Rain Of Love part 6
ফারজানা আফরোজ
রাতে খাবার টেবিলে শুভ্রা, রিয়া, তারিন ও শুভ্রার বাবা মা বসে খাবার খাচ্ছে। বর্ণের মাথা ব্যাথার কারণে সে
ওষুধ খেয়ে শুয়ে আছে।
শুভ্রা তখন একটু দুষ্টুমি করার জন্য বলল…….
—” আম্মু আপুকে আর খাবার দিও না। দেখছো না আপু কত মোটা হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের পর তো আরো মোটা
হয়ে যাবে তখন সবাই আপুকে দেখলে হাসাহাসি করবে তাছাড়া দুলাভাই আর আপু তখন একসাথে কোথাও
ঘুরতে বের হলে সবাই বলবে আপু দুলাভাইয়ের বড় বোন। তখন কি আপুর ভালো লাগবে?”
শুভ্রার বাবা ছোট মেয়ের কথায় বেশ মজা পাচ্ছে। কিন্তু শুভ্রার মা ভয়ে চুপসে গেলেন। তিনি সাজ সজ্জা ,
রূপচর্চা নিয়ে বেশ সেনসিটিভ। ভয়ানক দৃষ্টিতে বড় মেয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে শুভ্রার দিকে তাকালেন। ভীত
গলায় বললেন……
—” এখন কি করবো শুভ্রা?”
রিয়া মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চিন্তা ও ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো শুভ্রার দিকে। শুভ্রা মেয়েটা মোটেও
সুবিধাজনক নয় খুব ভালো ভাবে জানে সে। শুভ্রার কাছে বেশ ভালো লাগছে রিয়ার মুখ খানা।
কিন্তু মুখে হাসি না রেখে গভীর গলায় বলল……
—” আম্মু আপুকে আজ তিতা করলার জুস খাওয়াও সাথে নিম পাতার রস দেখবে মোটা শরীর অর্থাৎ চর্বি বাপ
বাপ করে পালাবে।”
তারিন শুভ্রার কথা শুনে মুচকি হাসছে। শুভ্রার নজরে তারিনের হাসি চলে আসায় শুভ্রা আরেকটু মায়ের দিকে
দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বলল…..
—” ছিঃ ছিঃ নিজের প্রতিই লজ্জা করছে। আমাদের বাসায় নাদুস নুদুস একটা মেয়ে এসেছে কিন্তু যখন বের
হবে চিকনি চামেলি হয়ে। ছিঃ লজ্জায় রাস্তায় মুখ দেখাতে পারবো না। আম্মু তুমি আমার বান্ধবীকে এইভাবে
কষ্ট দিচ্ছ ছিঃ।”
শুভ্রার মা তারিনের দিকে তাকালো। তারিন হাত থেকে খাবার প্লেটে রেখে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছে যেন সে
তার সামনে কোনো ভুত দেখছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
—” শুভ্রা কি বলছিস এইসব? আমি তো তোদের বাসায় এসে আরো মোটা হয়ে যাচ্ছি। বাসা থেকে যে জামা
কাপড় পরে এসেছি সকালে সেগুলো তো গায়ে হচ্ছেই না এখন।”
তারিনের দিকে না তাকিয়ে খাবার মুখে নিয়েই বলল শুভ্রা………
—” ধন্যবাদ দোস্ত। জানি তুই খুব ভালো তাই আমাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিতে চাচ্ছিস না। কিন্তু আমি
প্রতিবাদী মহিলা আমার কাছে অন্যায় তো অন্যায়।”
রিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুভ্রার আম্মু সবাইকে থামিয়ে শুভ্রার কথা অনুযায়ী বাসায় করলা থাকায় তা
জুস বানিয়ে রিয়ার মুখে ঢেলে দিল। নিম পাতা আপাতত নেই বাট সকালে তিনি ঠিকই জোগাড় করে রাখবেন।
তারিনের খাবারে বেশি বেশি খাবার দিচ্ছেন। তারিন খেতে পারছে না কিন্তু শুভ্রার মা দিয়েই যাচ্ছেন।
রাতের খাবার পর…..
রিয়া মুখ চেপে ধরে শুভ্রাকে বকছে। পুরো মুখ তার তিতা হয়ে আছে। এমনকি বমিও পাচ্ছে তার। শুভ্রার দিকে
তাকিয়ে বলল…….
—” শুভ্রার বাচ্চা এমন কেন করলি আমার সাথে? তোর কোন জন্মের শত্রু ছিলাম আমি বজ্জাত মেয়ে। কেন
আমায় করলার জুস খাওয়ালি বল ফাজিল মাইয়া? এখন আমার কেমন যেন লাগছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বমি
করে দিবো ওয়াক।”
শুভ্রা রিয়ার কাঁধে হাত রাখলো। বড় বড় চোখ করে বলল……
—-” বিয়ের আগেই বমি ভাবা যায় এইসব? ছিঃ আপু মান সম্মান আর রাখলি না।”
শুভ্রাকে ধরে মারতে ইচ্ছা করছে রিয়ার কিন্তু পারছে না। এখন রিয়ার মাথা ঘুরচ্ছে। নিজের মাকে এখন তার
জেলে দিতে ইচ্ছা করছে। কেউ নিজের মেয়ের সাথে এমন করে? করলার জুস তাও আবার চিনি ছাড়া। ছিঃ
কি বাজে খেতে। রিয়া তখন তারিনকে উদ্দেশ্য করে বলল……..
.
—” ওই কেউ আমাকে ধর আমি এক্ষুনি পরে যাবো।”
তারিন দ্রুত গতিতে রিয়াকে ধরে। শুভ্রা খাটের উপর পা দুলিয়ে বসে আর তারিন ও রিয়ার কাজ কর্ম খুঁটিয়ে
খুঁটিয়ে দেখছে……..
তারিন রিয়াকে ধরে খাটে বসিয়ে নিজেও ধপ করে বসে পড়লো। গলায় হাত বুলিয়ে জোরে জোরে ঢেঁকুর
তুলছে।
—” আমার তো কথা বলতেই এখন কষ্ট হচ্ছে। আন্টি আজ যা খাবার খাইয়েছে আমি তো মনে হয় না মরে
বেঁচে আছি। ভাবছিলাম তোদের বাড়ির একমাত্র বউ হবো কিন্তু আজকের পর থেকে বউ হওয়ার ইচ্ছাটা সারা
জীবনের জন্য মিটে গেছে। তোর ভাইকে দেবদাস বানিয়েই ছাড়বে দেখিস।”
রিয়া তখন রাগী গলায় বলল……
—- “সব দোষ এই শুভ্রার। এখন এই ফাজিল মেয়ের জন্য আমার ইনোসেন্স মার্কা ভাইয়া-টাকে কেন কষ্ট
দিবি। কিছু বলতে বা মারতে হলে এই বজ্জাত মেয়েটাকে বল বা মার। ”
তারিন চিৎ হয়ে শুয়ে গায়ে কম্বল দিয়ে নিরুপায় সুরে বলল……
—“আমি এখন কিচ্ছু পারুম না রে বইন এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।কথা বলতেও এখন কষ্ট হচ্ছে হাত পা চলবে তো
দূর।আজ লাইট টা অন থাকুক কজ পেটে সমস্যা হতে পারে। বদ হজম হয়ে গেছে।”
রিয়া তখন চেঁচিয়ে উঠলো…….
—-” ওই তারিন তুই আজ ভাইয়ার রুমে গিয়ে ঘুমা। এমনিতেই বমি বমি ভাব লাগছে এখন আবার যদি তুই বায়ু
টায়ু বের করিস বমি করে সব ভাসিয়ে ফেলবো। ভাইয়া তোকে ভালোবাসে তার মানে তোর বায়ুও ভালোবাসে
যা বইন তুই।”
তারিন কিছু না বলে পুরো শরীর ঢেকে শুয়ে পড়লো। শুভ্রা এখন নিজের প্রতি লাগছে। তার আজকের দুষ্টুমি
বেশি করে ফেলেছে। মানুষের শরীর নিয়ে দুষ্টুমি করা একদম ঠিক না। এখন সারা রাত তারিন ও রিয়ার ঘুম
হবে না ভালো করে। এইসব ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে।
পরের দিন সকালে………
.
ইক্ষাণ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রোয়ান ইক্ষাণের কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বলল……
—” ভাইয়া এখনও বিয়ে করিস নি কিন্তু যেভাবে ঘুমাচ্ছিস মনে হচ্ছে সারারাত বউয়ের সাথে প্রেম আলাপ
করে বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছিস।”
ইক্ষাণ ঘুমের ঘোরে রোয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল……
—” রিয়া বেবি কোথায় ছিলে তুমি জানো কত গুলো ফোন দিয়েছি কিন্তু তোমার দেখা তো পাচ্ছিই না।”
—” আব্বে হালা ওহ্ সরি আব্বে ভাইয়া আমি ভাবী না তোর ওনলি ওয়ান ছোট ভাই ছিঃ আমার সাথে কি
করছিস তুই।”
বেসুরা গলায় গান ধরল ইক্ষাণ…….
—” তোমার দেখা নাই গো বউ তোমার দেখা নাই। একা একা রাত জেগে আমি তোমাকে খুঁজি বউ কিন্তু
তোমার দেখা নাই গো বউ তোমার দেখা নাই।”
রোয়ান অনেক চেষ্টা করার পরেও যখন নিজেকে ছাড়াতে পারছে না তখন হাতের কাছে টি টেবিল দেখে
সেইখান থেকে পানির জগ এনে ইক্ষাণের মাথায় ঢেলে দিল। ইক্ষাণ তড়িঘড়ি করে উঠে মাথা ঝাড়তে
লাগলো……
Rain Of Love part 5
—-” ওই কি করেছিস এইসব? আমার বিছানা বালিশ এমনকি শরীর ভিজিয়ে ফেলেছিস। অসভ্য ছেলে
কোথাকার। এক্ষুনি বাবাকে বলে তোকে বাড়ি ছাড়া করছি, ওয়েট।”
—” ভাইয়া তাড়াতাড়ি বল তুই তো জানিস এই বাড়িতে আমার একদমই ভালো লাগে না শুধু মাত্র তোর জন্য
এই বাড়িতে পরে আছি। এখন তুই যদি বিদায় করে দিস তাহলে তো আর এই বাড়িতে থাকার কোনো ইচ্ছাই
এই রোয়ানের নেই ওকে। বাঁচলাম বাবা।”
ইক্ষাণ বিছানা থেকে উঠে রোয়ানের পিটে চড় মেরে বলল……
—” তুই কোনোদিন ঠিক হবি না।”
—” আমি রোয়ান বস, সে অতীতে যেমন বর্তমানে তেমন আর ভবিষ্যতে তেমনই থাকবে ওকে।”
ইক্ষাণ তোয়ালে নিয়ে চলে গেল। রোয়ান তার রুমে গিয়ে সিফাতকে ফোন দিল……
—” হেই ব্রো কই তোরা?”
সিফাত মুখে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল…..
—-” আমাদের বিয়াইনের জন্য ধামাকা রেডি করছি। যেমন ভাবে বলেছিস তেমন ভাবেই হচ্ছে সব।”
—” ওয়াও গ্রেট । এখন শুধু বিয়ান সাহেবার কলেজে পা রাখা অব্দি ওয়েট করতে হবে। হাহাহা।”
রোয়ানের হাসিতে ফোনের ওপাশ থেকে সিফাত ও আবির হাসা শুরু করলো। আবির শিস বাজিয়ে বলল…
—” এই যে বিয়াইন-সাব, ভাব নিয়েন না
তিন তিনটা বিয়াই যেনো দেইখাও দেখেননা। হাহাহা”