকের সুরে বলল……
—” একদিন তোকে মারার জন্য আমার পায়ের দামী জুতো গুলো ছিঁড়তে হবে। সব সময় বাজে কথা মুখে
লেগেই থাকে।”
সিফাত আবিরের মাথায় চড় মেরে বলল……
—” ওর কথা বাদ দে। শোন দোষ যেহেতু তোর সাথে করেছে তাহলে শাস্তি তুইই দে।”
রোয়ান মনোযোগ সহকারে কিছুক্ষণ ভেবে বলল……

—” তোমাদের দুজনের পা একসাথে বাঁধা হবে। বিশ বার না থেমে দুইজন এই ভার্সিটির পুরো মাঠ, ক্যাম্পাস,
ক্যান্টিন,এমনকি পুরো বিল্ডিং গুলোতে একবার যাবে আরেকবার আসবে। মনে রাখবে বিশ বার।”
রোয়ানের কথা শুনে শুভ্রা মাঠে দাঁড়িয়ে পুরো ভার্সিটি চোখ বুলিয়ে নিলো। তিন ঘণ্টা ধরে হাঁটলেও দশ বার হয়
কি-না বলা মুশকিল। শুভ্রা করুন চোখে রোয়ানের দিকে তাকালো। শুভ্রাকে অনেকে বলেছে শুভ্রার চোখে
না-কি জাদু আছে । কেউ তার চোখের দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বারণ করতে পারবে না। আজ শুভ্রা পরীক্ষা করার
জন্যই রোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল…..

.

—” কিভাবে সম্ভব বিশ বার ভার্সিটি ঘুরা?”
শুভ্রার করুন দৃষ্টি রোয়ানের পাথরের মন গলাতে সক্ষম হলো না। রোয়ান তখন বলল…..
—” ওকে পঁচিশ বার দিলাম তাড়াতাড়ি যাও।”
আবির তিনটা রুমাল একত্রে বেঁধে তারিন আর শুভ্রার পা বেঁধে দিল। দুই বান্ধবী একে অন্যের কাঁধে হাত দিয়ে
হাঁটা শুরু করলো। কেউ কেউ তাদের দুজনের এই দৃশ্য ফোনে বন্ধী করছে কেউ বা হাসছে আবার কেউ দুঃখ
প্রকাশ করছে। তারিন এই অপমান সহ্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে লাগলো। শুভ্রা নিজেও
অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। সে ভাবছে আজ তার জন্যই তারিনের এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

এক ঘন্টা পঁচিশ মিনিট হওয়ার পর রোয়ান লোক পাঠিয়ে শুভ্রা ও তারিনকে জানিয়েছে আর হাঁটতে হবে না।
এতক্ষণ হাঁটার পর শরীর তাদের যায় যায় অবস্থা। একবার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা আরেকবার নিচে নামা
তাদের দুইজনের পা অচল হবার উপক্রম।
ধপ করে সিড়ির উপরে বসে পড়লো তারিন। আবির পাজি ছেলেটা অনেক শক্ত করে তাদের পা বেঁধেছে।
তারিনের পা লাল হয়ে আছে। শুভ্রা হাঁটার পথে উষ্টা খেয়ে পা ছিলে ফেলেছে।
—-” খুব খারাপ এই ছেলে। মন চাচ্ছে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে গঙ্গা নদীতে ফেলে
দেই। বজ্জাতের হাড্ডি।”

Rain Of Love part 1

শুভ্রার কথা শুনে তারিন বলল…..
—” বোন তুই এতক্ষণ হাঁটার পর কিভাবে এত কথা বলছিস? তুই মানুষ না রোবট? আমি আজ বাসায় যেতে
পারবো না। ”
—-” তুই না চিকন হতে চাচ্ছিস তাহলে তোর জন্য এই হাঁটা খুবই জরুরি। কয়েকদিন এইভাবে হাঁটলে চিকন
হয়ে যাবি।”
—” হ্যাঁ আমি প্রতিদিন এইভাবে হাঁটি আর কিছুদিন পর চিকনি চামেলি হয়ে বাতাসে উড়ে বেড়ায় এইটাই তো
তুই চাস তাই না?”
—” ধ্যাত তোর সাথে কথা বললেই কথা বাড়বে। এখন তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।”
—-” আমার পক্ষে আর হাঁটা সম্ভব না। যদি পারিস একটা গাড়ি নিয়ে আয়।”
শুভ্রা তারিনের দিকে তাকিয়ে আদুরে ভঙ্গিতে বলল….
—” আসো বাবু তোমায় কোলে নিয়ে বাসায় দিয়ে আসি। যত্তসব ঢং।”

শুয়ে আছে ঝিনুক। একটি হাত ঝিনুককে জড়িয়ে ধরেছে অন্য হাতটি ঝিনুকের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
হাতটি ধীরে ধীরে ঝিনুকের ঘাড়ের কাছে এসে স্লাইড করছে। ঝিনুকের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। এত রাতে তার রুমে
কে এসেছে ভাবতেই ভয় পাচ্ছে ও। কিন্তু ঝিনুক বুঝতে পারছে এই মানুষটি কে। এই স্পর্শ তার অনেক আগে
থেকেই চিনা। হটাৎ ঘাড়ে নখের আঁচড় কাটলো লোকটি। ঝিনুক কান্না জড়িত কণ্ঠে লোকটির দিকে
তাকিয়েই জোড়ে চিৎকার দিলো……..
—–” আহ্আআআআআআআ।”
——-” আহাআআআআআআআআ।”

Rain Of Love part 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.