সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৪
লেখক:রিয়ান আহমেদ
পৃথিবীতে সবারই কোনো না কোনো জিনিসের প্রতি মারাত্মক ভয় থাকে।এই ভয়টাকে বলা ফোবিয়া।সারিকার ফোবিয়া হচ্ছে ব্যাঙ নামক প্রাণীটা।অফিসের পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে থাকা সারিকা বুঝতে পারছে না এই ব্যাঙটা তার দিকেই কেন এগিয়ে আসছে।সারিকা চোখমুখ খিচে পেছনের দিকে দৌড় দিতে নেয় কিন্তু শুভ্র ব্যক্তিটা তার পথে বাঁধা হয়।সারিকা শুভ্রর বলিষ্ঠ বুকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রথমে মনে করে এটা মানুষ না খাম্বা?সারিকা শুভ্রকে সরি বলে আবার যেতে চাইলে শুভ্র সারিকার ডান হাতের কব্জি ধরে আটকে ফেলে।মেয়েটা তাকে বেশ কয়েকদিন যাবত চরম রকমভাবে ইগনোর করছে।আজ বাগে পেয়েছে তাই ছাড়ার প্রশ্নি উঠে না।সারিকা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
-‘স্যার প্লিজ ছা,,ছাড়ুন আম,,আমাকে যেতে দিন।’
শুভ্র অবাক হলো সারিকাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে।কিন্তু শুভ্র ভালো মানুষ না তাই সে সারিকাকে ছেড়ে না দিয়ে নিজের আরো কাছে নিয়ে এসে বাঁকা হেসে বলল,
—‘নাহ্ আজ তোমাকে ছাড়বো না।তুমি আমাকে অনেকদিন যাবত ইগনোর করছো তাই আজ এর একটা ফয়সালা করবো বুঝলে।’
সারিকা আর না পেরে আল্লাহর নাম নিয়ে শুভ্র নামের ব্যক্তিটার পিঠে একপ্রকার চড়ে বসে।শুভ্র কি বলবে?কি করবে কিছুই এই মুহুর্তে বুঝতে পারছে না।তার ভাবনার বাইরে ছিল যে এমন দিন কখনো আসবে।সারিকা চেঁচিয়ে বলল,
—‘ঐ ব্যাঙটাকে,,ওটাকে সরান প্লিজ ভাই প্লিজ।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
শুভ্র চেতে গেল তাকে এভাবে ভাই বলল কেন মেয়েটা?শুভ্র ব্যাঙটার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকে।ব্যাঙটাও বোধহয় শুভ্রর চাহনির মানে বুঝতে চাইছে তাই সেও চুপ করে দাঁড়িয়ে যায়।সারিকা ভয়ে কাঁপছে তার দাঁতের কম্পন দেখে মনে হচ্ছে তাপমাত্রা মাইনাস ডিগ্রিতে এসে নেমেছে।শুভ্র ব্যাঙটাকে ধরে ফেলে।এক সময় সে সাইন্সের স্টুডেন্ট ছিল তাই এসব ব্যাঙ ধরা তার কাছে বড় কোনো বিষয় না।শুভ্রকে ব্যাঙ ধরতে দেখে সারিকা এবার আর না পেরে শুভ্রর কাঁধ কামড়ে ধরে।শুভ্র মৃদু স্বরে চিৎকার দেয় এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে সারিকাকে রাগী স্বরে বলল,
-‘কি হচ্ছেটা কি?তুমি আমাকে কামড় কেন দিলে?’
-‘আ,,আপনি এই ব্যাঙটাকে হাতে কেন নিয়েছেন?প্লিজ নামান আমার ভয় করছে।’
শুভ্র হয়তো কথাটা শুনে মজা পেল তাই হেসে বলল,
-‘বাহ্ মিস এরোগেন্ট তাহলে ভয় ও পায়।কিন্তু এই কিউট লিটাল প্রাণীটিকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ তো আমি দেখছি না।দেখো কি সুন্দর,শান্ত ভাবে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে।’
সারিকা দিকে ব্যাঙটাকে এগিয়ে নিয়ে।সারিকা এবার বেশ জোরে চিৎকার করে বলল,
-‘আপনি এটা সরাবেন প্লিজ।আমি কিন্তু আপনাকে কামড়ে দিয়ে আপনার মাংস খুলে ফেলবো।’
শুভ্র ভয় পেল না সারিকার হুমকিতে।সে শান্ত স্বরে বলল,
-‘দেও কামড় পরে উসুল করে নেব কিন্তু এই ব্যাঙকে সরাবো না।তোমাকে আমার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না হলে এই ব্যাঙ তোমার শরীরের ওপর ছেড়ে দেব।’
সারিকা শুভ্রর এমন পাল্টা হুমকি শুনে কেঁদে দিল।সে সত্যিই অসম্ভব রকমের ভয় পাচ্ছে।সারিকা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব দরকার পড়লে নিউটনের সূত্র থেকে শুরু করে আইনস্টাইনের থিওরি সব বলবো,প্রমিস তবুও প্লিজ ওটাকে দূরে সরান।’
-‘এতো কিছু বলা লাগবে না।এখন কান্না থামাও সরাচ্ছি।’
শুভ্র ব্যাঙটাকে দূরে ছুঁড়ে মারলো সারিকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এতক্ষণে।সে শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।শুভ্র সারিকার হাত ধরে বলল,
-‘চলো এখানে কথাটা জিজ্ঞেস করা যাবে না।একটু নির্জন জায়গায় যাব।’
সারিকা কথাটা শুনেই হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ভ্রূ জোড়া কুঁচকে বলল,
-‘কেন?যা জিজ্ঞেস করার এখানেই করুন।আমাকে পাগল মনে হয় একটা ছেলের সঙ্গে রাতেরবেলা নির্জন জায়গায় যাব শুধুমাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে?’
-‘অ্যাহ একটু আগে এই ছেলেটার পিঠেই চড়েছিলে একটা ব্যাঙ থেকে বাঁচার জন্য তখন মনে হয় নি এভাবে একটা ছেলের পিঠে চড়ে উঠাটা কি ঠিক না কি?’
-‘ওটা তো,,,,আমার জাস্ট ভয় লাগছিল তাই?,,,আচ্ছা যান আমি আপনার সঙ্গে যাব তবে মনে রাখবেন আমি কিন্তু ক্যারাটে জানি যদি আমার সঙ্গে উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করেন তাহলে এমন হাল করবো না যে ছয়মাস বিছানায় পড়ে থাকবেন।’
-‘দেখ আমি আমার যত ভালোবাসা,ইচ্ছা,আকাঙ্ক্ষা আছে সব আমার বউয়ের জন্য তুলে রেখেছি।তোমার কাছে যে আমি আমার কখনোই ইজ্জত বিলিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করবো না।না হলে বিয়ের পর আমার সুইট বউটাকে কি জবাব দেবো।’
সারিকা আড়চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে।ছেলেরা এতো ন্যাকামি করতে পারে তা তার জানা ছিল না।সারিকা বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘এখন চলুন।আর নির্জন জায়গা মানে যে আপনার বলা নির্জন জায়গায় যেতে হবে তা কিন্তু না।আমিও একটা নির্জন জায়গা চিনি সেখানে যাব কেমন?’
-‘ওকে,,ঐ জায়গায় কি নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে যেতে না কি?’
-‘আপনার হবু বউয়ের সঙ্গে যেতাম।সে তো আগের জন্মের আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড ছিল,,,যত্তসব চলুন তো।’
সারিকা আর শুভ্র একটা কলেজের পাশের একটা মাঠে বেঞ্চে বসে আছে।শুভ্র নীরবতা ভেঙ্গে বলল,
-‘তোমার রক্তের গ্রুপ কি?’
-‘ এ পজিটিভ,কিন্তু আপনি এটা কেন জিজ্ঞেস করলেন?এটা জিজ্ঞেস করতে এই নির্জন জায়গায় আসার মানে কি?’
শুভ্রর মনে সারিকাকে জ্বালানোর জন্য শয়তান ভর করেছে তাই সে একটু খুশি হয়ে বলল,
-‘বাহ্ আমার ক্লাইন্ট একটা কিডনির ডোনার খুঁজছিল যাক অবশেষে পেয়েই গেলাম।’
সারিকা ভয় পাওয়ার মতো করে আশেপাশে তাকাল কেউ নেই এখানে।ঝি ঝি পোকার শব্দ আসছে চারপাশ থেকে।সারিকা ঢোক গিলে বলল,
-‘মানে?কি বলছেন কি এসব কিসের কিডনি?’
শুভ্র শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
-‘তোমার কিডনি!আমি তোমার কিডনি বিক্রি করবো তাই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।এবার তোমাকে অজ্ঞান করবো।’
সারিকা ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল শুভ্র মজা করে কথাগুলো বলছে না কি বাস্তবে বলছে তার জানা নেই।কিন্তু রিস্ক নিয়ে লাভ কি? এখান থেকে পালাতে হবে।
সারিকা উঠে দৌড় দিতে যাবে।শুভ্র তার আগেই ওর হাত টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলে।সারিকা নিজেকে ছাড়াতে চাইলো কিন্তু শুভ্র আরো শক্ত করে ওর পেট জড়িয়ে ধরলো।সারিকাকে মোচড়ামুচড়ি করতে দেখে শুভ্র হাসলো।
-‘থামেন ম্যাডাম,,,আপনার কিডনি সহি সালামতে থাকবে।এখন আসি সেই প্রশ্নে।তুমি আমাকে এতদিন যাবত ইগনোর কেন করছো একটু বলবে প্লিজ?তুমি জানো তোমার সঙ্গে ঝগড়া না করলে আমার মনে হয় আমার দিনটাই অপূর্ণ হয়ে থাকে?’
সারিকা শুভ্রর প্রশ্ন শুনে থমকে গেল নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়ে ভাবতে শুরু করলো কি উত্তর দেবে এই প্রশ্নের।এই প্রশ্নের বাস্তবিক উত্তর ওকে অস্বস্তিতে ফেলে দেবে তাই কোনো অবাস্তবিক উত্তর খুঁজতে হবে যাকে আমরা সহজ ভাষায় মিথ্যা বলি।কিন্তু সারিকার মাথায় এই মুহুর্তে কোনো মিথ্যা আসছে না।কিন্তু কেন?সে কোনো মহান সত্যবান ব্যক্তি নয় যার জীবনে সত্যি কথা ছাড়া মিথ্যে কথা নেই।সে জীবনে মিথ্যা তো অবশ্যই বলেছে।
শুভ্র সারিকার কাঁধে নিজের মাথা থুতনি রাখে।শুভ্রর মুখের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো সারিকাকে কাঁপিয়ে তোলে।শুভ্র মৃদু স্বরে বলল,
-‘I like you’
অভিনব আর অন্তি থানায় বসে আছে।অপরাধটা অভিনবর নয় অন্তির।অভিনব অন্তিকে ছাড়াতে এসেছে।অন্তি ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে।ব্যাপারটা অভিনবর মোটেও সহ্য হচ্ছে না জীবনে দ্বিতীয়বার তাকে থানার চক্কোর লাগাতে হচ্ছে তাও নিজের স্ত্রীর জন্য।ঘটনাটা দুই ঘন্টা আগের।
-‘অন্তি আজ থেকে তোমার ভার্সিটি লাইফ শুরু হচ্ছে আশা করছি তোমার প্রথমদিন ভালো কাটবে।’
অন্তি মুখে স্যান্ডউইচ পুরে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল,
-‘কেন দ্বিতীয় দিন কি খারাপ হবে না কি?দেখুন আপনি আমাকে ইনডাইরেক্টলি বদ দোয়া দিচ্ছেন না তো?’
অভিনব মাথা নাড়িয়ে বলল,
-‘একদম না।আমি প্রথম দিন ভালো কাটবে বলেছি কারণ এটা বলতে হয় ভদ্রতার খাতিরে আমি অন্যকিছু মিন করি নি।তোমার প্রথম দিন,দ্বিতীয় দিন,তৃতীয় দিন অর্থাৎ সব দিন ভালো যাবে না খারাপ যাবে সেটা একান্তই তোমার উপর নির্ভর করছে।আমি শুধু তোমার কনফিডেন্স ফাড়ানোর জন্য কথাটা বলেছি।,,এখন ধরো তুমি ভার্সিটির ক্যাম্পাসে পা রাখতেই কলার খোসায় স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলে কারণ তুমি আকাশের পাখিদের গণনা করতে করতে হাটছিলে।তাহলে দোষটা কি কলার খোসার না কি তোমার?’
-‘আপনার কয়টা দাঁত শুনি?’
-‘কি জানি ,,মনে হয় বত্রিশটা হবে।’
-‘আপনি আর কখনো এসব অলক্ষুণে কথা বলবেন না যদি আপনার কথা বাই এনি চান্স সত্যি হয়ে যায় তখন তো আমি বরবাদ হয়ে যাব।'(চিন্তিত কন্ঠে)
অভিনব একটু হাসতেই সে দেখলো অন্তি নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।অভিনবর বেশ হাসি পেল অন্তির এমন মুখভঙ্গি দেখে কিন্তু সে চেপে গেল কারণ হাসলে এংগ্রিবার্ড আগ্নেয়গিরির রূপ ধারণ করবে।অভিনব অন্তির দিকে একটা শপিং ব্যগ এগিয়ে দিল।অন্তি ভ্রূ কুঁচকে জানতে চাইলো এটাতে কি আছে?অভিনব চোখের ইশারায় খুলে দেখতে বলল।অন্তি দেখলো একটা স্মার্ট ফোন।অভিনবকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই অভিনব নিজেই উত্তর দিল,
-‘এটা আমি স্পেশাল ডিসকাউন্টে কিনেছি জানি বেশি দামী হলে তুমি রাগ করবে তাই কম দামীটা কিনেছি।’
অন্তি মোবাইলটা হাতে নিয়ে এপিঠ ওঠিঠ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো,
-‘কত দাম এটার?’
অভিনব পরে গেল ঝামেলায় কারণ সত্যি কথা বলতে সে কোনো ডিসকাউন্ট টিসকাউন্টে এটা কিনে নি।বিধানকে বলেছে মার্কেটে গিয়ে একটা ভালো মোবাইল কিন আনতে এবার দাম যত’ই হোক।অভিনব অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনার পর বলল,
-‘এই ষাট হাজারের মতো।’
-‘হোয়াট?ষাট হাজার টাকার মোবাইল।ভাই আপনার মাথায় কি কোনো ঘিলু নেই।এত দামী ফোন আমি ব্যবহার করে করবোটা কি?আমি এটা নিতে পারব না শুধুমাত্র ফোন কল করার জন্য একটা মোবাইল আনলেই হবে,,রাখুন আপনার ফোন।’
অভিনব এবার অন্তিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে বলল,
-‘আমি না তোমার বন্ধু,,এটা সামান্য একটা গিফ্ট আমার তরফ থেকে তুমি এটা না নিলে আমি মনে করবো তুমি আমাকে বন্ধু ভাবো না।’
অন্তি কিছুক্ষণ অভিনবর দিকে তাকিয়ে রইলো।অভিনব ভেতরে ভেতরে খুশি হচ্ছে কারণ তার মনে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল কাজে দিয়েছে।অভিনবকে হয়তো অবাক করার সম্পূর্ণ অধিকার অন্তি নিয়ে রেখেছে।অভিনব নিজের পুরোটা জীবনেও হয়তো এতবার অবাক হয় নি যতটা অন্তির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে হয়েছে।অন্তি মোবাইলটা সুন্দর করে ব্যগে ভরে দিয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-‘আমাকে কি বোকা মনে হয়?আমার উপর আপনার এসব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল আর কিউট ফেস কখনো কাজ করবে না।এই মোবাইলের ইস্যু এখন বাদ দিন আপনাকেও অফিসে যেতে হবে আর আমাকেও ভার্সিটি যেতে হবে।’
অভিনব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই অনেক দেরী হয়ে গেছে।
অন্তি গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে আর অভিনব ল্যাপটপে কিছু একটা করছে।অভিনব অন্তির দিকে ফিরে বলল,
-‘অন্তি আমি লাস্টবার বলছি ফোনটা নিয়ে নেও।যদি কোনো সমস্যা হয় তখন আমাকে ফোন করবে কি করে মোবাইল না থাকলে।’
অন্তি ভেবে দেখলো আসলেই তো আজ প্রথম দিন ভার্সিটিতে নতুন জায়গা,নতুন মানুষ কত কিছুই না ঘটতে পারে।অন্তি কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বলল,
-‘আচ্ছা ঠিকাছে,তবে পরে অন্য ফোন,,,,,।’
অভিনব অন্তিকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-‘দেখো আমি অনেক মিতব্যয়ী মানুষ এই ফোন কি ফেরত নিবে বলে তুমি মনে করছো?ম্যাডাম এটা কোনো জামা না ইটস আ ফোন এটা আমি আনবক্স করে ফেলেছি সিম লাগিয়ে ফেলেছি সব প্রোগ্রাম সেট করে ফেলেছি এটা ফেরত দেওয়া সম্ভব না।,,কিন্তু তুমি যেহেতু বলছো তাই আমি তোমার জন্য অন্য একটা কিনে নেব এটা দিয়ে আর কি’ই বা করবো আমার অফিসের একটা মেয়ে আছে আজ শুনলাম তার জন্মদিন তাকেই দিয়ে দেব যদিও খারাপ দেখায় ব্যাপারটা,,বস তার এম্প্লইকে বউয়ের জন্য কেনা ফোন দিচ্ছে কিন্তু কি করবো বলো আমি তো অনেক মিতব্যয়ী।’
অভিনব হতাশ হওয়ার মতো করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।অন্তি রেগে গেল মনে মনে বলল,
-‘আমার স্বামী আমার জন্য কেনা ফোন অন্য মেয়েকে দিবে কখনোই না।’
অন্তি টান দিয়ে মোবাইলটা অভিনবর হাত থেকে নিয়ে বলল,
-‘দরকার নেই কাউকে দেয়ার আমি’ই ব্যবহার করবো।ঐ মেয়েকে একটা চকলেট এর বক্স দিয়ে দিলেই আশা করছি সে খুশি হবে।’
অভিনব হ্যা বোধক মাথা নাড়িয়ে জানালার দিকে মুখ করে হাসে।অভিনব মনে মনে বলে,
-‘আমার আন্ডারে তিন চার হাজারের মতো এম্প্লই দেশে বিদেশে কাজ করে।আমি কি করতে একজন সাধারণ কর্মচারীর জন্মদিন মনে রাখবো।’
এদিকে অন্তি মোবাইলের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখে নিতে থাকে।
ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামতেই অন্তি গাড়ি থেকে নেমে যায় অভিনব নামতে নিলে অন্তি থামিয়ে দিয়ে বলল,
-‘আপনার আসার দরকার নেই।’
-‘কেন?আমি তোমাকে ক্লাসে পৌছে দিয়ে আসি।’
-‘আমি এখানে তাহলে আজ ক্লাসই করতে পারব না।সব মেয়েদের মাঝে আপনাকে নিয়ে তুফান শুরু হয়ে যাবে।শেষে দেখা যাবে আজকে ভার্সিটির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে কর্তৃপক্ষ।’
অভিনব বুঝতে পারলো অন্তি তাকে তার খ্যাতির জন্য ইনডাইরেক্টলি অপমান করছে।অভিনব গম্ভীর গলায় বলল,
-‘ওকে,,,ভার্সিটি শেষে গাড়িতে করে বাসায় চলে এসো বাই।’
গাড়ি চলে গেল।অন্তি ক্যাম্পাসের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে।অন্তি দেখলো সামনে অনেকগুলো ছেলে মেয়ে বসে আছে তাদের কাছে গিয়ে ক্লাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা যায়।
ছেলে মেয়েগুলো ভার্সিটির সিনিয়র।অন্তি ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
-‘ভাইয়ারা এবং আপুরা ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টটা কোন দিকে।’
একটা মেয়ে বলে দিল কোন দিকে যেতে হবে।অন্তি চলেই যাচ্ছিল তখন ওর গায়ে কেউ একজন ফুল ছুঁড়ে মারে আর বলে,
-‘এই যে ফ্রেশার এদিকে তাকান।’
অন্তি বিরক্তি নিয়ে ঘুরলো।একটা গুন্ডা টাইপ ছেলে।অন্তি বিড়বিড় করে বলল,
-‘এই ভার্সিটিতে এমন ছেলেরাও পড়াশুনা করে।দেখে মনে হচ্ছে গুন্ডামির উপরে পিএইচডি করে রেখেছে।’
তবুও অন্তি শত খারাপ লাগা সত্তেও মুখে হাসি ফুটালো কারণ সিনিয়রদের সাথে বাজাবাজি করার কোনো মানেই হয় না।এদের সঙ্গে ঝগড়া করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।
-‘জ্বী বড় ভাই বলেন কি বলবেন?’
ছেলেটা গাছ থেকে ফুল ছুঁড়ে অন্তির দিকে মেরে বলল,
-‘নাহ্ এমনি বললাম,,দেখছি আর কি তোমার রূপটা।’
অন্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘কেন আমার মুখ থেকে কি মধু ঝড়ছে যা দাঁড় করিয়ে রেখে দেখে চলেছেন?’
ছেলেটা হেসে বলল,
-‘ওহো খুব সুন্দর কথা বলতে পারো তো।মুখ থেকে মধু না ঝড়লেও খই তো দেখছি ঠিকই ফুটছে।’
-‘ভাই আমি প্রেশার কুকার নই যে আমার মুখ থেকে খই ফুটবে।’
-‘ওও আমার সঙ্গে সেভেজগিরি দেখানো হচ্ছে।এদিকে এসো দেখি এতো তেজ কোত্থেকে পাও তোমার মিষ্টি মধুময় মুখের দর্শন আমি আরো কাছ থেকে করতে চাই।তোমার কোমরের শেপটা কিন্তু অসাধারণ।’
ছেলেটা আবারও অন্তির গায়ে ফুল ছুঁড়ে মারলো অন্তি এবার একটা পাথর নিয়ে ছেলেটার মাথায় মারলো পাথরটা বেশ বড় মাপের ছিল তাই মুহুর্তেই ছেলেটার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করলো।ছেলেটা সহ আশেপাশের সকলেই বিস্ফারিত চোখে অন্তির দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা মাথা চেপে ধরে আছে।অন্তি রেগে বলল,
-‘শালা কতক্ষন যাবত ফুল ছুড়ছিস আর আলতুফালতু কথা বলছিস কিছু বলি না দেখে লিমিট ক্রস ফেলবি?এবার তো শুধু কপাল ফেটেছে সামনের বার পুরো মাথা ফাটাবো।’
ছেলেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।অন্তি এবার নিজেও ভয় পেয়ে গেল ছেলেটা যদি পটল তুলে তাহলে তো তাকে জেলের হাওয়া খেতে হবে সারাজীবন।
কিছুক্ষণ পর অ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশের গাড়ি দুটোই এলো।ছেলেটা এখনো বেঁচে আছে শুধু অজ্ঞান হয়ে গেছে।কিন্তু অন্তির নামে ছেলের বাবা কেস করেছে তাই অন্তিকে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে।অন্তি এর আগে অভিনবকে ফোন করে জানিয়ে দিল।কিন্তু অভিনব আসার আগেই অন্তি থানায় চলে গেছে তাই অভিনবকে বাধ্য হয়ে থানায় যেতে হলে।ব্যাপারটা থানার বাইরে মিটমাট করতে পারলে ভালো হতো।কারণ অভিনব থানায় যেতেই নিউজটা পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিনব কন্সস্টেবলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘আর কতক্ষণ আমাদের উকিল তো চলে এসেছে আপনাদের বড় স্যার কখন আসবে?’
কন্সস্টেবল পান চিবুতে চিবুতে বলল,
-‘বড় স্যার লাঞ্চ ব্রেকে আছেন।’
অভিনব অবাক হয়ে বলল,
-‘কিসের লাঞ্চ বারোটা ত্রিশে কে লাঞ্চ করে?’
-‘আমি কি জানি।’
অন্তি অভিনবর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-‘আপনি কি মেকাপ করেছেন না কি?আপনার চেহারা দেখি কেমন হিরো টাইপ লাগছে?’
অভিনব রেগে বলল,
-‘চুপ থাকো একদম চুপ।ছেলেটাকে মেরে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছো তুমি আর তোমার ভাবখানা এমন যেন কোনো বাচ্চার চকলেট চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছো।’
-‘দেখেন আমি কোনো চুরি টুরি করি না।’
-‘নাহ তুমি চুরি করবে কেন?তুমি তো মার্ডার করবে।’
অন্তি চুপ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ পর ওসি নিজের মোটা ভুঁড়ি দুলিয়ে দুলিয়ে চেয়ারে বসলেন।ওসি আমির আলী অভিনবর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৩
-‘আরে আপনি?কি সৌভাগ্য আমার আপনার পদ ধূলি এই থানায় পড়েছে।’
-‘জ্বী আমি অভিনব খান বিজয় আর ইনি আমার স্ত্রী অন্তিকা খান।এখন তাড়াতাড়ি জামিনের ব্যবস্থা করবেন প্লিজ।’
-‘জ্বী অবশ্যই কিন্তু কেসটা তো জটিল ছেলেটা অনেক ব্যথা পেয়েছে মাথায়।যদি কোনো অঘটন ঘটে,,,বুঝতেই পারছেন কি বলতে চাইছি।’
অভিনব হেসে বলল,
-‘জ্বী আপনার মাল পানি আপনার কাছে সময়মতো পৌছে যাবে।’
অন্তি রেগে গেল।কারণ ছেলেটা সম্পূর্ণ সুস্থ।শুধু অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল এতটাই আহত হয় নি যে মরে যাবে।অন্তি দাঁড়িয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর দুই হাতে সজোরে আঘাত করে বলল,
-‘ওসি সাহেব আপনি টাকা খাওয়ার জন্য বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছেন।আর ছেলেটা আমাকে ইভটিজিং করছিল কেউ প্রতিবাদ করুক আর না করুক আমি ঠিক’ই করবো।ঐ ছেলেকে আমি শুধু শুধু মারি নি বুঝলেন।’
অভিনব টেনে অন্তিকে বসিয়ে দিয়ে ওসির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-‘সরি আসলে আমার ওয়াইফ একটু আনপ্রফেশনাল জামিনের ব্যবস্থা করুন।’