Rain Of Love - Golpo Bazar

Rain Of Love part 5 || Revenge Story

Rain Of Love

Rain Of Love part 5
ফারজানা আফরোজ

পাঁচদিন কেটে গেল। তারিন আর শুভ্রা লজ্জায় আর পাঁচদিন ভার্সিটি যাবে তো দূর মুখে নাম পর্যন্ত আনে
নাই। শুক্রবার রিয়াকে দেখতে আসবে ইক্ষাণের বাসা থেকে। শুভ্রার বাবা মা ইক্ষাণের ব্যাপারে সব জেনেই
বিয়েতে মত দিয়েছে। যেখানে তাদের বিয়ের সমস্যা নেই সেখানে তারা অমত পোষণ করলো না। সকালের
নাস্তার পর থেকেই সাজানো হচ্ছে রিয়াকে। তারিন ও শুভ্রা রিয়াকে সাজিয়ে তারা সাজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।
বর্ণ একটু পর পর শুভ্রার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে আবারো চলে যায়। বর্ণ জানে মেয়েদের সাজতে সময়
লাগে আর এখান তিনজন মেয়ে সাজবে সময় তো লাগবেই। কিন্তু তারিনকে দেখা না পর্যন্ত তার শান্তি হচ্ছে
না। শুভ্রার ভয়ে দরজায় টোকা দিতেই পারছে না।

বর্ণ নিষ্পাপ বাচ্চার মত ইনোসেন্ট মুখ করে দরজার কাছে ফিসফিস করে দরজাকে বলল……
—-” আলীবাবা চল্লিশ চোরের সেই পাহাড়ি ঝর্নার মায়া দরজা হয়ে যা প্লিজ। আমার হবু বউকে দেখার জন্য
তর সইছে না। প্লিজ খুলে যা দরজা।”
যতই যা বলুক দরজা কি নিজ ভাবে খুলতে পারে? পারে না তাই মন খারাপ করেই বর্ণ চলে গেলো।

পাত্র পক্ষের সবাই এসেছে। সবাই বলতে স্বয়ং পাত্র আর তার বাবা মা। পাত্রর ভাই ও তার বন্ধুদের জন্য ওয়েট
করছে সবাই। আজেই বিয়ের সব কিছু ঠিক করে ফেলবে। ইক্ষাণের বাবা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত
হচ্ছে কিন্তু মুখে হাসি ভাব রেখে দিয়ে বিয়াই বিয়ানের সাথে ঠাট্টা করছেন। ছোট ছেলে তার অভদ্র তিনি খুব
ভালো ভাবেই জানেন। তিনি ইচ্ছুক ছিলেন না তার বদ ছেলে আসুক কিন্তু বড় ছেলের আবদারের জন্য না
করতে পারলেন না।সোফার এক কোণে শুভ্রা ও তারিন গালে হাত দিয়ে বসে আছে। তারিনের উল্টো পাশে বর্ণ
বসে আছে। তারিনকে আজ মারাত্মক সুন্দর লাগছে। চোখ এড়ানো দায় হয়ে যাচ্ছে তার।
তারিন শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলল……

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

—” তোর ভাই দেখ কিভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে?”
—-” ভাইয়ার চোখ ট্যারা কখন কোন দিকে তাকায় বুঝা যায় না।”
—” এমা কবে থেকে এমন হলো?”
—-” তোকে যেদিন থেকে দেখেছে। শোন, ভাইয়া তোকে পছন্দ করে। ভাইয়া যদি প্রপোজ করে সহজে রাজি
হবি না। অনেক ঘুরিয়ে পরে রাজি হবে। আর একটা কথা ভাইয়া তোকে যে গিফট দিবে অর্ধেক আমার
ওকে?”শুভ্রার কথা শুনে তারিনের খুব হাসি পেলো। নিজের ভাইয়ের জন্য সবাই কত কষ্ট করে যেন
তাড়াতাড়ি সেটেল্ড হয়ে যায় কিন্তু শুভ্রা একদম ভিন্ন। সে চায় তার ভাই দেবদাস হয়ে তারপর প্রেমিক হোক।

—” বুঝলাম। এখন বল আর কত-ক্ষন বসে থাকবো?”
—” জানি না রে। আপুর দেবর আসবে পরে না-কি বিয়ের কথা হবে। আজব লোক আজ যে তার ভাইয়ের
বিয়ের কথা হবে তার আগে আসা উচিত ছিল না। লেট লতিফ ছেলে একটা।”
কলিং বেল বেজে উঠলো। বর্ণ দরজা খুলে তিনজন ছেলেকে বাসার ভেতরে নিয়ে আসলো। শুভ্রা ও তারিন
ছেলে গুলোকে দেখে চোখ চড়ক গাছ হয়ে গেলো। কেননা তিনজন ছেলে আর কেউ না রোয়ান,সিফাত আর
আবির।

শুভ্রা উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। রোয়ান শুভ্রাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। রোয়ানকে দেখে শুভ্রার চোখ দুটি ভিজে
উঠলো কিন্তু মুখে প্রকাশ না করে তারিনকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
বিয়ের কথা বার্তা সব ঠিকঠাক করা হলো। বিশ দিন পর বিয়ে। রিয়া ও ইক্ষাণ খুব খুশি। রোয়ান সে তো রিয়ার
সাথে আড্ডায় মেতে উঠলো। রোয়ানের খুব পছন্দ হয়েছে রিয়াকে। রিয়ার কাছ থেকেই জানতে পারলো শুভ্রা
তার ছোট বোন।

.

বর্ণ তারিনকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো কিছু কথা না-কি বলবে। তারিন যাবার আগে শুভ্রাকে চোখ টিপ
দিয়ে গেলো। শুভ্রা চোখ টিপ দিয়ে মুখে দুষ্টুমির হাসি দিল। নিজের রুমে একা বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত
হচ্ছে সে। ড্রয়িং রুমে যেতে একদম ইচ্ছা করছে না তার। রোয়ান ও তার বন্ধুদের সামনে পড়তে ইচ্ছা করছে
না তার। সবার সামনে অপমানিত হওয়ার পর অন্য কেউ হলে হয়তো আর ভার্সিটি যেতো না কিন্তু শুভ্রা
মনকে সান্তনা দিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একা একা বোরিং ফিল লাগায় বাসার ছাদে চলে গেলো।
অস্বস্তি বোধ হলে প্রকৃতির সাথে সময় কাটালে শুভ্রার অস্বস্তি বোধ চলে যায়। প্রকৃতির সাথে কথা বলে এক
ধরনের ভালো লাগা কাজ করে তার।

পায়ে নূপুরের ছন্দ মিলিয়ে শব্দ রোয়ানের কানের কাছে আসতেই ফোন উপর থেকে নিচে নামিয়ে পিছনে ঘুরে
শুভ্রাকে দেখে তাকিয়ে রইলো। শুভ্রা ভাবেনি রোয়ান এইখানে আছে। যার জন্য সে সবার সাথে আড্ডা দিতে
পারছে না যার সামনে থেকে লুকাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে শেষমেশ কি-না তার সামনে আসতে হলো।
শুভ্রা রোয়ানকে দেখে চলে যেতে নিলে রোয়ান পিছন থেকে ডাক দিলো…..

—” মিস শুভ্রা?”
পিছন থেকেই বলল…..
—” কিছু বলবেন?”
—” সরি মিস বিয়াইন। সেদিন একটু বেশিই করে ফেলছি আপনার সাথে। ভাবির কাছ থেকে শুনলাম বেশ
কিছুদিন ধরে না-কি ভার্সিটিতে যাচ্ছেন না?”
—-” আমার ইচ্ছা ভার্সিটি যাবো কি না আপনাকে কেন বলবো?”
—” তাও ঠিক বাট আমার জন্য যদি না যান তাহলে দায় ভার তো আমারই তাই না?”
শুভ্রা শ্বাস ফেলে বলল…….
—” এইখানে কি করছেন আপনি?”
—” ফোনে নেট পাচ্ছিলাম না তাই ছাদে এসেছি। আপনাদের এইখানে রবি সিমের নেটওয়ার্ক নাই বললেই
চলে।”
—” আমাদের এইখানে গ্রামীণ সিম ভালো চলে তাছাড়া আপুকে বললেই তো আপু ইন্টারনেটের কোড বলে
দিতো।”

.

—” তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার প্রতি?”
—” রেগে থাকলে আর কি হবে। এখন তো আপনি আপুর দেবর হতে চলেছেন। রেগে থাকলে আত্মীয়তা
তেমন ভালো থাকে না।”
—” তোমাকে যেমন বাচ্চা স্বভাবের ভেবে এসেছি তুমি কিন্তু তেমন না। মন থেকে বড় মানুষের মত কথা
বলো।”
—” আমি আসছি।”
শুভ্রা যেতে নিলে তার পায়ের নূপুরের শব্দ আবারো বেজে উঠলো। রোয়ান তখন গেয়ে উঠলো……

টাপুর টুপুর বৃষ্টি নূপুর জলছবিরই গায়
তুই যে আমার একলা আকাশ
মেঠো সুরের ছায় রে মেঠো সুরের ছায়
রংবেরং এর বেলোয়ারি সাতরঙা রংমুখ
তোর মুখেতেই লুকিয়ে আছে
জীবন ভরের সুখ রে জীবন ভরের সুখ……..
শুভ্রা পিছন ফিরে বলল……

—” দয়া করে এই গলা নিয়ে গান গাইবেন না তাহলে মানুষ আপনাকে মারতে আসবে।”
—” গলা কি খুব খারাপ?”
—” বাজে গলা।”
—” আচ্ছা তুমি কি খুব বিরক্ত হচ্ছো আমার কথায়?”
শুভ্রা সত্যি সত্যিই খুব বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু নতুন আত্মীয়র সামনে কথাটা বলা ঠিক হবে না। কিছুদিন পর তার
বোন ওদের বাড়িতে যাবে তখন যদি প্রতিশোধ নেয় তাহলে খারাপ হবে। সেই ভেবে বলল……
—” বিরক্ত হচ্ছি না বাট আপনাদের তো চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই ড্রয়িং রুমে যদি কোনো কাজ
থাকে তাহলে তো সেই কাজ করতে হবে। তাই চলে যাচ্ছি।”
—” আমাদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তো দেখছি উঠে পড়ে লেগেছ।”
—” মোটেও না।”

Rain Of Love part 4

—-” থাক মিথ্যা বলতে হবে না। চিন্তা করবে না আমাদের বাসায় গেলে একমাস রেখে দিবো।
বাসা থেকে বের করে দিবো না।”
—” আসছি আমি।”
শুভ্রা দ্রুত পা চালিয়ে সিঁড়ির কাছে যেতে নিলেই সিফাত আর আবিরকে দেখতে পায়। সিফাত মুখে হাসি ভাব
নিয়ে বলল…..
—-” রোয়ান কি উপরে?”
আবির কথা কেড়ে নিয়ে বলল……
—-” রোয়ান কবে মারা গেছে তুই যে উপরে বলছিস?”
শুভ্রার সামনেই সিফাত আবিরকে পা দিয়ে লাথি মেরে বলল……
—” উপরে মানে ছাদে না-কি জিজ্ঞাসা করছি সব সময় উল্টা পাল্টা কথা।”
আবির শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলল…….

—-” বিয়াইন শাস্তি কিন্তু এখন থেকে আবারো শুরু হতে চলেছে। আগে তো ভয় পেয়ে কম শাস্তি দিয়েছি কিন্তু
এখন বেশি শাস্তি দিবো বিয়াইন হিসেবে।”
আবিরের কথা তারিন ফোড়ন কেটে বলল……..
—” এখন আমরাও জেনে গেছি বিয়াইদের শাস্তি কিভাবে দিতে হয়। গতবার তো সিনিয়র ভাইয়া হিসেবে চুপ
থেকে ছিলাম কিন্তু এখন আর চুপ থাকবো না।”

শুভ্রা তারিনের হাতে হাত রেখে সিফাত ও আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল……
—” সাবধানে থাকবেন কেমন কখন কি হয়ে যায় বুঝা মুশকিল। হিহিহিহি।”
দুইজন হাসতে হাসতে চলে যায়। আবির ও সিফাত ছাদে গিয়ে রোয়ানকে ডেকে আনলো।
দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে চলে গেল পাত্র পক্ষরা….

Rain Of Love part 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.