সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১২ || sad valobashar golpo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১২
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘অন্তি কোথায় সে আজ খাবার টেবিলে সময়মত নেই কেন?যাও ওকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসো।’
সার্ভেন্ট মাথা নিচু করে বলল,
-‘স্যার ম্যাম তো বলেছেন উনি পরে খেয়ে নেবেন।’
অভিনব ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-‘কেন এখন খেতে কি সমস্যা?যাও গিয়ে ডেকে আনো বলবে স্যার ডাকছেন।’
-‘জ্বী আচ্ছা।’

সার্ভেন্ট চলে যায়।অভিনব বুঝতে পারছে অন্তি এই মুহুর্তে তার মুখোমুখি হতে চাইছে না।গতকাল রাতের কথাগুলো একটু না অনেকটাই বেশি অপমানজনক ছিল অন্তির জন্য।রাতে অভিনব প্রায় দুইঘণ্টার মতো অন্তির রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল শেষে আর না পেরে ফিরে এসেছে।অন্তিকে ডেকে অভিনবর গলা শুকিয়ে গিয়েছিল কিন্তু অন্তি একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেনি।

কিছুক্ষণ পর সার্ভেন্ট ফিরে এলো।সে অনেকটা ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
-‘স্যার স,,সরি ম্যাম আসতে চান না বলেছেন আমার কথা শুনেননি।’
অভিনব বুঝতে পারলো না সবাই তাকে এমন ভয় পায় কেন সে বাঘ না ভাল্লুক।অন্তি আসতে চাইছে না এখানে সার্ভেন্টের কোনো দোষ নেই তবুও সার্ভেন্ট ভয় পাচ্ছে অভিনবর সঙ্গে কথা বলতে ভাবটা এমন যেন অন্তিকে সাথে না নিয়ে আসার অপরাধে অভিনব ওনাকে মৃত্যুদন্ড দেবে।অভিনব খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো এই মুহুর্তে তার কানে তার দাদুভাইয়ের একটা কথা বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘কেউ রাগ করলে তার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য সর্বপ্রথম তাকে ফেস করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।তার আশেপাশে থাকবে আর নিজের কথাগুলো এক্সপ্লেইন করবে।সে তোমার সঙ্গে প্রথম প্রথম হয়তো বাজে ব্যবহার করবে বা ভয়াবহ বাজে ব্যবহার করবে কিন্তু ধীরে ধীরে সে ক্লান্ত হয়ে যাবে এবং তোমার কথাটা সে বোঝার চেষ্টা করবে।’

অভিনব অন্তির ঘরের সামনে গিয়ে দরজা টোকা দিতেই বুঝতে পারলো দরজা খোলা।অভিনব রুমের মধ্যে প্রবেশ করে চারপাশে চোখ বুলিয়ে অন্তিকে কোথাও পায় না।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে অভিনব পেছন ঘুরতেই দেখে অন্তি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে হাত মুছছে।অভিনব অন্তিকে গলানোর জন্য সর্বপ্রথম নিজের বিশ্ববিখ্যাত কিউট টেডি স্মাইল দিল কিন্তু এজ ইউজুয়াল অন্তি অন্তি অভিনবকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে হেঁটে ড্রেসিং টেবিলের দিকে যায়।অভিনব ব্যর্থ হয়েও হার মানলো না মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অন্তির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে আজকে বাহ তোমার চুলগুলো তো বেশ সুন্দর।’

অন্তি অভিনবর দিকে ঘুরে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।অভিনব মনে মনে বলল,
-‘এতো সুন্দর একটা হাসি দিয়ে প্রশংসা করার পরেও এমন এক্সপ্রেশন।নাহ অভিনব কাজ চালিয়ে যা এই মেয়ে যদি লোহা হয় তাহলে তুই আগুন।মনে রাখবি আগুন লোহাকে গলিয়ে দেয়।’
অভিনব সোফায় বসে রুমের চারিদিকে তাকিয়ে বলল,
-‘বেশ সুন্দর করে রুমটা সাজিয়েছো।ওয়াও আম ইমপ্রেসড।’
অন্তি মুখটা কুঁচকে আছে।সে বিরক্ত এবং শিহরিত অভিনবর এমন অদ্ভুত সব কম্লিমেন্টস শুনে।
-‘রুমটা আমি না আপনার পাঠানো হোম ডেকোরেটররা সাজিয়েছিল।’
অভিনব থতমত খেয়ে গেল সে কখনো কারো প্রশংসা করে নি তেমন একটা তাই কথাগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারছে না ঠিক মতো।অভিনব দমে না গিয়ে বলল,

-‘দেখ রুমটা হয়তো ওরা সাজিয়েছে কিন্তু রুমের মালিক রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন,,,,যেমন ধরো এই ফুলদানির ডাইরেকশনটা কি অসাধারণ আর ঐ দেয়ালের পোট্রেটাও কি সুন্দর করে রাখা হয়েছে।’
-‘হয়েছে আপনার?জীবনে কখনো কারো প্রশংসা করেছেন?কথার ধরণ দেখে তো মনে হচ্ছে জীবনেও করেন নি।’
অভিনব হতাশ হয়ে মাথা দুলিয়ে বলল,
-‘তুমি ঠিক বলেছো।’
-‘হাহ,,,এখন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে সোজাসুজি যা বলার বলুন।অপমানের কি আরো কিছু বাকি আছে না কি?’
অভিনব দ্রুত বলল,
-‘না না তুমি আমাকে ভুল ভাবছো আম সরি টু ইউ।আমি সত্যিই নিজের আচরণের জন্য অনুতপ্ত।’

-‘অনুতপ্ত?সরি? আমাকে এতোগুলো ভিত্তিহীন কথা বলার পর আপনার এই দুটো শব্দ আমার অতি নগণ্য মনে হচ্ছে।একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করে এনেছেন,জোর করে নিজের বাড়িতে রেখে দিয়েছেন শুধুমাত্র একটা ব্লাডি উইলের কারণে।আর এখন যখন আপনি তাকেই জোর করে বউ হওয়ার চেষ্টা করার জন্য যা নয় বলেন তখন তার কেমন লাগে বুঝতে পারছেন।আমি আপনার বউ হওয়ার চেষ্টা তো দূরে থাক নিজেকে কখনো আপনার স্ত্রী বলেও স্বীকার করি নি।,,,উল্টো আপনি সবসময় আমার স্বামী হওয়ার চেষ্টা করেছেন।সবসময় শুধু দায়িত্ব দায়িত্ব বলেন যেই কাজগুলোকে সেই কাজগুলো শুধুমাত্র একজন স্বামীর দায়িত্ব নয় তার অধিকারের মধ্যেও পরে।আমিও তো তাহলে আপনাকে অধিকার দেখানোর দায়ে কিছু কথা বলতে পারি তাই না?,,তাহলে শুনুন আপনি অন্তিকা রাহমানের স্বামী হওয়ার যোগ্য নন।’

অভিনবর কথাটা কেমন যেন গায়ে গিয়ে বিধলো।অন্তির চোখ লাল হয়ে গেছে সে একটু পর পর কেঁপে উঠছে রাগে সে হাপাচ্ছে এতোগুলো কথা একসাথে বলে।অভিনব বুঝতে পারলো অন্তি ক্লান্ত হয়ে গেছে এখন সে নিজের কথাগুলো এক্সপ্লেইন করতে পারবে।
অভিনব আলতো করে অন্তির হাত ধরে অন্তিকে সোফায় বসালো নিজের পাশে।অন্তি কটমট করে তাকালো।অভিনব চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘এভাবে তাকালে আমি কথাগুলো বলতে পারবো না।তাই প্লিজ অভিনব নামের মাসুম বাচ্চাটার প্রতি কিছু তো রহম করো।’
-‘আপনি?আর মাসুম বাচ্চা?আপনার বয়সে ছেলেরা দুই বাচ্চার বাপ হয়ে হয়ে যায় আর আপনি নিজেকে মাসুম বাচ্চা বলছেন?’
-‘আরে আমরা বয়সের দিকে কেন যাচ্ছি?,,কালকের ঘটনার জন্য আমাকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দেও?’

-‘ওকে বলুন।’
-‘দেখো আমি যা সত্য তাই বলবো।কাল তোমাকে কালো শাড়িতে দেখে আমি না চাইতেও থমকে গিয়েছিলাম।’
অন্তি কথাটা শুনে হতবাক।এই ছেলের ভেতরে লজ্জা শরম কিছুই কি নেই কেমন করে ডাইরেক্টলি এমন একটা কথা বলে ফেলল।অন্তি বোধ করলো সে লজ্জা পাচ্ছে তার গাল গরম হয়ে গেছে।অভিনব আবার ও বলল,
-‘দেখো সেই সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য হয়তো চোখ ছাড়া আমার সকল ইন্দ্রিয় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল যার কারণে আমি তোমার কথা শুনেও শুনতে পাইনি।যখন তুমি আমার হাত ধরে কেক কাঁটার কথা বললে তখন আমার মনে হলো তুমি আমাদের বিয়ের এনিভার্সারির জন্য এসব আয়োজন করেছো।তাই হঠাৎ’ই আমার মাথাটা,,,,।’
-‘গরম হয়ে গেল আর আমি তোমার সঙ্গে তাই অমন বাজে ব্যবহার করেছি,তাই না অভিনব?’

-‘এক্সেক্টলি থ্যাংকস আমার কথা বোঝার জন্য।’
-‘সো হোয়াট?এতে আমাকে করা অপমানগুলো তো আর মিথ্যে হয়ে যায় না।সত্যি কথা তো এটাই আমি আপনার যোগ্য নই ইউ ক্যান মেরি সাম ওয়ান বেটার দেন মি।আপনি আর আমি কেউই এই সম্পর্কে খুশি না।,,,দেখুন আমার ভালো লাগছে না আপনি প্লিজ এখান থেকে যান।’
-‘অন্তি তুমি আমাকে প্লিজ একটা সুযোগ দেও কথা দিচ্ছি আর কখনো আমি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবো না।,,তুমি যা বলবে আমি করবো।’
-‘ওকে তাহলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?’
-‘হুম পারব না কেন?অবশ্যই পারব করো তোমার প্রশ্ন।’
-‘আপনি ভালোবাসায় কেন বিশ্বাস করেন না?’
অভিনব কিছুক্ষণ চুপ থাকলো এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল হেসে বলল,

-‘তুমি আমাকে প্রথম দিন ও এই প্রশ্নটা করেছিলে আর আমার উত্তরটাও হয়তো তোমার মনে আছে।যদি আমার বন্ধু হও তাহলে তোমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেব।হবে আমার বন্ধু?’
অন্তি ঠোঁট কামড়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে রইলো সে বুঝতে পারছে না হ্যা বলবে না কি না বলবে।কেউ একজন বলেছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো’ই ভালো বন্ধু হতে পারে না।দুজনের মধ্যে কারো না কারো মনে একটা সময় অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়।অন্তি ভয় পায় সেই অন্যরকম অনুভূতির থেকে।তবুও অনেকটা সময় ভেবে অন্তি মনে মনে ভাবে,’যা হওয়ার হবে।এই লোকের মতো মানুষের প্রতি আমি কখনোই দূর্বল হব না।’

অন্তি হাত বাড়িয়ে দিয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
-‘ওকে ,আমি আপনার বন্ধু হবো অভিনব।’
অভিনব হাত মিলিয়ে বলল,
-‘আমার ক্লোজরা আমাকে অভি বলে ডাকে তুমিও অভি বলে ডাকতে পারো।’

শুভ্র যখন থেকে বলেছে,’থ্যাংকস না দিয়ে একটু মিষ্টি করে হাসলেই চলবে।’ তখন থেকেই সারিকার মাথা হ্যাঙ্গ হয়ে গেছে।শুভ্র ওকে এমনটা বলল কেন?সে কি বোঝাতে চেয়েছে এমন অদ্ভুত কথা বলে।
সারিকা অফিসের ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সে মুখে পানি ছিটিয়ে আয়নার দিকে তাকায়।সারিকা হাসার চেষ্টা করে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিকে দেখে।কোনো একটা কারণে সে ঠিকমতো হাসতেও পারছে না।সারিকার হাসিটা সারিকার কাছে কেমন ভিলেনের মতো মনে হচ্ছে।সারিকা বিরবির করে বলল,

-‘ছিহ্ এমন ভিলেন মার্কা হাসি কিভাবে দিলাম আমি।আমার নিজেরই তো গা ঝমঝম করছে হাসিটা দেখে।’
সারিকা দেখে তানি আর মনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেকাপ করছে আর গল্প করছে।সারিকা তানির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,
-‘ওকে একবার জিজ্ঞেস করবো শুভ্র স্যার আমাকে এমন কথা কেন বললেন?স্যারের নাম করে বলবো না বলবো কোনো এক ছেলে বলেছে।’
সারিকা কথাগুলো ভেবে তানি আর মনির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কেশে নিজের গলা ঝেড়ে নিজের উপস্থিতির জানান দেয়।তানি ও মনি দুজনে সারিকার দিকে তাকিয়ে ওকে গ্রিড করে।
সারিকা কিছুক্ষণ কথা বলে।তানিকে ডেকে বলল,
-‘মিস তানি আমার কথাটা শুনবে একটু?’

-‘জ্বী বলুন।’
সারিকা ফিসফিস করে বলল,
-‘আচ্ছা একটা ছেলে যদি বলে থ্যাংকস এর বদলে মিষ্টি করে হাসতে এর মানে কি?’
তানি ও মনি প্রথমে অবাক হয়ে সারিকার দিকে তাকায় এরপর হেসে বলল,
-‘এর মানে সে আপনার সঙ্গে ফ্লার্ট করছে আর সে আপনাকে লাইক করে।এটা তো জানা কথা।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১১

সারিকা হা হয়ে গেল।শুভ্র তাঁকে লাইক করে?কিভাবে সম্ভব?সারিকা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনের দিকে যেতে নিলে দেখে সামনে শুভ্র তার সেক্রেটারির সঙ্গে এদিকেই আসছে।শুভ্রর চোখও সারিকার দিকে পড়লো।সারিকা ব্যাপারটা খেয়াল করতেই অন্যদিকে হাঁটা ধরে যেন শুভ্রকে ফেস করতে না হয়।সারিকা এক প্রকার চোখমুখ খিচে দৌড় মেরেছে।
শুভ্র বোকা বনে চলে গেল মেয়েটা কি তাকে দেখেই এভাবে পালিয়ে গেল।কিন্তু কেন?

(গল্পের নায়ক-নায়িকা দুই জোড়া মানে অভিনব-অন্তি এবং সারিকা-শুভ্র।ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন,ধন্যবাদ।)

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.