Rain Of Love - Golpo Bazar

Rain Of Love part 3 || Sad love Story in bangla

Rain Of Love

Rain Of Love part 3
ফারজানা আফরোজ

শুয়ে আছে ঝিনুক। একটি হাত ঝিনুককে জড়িয়ে ধরেছে অন্য হাতটি ঝিনুকের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
হাতটি ধীরে ধীরে ঝিনুকের ঘাড়ের কাছে এসে স্লাইড করছে। ঝিনুকের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। এত রাতে তার রুমে
কে এসেছে ভাবতেই ভয় পাচ্ছে ও। কিন্তু ঝিনুক বুঝতে পারছে এই মানুষটি কে। এই স্পর্শ তার অনেক আগে
থেকেই চিনা। হটাৎ ঘাড়ে নখের আঁচড় কাটলো লোকটি। ঝিনুক কান্না জড়িত কণ্ঠে লোকটির দিকে তাকিয়েই
জোড়ে চিৎকার দিলো……..

—–” আহ্আআআআআআআ।”
——-” আহাআআআআআআআআ।”
তারিন ও রিয়ার চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে বর্ণ এসে ধমক দিয়ে বলল……
—-” এইভাবে চিৎকার দিলি কেন বাসায় কি ডাকাত পড়েছে?”
শুভ্রা তখন ঘুম মাখা কন্ঠ নিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল…..
—–” ভাইয়া এই দুইটা মেয়ে হরর মুভি দেখছে এখন যে ভুতের এন্ট্রি হইছে তাই দুইটা এইভাবে চেঁচাচ্ছে।
ওদের চিল্লানো শোনে আমি ঘুম থেকে দাঁড়িয়ে পড়েছি।”
বর্ণ দেখলো তারিন ও রিয়া একজন আরেকজনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। শুভ্রা সোফার উপরে উঠে
কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

—–” শুভ্রা মিথ্যা বলবি না তুই নিজেও তো ভীতু। ভয় পেয়ে সোফার উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আছিস।
এতই যেহেতু ভয় তাহলে দেখিস কেন এইসব হরর মুভি?”
শুভ্রা তখন বলল…..
—-” হরর মুভি দেখতে ভালো লাগে। তাছাড়া আম্মু আব্বু বাসায় নেই তুইও তো বললি আজ বাসায় আসবি না
তাই-তো আপু তারিনকে আজ আমাদের বাসায় থাকতে বলেছে। এখন দেখি তারিন আসার পরে তুইও চলে
এসেছিস।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

—–” আব্বু আম্মু বা আমি বাসায় থাকি আর না থাকি এই জন্য কি হরর মুভি দেখতে হবে?”
রিয়া বর্ণের কথা শুনে বিরক্ত গলায় বলল……
—–” বলছিনা ভালো লাগে। এখন যা তুই ঘুমা কিন্তু…..।”
রিয়ার কথার মাঝে কিন্তু শব্দটি থাকার কারণে বর্ণ খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো কেন রিয়া কিন্তু বলেছে।
—–” আর বলতে হবে না। ভয়ে তো এখন একটাও ঘুমাতে পারবি না। এখন আমাকে রাত জাগতে হবে
আপনাদের জন্য।”

শুভ্রা, রিয়া ও তারিন মাথা দিয়ে হ্যাঁ বুঝা-লো……
শুভ্রা-রা তিন ভাই বোন। বর্ণ সে হলো শুভ্রা আর রিয়ার আপন বড় ভাই। রিয়া হলো শুভ্রার বড় বোন। আদুরিনী
শুভ্রা ছোট থাকায় বর্ণ ও রিয়া তাকে খুব ভালোবাসে। শুভ্রার আব্বু আম্মু তারা শুভ্রার দাদু বাড়ি গিয়েছে সেই
সুবাদে তারিনকে নিমন্ত্রণ করলো রিয়া। তিনজন মিলে হরর মুভি দেখছে আর চিৎকার করছে। তিন মেয়ের
চিৎকারে বেচারা বর্ণ তাদের সামনে টুল বসিয়ে বসে রইলো…….

পরেরদিন সকালে বর্ণ নাস্তা এনে শুভ্রা, তারিন ও রিয়াকে দিলো। শুভ্রা ও রিয়া নাস্তা করে রেডি হতে চলে
গেলো। তারিন বসে বসে খাচ্ছে…..
—–” ওই কম খা এমনিতেই মোটা হয়ে যাচ্ছিস কিছুদিন পর তো তোকে পাওয়াই যাবে না। কেউ ফুটবল
ভেবে নিয়ে যাবে।”
—-” তুমি আমার খাবারে নজর দেও কেন ভাইয়া?”
খাবার মুখে দিয়ে তারিন বর্ণকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। তারিনের মুখে ভাইয়া ডাক শুনে বর্ণের ইচ্ছা করছে তারিনের
মুখ চেপে ধরে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে কিন্তু সংকোচ থাকার জন্য পারছে না। তবুও হালকা রাগ দেখিয়ে
বলল……

—-” আরেকবার ভাইয়া ডাকলে থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিবো। এখন যা গিয়ে রেডি হয়ে কলেজ যা।
পড়ালেখা না করলে আমার বাচ্চারা শিক্ষিত মা পাবে না।”
বর্ণের কথা তারিন এক কান দিয়ে শুনছে অন্য কান দিয়ে বের করছে। ও ওর মতো খাওয়া দাওয়া সেরে রেডি
হয়ে তিন জন মিলে ঘুরতে বের হলো। গতকালের ঘটনার জন্য লজ্জায় শুভ্রা আর তারিন কলেজ যাবে না তাই
রিয়াকে জোর করে নিয়ে গেল ঘুরার জন্য…………

.

তিনজনের হাতে হাওয়া মিঠাই ও পপকর্নের প্যাকেট। দশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিয়ার বয়ফ্রেন্ডের জন্য।
এক বছরের রিলেশন কিন্তু এখন অব্দি শুভ্রার সাথে সরাসরি দেখা হয় নি রিয়ার বয়ফ্রেন্ডের। হাওয়া মিঠাই
মুখে দিয়ে শুভ্রা রিয়াকে জিজ্ঞাসা করল…..
—-” দুলাভাই কিন্তু মোটেও সুবিধাজনক নয়। দুই মিনিটের কথা বলে দশ মিনিট লাগিয়ে দিচ্ছে তবুও আসার
কোনো খবর দেখছি না। এই রকম কেয়ার-লেস ছেলেকে কিভাবে পছন্দ করলি তুই আপু?”
শুভ্রার সাথে তাল মিলিয়ে তারিনও বলা শুরু করল……

—” ঠিক ঠিক দুলাভাই কিন্তু মোটেও ভালো কাজ করছে না। শালিকাদের এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা
করাচ্ছে এই দুলাভাই চাই না।”
রিয়া কিছু বলার আগেই একজন ছেলে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলল……
—” হ্যালো রিয়া সরি দেরি করে আসার জন্য।”
ছেলেটির মুখের দিকে শুভ্রা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম কোনো ছেলে দেখে শুভ্রা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটি দেখতে শ্যামলা হাইট এত বেশি না বাট চোখ গুলো বড্ড সুন্দর। ভাসা ভাসা চোখ গুলোতে এক
অদ্ভুদ ক্ষমতা আছে শুভ্রার মনে হয় কিন্তু তার বোন রিয়ার সাথে ছেলেটিকে একটুও মানায় না। রিয়া যে
প্রকৃতির মেয়ে সে কিভাবে এমন একটি ছেলে পছন্দ করলো শুভ্রা বুঝতে পারছে না।

রিয়া শুভ্রার চোখ দেখে আন্দাজ করতে পারলো কিছুটা। শুভ্রার ভুল ধারণা গুলো রিয়া ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য
শুভ্রাকে প্রশ্ন করলো……..
—-” আচ্ছা শুভ্রা বলতো ভালোবাসা কি? একজন মানুষ কিভাবে আরেকজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়? ভালোবাসা
কি রূপ দেখে হয় না-কি মন দেখে হয়?”
রিয়ার কথায় শুভ্রা উল্টো জবাব দিয়ে বলল…..
—-” জীবনে তো প্রেমেই করলাম না আবার ভালোবাসা কি বুঝবো।”
—” তবুও মনে যা আসে বল। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে তোর চিন্তা ভাবনা কেমন জানা দরকার।”

.

রাস্তার ধারে চারজন দাঁড়িয়ে কথা বলছে। তিনজন মেয়ে একজন ছেলে। আশে পাশে মানুষগুলো বার বার
আড় চোখে দেখছে। চারজন ব্যাক্তি সে দিকে নজর না দিয়ে তাদের মতই কথায় ব্যাস্ত। শুভ্রা রিয়ার প্রশ্নের
উত্তর যেভাবে দিল তা শুনে রিয়ার বয়ফ্রেন্ড ইক্ষাণ হেসে দিল। উত্তরটি ছিল…..
—-” ভালোবাসা হচ্ছে চায়না কোম্পানির মতো যা টিকলে অনেকদিন আর না টিকলে দুইদিন ও না।

ভালোবাসা হচ্ছে প্রতিদিন প্রেমিক প্রেমিকার প্যাঁচাল পারা। প্রেমিকের উক্তি ওই ছেলের সাথে কেন কথা
বলছো আর বলবে না কোনো চাচাতো মামাতো ভাইয়ের সাথে কথা বলবা না আরো কত কিছু আর প্রেমিকার
উক্তি ওই মেয়ে কেন তোমার পোষ্টে লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে, কখন ঘুম থেকে উঠবে কখন ঘুমাবে এইসব
আজাইরা কথা বার্তা বলা। প্রেম হলো প্রেমিকের অসুখ হলে প্রেমিকার হাম্মি দেওয়াতে অসুখ ভালো হয়ে
যাওয়া। প্রেম ভালোবাসা মানে সারারাত আজাইরা কথা বলে সাধের ঘুম জলে ভাসিয়ে দেওয়া। প্রেম ভালোবাসা
হলো স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে এইখানে ওইখানে ঘুরে ফেরা আর বাসায় হাজারটা মিথ্যা কথা বলা।

প্রেম ভালোবাসা হলো জানু বাবু সোনা লোহা তামা ইত্যাদি ইত্যাদি নামে ডাকা। প্রেম ভালোবাসা মানে তোমার
কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো তোমাকে ছাড়া অন্য কারো হতে পারবো না এমনকি আমি নিজেকে অন্য
কারো ভাবতে পারবো না কিন্তু ঠিকই কিছুদিন পর দেখা যায় প্রেমিকা অন্যজনের হয়ে গেছে আর প্রেমিক
আবারো নতুন কাওকে খুঁজছে। প্রেম ভালোবাসা হলো আপনজনকে ফাঁকি দিয়ে অন্যজনের জন্য নিজেকে
বিলিয়ে দেওয়া। প্রেম ভালোবাসা হলো বাবা মা কে কষ্ট দেওয়া। আর এখন প্রেম মানে ওমা গো টুরু লাভের
মতো হাস্যকর ডায়লগ। এইসব ব্লা ব্লা ব্লা।”
ইক্ষাণ শুভ্রার কথা শুনে বলল…….

Rain Of Love part 2

—” রিয়া তোমার বোনের কথা শুনে এখন আমার মাথা ঘুরছে। সবাই যদি ওর মতো ভাবতো তাহলে লাইলি
মজনু, শিরি ফরহাদ, রোমিও জুলিয়েট এই পৃথিবীতে এত কীর্তিমান হতো না। সবাই প্রেম ভালোবাসা ছাড়াই
নাম ডাক হয়ে যেতো।”
—-” ভুল তো কিছু বলি নাই ভাইয়া। আমি প্রেম ভালোবাসা যা মনে করি তাই বলছি। এইটা আমার মনের
কথা।”
রিয়া তখন তারিনের দিকে একই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। তারিন তখন কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো…….

—-” প্রেম ভালোবাসা যখন আসে তখন হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে যায়। বুক ধক ধক শব্দ করে। নিঃশ্বাস খুব দ্রুত
চলাচল করে একদম বিমানের থেকেও ফাস্ট। তখন ভালোবাসার মানুষের সামনে যেতে লজ্জা করে। পুরো
মুখ লাল টমেটো হয়ে যায় ধমকা বাতাস আসে আর চুল উড়িয়ে দিতে শুরু করে পরে দুজন দুজনের চোখের
দিকে তাকায় আর হারিয়ে যায় এমন কিছুই পড়েছিলাম গল্পে। আবার স্টার জলসা বা স্টার প্লাস নাটকগুলোতে
ও দেখছিলাম এমন হয়। হিরো হিরোইন দুই হাজার মাইল দূরে থাকলেও বুঝতে পারে কে কোথায় আছে।”

ইক্ষাণের কাছে তারিন ও শুভ্রার কথাগুলো বড্ড ভালো লাগলো। মেয়ে দুইটা বড় হলেও স্বভাব চরিত্রে এখনও
বাচ্চাই আছে। ইক্ষাণ তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল……
—” আমরা কোথাও বসে কথা বলি?”
রিয়া, শুভ্রা আর তারিন সায় দিলো ইক্ষাণের কথায়।
রিয়া তখন ইক্ষাণে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল…….

Rain Of Love part 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.